আমি নারীবাদী নই,
আসলে নারীবাদী মানে কি সেটাও খুঁজে দেখবার ইচ্ছা করি না এক বার ও। সেটা দরকার হয় না। আমার জানা মতে প্রত্যেকটি মানুষের আলাদা আলাদা ইথিক্স আছে। সেটা সোজা ভাষায় বলতে বলা যায়, ‘একটা সীমানা থাকে’। আমার সীমানা- আমার ইথিক্সের জন্য অন্তঃত মানে খুঁজে নেবার দরকার হয় না, আমি ভাবি অন্যভাবে। আমার প্রকাশভঙ্গী টা সম্মানের। কারো সাথে কথা বলার আগে আমি দশবার ভেবে নিই এবং বলাটা সেরকমই হয়।
আসলে নারীবাদী মানে কি সেটাও খুঁজে দেখবার ইচ্ছা করি না এক বার ও। সেটা দরকার হয় না। আমার জানা মতে প্রত্যেকটি মানুষের আলাদা আলাদা ইথিক্স আছে। সেটা সোজা ভাষায় বলতে বলা যায়, ‘একটা সীমানা থাকে’। আমার সীমানা- আমার ইথিক্সের জন্য অন্তঃত মানে খুঁজে নেবার দরকার হয় না, আমি ভাবি অন্যভাবে। আমার প্রকাশভঙ্গী টা সম্মানের। কারো সাথে কথা বলার আগে আমি দশবার ভেবে নিই এবং বলাটা সেরকমই হয়।
সে যাক, এখনকার সাধারণ কিছু ঘটনার মধ্য কাছাকাছি একটির কথা উল্লেখ করা যেতেই পারে।
ধরে নিন আপনি একজন মেয়ে, আপনার গুটিকয় বান্ধবী আছে আর বিশেষ ক্ষেত্রে ছেলে বন্ধু ও আছে। (দাঁড়ান বয় ফ্রেন্ড ভেবে বসবেন না আবার) এবং আপনি কোন এক স্কুলে কিংবা কলেজে পড়েন। পড়াশোনার খাতিরে বাসা থেকে আপনাকে দেয়া হয় মুঠোফোন, কারণ কলেজ যাবার পথ বেশ দূর তাই যোগাযোগের জন্য মা-বাবা মেয়ের হাতে সেটা তুলে দিয়েছে। মেয়ে কলেজে কিংবা স্কুলে যাচ্ছে নিয়মিত, পড়াশোনাতেও বেশ ভালো। এদিকে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তারবিহীন মুঠোফোনেও এখন সে ইন্টারনেট ব্যাবহার করে। সোশ্যাল সাইটে একাউন্ট হয়, সেখানে বন্ধু হয় অনেকে, চেনা-অচেনা দেশ বিদেশ। মেয়েটি ধীরে তার চেনা জগত থেকে সরে যেতে থাকে।
আগে মেয়েটি হয়ত ঘন্টা খানেক পড়ত, সেখানে মেয়েটি এখন হয়ত কিছুক্ষণ পড়ে বাকীটা সময় সোশ্যাল সাইটে ঘুরে বেড়ায়। হুট করে সেখানে অচেনা কোন এক আব্দুল কুদ্দুসের সাথে তার কথা হয়। আব্দুল কুদ্দুস তার ডিসপ্লে পিকচারে সানগ্লাস দেয়া মোহনীয় ছবি লাগিয়ে মেয়েটির সাথে কথা বলতে থাকে। ষোড়শী বোকা মেয়েটিও পড়াশোনা বাদ দিয়ে গল্পে মশগুল হয়ে পড়ে।
এদিকে মুঠোফোনে, মেয়েটিকে কিছুদিন পর রাতে কথা বলতে দেখা যায়। স্কুল বা কলেজ পড়ুয়া ষোড়শী মেয়েটি এক আব্দুলের প্রেমে হারিয়ে যায়। এখানে দুটো পরিনতি আসে (এক), হয়ত তারা দুজনে পালিয়ে যায় নয়ত (দুই), কোন অঘটন ঘটে।
যাক, যারা মেজাজ গরম করে এতটা পড়লেন, তাদের জন্য দ্বিতীয় কিস্তি,
এবারের গল্পটা ‘আখি’ ছদ্মনামের এক মেয়ের। তার কথাই এবার বলছি। অসম্ভব মেধাবী এবং মধ্যবিত্ত সাধারণ ঘরে বড় হওয়া মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। পড়াশোনা করছে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ জমানায় তার বেলাতেও সোশ্যাল সাইটে একাউন্ট আছে। কিছুদিন তার একাউন্টে উটকো বন্ধুত্বের অনুরোধ আসতে লাগল। আগে সেগুলো সে ডিলিট করে দিত কিন্তু সেখানে তার প্রতিত্তরে পেতে লাগল বিরুপ অশ্রাব্য সব মেসেজ। কোন কাজে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা মেসেজ দিত সেটা আর দেখা হয়ে উঠে না এসব অশ্রাব্য মেসেজের ভীরে। মেয়েটির শেয়ার করা প্রোফাইল ফটো তে ভালোবাসি এলেবেলে ধরনের কমেন্টের কথা তো বাদ-ই দিলাম। প্রাইভেসি অন করেও ইনবক্সে আজেবাজে কমেন্ট কমানো শেষমেষ তাকে কিছুটা ছাড় দিল।
এতো গেল ‘আঁখির’ কথা তাও সামান্য সোশ্যাল সাইটে। শুয়োর শ্রেণীর কিছু মানুষের জন্য, মুঠোফোনে নারী কন্ঠ পেলে তাদের যে নিস্তার নেই সেটা নতুন করে লিখে আর বাড়াচ্ছি না। আপনাদেরও তো ধৈর্য বলে কিছু আছে।
শেষ একটা গল্প বলে আজ লেখার ইতি আনছি।
আমরা মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে গলা ছাড়ি, এইতো এক সপ্তাহ আগে চলে গেল আট মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। এখানে সেখানে সেমিনার, জ্বালাময়ী নেতার চীৎকার শোনা গেল সেদিন। কিন্তু পরদিন থেকেই দেখা গেল বাসে, পথে সেই একই ছবি। নারীদের প্রতি দৃষ্টি টা আগের মত রয়ে গেছে শকুনি চোখের।
এবার গল্পটা বলি। মেয়েটি নীলা (ছদ্মনাম)
গল্পটা ‘নীলা’ নামের এক মেয়েকে ঘিরে। পরিবার নাকি সেইফ প্লেস! “My foot!”
অথচ মেয়েটি নির্যাতিত হয়েছে তার-ই ভাইয়ের হাতে। মাঝে মাঝে আমি মধ্যযুগে আছি বলে মনে হয়। ‘Abuse’ শব্দটির মানে কি হয় মেয়েটি জেনে যায় অনেক আগেই। তারপর থেকে মেয়েটি চেনা সবাইকে ভয় পায়। কেউ না আবার সুযোগ খুঁজে! গা গুলিয়ে আসে, বমি পায়! অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, মেয়েরা সবচে বেশী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় নিজের কাছের মানুষগুলোর কাছে। সে বেড়ে উঠে এক চারকোণা পরিবেশে বদ্ধ ঘরের মাঝে।
সেদিনও এর কাছাকাছি কিছু খবর অনলাইন ঘাঁটতে ঘাঁটতে চোখে পড়ে আমার। ব্রাশফায়ার নামে একটা শব্দ আছে সামরিক বাহিনীতে। কেউ অন্যায় কিংবা আইন বিরুদ্ধ কিছু করলে সামরিক আইনে সাজা দেবার বিধান সেটি। আমারও তেমন ইচ্ছে জাগে, রাস্তায় বেড়িয়ে দেখা মাত্রই গুলি হবে। সোজা ব্রাশফায়ার।
এখনও প্রতি সন্ধ্যায় কিংবা রাতে,
আঁধারে পায়ে হেটে পথ চলা মেয়েটি যখন ভয়ে ভয়ে বাড়ি ফিরে এদিক-ওদিক সতর্ক চোখে, তখন নিজের কাছে নিজেকেই নির্লজ্জ ছোটলোক মনে হয়। কি ভয়টা না পায় সে!, চামড়ার আড়ালে মুখোশ পড়া জানোয়ারগুলোকে দেখে। খারাপ লাগে তখন এই ভেবে, সে মেয়েটা আমাকেও ঐসব জানোয়ারের সাথে তুলনা করছে এটা দেখে।
অগোছালো কথাগুলো শেষ করছি মনীষী সক্রেটিসের একটা নিখাদ বাণী দিয়ে, তিনি বলেছেন “know thyself” অর্থাৎ নিজেকে আগে চিনুন, বাকীদের বিচার পরে। কেউ সাধু নয় এইটা চরম সত্য কিন্তু দৃষ্টি ভঙ্গী টা আলাদা। একটা শুয়োরের আর একটা মানুষের। এবার নিজেকেই প্রশ্ন করুন না? চোখের ত্রিকোণোমিতি টা কি ঠিক আছে?
বলার আগেই আশা করি দু’বার ভেবেছেন?
কেউ যুধিষ্ঠির নন জানি, কিন্তু অন্তঃতপক্ষে, চলতি পথে লোকাল বাসে যাবার সময় কেউ কি দাঁড়িয়ে থাকা কোন এক নারীর জন্য নিজের সিট খানা ছেড়ে দিয়েছেন ?
প্রশ্নটা আপনাকেই করে গেলাম।
(সমাপ্ত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন