গলায়
পাশে চাকু টা চকচক করছে। যে ধরে আছে চাকু, আবছা আধাঁরে তার বয়েস আন্দাজ সতেরো থেকে
পঁচিশ!
বাড়ির
কাছাকাছি এসে এমন একটা পরিস্থিতি তে পড়তে হবে মোহাইমেন সাহেব কল্পনাও করতে পারেন
নি। কিন্তু এখন তাকে তো বাঁচতে হবে!
নীচু
গলায় দাবী করে যাচ্ছে ছেলেটি, " জলদি বের করেন যা আছে! না হলে গলায় চালিয়ে
দেবো! "
আবছা
আধাঁরে কেউ কাউকে স্পষ্টত দেখতে পাচ্ছে না। হাতের স্মার্ট ওয়াচ, স্মার্টফোন খুব
দ্রুত বের করে দিতে হলো।
ছেলেটা
এই দুটো জিনিস হাতে পেয়েও প্রায় কোবরা সাপের মত ফুঁসে উঠল!
মানিব্যাগ?
মানিব্যাগ টা আগে বের কর!
মোহাইমেন
মানিব্যাগ ধীরেধীরে বের করে দিলেন।
পাশ দিয়ে
ফোনে কথা বলতে বলতে এক যুবক এর মাঝে দুজন কে ক্রস করছিল। তাদের দুজনের মুখোমুখি হয়ে একটু থেমে সে আবার
আগের চেয়ে দ্রুত পা ফেলে বিপরীত দিকে চলে গেল। বলা ভাল, বিপদে দেখে সরে পড়ল।
মোহাইমেনের
মানিব্যাগে পনের হাজার টাকা নগদ ছিল। আজকে উঠিয়েছিলেন। আগামীকাল শুক্রবার।
বাড়ির
জন্য বাজার করতে হবে তাকে। তাই ফেরা পথে বুথ থেকে টাকা উঠিয়ে এনেছেন তিনি।
ঐ
ব্যাটা! আর টাকা নাই! গলায় আগ্রাসী ভাব ছেলেটার।
না বাবা!
আর নাই!
" চুপ শালা! আমি
তোর বাবা না! বেশী কথা বলবি না। আমি এইখানে দাঁড়াইসি। তুই সোজা যাবি গা! এর মাঝে যদি
পেছনে লোকজন আনিস তোর ভুঁড়ি কোরবানির গরুর মত করে দিমু!"
আচ্ছা!
আসব না। ভয়ে ভয়ে দ্রুত পা ফেলেন মোহাইমেন। টাকা গেছে যাক, শারীরিকভাবে তো আক্রমণ
করে নি এই কপাল!
কয়েক গজ
এগিয়ে যেতে না যেতে টহল পুলিশের একটা গাড়ি একেবারে মুখোমুখি পড়ে গেল তার।
বিধ্বস্ত
মোহাইমেন কে দেখে একজন অফিসার গাড়ী থেকে চেঁচিয়ে উঠলেন, " কি হয়েছে?"
মোহাইমেন
কান্নাজড়িত গলায় বললেন, হাইজ্যাকার!
সাথে
সাথে দুজন গাড়ি থেকে ঝটপট নেমে এলেন। অফিসারের সাথে আরেকজন কে ওয়াকিটকি তে কথা
বলতে দেখা গেল।
আনুমানিক
চেহারার বিবরণ দিতে না দিতে আরো সাইরেন শোনা গেল কাছাকাছি দূরত্বে। র্যাবের একটা
টহল দল পাশের ফেলে আসা গলিতে ঢুকে যেতে না যেতে সেখানে গুলির শব্দ। ধুমম! সাইরেন
বাজছে তখনো!
মোহাইমেনের
বাড়ির ঠিকানা পুলিশের অফিসার ঠুকে নিলেন নোটবুকে। র্যাবের টহলদারি দল টির
ক্যাপ্টেন ফিরে এসেছেন।
সদর্পে
বললেন, হাইজ্যাকার এনকাউন্টারে ডেড! সাথে মোহাইমেন সাহেবের মানিব্যাগ, ঘড়ি এবং ফোন
তিনটি ই উদ্ধার হয়েছে।
তবে এসব
বুঝে পেতে কাল তাকে থানায় একবার যেতে হবে।
র্যাবের
ক্যাপ্টেন জিজ্ঞাসা করলেন, মোহাইমেন শারীরিকভাবে ঠিক আছেন কিনা? তাদের গাড়ি
প্রয়োজনে বাড়ি পৌঁছে দেবে। ভয় পাবার কোন কারণ নেই।
বাড়ি
পৌঁছতে না পৌঁছতে সাইরেনের শব্দে বাড়ির আশেপাশে জানালা, দরজা প্রায় সবখানে
প্রতিবেশীরা জড়ো হয়েছেন। এত রাতে একজন ভদ্রলোকের বাড়ির সামনে যদি পুলিশ আসে তা হলে
সেটা উঁকিঝুঁকি না দিয়ে থেকে পারা যায়?
পুলিশের
ধমকে প্রতিবেশী সবাই যে যার মত ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।
মোহাইমেন
সাহেবের ছেলেমেয়ে বাইরে আতংকিত চোখে পুলিশের কাছে পুরো ঘটনা শুনে নিল। তাদের কে
কাল থানায় গিয়ে জিনিশপত্র গুলো আনতে বলে তারা চলে গেল।
পরিস্থিতি
অনেকটা শান্ত হয়ে এল।
কিন্তু
কান্নার রোল পড়ল তার পরের দিন সকালে।
মোহাইমেন
সাহেবের বাড়ি থেকে দূরে তার ই প্রতিবেশী সালাম উদ্দিনের বাড়ি থেকে। তার ছেলে গতকাল
রাতে র্যাবের এনকাউন্টারে মারা গেছে।
(গল্পের প্রতিটি চরিত্র
এবং ঘটনা কাল্পনিক, এর সাথে জীবিত, মৃত কিংবা অর্ধমৃত কারো সাথে কোন মিল নেই। যদি মিলে
থাকে তা একান্ত কাকতালীয়)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন