রবিবার, ১ মে, ২০১৬

আলফা সেন্টোরি



২০১৬
সালের ১২ই এপ্রিল ফেইসবুকে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর কাছ থেকে পাওয়া গেল এই খবরটি । তিনি এবং ইউরি মিলান একটা অভিযান পরিকল্পনা শুরু করেছেন। গন্তব্য – আলফা সেন্টোরি।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই আলফা সেন্টোরি  ব্যাপারটাআসলে কি?
শুরু করা যাকঃ

গ্রীক মিথলজিতে অর্ধেক মানুষ আরঅর্ধেক ঘোড়ার মত দেখতে প্রাণীটার নাম মনে আছে? হুম, যারা আগ্রহী তারা এবার Google করে নিন।
পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশের দিকে চোখ মেললে সেন্টোরাস নামে একটা নক্ষত্রপুঞ্জ দেখা যায়। ১৮০০ বছর আগে
জ্যোতির্বিদ টলেমি ৪৮টা নক্ষত্রপুঞ্জ তালিকাভুক্ত করেছিলেন, তার মধ্যে এই সেন্টোরাস নক্ষত্রপুঞ্জও ছিলো। এই নক্ষত্রপুঞ্জে ‘সেন্টরের পা’ – এই নামে তিন নক্ষত্রবিশিষ্ট একটা
সৌরজগত আছে। এটাকে আমরা বলি,আলফা সেন্টোরি। এতে থাকা তিনটা নক্ষত্রের নাম বেশ সোজা – আলফা সেন্টোরি এ, আলফা সেন্টোরি
বি, এবং আলফা সেন্টোরি সি। শেষের নক্ষত্রটার নাম প্রক্সিমা সেন্টোরি।
 'Proxima 'একটা ল্যাটিন শব্দ,
যার অর্থ হচ্ছে নিকটতম। অর্থাৎ, সূর্যেরপরে এই প্রক্সিমা সেন্টোরিই আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র। বাকি দুই সঙ্গীর তুলনায় এটা একটু কম উজ্জ্বল। এটাকে বলে
রক্তিম বামন নক্ষত্র (Red Dwarf Star); এমন নক্ষত্রের সংখ্যাই কিন্তু মহাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি।
বাকি দুটো (আলফা সেন্টোরি এ আর বি) নক্ষত্রকে খালি চোখে আলাদা করে দেখা যায় না। অর্থাৎ, খালি
চোখে মনে হয় যে ওখানে নক্ষত্র একটাই। আলফা সেন্টোরি-এ আমাদের সূর্যের তুলনায় দেড়গুণ বেশি উজ্জ্বল। সিরিয়াস আর ক্যানোপাসের পরে আকাশের
তৃতীয় উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এই আলফা সেন্টোরি।
পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ৯৩ মিলিয়ন মাইল। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো এসে পৌঁছুতে ৮ মিনিটের কিছু বেশি সময় লাগে। প্রক্সিমা সেন্টোরি থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে ৪.২৫ বছর। দূরত্বটা তাই আর মাইলে হিসেব করা হয় না, বলা হয় ৪.২৫ আলোকবর্ষ। বাকি দুটো সামান্য একটু দূরে, পৃথিবী থেকে ৪.৩৭ আলোকবর্ষ। আর এই সোয়া চার আলোকবর্ষ দূরের সৌরজগতেই মহাকাশযান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে
Breakthrough Starshot প্রকল্প।

এবার দেখা যাক এই প্রকল্পে কি আছেঃ

 রাশিয়ান পদার্থবিদ+ব্যবসায়ী ইউরি মিলনার আর জুলিয়া মিলনার মিলে মহাকাশ গবেষণা ব্রেকথ্রু
ইনিশিয়েটিভ নামক একটি সংস্থা স্থাপন করেছিলেন ২০১৫ সালে। এই মুহূর্তে তার অধীনে তিনটা প্রকল্প
হাতে নেয়া হয়েছে – ১) Listen, ২) Message, ৩) Starshot. প্রথম প্রকল্পের জন্যবরাদ্দ ১০০ মিলিয়ন ডলার, যার কাজ হচ্ছে মহাকাশ থেকে কোনো বার্তা
আসছে কিনা তা শোনা। দ্বিতীয় প্রকল্পে ওরা একটা প্রতিযোগিতা
করছে, যার পুরষ্কার ১ মিলিয়ন ডলার। জেতার জন্য একটা বার্তা তৈরি করতে হবে যাতে পৃথিবী, এখানকার মানুষ, আর সংস্কৃতি নিয়ে কথা থাকবে; এটা পাঠানো হবে মহাকাশের উদ্দেশ্যে। আর তৃতীয় প্রকল্প কাজ করবে নিকটতম নক্ষত্রে মহাকাশযান পাঠানোর জন্য। এই
প্রকল্পের অধীনে খুব কম ওজনবিশিষ্ট একটা মহাকাশযান তৈরি করা হবে। এর ওজন হতে পারে এক গ্রাম। আর এটার সাথে লাগানো থাকবে lightsail. Lightsail
হচ্ছে এমন একটা পাল যেটা আলোর ধাক্কায় চলে।

মোদ্দা কথা,
আলো হচ্ছে শক্তিরপ্যাকেট দিয়ে তৈরি, যেটাকে বলে
ফোটন। ফোটনের কোনো ভর নেই। কিন্তু যখন সেটা প্যাকেটের মধ্যে ভ্রমণ করে, তখন তার এনার্জি বা শক্তি থাকে, আরথাকে মোমেণ্টাম বা ভরবেগ। এই ফোটন
যদি কোনো প্রতিফলকের গায়ে এসে পড়ে, তখন এটা সামান্য পরিমাণ ধাক্কা দেয়। ধাক্কাটা খুব সামান্য, কিন্তু
একবার ধাক্কা শুরু হলে আর কোনো থামাথামি নাই। এটা ধাক্কা দিতেই থাকে। ব্রেকথ্রু এর ছোট্টো মহাকাশযান
বা ন্যানোক্রাফটকে ধাক্কা দেবে পৃথিবীর মাটিতে বসানো একটা
আলোকরশ্মির উৎস।
এই ন্যানোক্রাফটের গতি হবে আলোর গতির প্রায় ২০ ভাগের এক ভাগ বা এক-পঞ্চমাংশ। অর্থাৎ, পৃথিবী থেকে
আলফা সেন্টোরিতে যেতে আলোর যেহেতু ৪ বছর লাগে, এই ন্যানোক্রাফটের লাগবে ৫ গুণ বেশি
সময় – প্রায় ২০ বছর। সফল হলে, উৎক্ষেপণের ২৪ বছর পর আমরা আরেকটা সৌরজগতের চোখ ধাঁধানো ছবি পাবো। ২৪ বছর কেন? এইমাত্র না বললাম, ২০ বছর লাগবে!
ঠিক ধরেছেন, ন্যানোক্রাফট ২০ বছরে পৌঁছে যাবে। এরপর আলোর গতিতে ছবিগুলো আমাদের কাছে এসে পৌঁছাতে আরো ৪ বছর লেগে যাবে।
এখন শুধু চোখ রাখার বিষয়, কি আসতে যাচ্ছে আগামীতে...

অনুলিখনঃ অনলাইনে ঘাটাঘাটি করে


1 টি মন্তব্য:

  1. অনেক ভাল লিখেছেন ভাইজান, জানতে আর ইচ্ছে করছে এসব বিষয় নিয়ে।আর লেখা চাই

    উত্তরমুছুন

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...