শুক্রবার, ১১ মে, ২০১৮

গল্পঃ এনকাউন্টার



গলায় পাশে চাকু টা চকচক করছে। যে ধরে আছে চাকু, আবছা আধাঁরে তার বয়েস আন্দাজ সতেরো থেকে পঁচিশ!
বাড়ির কাছাকাছি এসে এমন একটা পরিস্থিতি তে পড়তে হবে মোহাইমেন সাহেব কল্পনাও করতে পারেন নি। কিন্তু এখন তাকে তো বাঁচতে হবে!
নীচু গলায় দাবী করে যাচ্ছে ছেলেটি, " জলদি বের করেন যা আছে! না হলে গলায় চালিয়ে দেবো! "
আবছা আধাঁরে কেউ কাউকে স্পষ্টত দেখতে পাচ্ছে না। হাতের স্মার্ট ওয়াচ, স্মার্টফোন খুব দ্রুত বের করে দিতে হলো।
ছেলেটা এই দুটো জিনিস হাতে পেয়েও প্রায় কোবরা সাপের মত ফুঁসে উঠল!
মানিব্যাগ? মানিব্যাগ টা আগে বের কর!
মোহাইমেন মানিব্যাগ ধীরেধীরে বের করে দিলেন।
পাশ দিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে এক যুবক এর মাঝে দুজন কে ক্রস করছিল।  তাদের দুজনের মুখোমুখি হয়ে একটু থেমে সে আবার আগের চেয়ে দ্রুত পা ফেলে বিপরীত দিকে চলে গেল। বলা ভাল, বিপদে দেখে সরে পড়ল।
মোহাইমেনের মানিব্যাগে পনের হাজার টাকা নগদ ছিল। আজকে উঠিয়েছিলেন। আগামীকাল শুক্রবার।
বাড়ির জন্য বাজার করতে হবে তাকে। তাই ফেরা পথে বুথ থেকে টাকা উঠিয়ে এনেছেন তিনি।
ঐ ব্যাটা! আর টাকা নাই! গলায় আগ্রাসী ভাব ছেলেটার।
না বাবা! আর নাই!
" চুপ শালা! আমি তোর বাবা না! বেশী কথা বলবি না। আমি এইখানে দাঁড়াইসি। তুই সোজা যাবি গা! এর মাঝে যদি পেছনে লোকজন আনিস তোর ভুঁড়ি কোরবানির গরুর মত করে দিমু!"
আচ্ছা! আসব না। ভয়ে ভয়ে দ্রুত পা ফেলেন মোহাইমেন। টাকা গেছে যাক, শারীরিকভাবে তো আক্রমণ করে নি এই কপাল!
কয়েক গজ এগিয়ে যেতে না যেতে টহল পুলিশের একটা গাড়ি একেবারে মুখোমুখি পড়ে গেল তার।
বিধ্বস্ত মোহাইমেন কে দেখে একজন অফিসার গাড়ী থেকে চেঁচিয়ে উঠলেন, " কি হয়েছে?"
মোহাইমেন কান্নাজড়িত গলায় বললেন, হাইজ্যাকার!
সাথে সাথে দুজন গাড়ি থেকে ঝটপট নেমে এলেন। অফিসারের সাথে আরেকজন কে ওয়াকিটকি তে কথা বলতে দেখা গেল।
আনুমানিক চেহারার বিবরণ দিতে না দিতে আরো সাইরেন শোনা গেল কাছাকাছি দূরত্বে। র‍্যাবের একটা টহল দল পাশের ফেলে আসা গলিতে ঢুকে যেতে না যেতে সেখানে গুলির শব্দ। ধুমম! সাইরেন বাজছে তখনো!
মোহাইমেনের বাড়ির ঠিকানা পুলিশের অফিসার ঠুকে নিলেন নোটবুকে। র‍্যাবের টহলদারি দল টির ক্যাপ্টেন ফিরে এসেছেন।
সদর্পে বললেন, হাইজ্যাকার এনকাউন্টারে ডেড! সাথে মোহাইমেন সাহেবের মানিব্যাগ, ঘড়ি এবং ফোন তিনটি ই উদ্ধার হয়েছে।
তবে এসব বুঝে পেতে কাল তাকে থানায় একবার যেতে হবে।
র‍্যাবের ক্যাপ্টেন জিজ্ঞাসা করলেন, মোহাইমেন শারীরিকভাবে ঠিক আছেন কিনা? তাদের গাড়ি প্রয়োজনে বাড়ি পৌঁছে দেবে। ভয় পাবার কোন কারণ নেই।
বাড়ি পৌঁছতে না পৌঁছতে সাইরেনের শব্দে বাড়ির আশেপাশে জানালা, দরজা প্রায় সবখানে প্রতিবেশীরা জড়ো হয়েছেন। এত রাতে একজন ভদ্রলোকের বাড়ির সামনে যদি পুলিশ আসে তা হলে সেটা উঁকিঝুঁকি না দিয়ে থেকে পারা যায়?
পুলিশের ধমকে প্রতিবেশী সবাই যে যার মত ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।
মোহাইমেন সাহেবের ছেলেমেয়ে বাইরে আতংকিত চোখে পুলিশের কাছে পুরো ঘটনা শুনে নিল। তাদের কে কাল থানায় গিয়ে জিনিশপত্র গুলো আনতে বলে তারা চলে গেল।
পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হয়ে এল।
কিন্তু কান্নার রোল পড়ল তার পরের দিন সকালে।
মোহাইমেন সাহেবের বাড়ি থেকে দূরে তার ই প্রতিবেশী সালাম উদ্দিনের বাড়ি থেকে। তার ছেলে গতকাল রাতে র‍্যাবের এনকাউন্টারে মারা গেছে।



(গল্পের প্রতিটি চরিত্র এবং ঘটনা কাল্পনিক, এর সাথে জীবিত, মৃত কিংবা অর্ধমৃত কারো সাথে কোন মিল নেই। যদি মিলে থাকে তা একান্ত কাকতালীয়)

গল্পঃ ক্রান্তি



ভাই! কথা শোনেন। ব্যাপারটা...
(কথা শেষ করতে দিল না আকবর, অভিযোগ করছিল তার ই সাগরেদ সেন্টু। যাকে সবাই ব্লেড সেন্টু নামে সবাই চেনে)
তোর সমস্যা মানে আমারো সমস্যা, চল আইজকা সলুশন নিমূ! পাপাই আর বোতল রে কল মার। অপারেশন আইজকা সন্ধ্যায়।
সেন্টুর হলদে দাঁতে শিকারি শেয়ালের মত উজ্জ্বলতা দেখা যায়। মোহাম্মদপুরের কাছাকাছি একটা গলিতে ওরা চারজন ওত পেতে থাকে।
ল্যাম্পপোস্ট টা নষ্ট, একদিক থেকে দেখলে ধরা যায় রাস্তার বিপরীত দিকে একটা মিটমিটে হলদে আলো জ্বলছে। সচরাচর রাস্তাটা ফাঁকা থাকে না। আজকে কেন জানি কবরের নিস্তব্ধতা!
একটা রিক্সার খড়খড়ে আওয়াজ পেয়ে অন্ধকারে শিশ দিয়ে উঠে। পাপাই আর বোতল গান গায়। হিন্দী গান.. মারাত্বক বেসুরে।
ওদের ধমকে উঠে যাযাবর। সিগারেটের ফিল্টার টা সোজা ছুঁড়ে দেয় রিক্সার সামনের চাকার খুব কাছে।
রিক্সাওয়ালা একটু শব্দ করতে না করতে ই নাক বরাবর ঘুষি বাগিয়ে বসে পাপাই।
" চোপ শালারপুত!  বেশী কথা কইলে কাইটা দিমু "
রিক্সাওয়ালার নাক বেয়ে কাল তরলের ধারা বেয়ে যায়। নাক ধরে সে রাস্তাতে বসে পড়ে। পাপাই আরো কয়েকটা কড়া লাথি মারে রিক্সাওয়ালার পেট বরাবর। সে কুঁকড়ে উঠে সরে যায় রাস্তার একপাশে।
যাযাবর আড়ালে সাগরেদের কুকর্ম দেখে যাচ্ছে নিশ্চুপ!
সেন্টু ধূর্ত শেয়ালের মত মেয়েটির গায়ে হাত দিতে ই চিৎকার করে চেঁচিয়ে উঠে।
যাযাবরের গলা শুকিয়ে যায়, মোনালিসা! তুই?
মেয়েটি যাযাবরের গলা চিনতে পেরেছে। সেন্টুর তখন ও হুশ নেই।
যাযাবর এগিয়ে আসে, গলা বাষ্পরুদ্ধ!
কিন্তু কিছু বোঝার আগে ই কেউ একজন আঁতকা রডের আঘাতে ধরাশায়ী করে ফেলে যাযাবর কে। পাপাই কে ততক্ষণে পালাতে দেখা গেল।
সেন্টুর মুখের উপর এলোপাথাড়ি আঘাত চলছে। সেও লুটিয়ে পড়েছে প্রায় রিক্সার নীচে। এবার সোজা হয়ে দাঁড়াল রিক্সাওয়ালা, হাতে লোহার রড। রাস্তার পাশে কন্সট্রাকশনের কাজে রাখা ছিল রড।
কাঁপা গলায় বলল, "আপামনি আপনার ভয় নাই, আমি আছি।"
রিক্সাওয়ালা রিক্সায় উঠে প্যাডেলে চাপ দিতে দিতে কয়েকবার তার নাক মুছল। রক্ত ঝড়ছে সেখান থেকে। মেয়েটি চুপচাপ।
রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞেস করল, " এগো চিনতেন আফামনি?"
শান্ত গলায় মেয়েটির উত্তর, " আপনি যার মাথায় পেছন থেকে সবার আগে আঘাত করলেন, সে আমার ভাই!"।
রিক্সাওয়ালা প্যাডেল কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেল।
মেয়েটি তখনও নির্বিকার।
রিক্সা আবার চলতে শুরু করল মেয়েটির গন্তব্য।




(গল্পের ঘটনা ও চরিত্র পুরোপুরি কাল্পনিক যা জীবিত কিংবা মৃত কারো সাথে মিলে গেলে একান্ত কাকতালীয়)

গল্পঃ রক্ত



অফিসের ফাঁকে ফাঁকে উঁচু থাই গ্লাসের বাইরে তাকিয়ে থাকাটা আজকাল ব্যাংকার ইশতিয়াকের একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অ্যাশ কালারের থাই গ্লাসের ভেতর টা বাইরে থেকে খুব ভাল দেখা না গেলেও অফিসের ভেতর থেকে খুব ভাল দেখা যায়। ইশতিয়াক হাতে কফির মগ নিয়ে এখানে হরদম দাঁড়িয়ে থাকে ততক্ষণ, যতক্ষণ কফিটা শেষ না হয়ে আসে।
আসলে দেখার মত কি আছে?
সিগনাল, জ্যাম, শত শত মানুষের ছোটাছুটি! মাঝেমাঝে এক্সিডেন্ট। রিক্সাওয়ালা কিংবা ড্রাইভারের মাঝে হাতাহাতি। শহুরে জীবনযাপন।
ইশতিয়াক!  ভাই, এভাবে থাকবেন না এখানে। বস একবার দেখতে পেলে রুমে ডেকে ঝাড়ি দেবে। (পেছনে এসে পিঠে হাত দিলেন সমীরণ)
সমীরণ দা!
কি ভাই? আজকাল ধ্যানে! কাজে লেগে যাও। বস অফিসে বুঝলে, এভাবে দাঁড়িয়ে আছো দেখতে পেলে কেলেঙ্কারি করে ফেলবে!
অফিসের উল্টোদিকে একটা দাতব সংস্থার অফিস। কয়েকটা হাই ক্লাস শপিং মল, একটা রেডিও স্টেশন আর কিছু কফি হাউজ। তাই ভীড় একেবারে লেগে থাকে।
ইশতিয়াক কফির মগ টেবিলে রেখে চলে গেলেন নিজের ডেস্কে।
ইউনিভার্সিটি লাইফ টা ভালো ই ছিল। অন্তত এই বিকেলবেলা কম্পিটারের সামনে বসে এক্সেলে টাকার হিসেব কষতে হতো না।
মাইনে না থাকলে আজকাল কেউ কাউন্ট করে না, নয়ত এমন টাই বাঁধা জীবন ইশতিয়াকের অসহ্য লাগে।
অফিসে ভীড় কমে আসে। থাই গ্লাসের পাশে এসে কফি হাতে আবার দাঁড়ায় ইশতিয়াক। বাইরের ল্যাম্পপোস্ট গুলোতে আলো জ্বলে উঠেছে। গাড়ীর হেডলাইট গুলো জ্বলছে রাস্তায়। সিগনাল, জ্যাম পুনঃপুন চলছে।
একে একে সবাই চলে যেতে অফিস খালি হয়ে এল। বস আগেই বেড়িয়ে গেলেন তার মেয়ের জন্মদিন। তারপর ই সমীরণ দা', বৌকে নিয়ে তার আজ নাকি শপিং।
দারোয়ান এসে পেছন থেকে ডাক দিল, স্যার! তালা দিমু গেটে? আরো থাকবেন?
নাহ! কফির মগ ডেস্কে রেখে ব্লেজার হাতে বেড়িয়ে এলেন ইশতিয়াক।
শহর টা দিনশেষে অচেনা লাগে তার কাছে। ট্যাক্সি ডাকতে যাবেন হঠাৎ
দেখতে পেলেন সাদাছড়ি হাতে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন সিগনালের অপেক্ষায়। তার সাথের সবাই পার হয়ে গেলেও তিনি অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে আছেন কেউ তাকে পার করে দিচ্ছে না বলে। আসলে এই রাতে তিনিও কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। পার করে দেবার নাম করে অশ্লীল স্পর্শ করা কিছু নীচু মানুষ তার কাছাকাছি ছড়িয়ে আছে এখানে।
ইশতিয়াক ট্যাক্সি তে না উঠে দ্রুত এগিয়ে গেলেন মহিলার কাছে; বললেন, "আপু, আপনাকে রাস্তা পার করে দিতে পারি?"
মহিলা হয়ত বিশ্বাস করতে পারলেন না, বললেন, আমার অফিসের একজন মেয়ে আছে ও এলে ই পার করে দেবে আমাকে!
ইশতিয়াক কিছুটা লজ্জিত হলেন মনে মনে। ভাবলেন, গায়ে পড়ে হেল্প করতে যাওয়া টা মনে হয় ঠিক হয়নি। আশেপাশে টঙে চা খেতে খেতে বিড়ি ফুঁকতে থাকা কিছু অমানুষ দাঁত বের করে হায়েনা হাসি হাসতে দেখে বুঝলাম কেন তিনি আমাকে " না " বলে দিলেন। মহিলা অন্ধ! বিশ্বাস করতে পারেন না আমাদের সমাজ কে।
মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে ফিরে আসছিলাম ঠিক তখনি গাড়ির কড়া ব্রেক কষার শব্দ আর কোন এক মহিলার আর্তচিৎকার কানে ভেসে এলো। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম সেই অন্ধ ভদ্রমহিলা! একা একা রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে পিচে পড়ে আছেন।
ছুটে গেলেন ইশতিয়াক। ট্যাক্সি তার দাঁড়া করানো ছিল, আর সবাই কে হেল্প করতে বলে তিনি মহিলা কে নিজের ট্যাক্সি তে তুললেন। ঢাকা মেডিকেলে!
ট্যাক্সি ছুটল।
রাতে ভদ্রমহিলার জ্ঞান ফিরল। তার ছেলে, স্বামী অপেক্ষা করছিল পাশে। জ্ঞান ফিরতে তিনি জানতে চাইলেন আমাকে কে এনেছে হাসপাতালে?
ডাক্তার সেখানে ই ছিলেন, বললেন, " একটা ছেলে। ইভেন, সে এক ব্যাগ রক্ত ও দিয়েছে আপনার জন্য, আচ্ছা চেনেন তাকে? "
ওকে ডাকবেন একবার! ইশতিয়াক রুমে এসে ভদ্রমহিলার পাশে বসতে না বসতে কাঁপা হাতে তিনি ইশতিয়াকের হাত ধরে বললেন, " এ আমার ভাই, রক্তের ভাই"।



( গল্পের সমস্ত ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক, এর সাথে জীবিত, মৃত, অর্ধমৃত কারো কোন মিল নেই, যদি মিলে যায় তা একান্ত কাকতালীয়)

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...