এত্ত
দেরী করলা ক্যান? (লোকটার মুখে মারাত্মক বিরক্তি)
কখন
থেইকা স্টেশনে আছি! পা আমার ধইরা গেল! তোমার ফোন কই? বন্ধ ক্যান?
ভাইজান
তো বাড়িতে! তারে লুকায়া ক্যামনে আসি! ওহ! ফোনে চার্জ শ্যাষ! ব্যাটারি তে চার্জ
দিতে মনে ছিল না।
আইচ্ছা
দেরী কইরো না এখন তাড়াতাড়ি টিকিট ধরো!
কই যামু
আমরা?
পান-সিগারট
খাওয়া কালো দাঁত বের করে মফিজ হাসে, " কই আবার, ইপিজেড! ঐখানে ই তোমার চাকরী
পাক্কা "
জমিলার
অস্বস্তি লাগে তবুও সে ফিনিক হাসে। এখন সে বাড়ির বাইরে এসে গেছে ফেরার উপায় আছে
তবুও গাঁয়ের লোকে কি বলবে? আর ভাইজান! অসুস্থ ভাই! একটা কিডনি নিয়ে বেঁচে আছে। এত
বড় ধাক্কা আর হয়ত সামলাতে নাও পারেন।
ট্রেনের
হুইসেল ছাড়ল বেশ জোরেশোরে। লোকজনের ভীড় বেড়ে গেলো প্লাটফর্মে সেই সাথে ছুটোছুটি,
মালামাল আনা নেয়া।
ছোট এক
চা বিক্রেতা, " চা লইবেন চা " বলে কিছুক্ষণ চেঁচিয়ে গেলো জমিলার
আশেপাশে।
ট্রেনের
ভেতর বসে জমিলা। আগে কখনো বাড়ির বাইরে যায়নি ও। ভয়ে দুরু দুরু বুক কাঁপছে। চিন্তা
একটা ই, ইপিজেড গিয়ে একটা চাকরী নিবে সে। এরপর ভাইজান-ভাবী কে ফোন করে সুখবর টা
দেবে। ভাইজান রাগ করলেও বোনের চাকরী দেখে রাগ ভুলে যাবে।
কচরমচর
করে লবন-মরিচ মাখানো শসা খাচ্ছিল নুরু। এক পিস জমিলার দিকে এগিয়ে বলল, খাইবা নাকি!
খাইতা মাশাল্লা ভাল। ( বলেই আবার কচরমচর শব্দে শসা খেতে লাগল নুরু)
নুরু,
জমিলার খুব পরিচিত কেউ আবার কেউ না। স্কুলে পড়ার সময়ে দুজনে একই ক্লাসে পড়ত। এরপর
সে হুট করে বলল জমিলা কে তার ভাল লাগে। নায়ক ওমর সানির মত চুল লম্বা করেছিল একবার।
হেডমাস্টার স্যার একদিন রেগে নিজে ই কাঁচি দিয়ে সে চুল কেটে দিলেন। তারপর নুরু
রাগে-ক্ষোভে সেই যে স্কুল ছাড়ল আর ফেরে নি। এদিকে জমিলার ভাইজান নুরুর উপর ছিল
ক্ষেপে। নিজের বোনকে নাকি ভালোবাসি বলেছিল ওই নুরু!
অবশ্য
এখন আর সেদিন নেই, নুরু চট্টগ্রাম থাকে। যেখানে কি করে কে জানে! মাস ছয় পর বাড়ি
আসে। বাজার ঘাট করে আবার ফিরে যায় চট্টগ্রাম। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলে বড় ব্যবসা আছে।
ইপিজেডেও নাকি তার পরিচিত অনেক!
কড়া শেকল
টানার শব্দ হল। জমিলার ক্ষুধা লেগেছে। সাথে শুকনো মুড়ি আর খেঁজুরে গুড় আছে। এই
সময়ে মুড়ি খেলে পানি পাবে কই!
নুরু
জানালা দিয়ে বাইরে বিড়ি ফুঁকে যাচ্ছে। থাক, মুড়ি খামু না বলে আবার ব্যাগ মাথায়
দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে জমিলা।
ট্রেন
থামল রাত ১০ টা। ভাষা তো দূর এখানে নুরু ছাড়া আর কাউকে চেনে না জমিলা।
জলদি
আসো। নুরু জমিলার হাত টেনে ধরে এগিয়ে চলে স্টেশনের বাইরে। একটা প্রাডো দাঁড়িয়ে ছিল
একটু দূরে। সেখান থেকে হাত নেড়ে ইশারা করে কেউ।
নুরু,
জমিলার হাত ধরে জোর টান দেয়, " জলদি আসো! জলদি!"
হেঁচকা
টান সামলে দুজনে উঠে বসে প্রাডো তে। ভেতরে এসি চলছে!
টু লেইট
নোরো! ইউ বেটার কাম আর্লি!
জমিল
দেখতে পায় একজন বিদেশী, সাথে আরো একজন। নুরু সামনের সীটে বসে ড্রাইভারের সাথে।
জমিলা কে দেয়া হয় পেছনে।
বাড়িতে
খবর রটে যায় বিকেলের দিকে। জমিলা কে কোথাও না পেয়ে জমিলার ভাবী পাড়া-প্রতিবেশীদের
বাড়ি খোঁজ নিতে থাকে কিন্তু জমিলা কে আর পাওয়া যায় না।
জমিলার
ভাই পুলিশে খবর দেয়। জমিলার ফোন ট্রাক করে পুলিশ কিন্তু তাতেও নতুন কিছু পাওয়া যায়
না। জমিলা একেবারে বেপাত্তা!
নুরু এর
মাঝে বাড়ি এসেছে দুইবার। বাড়িতে নতুন টিভি এনেছে এইবার। জমিলা কে পাওয়া যায়নি বলে
সেও খানিকক্ষণ আফসোস করে জিহ্বাগ্র দিয়ে চুকচুক শব্দ করে যায়। হঠাৎ একটা ফোন পান
জমিলার ভাই। ততদিনে পুলিশ ও কেইস থেকে শান্ত। ক্লু না পেয়ে আর কত ই বা এগিয়ে চলা
যায় কেইসে।
জমিলা
মারা গেছে! আপনে কি ওর ভাই?
জমিলার
ভাই কেঁদে চিৎকার করে উঠে!
ফোনের
ওপাশে কলার বলে, আমি কোম্পানীর ড্রাইভার ছিলাম। এখন আর নাই, তবে আপনার বোনের নাম
জমিলা। নুরু তারে নিয়া এক বিদেশী সাবের হাতে তুইল্ল্যা দেয়। আমি গরীব মানুষ, কষ্ট
পাইলেও সাহস কইরা তারে বাঁচাইতে পারি নাই। রক্ত পড়া বন্ধ হইতাছিল না। আমি নিজে
তারে মেডিকেলে নিয়া যাই। লাশটা এখনো বেওয়ারিশ হইয়া আছে।
এই ফোনের
পর পুলিশের কসরত বাড়ে, ড্রাইভার কে ধরা হয় তার গ্রামের বাড়ি থেকে পরে তাকে ছেড়ে
দেয়া হয়। পিম্প নুরুকে ধরা যায় না। মোটা টাকা পেয়ে সে ব্যাংকক গেছে দিন সাতেক আগে।
জানা গেল না সেই বিদেশী কারা এবং কোথা থেকে এসেছিল। ড্রাইভার নিজেও তাদের চিনত না।
(গল্পের সমস্ত ঘটনা ও
চরিত্র কাল্পনিক, এর সাথে জীবিত, মৃত, অর্ধমৃত কারো কোন মিল নেই। মিলে গেলে তা একান্ত
কাকতালীয়)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন