মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০১৬

গল্পঃ ইয়োটা রিটার্নস (২য় পর্ব) সাই ফাই ম্যাগাজিন বিজ্ঞান আনন্দ ৩য় সংখ্যায় প্রকাশিত




"নেইম : ইয়োটা
হেইট : ,'
কালার : হোয়াইট
স্ট্যান্ডবাই টাইম : ২৪৪ ডে ৬২ আওয়ার
রিচার্জয়েবল ব্যাটারি। ২২২২২২৬৪ লিথিয়াম
আয়ন
ওয়াটারপ্রুফ।
ল্যাংগুয়েজ আক্সেস : ভারিয়েবল
ওউনার : শাহরিয়ার আহমেদ।
সাবক্লান : রেড
ক্লান : বাংলাদেশে
নীচে লাল কালিতে লিখা ভ্যালিডিটি ১২ জুন
২২৬২"
আজ ১৫ ডিসেম্বর ২২৬২ ড্রয়ার খুলে ঘাটাঘাটিরর সময় পুরোনো সব কাগজগুলোর মাঝে ইয়োটার এই ক্যাশমেমো টা হাতে পেয়ে, আরেকবার দেখছিল শাহরিয়ার।
 গতকালের একটা ব্যাপার নিয়ে মন ভীষন খারাপ। ২২৬২ সালে এসেও বিজ্ঞানীরা
এখনো মন ভাল রাখার কোন ঔষধ আবিস্কার করতে পারেনি। মন খারাপ জিনিসটা, পেইন হলেও চলত। ড্রাগ দিয়ে মূহুর্তেই কিল করে দিত শাহরিয়ার। কিন্তু মন খারাপকে কিল করা যায়
না।
পুরোনো কাগজটা দেখে আজ ইয়োটাকে খুব মনে পড়ছে। 'রিয়েলি হি ওয়াজ এ নাইস রোবট!
' (একমনে কথাগুলো আওড়ে যাচ্ছিল শাহরিয়ার) কিছুক্ষন আগে, ঘটঘটানো শব্দে ইলিন এসেছে
ঘরে। শাহরিয়ারের হাতে ইয়োটার পেপারটা দেখতে পেয়েছে সে। আসবার শব্দ কানে
আসেনি শাহরিয়ারের।
ইলিনের গোলাকার মাথা বার কয়েক এদিক-ওদিক ঘুরল। তারপর গ্রিং...  শব্দ করে শাহরিয়ারের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চেষ্টা করল।
শাহরিয়ার জবাব না দেয়ায়, এবার সরাসরি
প্রশ্ন করল,
'এনি প্রব্লেম? '
নো। আই ওয়াজ জাস্ট চেকিং দ্যা পেপারস!
(ঘাড় ঘুরিয়ে জবাব দিল শাহরিয়ার)
'বাট, টুডে আ'ম ব্যাডলি মিসিং হিম।' আই ডোন্ট নো, ওয়াজ ইট রং অর রাইট?
 ইয়োটাকে না ছেড়েও কিছু করার ছিলনা!
আফটার অল, আই হ্যাড নাথিং টু ডু! ইলিন পাশের ঘরে চলে গেছে এর মাঝেই। ইলিন
মাঝেমধ্যে সাইলেন্ট মুডে চলে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে ইলিনকে পেলনা শাহরিয়ার।
ধ্রুব সত্য এই, ইয়োটা যেখানেই থাকুক কিংবা ফিরে না আসুক। ইলিন তাকে ভালবাসে।
যন্ত্রের মাঝে  ভালবাসা যেখানে বাসা বেধেঁছে, সেখানে ২২৬২ তে এসে আমরা মানুষ
তার পুরোপুরি উল্টো পথে হেটে যাচ্ছি। যেন সমান্তরাল দুটো রেখা। তবে গতকালের ঘটনাটি না বলে পারছি না। মনে আছে আমার রেড ক্লানের ঐ যে মেয়েটি! আমার পাশের বাসায় যে থাকে! আর আমার জানালার কাছে ড্রোন পাঠাত! কিছুদিন আগে, সে আমাকে মেইল করেছে। ইনবক্সে চেক করে দেখি শুধু অংকে '১৪৩' লিখা। আমি এই গনিত রহস্যর কোন মানে পেলাম না।
প্রথমে নম্বর দেখে ভেবেছিলাম আমার কম্পিউটার থেকে কিছু হাতিয়ে নেবার পাঁয়তারা করছে! হিডেন কোন ভাইরাস দিয়েছে নম্বরের আড়ালে! কিছুদিন আগেই এমন এক ঘটনায় আমার এক বন্ধু তপুর সার্ভার ডাউন হয়েছে এমনই সামান্য এক ঘটনায়।

তাই ভয়ে নিজে কিছু না করে ইলিন কে ডেকে বললাম, 'প্লিজ সলভ ইট, আই থিংক সি ইজ ডুয়িং সামথিং রিয়েলি ব্যাড,  হাইলি সাসপিসিয়াস! '
আমার সতর্কতায় জল ঢেলে, মিনিট দু'য়েক পর ঘটঘটানি শব্দে ইলিন বলল,
মিস্টার শাহরিয়ার?
শাহরিয়ার, ‘হোয়াট!  এনিথিং রং? আই আম সিউর!
ইলিন বলল, নো, গুড নিউজ!
ভ্রু ভাজ করে বললাম, 'গুড নিউজ! '
এরপর যা বলল, তাতে আমার মাথা বার কয়েক চক্কর খেল! (এই চক্করে পিচ্চি সাইজের দু'তিন বাচ্চা আমার মাথায় বসে এমনিতেই ঘুরতে পারত! চরকি লাগত না!)
বি হ্যাপি!  সি জাস্টপ্রপোজড ইউ! (ইলিন বলল)
কপালে হাত রেখে বললাম, 'জাস্ট প্রপোজড মি!!!!'
হায় কপাল! আমার ক্লানের সবচেয়ে বোরিং মেয়েটি আমাকেই পছন্দ করে। (গড, তোমার
বাড়ি কই? আই আম ডেস্পারেটলি কিন টু মিট ইউ)
'হোয়াট দ্যা হেল! '(আমার কথা শুনে ইলিনও অবাক, ও হয়ত পজেটিভ কিছু ভেবেছে)
এরপর মাথায় যা আগে এল, তাই করেছি। তারাতারি আমার সব মেইল আইডি, সোশ্যাল
আকাউন্ট থেকে ওকে ব্লক করে দিয়েছি। ভেবেই পাচ্ছি না, আক্কেল দাঁতের মেয়ে
আমাকে বলছে 'ভালোবাসি ' আই লাভ ইউ!! হু, ইউ! ইউ! ইম্পসিবল, ব্যাপার স্যাপার।
এসব বলতে গিয়ে, মাথাটা আবার চক্কর খাচ্ছে, ইলিন... ইলিন...
প্লিজ আই নিড কোল্ড কফি!

এ কারনে গতকালের পর থেকে জানালাও খুলিনি। তাই তো বলি, একটু পর পর ড্রোন এসে
চক্কর দেয়! ঘটনাটা কি?
ঠিক করেছি, এরপর যদি আবার চক্কর খায় তাহলে, ক্লানের মেয়র বরাবর মেইল করে
দেব! হুম।
ঘটঘটানো শব্দে ইলিন এসেছে,
'টেক ইউর কফি, আই নিড সাম রেস্ট, আই উইল বি নট এভেইলেবল ফর আন আওয়ার! '
'থানক্স ফর দ্যা কফি -ইলিন '
ইলিন চলে গেল।
      যন্ত্র দানবের যুগে মানুষ যেখানে মন নামক বস্তুজগৎ থেকে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে
সেখানে যন্ত্রদানব গুলো ভালবাসার অদ্ভুত সব দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছে।
     আমি শুধু ইয়োটার সাময়িক মালিক ছিলাম হয়ত কিন্তু 'ইলিন' শুধুমাত্র  ইয়োটাকে
ভালবেসে ওর সম্মান রাখতে বিনামূল্যে আমার দেখভাল করে যাচ্ছে।
আমি এ ঋন কিভাবে শোধ করব জানি না। ইলিন আগে যার কাছে ছিল সে লোকটি আক্সিডেন্ট
করে মারা যায় মাস সা'তেক আগে। ফ্রি রেডিক্যালের মত ঘুরতে ঘুরতে শেষমেষ,
ইয়োটার সন্ধানে চলে এসেছিল আমার কাছে। ওর ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান অবশ্য ওর কোড নেম
হারিয়ে ফেলেছে নচেৎ এতদিনে ইলিন কেও হারাতে হত।
   ইলিনকে পেয়েও আমি ইয়োটাকে মোটেই ভুলতে পারিনি।  গত সাত মাস ধরে আমি
অনলাইনে ঘাটাঘাটি করে যাচ্ছি। ইয়োটা নামে কোন যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছিনা। এর বড় কারন
অবশ্য আমার ভেন্ডর কোম্পানী। তারা যন্ত্রগুলো ফেরত নেবার পর সেগুলোর ক্যাশ
মেমরি ডিলিট করে দেয়। ফের নতুন করে সফটওয়ার ইন্সটল করে।
তারপর নতুন নামে, ভিন্ন ক্লানে, নতুন লোকের কাছে সাপ্লাই করে নতুন কোন চুক্তিতে!
     ইয়োটার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। এরপরও আমি খুঁজে যাচ্ছি। ইয়োটাকে খুঁজতে গিয়ে
অনলাইনে আমার এক নতুন বন্ধু হয়েছে।
আমার সোশ্যাল একাউন্টে ওর সাথে হরহামেশাই চ্যাট হয়। ওকে ইয়োটার ব্যাপারে
প্রায় সব বলেছি। ও বলেছে, ওর বাবা নাকি ইয়োটার ভেন্ডর কোম্পানী তে জব করছে। এরপর
বাকীসব ওর কাছেই শোনা এবং জানা।
 কফির মগ টেবিলে রেখে জানালা খুলে দিলাম। জানালা বন্ধ করে রাখলে দম বন্ধ হয়ে
আসে। ঝলমলে আকাশ!  দূর আকাশে ইউফো ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাত্রিতে ওগুলোকে মাঝে মাঝে
চাঁদ ভেবে ভুল করে ফেলি। আসলে এরাই আমাদের ক্লানের আকাশের চাঁদ আর তারা।

 আমার অবশ্য সন্ধ্যে বেলার আকাশটা ভীষন ভালো লাগে। মেঘের ঝাকের অদ্ভুতুড়ে সব শ্যাডো! লালচে ঢেউতোলা মেঘেরঝাক।
     চেয়ারে বসে কফির মগ আবার হাতে নিলাম।
           বেশখানিকটা দূরেই লালচে একটা আলো দেখতে পাচ্ছি, জানালা খোলার পর থেকেই।
আলোটা ক্রমশ ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে।

 স্মার্ট ঘড়িতে তাকালাম সন্ধ্যে ৬টা ১৫ মিনিট ১৭ সেকেন্ড। টেবিলের বইগুলো পাশে
ঠেলে পিসির স্বছ্ব টাচ প্যাডে হাত রাখলাম। আমার আই স্ক্যান করে অন হলো কম্পিউটার।
মনযোগ কম্পিউটারেই ছিল, এটা আমার স্মার্ট পিসি এনালগ আর কতদিন?
হঠাৎ ধুম-ধাম, ঘটাং করে বিকট একটা শব্দ হল আমার বাসার লনে। ভারী কিছু পড়ার শব্দ।
ভুলভাল এরকম অনেকেই ল্যান্ড করে। যানে জ্বালানি কমে এলেও এমন ক্রাশের শব্দ
হরহামেশাই হয়। তবুও দেখতে মনে চাইল। বারান্দার দরজা ঠেলে যা দেখলাম তাতে
আমার চক্ষু ছানাবড়া!
একি! ইয়োটা? বাসার লনের মাটি গোল হয়ে থেবড়ে গেছে অনেকটুকু। গায়ের মাটি ঝেড়ে দু'হাত, মাথা ঘুড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল সে। ঘটাং করে চোখের ঝলমলে আলো জ্বলে উঠল ওর।
স্বপ্ন দেখছি কিনা জানি না।
আমার স্বপ্নের স্পটে ইলিন ও এসে দাঁড়িয়েছে! আমার বাম পাশেই দেখতে পাচ্ছি ওকে।
জানি না আমার এ স্বপ্ন সত্যি কিনা!
তবে ইয়োটা সত্যিই ফিরেছে।

(চলবে)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...