পার্বতীর
বিয়ে এই সপ্তাহে অথচ যার সাথে বিয়ে হবে তাকে সামনাসামনি দেখা হয়ে উঠেনি ওর।
ভদ্রলোক
খুব ব্যস্ত, দিনরাত নাকি অফিস করে বেড়ান। কাজ আর কাজ! এছাড়া আর কিছু তিনি নাকি
বোঝেন না। চাকরী তে ঢুকেই দ্রুত প্রমোশন পেয়েছেন। এটাও নাকি বেশ বিষ্ময়কর!
ছেলের
প্রশংসা করতে করতে বড় কাকা একেবারে কান ঝালাপাল করে দিয়েছেন।
আরে ছেলে
দেখতে সুন্দর! গড়াপেটা শরীর, উঁচু লম্বা আর কি ভদ্র রে!
একটা
লাইনের বেশী দুটো কথা বলে না!
গুরুজনদের
কে তার কি সম্মান!
আমার কথা
ই ধর না, সেদিন বাড়ি গিয়েছি। সবে মাত্র অফিস থেকে ফিরেছে, দেখে ই বোঝা যাচ্ছিল
মারাত্মক ক্লান্ত।
তবুও
আমাকে দেখেই কাকা.. কাকা.. করে অস্থির। ফিরে আসার আগ পর্যন্ত আমাকে পথ টা এগিয়ে
দিয়ে গেল। (বলতে বলতে কাকা পানের বাটী থেকে মুখে পান পুড়লেন)
পার্বতীর
মা-বাবা পাশে ই বসে। তারাও খুশী হবু জামাই বাবাজী কে নিয়ে।
এমন ছেলে
আজকালকার দিনে পাওয়া যায় না। পার্বতীর কপাল ভাল! এমন ছেলে পাচ্ছে।
পার্বতীর
বাবা বাধা দিয়ে বললেন, " আমার মেয়েও কম কি সে! অনার্স ফাইনাল দিল তাতে
ফার্স্ট ক্লাস সামনে এম বি এ করে চাকরী ও করতে পারবে। "
এই
পর্যন্ত সব ঠিকঠাক কিন্তু এম বি এ করবে শুনে ছেলের পরিবার বেঁকে বসল।
মেয়ের মা
চিন্তিত!
বিয়ে টা
ভেঙে যাবে?
পার্বতীর
বাবা অবশ্য এ নিয়ে কোন কথা বলছেন না। এরেঞ্জ ম্যারেজ, তাই এখানে কিন্তু এবং
অনেককিছু ই নির্ভর করে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার ব্যাপারে।
অনেক
প্রশংসা করা কাকা ও এবার মুখ চুন করে বসে। ভাতিজির সামনে একটা কথাও বলতে পারছেন
না। ছেলের এত্ত প্রশংসা করেছিলেন, ছেলে এই! ছেলে সেই! এখন সেসব কই?
বিয়ের
কেনাকাটা প্রায় থেমে গেলো মাঝপথে। আত্মীয়স্বজন যারা এসেছিল বিয়ের কারণে তারাও
হতাশ! তাদের কথা এতকিছু হয়ে গেল এরপরেও এমন কথা। মেয়ের মাসি তো বলেই ফেললেন,
" হ্যা গো! মরি মরি! এমন ছেলে ক্যামন গো, ভালই তো শুনেছিলাম।" এমন কথা
শুনে মনটা ই খারাপ হয়ে গেল পার্বতীর।
পার্বতী
সোজা কাকার কাছে গিয়ে বলল, কাকাই! ছেলেটার ফোন নম্বর টা দেবে?
ফোন
নম্বর! কাকা একটু অবাক না হয়ে পারলেন না। বিয়ে যেখানে থেমে যাচ্ছে সেখানে ছেলের
ফোন নম্বর দিয়ে কি করবি?
দাও না
কাকাই!
রেস্টুরেন্ট
অপেক্ষারত পার্বতী। মিনিট পাঁচেক পরে ই আগমন অতিথির। তবে আসামীর জন্য কাঠগড়া
থাকলেও এখানে একটা চেয়ার। প্রেক্ষাপট টা ও ভিন্ন। না আছে কোন উকিল, না আছে বিচারক!
হ্যালো,
আমি রুদ্র, সাথে সেন। ইন টোটাল রুদ্র সেন।
চেয়ারে
আঙুল দেখিয়ে, বসতে পারি? প্লিজ!
পার্বতী
ইশারায় বসতে বলল। তারপর বলল, কফি খাবেন?
হ্যাঁ!
কফির
ধোঁয়া উড়ছে, সেই সাথে রেস্টুরেন্ট এর বাইরে বৃষ্টি।
শুনলাম,
আপনি নাকি চান না আমি চাকরী করি!
শুনেছেন?
মানে সেটা কনফার্ম!
ঐ একজন
বললেই চলে! ( পার্বতীর গাঢ় অভিমান) আপনি কেমন মানুষ? যে চায় না নিজের হবু বউ
চাকরী করুক! (কথাটা বলতে বলতে কফির মগ টা রাগে একদিকে মৃদ্যু ঠেলে দিল পার্বতী)
সে কি!
আমি ই বলেছি চাকরী, পড়াশোনা না করতে? এটা আপনি নিশ্চিত!
হ্যাঁ,
নিশ্চিত (পার্বতীর অভিমান)
তাহলে
আপনার জন্য ইভিনিং এম বি এর এডমিশন ফরম টা কি আমার ভূত তুলে এনেছে! ( পকেট থেকে
খাম বের করে সেটা মুচকি হেসে পার্বতীর দিকে এগিয়ে দিল রুদ্র)
অবাক
চোখে সেটা হাতে নিয়ে দ্রুত খামটা খুলে ফেলল পার্বতী।
রুদ্র তো
ঠিকি বলেছে, ফরম তো ঠিকি এনেছে সে।
তাহলে?
আসলে
আমার পরিবারে কেউ চায় না যে তার ছেলের বউ অফিস করুক কিংবা পড়াশোনা করুক। সেটা
অবশ্য মিথ্যে নয়! তবে এটা কেবল আমাদের পরিবারের কথা নয়। আমাদের মেন্টালিটি টা আজো
সেকেলে হয়ে আছে। বৌ বাড়ি থাকবে, রান্না করবে, বাসন মাজবে, শশুর-শাশুরির পা টিপে
দেবে। এটা ভাবা ভুল কিংবা অন্যায় কোনটা বলব জানি না।
ট্রেডিশন
টা আমাদের সব, মানে আমাদের বাঙালী পরিবার গুলোর।
আজ আমি
এখন বলছি। কেনাকাটা টা চালিয়ে যাও। বিয়ে পরশু ই তো!
হায়
রে! শুনেছি লগ্নের আগে দেখাদেখি নিষেধ।
কে
বলেছে? (পার্বতীর অভিমান)
আমার
ঠাকুমা!
সে
কোথায়?
স্বর্গে।
পার্বতী
হেসে ফেলল।
(গল্পের সমস্ত ঘটনা ও
চরিত্র কাল্পনিক, এর সাথে জীবিত, মৃত, অর্ধমৃত কারো কোন মিল নেই। যদি থেকে থাকে তা
কাকতালীয়)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন