মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০১৬

গল্পঃ অপেক্ষা



টেবিলে থাকা ছোট্ট বেলটা চাপল অপু
যান্ত্রিক দরজা ঠেলে কম্পাউন্ডার মতিন
পরিমরি করে ছুটে এল
-স্যার!! কিছু বলবেন?
-কতজন পেশেন্ট আছে বাকী?
-বেশী না স্যার, মাত্র চাইর জন
-তারাতারি পাঠাও আমার কাজ আছে আজ!
-আইচ্ছা স্যার
(মতিন চলে গেল রোগীদের কাছে)
ছিমছাম চেম্বার সদ্য পাশ করা চনমনে ডাক্তার
অপু নিজের পরিচিত এক লোকের চেম্বারে
প্রতিদিন রোগী দেখা চলে তার বন্ধু মানুষ!
না করে দিলে চলে না নিজের পকেট চলে
যায় ভালোমতো
টেবিলের এক পাশে রাখা টেবিল
ক্যালেন্ডারের পাতায় আজকের তারিখে
লাল মার্কারের গোল করা ২৭ ডিসেম্বর হ্যা,
বিশেষ কিছু হবে হয়ত বলেই তাড়া দিচ্ছেন
ডাক্তার সাহেব
একে একে চারজন রোগীর জন্য চটপট করে
প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেন তিনি খুব
সিরিয়াস পেশেন্ট হাতে আসে না যা আসে
সে ঠান্ডা, জ্বর, বমি এসব খুব কমন রোগ
আজও তার তেমন ব্যাতিক্রম হয়নি মাঝে শুধু এক
জনের হাতের লম্বা কাটা নিয়ে যা একটু হইচই
কাজের মাঝেই জলদি করে মোবাইলটা
হাতে নিয়ে কি একটা খুঁজতে লাগলেন অপু
কারও নাম্বার হবে হয়ত!
হ্যা একদম তাই টাচপ্যাডের সবুজ বাটনের উপর
আঙুল ঘুরিয়েও তাতে আর চাপ দিলেন না
"থাক, সারপ্রাইজ হোক না! "-বলে এক গাল
হেসে ফেললেন অপু
মতিন!! মতিন!
-স্যার
-আমি একটু বাইরে যাব আজ আর কোন পেশেন্ট
দেখব না
-কিন্তু স্যার বড় সাব আসলে কি বলব?
-বলবে, জরুরী কাজে যাচ্ছি ফিরতে রাত
হবে
অপু তার বন্ধুর সাথে থাকে অপুর বন্ধু আকাশ
জোরদার ব্যাবসায়ী এত বড় ব্যাবসার মালিক
সে একা নয়! ইনহেরিটেন্স এই ডায়াগনস্টিক
সেন্টারও বন্ধু আকাশের
পকেটে মোবাইলটা রেখে জলদি বাইরে
বেড়িয়ে আসে অপু
মতিন ছুটে আসে পেছনে পেছনে, "স্যার, গাড়ি
নিয়া যান "
না থাক- আমি হেটেই যাব (মৃদ্যু হাসল অপু)
মতিন মাথা চুলকে বলল, "আইচ্ছা স্যার"
খোদাহাফেজ
অপু মালিবাগ মোড়ে এসে সি এন জিতে চড়ে
বসল
-সাব, কই যাবেন? (সি এন জি চালক)
-সংসদ ভবন
ড্রাইভার দাঁত কেলাল, "ভাড়া কিন্তু মিটারে
না আগেই কইলাম!"
-ব্যাপার না জলদি
ভট ভট ঘটর ঘট...শব্দে সি এন জি চলল
অপু মোবাইলটা বার বার দেখছে চারটে কুঁড়ি
তো!
আরো জলদি যাও ভাই!
সংসদ চত্বরে এসে ভাড়া মেটাল অপু
বিকেলটা আজকাল বেশ জলদি চলে যায়
রাস্তার মোড়ের আইসক্রিমের দোকান থেকে
দুটো আইসক্রিম নিল
চত্বরের উত্তর-পূর্ব কোণে আলোছায়া ঘেরা
জায়গাতে চুপ করে বসে গেল অপু হাতের
শীতল আইসক্রিম এই শীতের বিকেলে আরো
শীতল লাগছে এদিকে বসে ওরা দুজন
ঘড়িতে পাঁচটা বাজতে তিন মিনিট বাকী
সবটা সময় অপু দেরী করে আসত আজকাল আর
দেরী হয়না
পাঁচটা মানে পাঁচটা!! অরুনা দেরী করছে আজ
আসুক আজ! (মনে মনে ভাবে অপু)
হাতঘড়িতে আবার সময় দেখল অপু পাঁচটা এক
অরুনা বেশ অদ্ভুত মেয়ে আমার ক্লাস শেষ হতে
হতে বাজত ঠিক দুটো ত্রিশ মেয়েটা আমাকে
আগেই বলে রাখত পাঁচটায় আসতে হবে! নো
দেরী!
আর আমি সবটা দিন দেরী করেছি
ইচ্ছে করে করিনি জ্যাম, কাজ, ক্লাস
মিলিয়ে সময় হয়নি ভার্সিটি পড়া
স্টুডেন্টদের এই এক দোষ নিজেদের সাথে
সবাইকে তুলনা করে
অরুনা অবশ্য এর ব্যাতিক্রম ইচ্ছে করেই এমনটা
বলত যাতে আমি জলদি আসি
ওর ধারনা আমি নাকি নন ডক্টর মেয়েকে পছন্দ
করি না (হা হা করে একমনে হেসে গেল অপু)
এখানে সেখানে অনেকে বসে আছে মাঝে
অপু একা বসে অরুনার অপেক্ষায়
কিছুক্ষন পর,
বাদাম হাতে এক পিচ্চি এসে বলল, "স্যার,
আপনের আইসক্রিম তো গইলা গেল "
হাতের দিকে দেখল অপু হাতের আইসক্রিমের
বার দুটো গলে যাচ্ছে না, আসছে না কেন
মেয়েটা!
অপু ঘড়িতে দেখল, পাঁচটা ত্রিশ
শীতের দিনে এই এক যন্ত্রনা খুব আগেই সন্ধ্যে
হয়ে যায় মেয়েটা আইসক্রিম বড্ড
ভালোবেসে তাই আগে থেকে নিয়ে
রেখেছে অপু
মিনিট 'য়েক পর,
কালো একটা টয়োটা এসে ঠেকল অপুর হাত
দশেক দূরে
গাড়ি থেকে নেমে বেশ নিঃস্বব্দে কেউ
হেটে আসছে অপুর দিকে অপু খেয়াল করেনি
কিরে? তুই আবার এখানে? (কালো ছায়া বলে
উঠে, সন্ধ্যে হয়ে গেছে প্রায়)
অপু মুখ তুলে তাকায়, "আকাশ, তুই?
আকাশ গাড়ি নিয়ে এসেছে মতিন ফোন
করেছে ওকে
"তোকে না এখানে আসতে বারণ করেছি,
অরুনা মারা গেছে, বারবার এক ভুল কেন করিস?
নে চল, বাসায় চল" -আকাশ বলে উঠে
অপুর হাতে আইসক্রিম বার আর নেই, গলে গেছে
অনেক আগে ভেজা দুটো পলি ব্যাগ অপুর
হাতে
অপু বলে যায়, "আকাশ, অরুনা মরে নি, একদিন
আসবে! "
অপুকে দু'হাতে তোলে আকাশ, নে চল এবার!
হাতের আইসক্রিম ফেলে গাড়িতে উঠে অপু
আবার একদিন আসব এখানে, অরুনা সেদিন
আসবে তো?
(সমাপ্ত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...