(১)
মহিম এমনিতে বড্ড কাজের। টিউশানি তে তার কোন বিন্দুমাত্র গাফিলতি নেই, যা আছে সেসবের সবটাই তার সংসারে। মহিম এক আত্মভোলা পাগল শিক্ষক।
মাস্টারমশাই, নিয়া যান! মাছটা ভালো (বাম হাতে বিড়ির শেষটা টেনে ফেলে দিয়ে মহিমকে ইশারা করল জেলে)
আরে না না! পচাঁ মাছ, দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
কি যে বলেন মাস্টার! আপনারে পচাঁ মাছ আমি দিমু! এই কথা কইলেন ক্যামনে! বড় কষ্ট পাইলাম।
মহিমের মন ব্যাপক সরল, কাউকে কষ্ট দিতে চায়না। তাই বাজারের থলে এগিয়ে বলল,
দাও ভাই। আর ঘুরাঘুরি তে যাচ্ছি নে।
জেলে মাছের পুরোটা তুলে দিল মহিমের ব্যাগে।
মহিম কড়কড়ে দু'শো টাকার একটা নোট এগিয়ে দিল জেলেকে।
মাস্টারমশাই এত বড় নোট! আজ আর ভাংতি মিলবে না।
মহিম চটপটে জবাব দিল, তুমি বরং আমার সাথে এসো আমার কিছু কেনাকাটা বাকী।
জেলে মহিমের পিছু নিল, মহিম পকেট থেকে বাজারের ফর্দ বের করে তাতে গভীর মনোযোগ দিল।
অনিমার হাতের লেখা আর জিলাপীর প্যাচ একই জিনিস।
আরো ছটা আইটেম বাকী, এর মাঝে ছেলের টুথব্রাশ আছে।
গত আশ্বিনে ছেলের বয়েস পাঁচে পড়ল। বড় দুষ্ট! নাম
অবৃত।
সব সময় মা মা বলে চেঁচায়। যেন মা ওর কাছে সব।
আদাব, মাস্টার! বাজার শেষ বুঝি
(পাকা দাঁড়িওয়ালা ডান হাতে সালাম দিল মহিমকে, গ্রামের মুয়াজ্জিন আসলাম ঊদ্দিন। বড় ভালো মানুষ)
না না! (হাসিমুখে মহিমের জবাব)
আপনি? বাজার শেষ?
(এদের কথার চাপে বেচারা জেলে আটকে পরে মিনিট দশেক)
কথার মাঝে জেলে এবার বাগড়া দেয়, বাবু আমার টাকা!
মহিম চোখের চশমা ঠেলে পা বাড়ায়। ছেলেটার জন্য দোকান থেকে খাতা, পেন্সিল নেয়।
জেলের টাকা দিয়ে অবশেষে বাড়ির পথ ধরে।
(২)
বাড়িতে ফিরেই হট্টগোলের শব্দ শুনতে পায়। গোয়ালের গরু নাকি তেড়েফুঁড়ে কোথায় ছুটেছে। অনিমা কি আর পারে ওরকম ত্যাদর গরুর সাথে!
অগত্যা বাজার রেখের ছুটতে হলো গরুর সন্ধানে। দেরী করলে হয়ত গ্রামের কার না কার ক্ষেতে মুখ দেবে। তা হলে আবার নানা ফ্যাসাদ।
কয়েক বাড়ি পার হলেই বজ্জাত গরুর দেখা মিলল। অতি উৎসাহে মহাবীর সুরেন কাকুর গোলায় ধানে মুখ দিয়েছে। কাকু, শাসিয়ে দিলেন
-"এই যে, ভাস্তে! এই তোমার গরু, বারবার! বলছি বারবার! এসেই আমার ধানের গোলায় মুখ দেয়।"
-কাকা! কি যে করি, বড্ড ত্যাদর! বেধেঁ রাখলে দড়ি ছিড়ে পালাই। (মহিম এক হাতে গরু সামলাচ্ছে)
-দ্যাখো বাপু, বেশী বেশী হলে হাটে বেচে দাও। এর চেয়ে ঢের ভালো গরু পাবে, বুঝলে!
মহিম বুঝল বটে, গরুটা উগ্র কিন্তু প্রতিদিন দু'বেলা চার লিটার দুধ দেয়।
সামান্য ত্যাদরামি তাই সহ্য করে মহিম।
বাড়ি ফিরে আবারও হট্টগোলের শব্দ পায় মহিম।
এবারের হট্টগোলের কারন মহিম নিজে। বাজারের মাচ আধেক ভাল, আধেক পচাঁ!
মহিম জেলেকে মনে মনে শাপ শাপান্ত করল। কি মনে করে যে নিলাম মাছ!
ঘরের মেঝেতে পা ফেলতেই, অনিমা চেঁচিয়ে উঠল,"কি মিনসের হয়েছে কি? মাছ পচল কি করে? "
ইয়ে মানে, পথে আসতে আসতে পচে গ্যাছে! এতটা পথ ক্লান্ত ছিল না! "
অ্যাই, একদম মশকরা করবে না বলছি! মাছ কেনা কি দরকার ছিল? হ্যা!
মানে, ইয়ে, ঐ যে, জেলে ধরিয়ে দিল।
অনিমা, আর কিছু বলল না। মহিমকে শিখিয়ে শিখিয়ে এবার অনিমা নিজেই ক্লান্ত। সোজা রান্নাঘরে চলে গেল সে।
বাবা, মাছ পচে কেন?
অবৃত এসে মহিমের বাম হাত ধরে টানাটানি শুরু করল।
অবৃত কে কোলে নিয়েই বলল, মাছ জলে থাকে। জল ছাড়া একদম বাঁচে না। কিন্তু ঠিক যখন ওকে জল থেকে তোলা হয় তখন বেচারা মরে যায়। একটা সময় পর ধীরে ধীরে ওটা পচঁতে থাকে। নাও চল এবার হাত-মুখ ধুয়ে আমরা পড়তে বসি।
দুইয়ের নামতা টা মনে আছে বাবা......
(অবৃত কে কোলে নিয়ে হাত-মুখ ধুতে এগিয়ে যায় মহিম, ওদের কথার তীব্রতা কমে আসে)
(সমাপ্ত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন