শুক্রবার, ১১ মে, ২০১৮

গল্পঃ রক্ত



অফিসের ফাঁকে ফাঁকে উঁচু থাই গ্লাসের বাইরে তাকিয়ে থাকাটা আজকাল ব্যাংকার ইশতিয়াকের একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অ্যাশ কালারের থাই গ্লাসের ভেতর টা বাইরে থেকে খুব ভাল দেখা না গেলেও অফিসের ভেতর থেকে খুব ভাল দেখা যায়। ইশতিয়াক হাতে কফির মগ নিয়ে এখানে হরদম দাঁড়িয়ে থাকে ততক্ষণ, যতক্ষণ কফিটা শেষ না হয়ে আসে।
আসলে দেখার মত কি আছে?
সিগনাল, জ্যাম, শত শত মানুষের ছোটাছুটি! মাঝেমাঝে এক্সিডেন্ট। রিক্সাওয়ালা কিংবা ড্রাইভারের মাঝে হাতাহাতি। শহুরে জীবনযাপন।
ইশতিয়াক!  ভাই, এভাবে থাকবেন না এখানে। বস একবার দেখতে পেলে রুমে ডেকে ঝাড়ি দেবে। (পেছনে এসে পিঠে হাত দিলেন সমীরণ)
সমীরণ দা!
কি ভাই? আজকাল ধ্যানে! কাজে লেগে যাও। বস অফিসে বুঝলে, এভাবে দাঁড়িয়ে আছো দেখতে পেলে কেলেঙ্কারি করে ফেলবে!
অফিসের উল্টোদিকে একটা দাতব সংস্থার অফিস। কয়েকটা হাই ক্লাস শপিং মল, একটা রেডিও স্টেশন আর কিছু কফি হাউজ। তাই ভীড় একেবারে লেগে থাকে।
ইশতিয়াক কফির মগ টেবিলে রেখে চলে গেলেন নিজের ডেস্কে।
ইউনিভার্সিটি লাইফ টা ভালো ই ছিল। অন্তত এই বিকেলবেলা কম্পিটারের সামনে বসে এক্সেলে টাকার হিসেব কষতে হতো না।
মাইনে না থাকলে আজকাল কেউ কাউন্ট করে না, নয়ত এমন টাই বাঁধা জীবন ইশতিয়াকের অসহ্য লাগে।
অফিসে ভীড় কমে আসে। থাই গ্লাসের পাশে এসে কফি হাতে আবার দাঁড়ায় ইশতিয়াক। বাইরের ল্যাম্পপোস্ট গুলোতে আলো জ্বলে উঠেছে। গাড়ীর হেডলাইট গুলো জ্বলছে রাস্তায়। সিগনাল, জ্যাম পুনঃপুন চলছে।
একে একে সবাই চলে যেতে অফিস খালি হয়ে এল। বস আগেই বেড়িয়ে গেলেন তার মেয়ের জন্মদিন। তারপর ই সমীরণ দা', বৌকে নিয়ে তার আজ নাকি শপিং।
দারোয়ান এসে পেছন থেকে ডাক দিল, স্যার! তালা দিমু গেটে? আরো থাকবেন?
নাহ! কফির মগ ডেস্কে রেখে ব্লেজার হাতে বেড়িয়ে এলেন ইশতিয়াক।
শহর টা দিনশেষে অচেনা লাগে তার কাছে। ট্যাক্সি ডাকতে যাবেন হঠাৎ
দেখতে পেলেন সাদাছড়ি হাতে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন সিগনালের অপেক্ষায়। তার সাথের সবাই পার হয়ে গেলেও তিনি অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে আছেন কেউ তাকে পার করে দিচ্ছে না বলে। আসলে এই রাতে তিনিও কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। পার করে দেবার নাম করে অশ্লীল স্পর্শ করা কিছু নীচু মানুষ তার কাছাকাছি ছড়িয়ে আছে এখানে।
ইশতিয়াক ট্যাক্সি তে না উঠে দ্রুত এগিয়ে গেলেন মহিলার কাছে; বললেন, "আপু, আপনাকে রাস্তা পার করে দিতে পারি?"
মহিলা হয়ত বিশ্বাস করতে পারলেন না, বললেন, আমার অফিসের একজন মেয়ে আছে ও এলে ই পার করে দেবে আমাকে!
ইশতিয়াক কিছুটা লজ্জিত হলেন মনে মনে। ভাবলেন, গায়ে পড়ে হেল্প করতে যাওয়া টা মনে হয় ঠিক হয়নি। আশেপাশে টঙে চা খেতে খেতে বিড়ি ফুঁকতে থাকা কিছু অমানুষ দাঁত বের করে হায়েনা হাসি হাসতে দেখে বুঝলাম কেন তিনি আমাকে " না " বলে দিলেন। মহিলা অন্ধ! বিশ্বাস করতে পারেন না আমাদের সমাজ কে।
মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে ফিরে আসছিলাম ঠিক তখনি গাড়ির কড়া ব্রেক কষার শব্দ আর কোন এক মহিলার আর্তচিৎকার কানে ভেসে এলো। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম সেই অন্ধ ভদ্রমহিলা! একা একা রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে পিচে পড়ে আছেন।
ছুটে গেলেন ইশতিয়াক। ট্যাক্সি তার দাঁড়া করানো ছিল, আর সবাই কে হেল্প করতে বলে তিনি মহিলা কে নিজের ট্যাক্সি তে তুললেন। ঢাকা মেডিকেলে!
ট্যাক্সি ছুটল।
রাতে ভদ্রমহিলার জ্ঞান ফিরল। তার ছেলে, স্বামী অপেক্ষা করছিল পাশে। জ্ঞান ফিরতে তিনি জানতে চাইলেন আমাকে কে এনেছে হাসপাতালে?
ডাক্তার সেখানে ই ছিলেন, বললেন, " একটা ছেলে। ইভেন, সে এক ব্যাগ রক্ত ও দিয়েছে আপনার জন্য, আচ্ছা চেনেন তাকে? "
ওকে ডাকবেন একবার! ইশতিয়াক রুমে এসে ভদ্রমহিলার পাশে বসতে না বসতে কাঁপা হাতে তিনি ইশতিয়াকের হাত ধরে বললেন, " এ আমার ভাই, রক্তের ভাই"।



( গল্পের সমস্ত ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক, এর সাথে জীবিত, মৃত, অর্ধমৃত কারো কোন মিল নেই, যদি মিলে যায় তা একান্ত কাকতালীয়)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...