বিকল্প পৃথিবী! শুনে ই নানা রকম প্রশ্ন আর উৎকণ্ঠা ভাসে চোখের সামনে। আসলে ই কি চিন্তার ভাঁজ পড়ে কপালে। আজ সেটাই দেখা যাক।
ধরা যাক, আমরা যখন ঘুম থেকে উঠি তখন নানাবিধ কাজের তাড়া শুরু হয়ে যায়। এই যেমন চাকরি, স্কুল, সভা, রাজনীতি আরো কত সব! তবে প্রতি সপ্তাহের একটি অথবা দুটি নির্দিষ্ট দিন আমরা ছুটি কাটাই, ছুটি কাটানো যে সব শ্রেণী পেশার মানুষের ভাগ্যে লেখা থাকে সেটা ঠিক নয়, দিন আনে দিনে ই খরচা করা মানুষদের এই তালিকায় হয়ত রাখা যাবে না। তবে তাদের সাথে আমাদের এই পৃথিবীর একটা সুক্ষ যোগাযোগ আছে। দুপক্ষের কোন ছুটি নেই। পৃথিবী যেমন নির্দিষ্ট একটা গতিতে ঘুরে সময়ের হিসেব সুন্দরভাবে মিলিয়ে যাচ্ছে, তেমনি সূর্যের মত উত্তপ্ত নক্ষত্র একদিন না দেখা দিলে অথবা তাদের অবস্থানের হের ফের করলে নেমে আসবে ভয়াবহ বিপর্যয়!
তবে ৫০০ কোটি বছরের বেশী পৃথিবীর বুকে সুখে বাস করা মানব সমাজের হয়ত সুখের শেষ অচিরে না হলেও কাছাকাছিভাবে কিছু একটা শেষের শুরু অনেক আগে ই হয়ে গেছে। আকাশবিজ্ঞানীদের তাড়াহুড়ো করে স্পেসশিপ ছুড়ে দেয়া, দ্বিতীয় গ্রহ খুঁজে পাওয়া দুটো বিষয় ই ভ্রু কুঁচকে দেবার মতো যথেষ্ট কারণ তুলে আনবে আলোচনার টেবিলে। মূল কারণ এই পৃথিবীর বুকে মানব সমাজের আকার বাড়ছে, ভূপৃষ্ঠস্থ জলের পরিমাণে হেরফের হচ্ছে, দক্ষিণে গলছে বরফ। অবশ্য এরই মাঝে সুনামি, ঝড়, ভূমিকম্পের মত বড় ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগের পরিমাণ ও বেড়েছে বাড়াবাড়ি রকম।
তাহলে উপায়? সেটাই কি দ্বিতীয় কোন আবাসস্থল? অন্যকোন গ্রহ? কি বলছেন বিজ্ঞানীরা?
১. শুরু করি রোস -১২৮ বি কে নিয়ে। বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে যুগে যুগে আবিষ্কৃত হয়েছে অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্র,
এমনই একটি গ্রহ Ross-128b। পৃথিবী থেকে প্রায় ১১ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত গ্রহটিকে কেউ কেউ বাসযোগ্যও মনে করছেন। আকৃতিতেও গ্রহটি প্রায় পৃথিবীর মতোই।
ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী জাভিয়ার বোফফিলস এর দ্বারা ২০১৭ সালের ১৫ই নভেম্বর গ্রহটি আবিষ্কৃত হয়। চিলিতে লা সিলা
অবজারভেটরি এ হারপ্স স্পেকট্রোগ্রাফ (উচ্চ নির্ভূলতা রেডিয়াল বেগোলজি প্লানেট অনুসন্ধানকারী) এর সাথে এক দশকের মূ্ল্যের রেডিয়াল বেজেটি ডেটা ব্যবহার করে গ্রহটি আবিষ্কার করা হয়। Ross-128b হল একটি শান্ত লাল বামন, যেটি আমদের হলুদ তথাকথিত ক্লাস জি স্টারের তুলনায় অনেক দূর পর্যন্ত কুলার তারকা। এটিকে বাসস্থানের জন্যও সেরা একটি
মনে করা হয়। গ্রহটিকে বাসযোগ্য মনে করার আরো কিছু কারণ রয়েছে। যেমন: Ross-128b গ্রহটির গড় তাপমাত্রা 23 ডিগ্রি সেলসিয়াস যা প্রাণীকুলের বসবাসের উপযোগ্য। এছাড়াও এটি (গোল্ডিলকস জোন) এ অবস্থিত যেখানে এটি তরল
জলের জন্য খুব গরম এবং খুব ঠান্ডা নয়। Ross-128b গ্রহটি ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরির মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু, এটি তার বায়ুমন্ডলের মেকআপের মতো সূত্রের দিক থেকে আলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফোটনকে আঁকড়ে ধরার জন্য প্রস্তুত। তবে Ross-128b গ্রহটি কতটা বাসযোগ্য হতে পারে তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছে অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী। এই আবিষ্কারের সাথে জড়িত বিজ্ঞানীগণ এটিকে একটি তাপমাত্রা গ্রহ বলে মনে করে। গ্রহটির আবিষ্কারক বোফফিলস তার এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি পৃথিবীর অন্যতম নিকটস্থ গ্রহ যা পৃথিবীর সম-সম্ভাব্য বাসযোগ্য জোন এবং এটি
একটি শান্ত তারকাকে অতিক্রম করে, Ross-128b সূর্যের তুলনায় অনেক শীতল তাই এটিকে
নিউফাউন্ড পৃথিবী বলা হয়”। বহুকাল ধরেই বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বিকল্প হিসেবে বসবাসের জন্য অন্য কোনো গ্রহের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। তারই রেশ ধরে সম্পন্ন হয়েছে মঙ্গলযাত্রা সহ আরো অনেক অভিযান। এমনই একটি বাসযোগ্য গ্রহ হিসেবে মনে করা হচ্ছে Ross-128b কে। তবে গ্রহটি কতটা বসবাসের যোগ্য তা নিয়ে এখনও বিজ্ঞানীদের মনে অসংখ্য প্রশ্ন রয়েছে। আবার অনেকেই গ্রহটিতে জীবজগতের বসবাসের উপযোগী অসংখ্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেছেন। তাই Ross-128b কে দ্বিতীয় পৃথিবী মনে করা হচ্ছে। সে তো কেবল বিজ্ঞানীদের মনে করা কিংবা Assumption, কিন্তু সত্যি টা কি? আসলে ই কি দ্বিতীয় গ্রহ/পৃথিবী আছে মহাকাশের কোথাও?
২. জিজে ৮৩২সি (আশার পৃথিবী) কি আছে এতে?
পৃথিবী থেকে মাত্র ১৬ আলোকবর্ষ দূরে, পৃথিবী-সদৃশ একটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। (আলো শূন্যস্থানে এক বছর সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে এক আলোকবর্ষ বলে।) এই গ্রহটির পৃথিবীর সঙ্গে অনেক মিল রয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের দাবি। অর্থাৎ আশা করা যায় যে বিকল্প আবাসের প্রয়োজন হলে এই গ্রহটি হতে পারে হয়তো পৃথিবীর বিকল্প। এখন পর্যন্ত পৃথিবী-সদৃশ যতগুলো গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে তার মধ্যে শীর্ষ তিনটি গ্রহের মধ্যে এটিকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
জিজে৮৩২সি নামের এই ‘সুপার আর্থ’ গ্রহটি আবিষ্কার করেছেন অস্ট্রেলিয়ার গবেষক রবার্ট উইটেনমেয়ার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল। তাঁদের দাবি, জিজে৮৩২ নামের একটি লাল-বামন নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে গ্রহটি।
মাত্র ১৬ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত হওয়ার এই গ্রহটি বিজ্ঞানীদের আশাবাদী করে তুলছে। আর গ্রহটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ভর। পৃথিবীর চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি ভর নতুন আবিষ্কৃত গ্রহটির। এটি গড়পড়তা হিসেবে পৃথিবীর মতোই নাক্ষত্রিক শক্তি গ্রহণ করে থাকে কারণ যাকে কেন্দ্র করে এটি ঘুরছে সেই লাল-বামন নক্ষত্রটি আমাদের সূর্যের চেয়ে অনুজ্জ্বল। গবেষকেরা তাই আশা করছেন, গ্রহটির তাপমাত্রা পৃথিবীর তাপমাত্রার মতোই হবে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, নতুন আবিষ্কৃত জিজে৮৩২সি গ্রহটির বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে এটি পৃথিবী-সদৃশ গ্রহগুলোর মধ্যে শীর্ষ তিনটির মধ্যে পড়ে। পুয়ের্তো রিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ‘আর্থ সিমিলারিটি ইনডেক্স’ বা ইএসআই তৈরি করেছেন যা পৃথিবী-সদৃশ গ্রহগুলোর মধ্যে তুলনা ও বিশ্লেষণ করতে ব্যবহার করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস স্কুল অব ফিজিক্সের গবেষক ড. রবার্ট উইটেনমেয়ার গবেষক দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’ নামের সাময়িকীতে। এই প্রকল্পের গবেষক ক্রিস টিনি জানিয়েছেন, জিজে৮৩২সি গ্রহটির পরিবেশ যদি পৃথিবীর মতো হয় তবে সেখানে টিকে থাকা কোনো প্রাণীর পক্ষে সম্ভব হবে। তবে সেখানে ঋতু পরিবর্তের বিষয়টি
হয়তো অনেক প্রতিকূল হতে পারে। গ্রহটির ভর বিবেচনায় ধরলে সেখানকার বায়ুমণ্ডলের ভরও বিশাল হওয়া স্বাভাবিক। সেই হিসেবে সেখানে বসবাস করার বিষয়টি অনুকূল নাও হতে পারে। ঘন বায়ুমণ্ডল বেশি করে তাপ ধরে রাখার ফলে পরিবেশ অত্যন্ত গরম হয়ে উঠতে পারে যা জীবনধারণের জন্য অনুকূল নয়। ইএসআই বিবেচনায় এক্সোপ্লানেট বা পৃথিবী সদৃশ গ্রহের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে গ্লিজ ৬৬৭সিসি। গ্রহটি ২০১২ সালে আবিষ্কৃত হয়। পৃথিবী থেকে ২৩ আলোকবর্ষ দূরের এই গ্রহটি ইএসআই মাপে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ১.০ স্কোরের মধ্যে ০.৮৪ স্কোর করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কেপলার ৬২ই নামের একটি গ্রহ যার ইএসআই ০.৮৩। এই গ্রহটি অবশ্য পৃথিবী থেকে এক হাজার ২০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। ০.৮১ ইএসআই স্কোর করে তৃতীয় অবস্থান দখল করেছে জিজে৮৩২সি।
৩. কেপলার ৪৪৪ (আরো এক আবিষ্কার)
আমাদের এই পৃথিবী থেকে ১১৭ আলোকবর্ষ দূরে একটি প্রাচীন নক্ষত্রের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আকারে সূর্যের ২৫ ভাগের ১ ভাগ কেপলার ৪৪৪ নামের একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে পৃথিবীসদৃশ পাঁচটি গ্রহ।
(সোর্সঃ আইএএনএস)। নাসার কেপলার মহাকাশযান থেকে পাওয়া তথ্য চার বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে একদল গবেষক অতিপ্রাচীন এই নক্ষত্র ও তার সংসারের খোঁজ পাওয়ার দাবি করেছেন।
গবেষকেরা বলছেন, এই নক্ষত্রটি ১ হাজার ১২০ কোটি বছরের পুরোনো হতে পারে। বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক টিগো ক্যাম্পনেট এই গবেষণা প্রকল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর দাবি, ‘নতুন আবিষ্কৃত এই পাঁচটি গ্রহ এক হাজার ৩৮০ বছরের বিশ্বমণ্ডল সৃষ্টির ধাপে ধাপে তৈরি হয়েছে। এর খোঁজ পাওয়ার মাধ্যমে মিল্কিওয়ে ছায়াপথের ভেতর প্রাচীন জীবনের উৎস খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেল। এই নক্ষত্রটির যে পাঁচটি গ্রহ রয়েছে সেগুলোর আকার বুধ ও বৃহস্পতির মতো হতে পারে। এই গ্রহগুলো নক্ষত্রটির এত কাছে আবর্তন করছে যে তাদের কক্ষপথ পরিভ্রমণ করতে ১০ দিনের মতো সময় লাগে। সেই হিসাবে গ্রহগুলো বুধ গ্রহের মতো উত্তপ্ত ও বসবাসের অযোগ্য হতে পারে। আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিভ কাউলার বলেন, ‘কেপলার ৪৪৪ অত্যন্ত উজ্জ্বল নক্ষত্র, যা বাইনোকুলার দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যায়। ছায়াপথের অন্যতম প্রাচীন নক্ষত্র এটি। এটি ছায়াপথের প্রথম প্রজন্মের নক্ষত্রগুলোর মধ্যে পড়ে। কাউলার আরও বলেন, ‘আদিম এই নক্ষত্র ও তার গ্রহগুলোর আবিষ্কার থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, আমাদের সৌরজগৎ সৃষ্টির ৭০০ কোটি বছর আগে ওই গ্রহগুলো তার নক্ষত্রের চারপাশে তৈরি হতে শুরু করেছিল। দীর্ঘদিন ধরেই নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে গ্রহের সৃষ্টির বিষয়টি আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথের সবচেয়ে পরিচিত বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখা হয়।’
অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ। গবেষকেরা বলছেন, পাথুরে পৃথিবীসদৃশ এক্সোপ্লানেট থেকে শুরু করে অন্য নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা পৃথিবীর সমান আকারের গ্রহের সন্ধান পাওয়ার মাধ্যমে মহাকাশের ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটছে এবং ছোট ছোট বিশ্ব তৈরির বিষয়টিও আমাদের নজরে আসছে। আমাদের সামনে এত দিন গ্রহ সৃষ্টির বিষয়ে যে অজানা বিষয়গুলো ছিল, তা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে উঠছে।
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে সুযোগ আর খরচাদি করা মানুষগুলোর জায়গা হতেও পারে এসবের কোন একটি গ্রহ তে। কেবলমাত্র এই তিনটি নয় আছে আরো।
কেপলার ৩৪৮বি
সর্বপ্রথম এটি আবিষ্কৃত হয় ২০০৯ সালে। আমাদের গ্রহ থেকে ৪৭০ আলোকবর্ষ দূরে।কেপলার ৩৪৮বি এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাসের উপযুক্ত গ্রহ। কারণ এর ইএসআই বা আর্থ সিমিলারিটি ইন্ডেক্স ৮৮ শতাংশ অর্থ্যাৎ পৃথিবীর মতো।বরং এটি পৃথিবী থেকে ১২ গুণ বড় আর পৃথিবীর থেকে ৪০ গুণ বেশি আলো পৌঁছে থাকে।তবে এই গ্রহের এমন কিছু দিক আছে যেগুলো মানুষের পক্ষেগ্রহণ করাটা সহজ হবে না।যেমন সেখানে ভালো কোনো বায়ুমণ্ডল নেই, এছাড়াও সেখানকার সূর্যটি ১০ গুণ বেশি আলো প্রদান করে থাকে।এই গ্রহ নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। যদি এ গ্রহের ম্যাগনেটিক ফিল্ড থাকে তাহলে এটি হতেও পারে মানুষের জীবন যাপনের দ্বিতীয় অপশন।
কেপলার ৪৫২বি
এটি আবিষ্কৃত হয় ২০১৫ সালের জুলাইতে। কেপলার ৪৫২বি’কে সুপার আর্থও বলা হয়। এ গ্রহটি পৃথিবী থেকে ৫ গুণ বড়।এ গ্রহটির কক্ষপথকে ৩৮৫ দিনে একবার পরিভ্রমণ করে থাকে অর্থাৎ এই গ্রহে এক বছর হয় ৩৮৫ দিনে। এর আকার বড় হওয়ার কারণে এর অভিকর্ষ পৃথিবী থেকে ২ গুণ বেশি।এ গ্রহে পৃথিবী থেকে অনেক বেশি আলো পৌঁছায়।তবুও যদি কখনো এ গ্রহ পর্যন্ত পৌঁছানো যায় তাহলে এটিও হতে পারে বিকল্প পৃথিবী।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কেপলার ৪৫২বি পৃথিবী থেকে ৪৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে।যদি কোনো স্পেসশিপে করে ৩৭ হাজার মাইল প্রতি ঘন্টার গতিতে এই গ্রহের দিকে যাওয়া যায় তাহলে ২৬ মিলিয়ন বছর লাগে যাবে ঐখানে পৌঁছাতে। পৃথিবী থেকে কেপলার 452-Bর দূরত্ব চৌদ্দশ আলোকবর্ষ ৷ পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব যতটা, সদ্য চোখে পড়া কেপলার 452-Bর থেকে তার সূর্যের দূরত্বও প্রায় ততটাই। কাজেই জীবনধারণের প্রয়োজনীয় পানি মাটিতে থাকার জন্য সূর্যের থেকে কোনো গ্রহের যতটা দূরত্ব থাকা উচিত, ঠিক ততটাই দূরত্বে আছে কেপলার 452-B। এই গ্রহের সূর্য বয়সে পৃথিবীর সূর্যের তুলনায় প্রবীণ ৷ তার উজ্জ্বলতাও পৃথিবীর সূর্যের থেকে অন্তত দশ শতাংশ বেশি। কেপলার 452-Bতে ৩৮৫ দিনে এক বছর ৷ মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও পৃথিবীর দ্বিগুণ, কারণ সে একটু স্বাস্থ্যবান। ওখানে পৃথিবীর চেয়ে অধিকতর ঘন বায়ুমণ্ডল আর সক্রিয় আগ্নেয়গিরি থাকারও সম্ভাবনা রয়েছে। নাসার বিজ্ঞানীদের দাবি, আজ থেকে অনেক কোটি বছর পর পৃথিবীর যা চেহারা হবে কেপলার452-B এখন সেই স্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই এতে প্রাণের উৎপত্তি, বেড়ে ওঠার সব উপাদান আর প্রাণের বিবর্তনের উপযোগী পরিবেশ থাকতেই পারে। কাজেই আমাদের পৃথিবীর ক্রমাগত পরিবর্তনশীল পরিবেশকে বোঝার জন্য এটি অনেক বড় একটা সুযোগ। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর আমরা পৃথিবীর খুব কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের গ্রহের এরকম অনেক কথাই শুনি(যেমন—কেপলার 186F) ৷ এখনও পর্যন্ত নাসার কেপলার মিশন পৃথিবীর বিকল্প ধরে নিতে এক হাজারেরও বেশি গ্রহ খুঁজে বের করেছে!! কিছুদিন পর আবারও সেসব সময়ের অপ্রয়োজনে হারিয়েও যায়।
প্রক্সিমা বি
এটি পৃথিবী থেকে ৪ দশমিক ২ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে। প্রথমবারের মতো আগস্ট ২০১৬ সালে এটি আবিষ্কৃত হয়।প্রক্সিমা বি, প্রক্সিমা সেঞ্চুরি নামের রেড ডট স্টারের হাইবিটেবল জোনে ঘুরছে।এ গ্রহে পানির খোঁজ পাওয়া গেছে তাই এখানে জীবন যাপন করা সম্ভব বলে মনে করা হয়।এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে ৩০ গুণ বড় যার এক বছর পৃথিবীর ১১ দিনের মত।এর ইএসআই বা আর্থ সিমিলারিটি ইন্ডেক্স শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ। তবে এ গ্রহে বসবাসের দূর্বলতম দিক হচ্ছে এর সবচেয়ে কাছের সূর্য থেকে মাত্র ২ শতাংশ আলো গ্রহণ করতে হবে। এ গ্রহের আরেকটি খারাপ দিক হচ্ছে স্টেলার উইন্ড।এর উপর স্টেলার উইন্ড চলতেই থাকে এবং এক একটি ঝড় পৃথিবীর ঝড় থেকে ২ হাজার গুণ শক্তিশালী।
কেপলার ৬২-এফ
কেপলার ৬২-এফ কে ২০১৩ সালে আবিষ্কার করা হয়।কেপলার ৬২-এফ ছয় বিলিয়ন বছর পুরনো একটি তারার হাইবিটেবল জোনে অবস্থান করছে। এটির ইএসআিই শূন্য দশমিক ৬৭ এবং এটি পৃথিবী থেকে ১ দশমিক ৪ গুণ বড়।এটি পৃথিবী থেকে বেশ খানিকটা ঠান্ডা। সেখানে ছোট একটি সূর্য আছে যাকে প্রদক্ষিণ করে প্রতিনিয়ত ঘুরছে এ গ্রহটি।এটিতে পৃথিবীর মতোই পানি রয়েছে এবং সমুদ্রে রয়েছে সলিড বরফ।মানব জাতির বসবাসের জন্য এটি একটি উত্তম গ্রহ হতে পারে।এ গ্রহে এক বছর হয় ২৬৭ দিনে।এ গ্রহ যেকোনো সময় টাইরিয়াল লক হতে পারে অর্থাৎ এর এক পাশ চিরকাল সূর্যের এর দিকে এবং অপর পাশ চিরকাল অন্ধকারে থাকবে।
গ্লীজ-৫৮১জি
একে যারমিনা নামেও ডাকা হয়।যা পৃথিবী থেকে ২০ আলোকবর্ষ দূরে।এ গ্রহটিকে স্টিফেন ভোগট্ ২০১০ সালে আবিষ্কার করেন। এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে দেড় গুণ বড়।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই গ্রহটি টাইরিয়াল লক হয়ে আছে এর সূর্যের সঙ্গে।কিন্তু যদি এ গ্রহের একটমস্ফিয়ার সমানুপাতিক হয় তাহলে এ গ্রহের উষ্ণতা ডার্ক সাইট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে যা জীবনের সঞ্চালন তৈরি করতে পারবে।গবেষণায় পাওয়া গেছে এই গ্রহে কম করে হলেও দুটি সমুদ্র রয়েছে।গ্লীজ-৫৮১জি গ্রহ যে ল সূর্যটিকে প্রদক্ষিণ করে তা খুব একটা বড় নয়। তাই এ গ্রহটি টাইরিয়াল লক হলেও এটিতে জীবন ধারণ অসম্ভব নয়।
এখন প্রশ্ন, আরো কি পৃথিবী আছে? উত্তর হ্যাঁ! আরো আছে। তাদের মোট সংখ্যা ৫০০ 'শ থেকেও বেশী।
নাসার মতে, Another 500 possible planets discovered by #Kepler
telescope, Nasa says bbc.in/1OA44z9 (লিংক)
তবে নাসা-র মহাকাশ বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধান তো ছোট কোনো ব্যাপার নয়৷ ‘পৃথিবীর মতো গ্রহ' – এই কথাটাই বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে অনেকের মনে৷
জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশবিজ্ঞানী নিকোলাস অস্টোডিল্লো জানিয়েছেন ৭১ হাজার বছর পরে পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশী হবে রেড রস ১২৮ গ্রহটি। সেইসঙ্গে এর তাপমাত্রা পৃথিবীর সমান হয়ে যাবে। অনায়াসেই সেখানে বসবাস করতে পারবেন মানুষ। ততদিনে আমি এবং আমরা হয়ত এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবো না।
সুত্রঃ অনলাইন সাই ফাই জার্নাল, পত্রিকা, নাসা (টুইটার)
ধরা যাক, আমরা যখন ঘুম থেকে উঠি তখন নানাবিধ কাজের তাড়া শুরু হয়ে যায়। এই যেমন চাকরি, স্কুল, সভা, রাজনীতি আরো কত সব! তবে প্রতি সপ্তাহের একটি অথবা দুটি নির্দিষ্ট দিন আমরা ছুটি কাটাই, ছুটি কাটানো যে সব শ্রেণী পেশার মানুষের ভাগ্যে লেখা থাকে সেটা ঠিক নয়, দিন আনে দিনে ই খরচা করা মানুষদের এই তালিকায় হয়ত রাখা যাবে না। তবে তাদের সাথে আমাদের এই পৃথিবীর একটা সুক্ষ যোগাযোগ আছে। দুপক্ষের কোন ছুটি নেই। পৃথিবী যেমন নির্দিষ্ট একটা গতিতে ঘুরে সময়ের হিসেব সুন্দরভাবে মিলিয়ে যাচ্ছে, তেমনি সূর্যের মত উত্তপ্ত নক্ষত্র একদিন না দেখা দিলে অথবা তাদের অবস্থানের হের ফের করলে নেমে আসবে ভয়াবহ বিপর্যয়!
তবে ৫০০ কোটি বছরের বেশী পৃথিবীর বুকে সুখে বাস করা মানব সমাজের হয়ত সুখের শেষ অচিরে না হলেও কাছাকাছিভাবে কিছু একটা শেষের শুরু অনেক আগে ই হয়ে গেছে। আকাশবিজ্ঞানীদের তাড়াহুড়ো করে স্পেসশিপ ছুড়ে দেয়া, দ্বিতীয় গ্রহ খুঁজে পাওয়া দুটো বিষয় ই ভ্রু কুঁচকে দেবার মতো যথেষ্ট কারণ তুলে আনবে আলোচনার টেবিলে। মূল কারণ এই পৃথিবীর বুকে মানব সমাজের আকার বাড়ছে, ভূপৃষ্ঠস্থ জলের পরিমাণে হেরফের হচ্ছে, দক্ষিণে গলছে বরফ। অবশ্য এরই মাঝে সুনামি, ঝড়, ভূমিকম্পের মত বড় ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগের পরিমাণ ও বেড়েছে বাড়াবাড়ি রকম।
তাহলে উপায়? সেটাই কি দ্বিতীয় কোন আবাসস্থল? অন্যকোন গ্রহ? কি বলছেন বিজ্ঞানীরা?
১. শুরু করি রোস -১২৮ বি কে নিয়ে। বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে যুগে যুগে আবিষ্কৃত হয়েছে অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্র,
এমনই একটি গ্রহ Ross-128b। পৃথিবী থেকে প্রায় ১১ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত গ্রহটিকে কেউ কেউ বাসযোগ্যও মনে করছেন। আকৃতিতেও গ্রহটি প্রায় পৃথিবীর মতোই।
ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী জাভিয়ার বোফফিলস এর দ্বারা ২০১৭ সালের ১৫ই নভেম্বর গ্রহটি আবিষ্কৃত হয়। চিলিতে লা সিলা
অবজারভেটরি এ হারপ্স স্পেকট্রোগ্রাফ (উচ্চ নির্ভূলতা রেডিয়াল বেগোলজি প্লানেট অনুসন্ধানকারী) এর সাথে এক দশকের মূ্ল্যের রেডিয়াল বেজেটি ডেটা ব্যবহার করে গ্রহটি আবিষ্কার করা হয়। Ross-128b হল একটি শান্ত লাল বামন, যেটি আমদের হলুদ তথাকথিত ক্লাস জি স্টারের তুলনায় অনেক দূর পর্যন্ত কুলার তারকা। এটিকে বাসস্থানের জন্যও সেরা একটি
মনে করা হয়। গ্রহটিকে বাসযোগ্য মনে করার আরো কিছু কারণ রয়েছে। যেমন: Ross-128b গ্রহটির গড় তাপমাত্রা 23 ডিগ্রি সেলসিয়াস যা প্রাণীকুলের বসবাসের উপযোগ্য। এছাড়াও এটি (গোল্ডিলকস জোন) এ অবস্থিত যেখানে এটি তরল
জলের জন্য খুব গরম এবং খুব ঠান্ডা নয়। Ross-128b গ্রহটি ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরির মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু, এটি তার বায়ুমন্ডলের মেকআপের মতো সূত্রের দিক থেকে আলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফোটনকে আঁকড়ে ধরার জন্য প্রস্তুত। তবে Ross-128b গ্রহটি কতটা বাসযোগ্য হতে পারে তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছে অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী। এই আবিষ্কারের সাথে জড়িত বিজ্ঞানীগণ এটিকে একটি তাপমাত্রা গ্রহ বলে মনে করে। গ্রহটির আবিষ্কারক বোফফিলস তার এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি পৃথিবীর অন্যতম নিকটস্থ গ্রহ যা পৃথিবীর সম-সম্ভাব্য বাসযোগ্য জোন এবং এটি
একটি শান্ত তারকাকে অতিক্রম করে, Ross-128b সূর্যের তুলনায় অনেক শীতল তাই এটিকে
নিউফাউন্ড পৃথিবী বলা হয়”। বহুকাল ধরেই বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বিকল্প হিসেবে বসবাসের জন্য অন্য কোনো গ্রহের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। তারই রেশ ধরে সম্পন্ন হয়েছে মঙ্গলযাত্রা সহ আরো অনেক অভিযান। এমনই একটি বাসযোগ্য গ্রহ হিসেবে মনে করা হচ্ছে Ross-128b কে। তবে গ্রহটি কতটা বসবাসের যোগ্য তা নিয়ে এখনও বিজ্ঞানীদের মনে অসংখ্য প্রশ্ন রয়েছে। আবার অনেকেই গ্রহটিতে জীবজগতের বসবাসের উপযোগী অসংখ্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেছেন। তাই Ross-128b কে দ্বিতীয় পৃথিবী মনে করা হচ্ছে। সে তো কেবল বিজ্ঞানীদের মনে করা কিংবা Assumption, কিন্তু সত্যি টা কি? আসলে ই কি দ্বিতীয় গ্রহ/পৃথিবী আছে মহাকাশের কোথাও?
২. জিজে ৮৩২সি (আশার পৃথিবী) কি আছে এতে?
পৃথিবী থেকে মাত্র ১৬ আলোকবর্ষ দূরে, পৃথিবী-সদৃশ একটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। (আলো শূন্যস্থানে এক বছর সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে এক আলোকবর্ষ বলে।) এই গ্রহটির পৃথিবীর সঙ্গে অনেক মিল রয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের দাবি। অর্থাৎ আশা করা যায় যে বিকল্প আবাসের প্রয়োজন হলে এই গ্রহটি হতে পারে হয়তো পৃথিবীর বিকল্প। এখন পর্যন্ত পৃথিবী-সদৃশ যতগুলো গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে তার মধ্যে শীর্ষ তিনটি গ্রহের মধ্যে এটিকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
জিজে৮৩২সি নামের এই ‘সুপার আর্থ’ গ্রহটি আবিষ্কার করেছেন অস্ট্রেলিয়ার গবেষক রবার্ট উইটেনমেয়ার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল। তাঁদের দাবি, জিজে৮৩২ নামের একটি লাল-বামন নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে গ্রহটি।
মাত্র ১৬ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত হওয়ার এই গ্রহটি বিজ্ঞানীদের আশাবাদী করে তুলছে। আর গ্রহটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ভর। পৃথিবীর চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি ভর নতুন আবিষ্কৃত গ্রহটির। এটি গড়পড়তা হিসেবে পৃথিবীর মতোই নাক্ষত্রিক শক্তি গ্রহণ করে থাকে কারণ যাকে কেন্দ্র করে এটি ঘুরছে সেই লাল-বামন নক্ষত্রটি আমাদের সূর্যের চেয়ে অনুজ্জ্বল। গবেষকেরা তাই আশা করছেন, গ্রহটির তাপমাত্রা পৃথিবীর তাপমাত্রার মতোই হবে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, নতুন আবিষ্কৃত জিজে৮৩২সি গ্রহটির বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে এটি পৃথিবী-সদৃশ গ্রহগুলোর মধ্যে শীর্ষ তিনটির মধ্যে পড়ে। পুয়ের্তো রিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ‘আর্থ সিমিলারিটি ইনডেক্স’ বা ইএসআই তৈরি করেছেন যা পৃথিবী-সদৃশ গ্রহগুলোর মধ্যে তুলনা ও বিশ্লেষণ করতে ব্যবহার করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস স্কুল অব ফিজিক্সের গবেষক ড. রবার্ট উইটেনমেয়ার গবেষক দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’ নামের সাময়িকীতে। এই প্রকল্পের গবেষক ক্রিস টিনি জানিয়েছেন, জিজে৮৩২সি গ্রহটির পরিবেশ যদি পৃথিবীর মতো হয় তবে সেখানে টিকে থাকা কোনো প্রাণীর পক্ষে সম্ভব হবে। তবে সেখানে ঋতু পরিবর্তের বিষয়টি
হয়তো অনেক প্রতিকূল হতে পারে। গ্রহটির ভর বিবেচনায় ধরলে সেখানকার বায়ুমণ্ডলের ভরও বিশাল হওয়া স্বাভাবিক। সেই হিসেবে সেখানে বসবাস করার বিষয়টি অনুকূল নাও হতে পারে। ঘন বায়ুমণ্ডল বেশি করে তাপ ধরে রাখার ফলে পরিবেশ অত্যন্ত গরম হয়ে উঠতে পারে যা জীবনধারণের জন্য অনুকূল নয়। ইএসআই বিবেচনায় এক্সোপ্লানেট বা পৃথিবী সদৃশ গ্রহের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে গ্লিজ ৬৬৭সিসি। গ্রহটি ২০১২ সালে আবিষ্কৃত হয়। পৃথিবী থেকে ২৩ আলোকবর্ষ দূরের এই গ্রহটি ইএসআই মাপে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ১.০ স্কোরের মধ্যে ০.৮৪ স্কোর করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কেপলার ৬২ই নামের একটি গ্রহ যার ইএসআই ০.৮৩। এই গ্রহটি অবশ্য পৃথিবী থেকে এক হাজার ২০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। ০.৮১ ইএসআই স্কোর করে তৃতীয় অবস্থান দখল করেছে জিজে৮৩২সি।
৩. কেপলার ৪৪৪ (আরো এক আবিষ্কার)
আমাদের এই পৃথিবী থেকে ১১৭ আলোকবর্ষ দূরে একটি প্রাচীন নক্ষত্রের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আকারে সূর্যের ২৫ ভাগের ১ ভাগ কেপলার ৪৪৪ নামের একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে পৃথিবীসদৃশ পাঁচটি গ্রহ।
(সোর্সঃ আইএএনএস)। নাসার কেপলার মহাকাশযান থেকে পাওয়া তথ্য চার বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে একদল গবেষক অতিপ্রাচীন এই নক্ষত্র ও তার সংসারের খোঁজ পাওয়ার দাবি করেছেন।
গবেষকেরা বলছেন, এই নক্ষত্রটি ১ হাজার ১২০ কোটি বছরের পুরোনো হতে পারে। বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক টিগো ক্যাম্পনেট এই গবেষণা প্রকল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর দাবি, ‘নতুন আবিষ্কৃত এই পাঁচটি গ্রহ এক হাজার ৩৮০ বছরের বিশ্বমণ্ডল সৃষ্টির ধাপে ধাপে তৈরি হয়েছে। এর খোঁজ পাওয়ার মাধ্যমে মিল্কিওয়ে ছায়াপথের ভেতর প্রাচীন জীবনের উৎস খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেল। এই নক্ষত্রটির যে পাঁচটি গ্রহ রয়েছে সেগুলোর আকার বুধ ও বৃহস্পতির মতো হতে পারে। এই গ্রহগুলো নক্ষত্রটির এত কাছে আবর্তন করছে যে তাদের কক্ষপথ পরিভ্রমণ করতে ১০ দিনের মতো সময় লাগে। সেই হিসাবে গ্রহগুলো বুধ গ্রহের মতো উত্তপ্ত ও বসবাসের অযোগ্য হতে পারে। আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিভ কাউলার বলেন, ‘কেপলার ৪৪৪ অত্যন্ত উজ্জ্বল নক্ষত্র, যা বাইনোকুলার দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যায়। ছায়াপথের অন্যতম প্রাচীন নক্ষত্র এটি। এটি ছায়াপথের প্রথম প্রজন্মের নক্ষত্রগুলোর মধ্যে পড়ে। কাউলার আরও বলেন, ‘আদিম এই নক্ষত্র ও তার গ্রহগুলোর আবিষ্কার থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, আমাদের সৌরজগৎ সৃষ্টির ৭০০ কোটি বছর আগে ওই গ্রহগুলো তার নক্ষত্রের চারপাশে তৈরি হতে শুরু করেছিল। দীর্ঘদিন ধরেই নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে গ্রহের সৃষ্টির বিষয়টি আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথের সবচেয়ে পরিচিত বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখা হয়।’
অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ। গবেষকেরা বলছেন, পাথুরে পৃথিবীসদৃশ এক্সোপ্লানেট থেকে শুরু করে অন্য নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা পৃথিবীর সমান আকারের গ্রহের সন্ধান পাওয়ার মাধ্যমে মহাকাশের ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটছে এবং ছোট ছোট বিশ্ব তৈরির বিষয়টিও আমাদের নজরে আসছে। আমাদের সামনে এত দিন গ্রহ সৃষ্টির বিষয়ে যে অজানা বিষয়গুলো ছিল, তা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে উঠছে।
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে সুযোগ আর খরচাদি করা মানুষগুলোর জায়গা হতেও পারে এসবের কোন একটি গ্রহ তে। কেবলমাত্র এই তিনটি নয় আছে আরো।
কেপলার ৩৪৮বি
সর্বপ্রথম এটি আবিষ্কৃত হয় ২০০৯ সালে। আমাদের গ্রহ থেকে ৪৭০ আলোকবর্ষ দূরে।কেপলার ৩৪৮বি এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাসের উপযুক্ত গ্রহ। কারণ এর ইএসআই বা আর্থ সিমিলারিটি ইন্ডেক্স ৮৮ শতাংশ অর্থ্যাৎ পৃথিবীর মতো।বরং এটি পৃথিবী থেকে ১২ গুণ বড় আর পৃথিবীর থেকে ৪০ গুণ বেশি আলো পৌঁছে থাকে।তবে এই গ্রহের এমন কিছু দিক আছে যেগুলো মানুষের পক্ষেগ্রহণ করাটা সহজ হবে না।যেমন সেখানে ভালো কোনো বায়ুমণ্ডল নেই, এছাড়াও সেখানকার সূর্যটি ১০ গুণ বেশি আলো প্রদান করে থাকে।এই গ্রহ নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। যদি এ গ্রহের ম্যাগনেটিক ফিল্ড থাকে তাহলে এটি হতেও পারে মানুষের জীবন যাপনের দ্বিতীয় অপশন।
কেপলার ৪৫২বি
এটি আবিষ্কৃত হয় ২০১৫ সালের জুলাইতে। কেপলার ৪৫২বি’কে সুপার আর্থও বলা হয়। এ গ্রহটি পৃথিবী থেকে ৫ গুণ বড়।এ গ্রহটির কক্ষপথকে ৩৮৫ দিনে একবার পরিভ্রমণ করে থাকে অর্থাৎ এই গ্রহে এক বছর হয় ৩৮৫ দিনে। এর আকার বড় হওয়ার কারণে এর অভিকর্ষ পৃথিবী থেকে ২ গুণ বেশি।এ গ্রহে পৃথিবী থেকে অনেক বেশি আলো পৌঁছায়।তবুও যদি কখনো এ গ্রহ পর্যন্ত পৌঁছানো যায় তাহলে এটিও হতে পারে বিকল্প পৃথিবী।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কেপলার ৪৫২বি পৃথিবী থেকে ৪৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে।যদি কোনো স্পেসশিপে করে ৩৭ হাজার মাইল প্রতি ঘন্টার গতিতে এই গ্রহের দিকে যাওয়া যায় তাহলে ২৬ মিলিয়ন বছর লাগে যাবে ঐখানে পৌঁছাতে। পৃথিবী থেকে কেপলার 452-Bর দূরত্ব চৌদ্দশ আলোকবর্ষ ৷ পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব যতটা, সদ্য চোখে পড়া কেপলার 452-Bর থেকে তার সূর্যের দূরত্বও প্রায় ততটাই। কাজেই জীবনধারণের প্রয়োজনীয় পানি মাটিতে থাকার জন্য সূর্যের থেকে কোনো গ্রহের যতটা দূরত্ব থাকা উচিত, ঠিক ততটাই দূরত্বে আছে কেপলার 452-B। এই গ্রহের সূর্য বয়সে পৃথিবীর সূর্যের তুলনায় প্রবীণ ৷ তার উজ্জ্বলতাও পৃথিবীর সূর্যের থেকে অন্তত দশ শতাংশ বেশি। কেপলার 452-Bতে ৩৮৫ দিনে এক বছর ৷ মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও পৃথিবীর দ্বিগুণ, কারণ সে একটু স্বাস্থ্যবান। ওখানে পৃথিবীর চেয়ে অধিকতর ঘন বায়ুমণ্ডল আর সক্রিয় আগ্নেয়গিরি থাকারও সম্ভাবনা রয়েছে। নাসার বিজ্ঞানীদের দাবি, আজ থেকে অনেক কোটি বছর পর পৃথিবীর যা চেহারা হবে কেপলার452-B এখন সেই স্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই এতে প্রাণের উৎপত্তি, বেড়ে ওঠার সব উপাদান আর প্রাণের বিবর্তনের উপযোগী পরিবেশ থাকতেই পারে। কাজেই আমাদের পৃথিবীর ক্রমাগত পরিবর্তনশীল পরিবেশকে বোঝার জন্য এটি অনেক বড় একটা সুযোগ। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর আমরা পৃথিবীর খুব কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের গ্রহের এরকম অনেক কথাই শুনি(যেমন—কেপলার 186F) ৷ এখনও পর্যন্ত নাসার কেপলার মিশন পৃথিবীর বিকল্প ধরে নিতে এক হাজারেরও বেশি গ্রহ খুঁজে বের করেছে!! কিছুদিন পর আবারও সেসব সময়ের অপ্রয়োজনে হারিয়েও যায়।
প্রক্সিমা বি
এটি পৃথিবী থেকে ৪ দশমিক ২ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে। প্রথমবারের মতো আগস্ট ২০১৬ সালে এটি আবিষ্কৃত হয়।প্রক্সিমা বি, প্রক্সিমা সেঞ্চুরি নামের রেড ডট স্টারের হাইবিটেবল জোনে ঘুরছে।এ গ্রহে পানির খোঁজ পাওয়া গেছে তাই এখানে জীবন যাপন করা সম্ভব বলে মনে করা হয়।এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে ৩০ গুণ বড় যার এক বছর পৃথিবীর ১১ দিনের মত।এর ইএসআই বা আর্থ সিমিলারিটি ইন্ডেক্স শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ। তবে এ গ্রহে বসবাসের দূর্বলতম দিক হচ্ছে এর সবচেয়ে কাছের সূর্য থেকে মাত্র ২ শতাংশ আলো গ্রহণ করতে হবে। এ গ্রহের আরেকটি খারাপ দিক হচ্ছে স্টেলার উইন্ড।এর উপর স্টেলার উইন্ড চলতেই থাকে এবং এক একটি ঝড় পৃথিবীর ঝড় থেকে ২ হাজার গুণ শক্তিশালী।
কেপলার ৬২-এফ
কেপলার ৬২-এফ কে ২০১৩ সালে আবিষ্কার করা হয়।কেপলার ৬২-এফ ছয় বিলিয়ন বছর পুরনো একটি তারার হাইবিটেবল জোনে অবস্থান করছে। এটির ইএসআিই শূন্য দশমিক ৬৭ এবং এটি পৃথিবী থেকে ১ দশমিক ৪ গুণ বড়।এটি পৃথিবী থেকে বেশ খানিকটা ঠান্ডা। সেখানে ছোট একটি সূর্য আছে যাকে প্রদক্ষিণ করে প্রতিনিয়ত ঘুরছে এ গ্রহটি।এটিতে পৃথিবীর মতোই পানি রয়েছে এবং সমুদ্রে রয়েছে সলিড বরফ।মানব জাতির বসবাসের জন্য এটি একটি উত্তম গ্রহ হতে পারে।এ গ্রহে এক বছর হয় ২৬৭ দিনে।এ গ্রহ যেকোনো সময় টাইরিয়াল লক হতে পারে অর্থাৎ এর এক পাশ চিরকাল সূর্যের এর দিকে এবং অপর পাশ চিরকাল অন্ধকারে থাকবে।
গ্লীজ-৫৮১জি
একে যারমিনা নামেও ডাকা হয়।যা পৃথিবী থেকে ২০ আলোকবর্ষ দূরে।এ গ্রহটিকে স্টিফেন ভোগট্ ২০১০ সালে আবিষ্কার করেন। এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে দেড় গুণ বড়।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই গ্রহটি টাইরিয়াল লক হয়ে আছে এর সূর্যের সঙ্গে।কিন্তু যদি এ গ্রহের একটমস্ফিয়ার সমানুপাতিক হয় তাহলে এ গ্রহের উষ্ণতা ডার্ক সাইট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে যা জীবনের সঞ্চালন তৈরি করতে পারবে।গবেষণায় পাওয়া গেছে এই গ্রহে কম করে হলেও দুটি সমুদ্র রয়েছে।গ্লীজ-৫৮১জি গ্রহ যে ল সূর্যটিকে প্রদক্ষিণ করে তা খুব একটা বড় নয়। তাই এ গ্রহটি টাইরিয়াল লক হলেও এটিতে জীবন ধারণ অসম্ভব নয়।
এখন প্রশ্ন, আরো কি পৃথিবী আছে? উত্তর হ্যাঁ! আরো আছে। তাদের মোট সংখ্যা ৫০০ 'শ থেকেও বেশী।
নাসার মতে, Another 500 possible planets discovered by #Kepler
telescope, Nasa says bbc.in/1OA44z9 (লিংক)
তবে নাসা-র মহাকাশ বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধান তো ছোট কোনো ব্যাপার নয়৷ ‘পৃথিবীর মতো গ্রহ' – এই কথাটাই বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে অনেকের মনে৷
জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশবিজ্ঞানী নিকোলাস অস্টোডিল্লো জানিয়েছেন ৭১ হাজার বছর পরে পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশী হবে রেড রস ১২৮ গ্রহটি। সেইসঙ্গে এর তাপমাত্রা পৃথিবীর সমান হয়ে যাবে। অনায়াসেই সেখানে বসবাস করতে পারবেন মানুষ। ততদিনে আমি এবং আমরা হয়ত এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবো না।
সুত্রঃ অনলাইন সাই ফাই জার্নাল, পত্রিকা, নাসা (টুইটার)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন