শুক্রবার, ১১ মে, ২০১৮

গল্পঃ অমানুষ

খুব সন্তর্পণে পা ফেলে চলেছেন একজন।
ট্রাভেল ব্যাগ টা এত্ত ভারী যে সেটা বয়ে নিয়ে যেতে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। বয়েস আন্দাজ ত্রিশ কিন্তু এমন ভারী লাগেজ টানতে গেলে স্বাভাবিকের চেয়ে ঢের বেশী দক্ষতা আর শক্তির খুব প্রয়োজন। বৌয়ের সাথে রাগ করে বেড়িয়ে পড়েছেন বাসা থেকে। ঠিক করেছেন আজ এভাবে আর না। শরীরের সমস্ত লোম রাগে, ক্ষোভে দাঁড়িয়ে গেছে। প্রচণ্ড ঘেমে চলেছেন তিনি। ফুল শার্টের হাতা গুটিয়ে একটা সিএনজি হাতের ইশারায় ডাকলেন।
ঐ! যাবে?
কই যাবেন?
সায়েদাবাদ!
একটু বাড়াইয়া দিয়েন, গরমের দিনে সিএনজি চালাইতাছি ভাই। সোজা কথা না, প্রত্যেকটা পার্ট আমার গরমে শ্যাষ!
 আচ্ছা, আচ্ছা ঠিকাছে। আমার ব্যাগ টা আগে ওঠাও হাতে হাতে।
সিএনজি ওয়ালা নিজের রুমালে মুখ মুছতে মুছতে ভদ্রলোকের সাথে ব্যাগ ধরল।
খাইসে! এত্ত ভারী ক্যান? মনে হয় লোহা নিয়া যাইতাছেন!
তোমার কোন সমস্যা?
না ভাই!  ( জ্বীভ কেটে কানে হাত দিল সিএনজিওয়ালা)
ব্যাগ সিএনজি তে তুলে ইঞ্জিন চালু হল। রাতের দিকে রাস্তা কিছুটা ফাঁকা। তবুও নাইট কোচ আর ট্রাকের যথেষ্ট ছোটাছুটি চলছে পথে।
ভদ্রলোকের ঘাম সিএনজির গতিতে উড়ে আসা বাতাসে শুকিয়ে যেতে লাগল, এখন সে ঠান্ডায় মনে হচ্ছে শীত লাগছে।
এত্ত রাতেও সিএনজি চালান?
ভাই, পেটের দায়ে! পেট আমার একার না। পরিবারে আরো মানুষ আছে। বড় মাইয়া টার সামনে এস এস সি ফাইনাল। ভাল খাওয়াদাওয়া না করলে পড়ালেখা করব ক্যামনে কন!
ভদ্রলোক কপালের ঘাম মুছে নিলেন রুমাল বের করে।
আচ্ছা, তোমার সাথে তোমার বৌয়ের ঝগড়া হয় না?
হে হে.. সি এন জি ওয়ালা হাসল। কি যে কন? হইব না ক্যান! একজন না একজন মানাই লই। আমরা ঝগড়াফসাদ করলে বাচ্চারা মন খারাপ করে। তাছাড়া নিজেদের ও সমস্যা। তাই সমস্যা হইলে মানাই নেই।
ভদ্রলোক একটু ভেবে বললেন, " কেন, খুব রেগে যাও না ভাই!"
হেহে.. হ, একদিন এমন হইসিল। খুব রাইগা গেছিলাম। মনে হইসিল খুনখারাপি কইরা যেদিকে দুইচোখ যায় চইলা যাই!
তারপর?
তারপর আর কি! মনে মনে ভাবলাম এগুলা খালি খালি। দিন শেষে ঠিকি একজন আরেকজনের খোঁজে নেই। কি করছো? খাইসো? বাচ্চারা পড়ালেখা করতাছে না করে নাই! হে হে...
ভদ্রলোক চুপ হয়ে গেলেন।
সিএনজি সায়দাবাদ ক্রস করে কাঁচপুর ব্রীজ ক্রস করে ফেলেছে। শীতলক্ষ্যার ঠান্ডা বাতাস শরীরে গেঁথে যাচ্ছে ভীষণভাবে। মন টা ভাল হয়ে ভদ্রলোকের।
সিএনজি ওয়ালা বলে উঠলেন, আর কই যাবেন। ব্রীজ তো ক্রস কইরা ফালাইসি। এর বেশী আমিও যামু না ভাই।
আরেকটু সামনে।
অনেকটা এগিয়ে লোকশূন্য একটা স্থানে সিএনজি থামালেন ভদ্রলোক। বললেন, ভাই ব্যাগ টা নামান আসেন একটু!
সিএনজি ওয়ালা হেডলাইট চালু করে নেমে এসে ব্যাগে হাত লাগাল। আরো ভারী হয়ে উঠেছে ব্যাগ।
কত হয়েছে?
মিটার দেইখা নেই! উ, ৪৫০ টাকা। আর বিশটা টাকা বাড়াই দিয়েন। এত রাইতে এত্ত দূরে আইছি।
পাঁচশ টাকার নোট টা হাতে দিয়ে ভদ্রলোক বললেন, পুরোটা রাখেন।
সালাম স্যার, আপনে লোক অনেক ভাল। সিএনজি ওয়ালা চলে গেল।
ভদ্রলোক টেনে হেঁচড়ে ব্যাগ টা পাশের ডোবায় নিয়ে গেলেন। তারপর এক ধাক্কায় সেটা ডোবায় ফেলে দিলেন।
ঝপাৎ শব্দ করে সেটা ডুবে গেল পানিতে। মোবাইলের আলো ফেলেও আর দেখা গেল না ব্যাগ টা। সীম কার্ড টা ভেঙে চুরমার করে ফেললেন।
কোথায় যাবেন এখন ঠিক নেই! অন্তত, আর ঢাকায় ফিরবেন না।
হঠাৎ কেউ মনে হয় পেছন থেকে ভদ্রলোকের নাম ধরে ডাকল, ইফতেখার! আমাকে এভাবে পচাঁ ডোবায় ফেলে যেও না। আমি আর ঝগড়া করব না। তোমার সাথে অফিসের পি এস কে নিয়ে আর আজেবাজে বলব না! বিশ্বাস করো!
ইফতেখার ভয়ে চিৎকার করে উঠলেন। অরণীর গলা তিনি নিজ হাতে চেপে ধরেছিলেন ততক্ষণ, যতক্ষণে মুখ থেকে গ্যাঁজলা বের না হয়।



(গল্পের প্রতিটি ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। এর সাথে জীবিত, মৃত, অর্ধমৃত কোন ব্যক্তির সাথে কোন মিল নেই। যদি মেলে তা একান্ত কাকতালীয় এবং অনভিপ্রেত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...