সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

বিকল্প পৃথিবী!

বিকল্প পৃথিবী! শুনে ই নানা রকম প্রশ্ন আর উৎকণ্ঠা ভাসে চোখের সামনে। আসলে ই কি চিন্তার ভাঁজ পড়ে কপালে। আজ সেটাই দেখা যাক।
ধরা যাক, আমরা যখন ঘুম থেকে উঠি তখন নানাবিধ কাজের তাড়া শুরু হয়ে যায়। এই যেমন চাকরি, স্কুল, সভা, রাজনীতি আরো কত সব! তবে প্রতি সপ্তাহের একটি অথবা দুটি নির্দিষ্ট দিন আমরা ছুটি কাটাই, ছুটি কাটানো যে সব শ্রেণী পেশার মানুষের ভাগ্যে লেখা থাকে সেটা ঠিক নয়, দিন আনে দিনে ই খরচা করা মানুষদের এই তালিকায় হয়ত রাখা যাবে না। তবে তাদের সাথে আমাদের এই পৃথিবীর একটা সুক্ষ যোগাযোগ আছে। দুপক্ষের কোন ছুটি নেই। পৃথিবী যেমন নির্দিষ্ট একটা গতিতে ঘুরে সময়ের হিসেব সুন্দরভাবে মিলিয়ে যাচ্ছে, তেমনি সূর্যের মত উত্তপ্ত নক্ষত্র একদিন না দেখা দিলে অথবা তাদের অবস্থানের হের ফের করলে নেমে আসবে ভয়াবহ বিপর্যয়!
তবে ৫০০ কোটি বছরের বেশী পৃথিবীর বুকে সুখে বাস করা মানব সমাজের হয়ত সুখের শেষ অচিরে না হলেও কাছাকাছিভাবে কিছু একটা শেষের শুরু অনেক আগে ই হয়ে গেছে। আকাশবিজ্ঞানীদের তাড়াহুড়ো করে স্পেসশিপ ছুড়ে দেয়া, দ্বিতীয় গ্রহ খুঁজে পাওয়া দুটো বিষয় ই ভ্রু কুঁচকে দেবার মতো যথেষ্ট কারণ তুলে আনবে আলোচনার টেবিলে। মূল কারণ এই পৃথিবীর বুকে মানব সমাজের আকার বাড়ছে, ভূপৃষ্ঠস্থ জলের পরিমাণে হেরফের হচ্ছে, দক্ষিণে গলছে বরফ। অবশ্য এরই মাঝে সুনামি, ঝড়, ভূমিকম্পের মত বড় ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগের পরিমাণ ও বেড়েছে বাড়াবাড়ি রকম।
তাহলে উপায়? সেটাই কি দ্বিতীয় কোন আবাসস্থল?  অন্যকোন গ্রহ? কি বলছেন বিজ্ঞানীরা?
১. শুরু করি রোস -১২৮ বি কে নিয়ে। বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে যুগে যুগে আবিষ্কৃত হয়েছে অসংখ্য  গ্রহ-নক্ষত্র,
এমনই একটি গ্রহ Ross-128b। পৃথিবী থেকে প্রায় ১১ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত গ্রহটিকে কেউ কেউ বাসযোগ্যও মনে করছেন। আকৃতিতেও গ্রহটি প্রায় পৃথিবীর মতোই।
ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী জাভিয়ার বোফফিলস এর দ্বারা ২০১৭ সালের ১৫ই নভেম্বর গ্রহটি আবিষ্কৃত হয়। চিলিতে লা সিলা
অবজারভেটরি এ হারপ্স স্পেকট্রোগ্রাফ (উচ্চ নির্ভূলতা রেডিয়াল বেগোলজি প্লানেট অনুসন্ধানকারী) এর সাথে এক দশকের মূ্ল্যের রেডিয়াল বেজেটি ডেটা ব্যবহার করে গ্রহটি আবিষ্কার করা হয়। Ross-128b হল একটি শান্ত লাল বামন, যেটি আমদের হলুদ তথাকথিত ক্লাস জি স্টারের তুলনায় অনেক দূর পর্যন্ত কুলার তারকা। এটিকে বাসস্থানের জন্যও সেরা একটি
মনে করা হয়। গ্রহটিকে বাসযোগ্য মনে করার আরো কিছু কারণ রয়েছে। যেমন: Ross-128b গ্রহটির গড় তাপমাত্রা 23 ডিগ্রি সেলসিয়াস যা প্রাণীকুলের বসবাসের উপযোগ্য। এছাড়াও এটি (গোল্ডিলকস জোন) এ অবস্থিত যেখানে এটি তরল
জলের জন্য খুব গরম এবং খুব ঠান্ডা নয়। Ross-128b গ্রহটি ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরির মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু, এটি তার বায়ুমন্ডলের মেকআপের মতো সূত্রের দিক থেকে আলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফোটনকে আঁকড়ে ধরার জন্য প্রস্তুত। তবে Ross-128b গ্রহটি কতটা বাসযোগ্য হতে পারে তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেছে অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী। এই আবিষ্কারের সাথে জড়িত বিজ্ঞানীগণ এটিকে একটি তাপমাত্রা গ্রহ বলে মনে করে। গ্রহটির আবিষ্কারক  বোফফিলস তার এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি পৃথিবীর অন্যতম নিকটস্থ গ্রহ যা পৃথিবীর সম-সম্ভাব্য বাসযোগ্য জোন এবং এটি
একটি শান্ত তারকাকে অতিক্রম করে, Ross-128b সূর্যের তুলনায় অনেক শীতল তাই এটিকে
নিউফাউন্ড পৃথিবী বলা হয়”।  বহুকাল ধরেই বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বিকল্প হিসেবে বসবাসের জন্য অন্য কোনো গ্রহের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। তারই রেশ ধরে সম্পন্ন হয়েছে মঙ্গলযাত্রা সহ আরো অনেক অভিযান। এমনই একটি বাসযোগ্য গ্রহ হিসেবে মনে করা হচ্ছে Ross-128b কে। তবে গ্রহটি কতটা বসবাসের যোগ্য তা নিয়ে এখনও বিজ্ঞানীদের মনে অসংখ্য প্রশ্ন রয়েছে। আবার অনেকেই গ্রহটিতে জীবজগতের বসবাসের উপযোগী অসংখ্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেছেন। তাই Ross-128b কে দ্বিতীয় পৃথিবী মনে করা হচ্ছে। সে তো কেবল বিজ্ঞানীদের মনে করা কিংবা Assumption, কিন্তু সত্যি টা কি? আসলে ই কি দ্বিতীয় গ্রহ/পৃথিবী আছে মহাকাশের কোথাও?
২. জিজে ৮৩২সি (আশার পৃথিবী) কি আছে এতে?
পৃথিবী থেকে মাত্র ১৬ আলোকবর্ষ দূরে, পৃথিবী-সদৃশ একটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। (আলো শূন্যস্থানে এক বছর সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে এক আলোকবর্ষ বলে।) এই গ্রহটির পৃথিবীর সঙ্গে অনেক মিল রয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের দাবি। অর্থাৎ আশা করা যায় যে বিকল্প আবাসের প্রয়োজন হলে এই গ্রহটি হতে পারে হয়তো পৃথিবীর বিকল্প। এখন পর্যন্ত পৃথিবী-সদৃশ যতগুলো গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে তার মধ্যে শীর্ষ তিনটি গ্রহের মধ্যে এটিকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
জিজে৮৩২সি নামের এই ‘সুপার আর্থ’ গ্রহটি আবিষ্কার করেছেন অস্ট্রেলিয়ার গবেষক রবার্ট উইটেনমেয়ার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল। তাঁদের দাবি, জিজে৮৩২ নামের একটি লাল-বামন নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে গ্রহটি।
মাত্র ১৬ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত হওয়ার এই গ্রহটি বিজ্ঞানীদের আশাবাদী করে তুলছে। আর গ্রহটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ভর। পৃথিবীর চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি ভর নতুন আবিষ্কৃত গ্রহটির। এটি গড়পড়তা হিসেবে পৃথিবীর মতোই নাক্ষত্রিক শক্তি গ্রহণ করে থাকে কারণ যাকে কেন্দ্র করে এটি ঘুরছে সেই লাল-বামন নক্ষত্রটি আমাদের সূর্যের চেয়ে অনুজ্জ্বল। গবেষকেরা তাই আশা করছেন, গ্রহটির তাপমাত্রা পৃথিবীর তাপমাত্রার মতোই হবে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, নতুন আবিষ্কৃত জিজে৮৩২সি গ্রহটির বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে এটি পৃথিবী-সদৃশ গ্রহগুলোর মধ্যে শীর্ষ তিনটির মধ্যে পড়ে। পুয়ের্তো রিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ‘আর্থ সিমিলারিটি ইনডেক্স’ বা ইএসআই তৈরি করেছেন যা পৃথিবী-সদৃশ গ্রহগুলোর মধ্যে তুলনা ও বিশ্লেষণ করতে ব্যবহার করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস স্কুল অব ফিজিক্সের গবেষক ড. রবার্ট উইটেনমেয়ার গবেষক দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’ নামের সাময়িকীতে। এই প্রকল্পের গবেষক ক্রিস টিনি জানিয়েছেন, জিজে৮৩২সি গ্রহটির পরিবেশ যদি পৃথিবীর মতো হয় তবে সেখানে টিকে থাকা কোনো প্রাণীর পক্ষে সম্ভব হবে। তবে সেখানে ঋতু পরিবর্তের বিষয়টি
হয়তো অনেক প্রতিকূল হতে পারে। গ্রহটির ভর বিবেচনায় ধরলে সেখানকার বায়ুমণ্ডলের ভরও বিশাল হওয়া স্বাভাবিক। সেই হিসেবে সেখানে বসবাস করার বিষয়টি অনুকূল নাও হতে পারে। ঘন বায়ুমণ্ডল বেশি করে তাপ ধরে রাখার ফলে পরিবেশ অত্যন্ত গরম হয়ে উঠতে পারে যা জীবনধারণের জন্য অনুকূল নয়। ইএসআই বিবেচনায় এক্সোপ্লানেট বা পৃথিবী সদৃশ গ্রহের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে গ্লিজ ৬৬৭সিসি। গ্রহটি ২০১২ সালে আবিষ্কৃত হয়। পৃথিবী থেকে ২৩ আলোকবর্ষ দূরের এই গ্রহটি ইএসআই মাপে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ১.০ স্কোরের মধ্যে ০.৮৪ স্কোর করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কেপলার ৬২ই নামের একটি গ্রহ যার ইএসআই ০.৮৩। এই গ্রহটি অবশ্য পৃথিবী থেকে এক হাজার ২০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। ০.৮১ ইএসআই স্কোর করে তৃতীয় অবস্থান দখল করেছে জিজে৮৩২সি।

৩. কেপলার ৪৪৪ (আরো এক আবিষ্কার)
আমাদের এই পৃথিবী থেকে ১১৭ আলোকবর্ষ দূরে একটি প্রাচীন নক্ষত্রের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আকারে সূর্যের ২৫ ভাগের ১ ভাগ কেপলার ৪৪৪ নামের একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে পৃথিবীসদৃশ পাঁচটি গ্রহ।
(সোর্সঃ আইএএনএস)। নাসার কেপলার মহাকাশযান থেকে পাওয়া তথ্য চার বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে একদল গবেষক অতিপ্রাচীন এই নক্ষত্র ও তার সংসারের খোঁজ পাওয়ার দাবি করেছেন।
গবেষকেরা বলছেন, এই নক্ষত্রটি ১ হাজার ১২০ কোটি বছরের পুরোনো হতে পারে। বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক টিগো ক্যাম্পনেট এই গবেষণা প্রকল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর দাবি, ‘নতুন আবিষ্কৃত এই পাঁচটি গ্রহ এক হাজার ৩৮০ বছরের বিশ্বমণ্ডল সৃষ্টির ধাপে ধাপে তৈরি হয়েছে। এর খোঁজ পাওয়ার মাধ্যমে মিল্কিওয়ে ছায়াপথের ভেতর প্রাচীন জীবনের উৎস খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেল। এই নক্ষত্রটির যে পাঁচটি গ্রহ রয়েছে সেগুলোর আকার বুধ ও বৃহস্পতির মতো হতে পারে। এই গ্রহগুলো নক্ষত্রটির এত কাছে আবর্তন করছে যে তাদের কক্ষপথ পরিভ্রমণ করতে ১০ দিনের মতো সময় লাগে। সেই হিসাবে গ্রহগুলো বুধ গ্রহের মতো উত্তপ্ত ও বসবাসের অযোগ্য হতে পারে। আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিভ কাউলার বলেন, ‘কেপলার ৪৪৪ অত্যন্ত উজ্জ্বল নক্ষত্র, যা বাইনোকুলার দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যায়। ছায়াপথের অন্যতম প্রাচীন নক্ষত্র এটি। এটি ছায়াপথের প্রথম প্রজন্মের নক্ষত্রগুলোর মধ্যে পড়ে। কাউলার আরও বলেন, ‘আদিম এই নক্ষত্র ও তার গ্রহগুলোর আবিষ্কার থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, আমাদের সৌরজগৎ সৃষ্টির ৭০০ কোটি বছর আগে ওই গ্রহগুলো তার নক্ষত্রের চারপাশে তৈরি হতে শুরু করেছিল। দীর্ঘদিন ধরেই নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে গ্রহের সৃষ্টির বিষয়টি আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথের সবচেয়ে পরিচিত বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখা হয়।’
অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ। গবেষকেরা বলছেন, পাথুরে পৃথিবীসদৃশ এক্সোপ্লানেট থেকে শুরু করে অন্য নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা পৃথিবীর সমান আকারের গ্রহের সন্ধান পাওয়ার মাধ্যমে মহাকাশের ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটছে এবং ছোট ছোট বিশ্ব তৈরির বিষয়টিও আমাদের নজরে আসছে। আমাদের সামনে এত দিন গ্রহ সৃষ্টির বিষয়ে যে অজানা বিষয়গুলো ছিল, তা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে উঠছে।
 সুতরাং বোঝা যাচ্ছে সুযোগ আর খরচাদি করা মানুষগুলোর জায়গা হতেও পারে এসবের কোন একটি গ্রহ তে। কেবলমাত্র এই তিনটি নয় আছে আরো।
কেপলার ৩৪৮বি
সর্বপ্রথম এটি আবিষ্কৃত হয় ২০০৯ সালে। আমাদের গ্রহ থেকে ৪৭০ আলোকবর্ষ দূরে।কেপলার ৩৪৮বি এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাসের উপযুক্ত গ্রহ। কারণ এর ইএসআই বা আর্থ সিমিলারিটি ইন্ডেক্স ৮৮ শতাংশ অর্থ্যাৎ পৃথিবীর মতো।বরং এটি পৃথিবী থেকে ১২ গুণ বড় আর পৃথিবীর থেকে ৪০ গুণ বেশি আলো পৌঁছে থাকে।তবে এই গ্রহের এমন কিছু দিক আছে যেগুলো মানুষের পক্ষেগ্রহণ করাটা সহজ হবে না।যেমন সেখানে ভালো কোনো বায়ুমণ্ডল নেই, এছাড়াও সেখানকার সূর্যটি ১০ গুণ বেশি আলো প্রদান করে থাকে।এই গ্রহ নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। যদি এ গ্রহের ম্যাগনেটিক ফিল্ড থাকে তাহলে এটি হতেও পারে মানুষের জীবন যাপনের দ্বিতীয় অপশন।
কেপলার ৪৫২বি
এটি আবিষ্কৃত হয় ২০১৫ সালের জুলাইতে। কেপলার ৪৫২বি’কে সুপার আর্থও বলা হয়। এ গ্রহটি পৃথিবী থেকে ৫ গুণ বড়।এ গ্রহটির কক্ষপথকে ৩৮৫ দিনে একবার পরিভ্রমণ করে থাকে অর্থাৎ এই গ্রহে এক বছর হয় ৩৮৫ দিনে। এর আকার বড় হওয়ার কারণে এর অভিকর্ষ পৃথিবী থেকে ২ গুণ বেশি।এ গ্রহে পৃথিবী থেকে অনেক বেশি আলো পৌঁছায়।তবুও যদি কখনো এ গ্রহ পর্যন্ত পৌঁছানো যায় তাহলে এটিও হতে পারে বিকল্প পৃথিবী।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কেপলার ৪৫২বি পৃথিবী থেকে ৪৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে।যদি কোনো স্পেসশিপে করে ৩৭ হাজার মাইল প্রতি ঘন্টার গতিতে এই গ্রহের দিকে যাওয়া যায় তাহলে ২৬ মিলিয়ন বছর লাগে যাবে ঐখানে পৌঁছাতে। পৃথিবী থেকে কেপলার 452-Bর দূরত্ব চৌদ্দশ আলোকবর্ষ ৷ পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব যতটা, সদ্য চোখে পড়া কেপলার 452-Bর থেকে তার সূর্যের দূরত্বও প্রায় ততটাই। কাজেই জীবনধারণের প্রয়োজনীয় পানি মাটিতে থাকার জন্য সূর্যের থেকে কোনো গ্রহের যতটা দূরত্ব থাকা উচিত, ঠিক ততটাই দূরত্বে আছে কেপলার 452-B। এই গ্রহের সূর্য বয়সে পৃথিবীর সূর্যের তুলনায় প্রবীণ ৷ তার উজ্জ্বলতাও পৃথিবীর সূর্যের থেকে অন্তত দশ শতাংশ বেশি। কেপলার 452-Bতে ৩৮৫ দিনে এক বছর ৷ মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও পৃথিবীর দ্বিগুণ, কারণ সে একটু স্বাস্থ্যবান। ওখানে পৃথিবীর চেয়ে অধিকতর ঘন বায়ুমণ্ডল আর সক্রিয় আগ্নেয়গিরি থাকারও সম্ভাবনা রয়েছে। নাসার বিজ্ঞানীদের দাবি, আজ থেকে অনেক কোটি বছর পর পৃথিবীর যা চেহারা হবে কেপলার452-B এখন সেই স্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই এতে প্রাণের উৎপত্তি, বেড়ে ওঠার সব উপাদান আর প্রাণের বিবর্তনের উপযোগী পরিবেশ থাকতেই পারে। কাজেই আমাদের পৃথিবীর ক্রমাগত পরিবর্তনশীল পরিবেশকে বোঝার জন্য এটি অনেক বড় একটা সুযোগ। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর আমরা পৃথিবীর খুব কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের গ্রহের এরকম অনেক কথাই শুনি(যেমন—কেপলার 186F) ৷ এখনও পর্যন্ত নাসার কেপলার মিশন পৃথিবীর বিকল্প ধরে নিতে এক হাজারেরও বেশি গ্রহ খুঁজে বের করেছে!! কিছুদিন পর আবারও সেসব সময়ের অপ্রয়োজনে হারিয়েও যায়।
প্রক্সিমা বি
এটি পৃথিবী থেকে ৪ দশমিক ২ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে। প্রথমবারের মতো আগস্ট ২০১৬ সালে এটি আবিষ্কৃত হয়।প্রক্সিমা বি, প্রক্সিমা সেঞ্চুরি নামের রেড ডট স্টারের হাইবিটেবল জোনে ঘুরছে।এ গ্রহে পানির খোঁজ পাওয়া গেছে তাই এখানে জীবন যাপন করা সম্ভব বলে মনে করা হয়।এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে ৩০ গুণ বড় যার এক বছর পৃথিবীর ১১ দিনের মত।এর ইএসআই বা আর্থ সিমিলারিটি ইন্ডেক্স শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ। তবে এ গ্রহে বসবাসের দূর্বলতম দিক হচ্ছে এর সবচেয়ে কাছের সূর্য থেকে মাত্র ২ শতাংশ আলো গ্রহণ করতে হবে। এ গ্রহের আরেকটি খারাপ দিক হচ্ছে স্টেলার উইন্ড।এর উপর স্টেলার উইন্ড চলতেই থাকে এবং এক একটি ঝড় পৃথিবীর ঝড় থেকে ২ হাজার গুণ শক্তিশালী।
কেপলার ৬২-এফ
কেপলার ৬২-এফ কে ২০১৩ সালে আবিষ্কার করা হয়।কেপলার ৬২-এফ ছয় বিলিয়ন বছর পুরনো একটি তারার হাইবিটেবল জোনে অবস্থান করছে। এটির ইএসআিই শূন্য দশমিক ৬৭ এবং এটি পৃথিবী থেকে ১ দশমিক ৪ গুণ বড়।এটি পৃথিবী থেকে বেশ খানিকটা ঠান্ডা। সেখানে ছোট একটি সূর্য আছে যাকে প্রদক্ষিণ করে প্রতিনিয়ত ঘুরছে এ গ্রহটি।এটিতে পৃথিবীর মতোই পানি রয়েছে এবং সমুদ্রে রয়েছে সলিড বরফ।মানব জাতির বসবাসের জন্য এটি একটি উত্তম গ্রহ হতে পারে।এ গ্রহে এক বছর হয় ২৬৭ দিনে।এ গ্রহ যেকোনো সময় টাইরিয়াল লক হতে পারে অর্থাৎ এর এক পাশ চিরকাল সূর্যের এর দিকে এবং অপর পাশ চিরকাল অন্ধকারে থাকবে।
গ্লীজ-৫৮১জি
একে যারমিনা নামেও ডাকা হয়।যা পৃথিবী থেকে ২০ আলোকবর্ষ দূরে।এ গ্রহটিকে স্টিফেন ভোগট্ ২০১০ সালে আবিষ্কার করেন। এই গ্রহটি পৃথিবী থেকে দেড় গুণ বড়।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই গ্রহটি টাইরিয়াল লক হয়ে আছে এর সূর্যের সঙ্গে।কিন্তু যদি এ গ্রহের একটমস্ফিয়ার সমানুপাতিক হয় তাহলে এ গ্রহের উষ্ণতা ডার্ক সাইট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে যা জীবনের সঞ্চালন তৈরি করতে পারবে।গবেষণায় পাওয়া গেছে এই গ্রহে কম করে হলেও দুটি সমুদ্র রয়েছে।গ্লীজ-৫৮১জি গ্রহ যে ল সূর্যটিকে প্রদক্ষিণ করে তা খুব একটা বড় নয়। তাই এ গ্রহটি টাইরিয়াল লক হলেও এটিতে জীবন ধারণ অসম্ভব নয়।
এখন প্রশ্ন, আরো কি পৃথিবী আছে? উত্তর হ্যাঁ! আরো আছে। তাদের মোট সংখ্যা ৫০০ 'শ থেকেও বেশী।
নাসার মতে, Another 500 possible planets discovered by #Kepler
telescope, Nasa says bbc.in/1OA44z9 (লিংক)
তবে নাসা-র মহাকাশ বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধান তো ছোট কোনো ব্যাপার নয়৷ ‘পৃথিবীর মতো গ্রহ' – এই কথাটাই বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে অনেকের মনে৷

জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশবিজ্ঞানী নিকোলাস অস্টোডিল্লো জানিয়েছেন ৭১ হাজার বছর পরে পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশী হবে রেড রস ১২৮ গ্রহটি। সেইসঙ্গে এর তাপমাত্রা পৃথিবীর সমান হয়ে যাবে। অনায়াসেই সেখানে বসবাস করতে পারবেন মানুষ। ততদিনে আমি এবং আমরা হয়ত এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকবো না।

সুত্রঃ অনলাইন সাই ফাই জার্নাল, পত্রিকা, নাসা (টুইটার)

বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

ছোটগল্পঃ শিকারি

আপনাকে দেখে বেশ খুশী হয়েছি জানেন?
কেন?
আসলে রাস্তাটা খুব ফাঁকা, এদিকে এমন সময়ে কেউ তো আসে না আসলে। আপনি?
আমি এদিকে থাকি না, এদিকে আমার বোনের বাড়ি।
মেয়েটি একটু হাসল।
আকাশে চাঁদ হাসছে, সাথে আসছে অচেনা এই মেয়েটি। মেয়েটিকে সাদী চেনে না। পড়নে লেহেঙ্গা রঙ টা হয়ত গোলাপি না, কালো! আন্দাজ করা মুশকিল। তবে এটা নিশ্চিত মেয়েটি ভদ্রঘরের।
আপনি?
সম্বিত ফিরে পেলো সাদি, হাঁটতে হাঁটতে তাকিয়ে ছিলো মেয়েটির দিকে। কিন্তু আর সবার মত প্রশ্নটি না করে পারল না সাদি।
আপনি ফিরছেন কোথা থেকে? বিয়ে?
মেয়েটা একটু শুকনো হাসি দিল, হ্যাঁ। আমার বান্ধবীর বিয়ে ছিল। ওদের গাড়ি দিয়ে ড্রপ করে দেবে বলেছিল কিন্তু শেষ মুহুর্তে আর হলো না।
কেন?
ড্রাইভার টা গেছিল গাড়িতে তেল আনতে কিন্তু পথে এক্সিডেন্ট করে। তাই আমার অন্য বান্ধবী ওর গাড়ীতে এত টা পথ ড্রপ করে দিলো। বাকীটা দিতে চেয়েছিল, বললাম একা ই যেতে পারবো।
সাদি নিশ্চিত হলো। মেয়েটি সত্যি ভাল। এর আগে এত সুন্দর কোন মেয়ের সাথে কোনদিন সে কথা বলেনি। পাশাপাশি একসাথে হাঁটে নি। আজ হাঁটছে, তাও ঘড়িতে রাত এগারো টা।
আশেপাশে বাড়িগুলোতে আলো নেই, কয়েকটা জানালায় আলো আছে। দূরে একটা পোষা কুকুর কুঁই করে উঠলো।
আপনি?
সাদি আনমনা ছিল, আমি?
হ্যাঁ আপনি, কি করেন? পড়াশোনা? চাকরী আই মিন বিজনেস?
না না, বেকার। আমি একজন হাফেজ।
মেয়েটি একটু নিশ্চুপ হয়ে গেল। তারপর বলল, বাহ! তাহলে?
আসলে কি করবো ভাবি নি, তবে চাকরী চেষ্টা করেছিলাম।
পেয়েছেন?
নাহ!
(দুজনে নিশ্চুপ হেঁটে গলিটা ক্রস করে, আর কোন আলাপ নেই)
মেয়েটির নিশ্চুপ হবার কারণ সাদি বুঝল না।
এইতো! এইতো! আমার বাড়ি।
সাদি দেখল, একতলা একটি বাড়ি। তাতে আলো নেই। দেয়ালে বটগাছ বেড়ে উঠেছে। চুন সুরকি খসে পড়েছে। মেয়েটির চোখ জ্বলে উঠল।
মৃদ্যু স্বরে বলল, এটাই আমার বাড়ি। আপনার?
সাদি আঙুল দিয়ে আরো দূরে দেখালো একটা কবরস্থান।
মেয়েটি একটু হাসল। বলল, আবার দেখা হবে।


(গল্পটি পুরোপুরিভাবে কাল্পনিক এবং ফিকশন ধর্মী, অবাস্তব। যা মিলে গেলে একান্ত কাকতালীয়)

মঙ্গলবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

গল্পঃ রিভেঞ্জ

স্বপন মিঁয়া হোটেলে কাজ করেন। রোজ ই চুলার পাশে কাজ করতে করতে অভ্যাসী হয়ে গেছেন রীতিমত! সকালে পরোটা, আলুভাজা, শিঙাড়া, সমুচা। দুপুর হলে ই ভাল, মুরগি, সবজি, সালাদ, মাছ। রাতেও একই আইটেম ঘুরেফিরে চলতে থাকে।
স্বপন মিঁয়ার বাড়ি বগুড়া। মালিক বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলে স্বপন বলে, " মোর বাড়িত কেউ থাকে না "। মালিকের এতে কিছু যায় আসে না। ঢাকা শহরে হোটেল ব্যবসা সুবিধার না। এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম চড়া, তার উপর রান্নার মানুষ পাওয়া সমস্যা। রান্না খারাপ তো কাস্টমার নাই! কাস্টমার নাই তো ব্যবসায় লালবাত্তি।
আসলে হোটেল মালিক স্বপনকে বিশ্বাস করেন না। নাহ, টাকা পয়সা নিয়ে না। ওর অন্য সমস্যা।
হোটেল টা বেশ বড় নয়। আর সাধারণ হোটেলের মত। পেছনের দিকটায় রান্নাঘর, সামনের দিকে কাঁচের দেয়াল ঘেরা ক্যাশ। পনেরো বিশটা টেবিল আছে হোটেলে। পেছনের দিকে আছে বেরোনোর পথ। যেখানে থাকে ওয়াসার পানি ভর্তি ড্রাম। হোটেলে রান্নার পানি এই ড্রাম থেকে ই আসে।
ওস্তাদ ডানের টেবিলে দুইটা ডিম পোচ, ভাত আর ডাইল! বলে হাঁক ছাড়ল সেন্টু। সে এই হোটেলের হোটেল বয়। বলতে গেলে খুব ই বিশ্বস্ত। আজকালকার দিনে এমন ছেলে পাওয়া যায় না। নিশ্চিন্তে ক্যাশে বসিয়ে দেয়া যায় সেন্টুকে। একটা পয়সা এদিকওদিক করে না। সেন্টুর বয়েস ১৫, হ্যাংলা পাতলা গরন। গায়ের রঙ শ্যামলা, চুলগুলো কোঁকড়াটে।
হোটেল মালিকের ফোন আসে। কাস্টমারের ভীড় আজকে মনে হয় একটু বেশী। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার ভীড় বেশী থাকে বাস স্টান্ডে। লোকে ঠাসা এই ঢাকা শহরে কোথায় কবে না ভীড় কম হয়েছে।
সেন্টু সিরিয়ালি কাস্টমারের বিল বলতে থাকে, " সাদা শার্ট চল্লিশ, ব্যাগের আপা পঁয়ত্রিশ, বুড়া আংকেল দশ "
বুড়া আংকেল বলতে ই ভদ্রলোক রেগে গেলেন হালকা, " আমাকে কি দেখে বুড়া মনে হয়, মাথায় আবুল হায়াতের মত চুল দেখে?"
সেন্টু লজ্জিত চোখে জ্বিভে কামড় দেয়, ভুল হইয়া গ্যাছে স্যার!
মালিক বিল তুলে ফোন ধরে, ব্যবসায়ী সমিতিতে ডাক পড়েছে তার। সেন্টুর কাছে ক্যাশ ধরিয়ে তিনি তার বাইক নিয়ে চলে গেলেন ধোঁয়া তুলে। সেন্টু এই সময় টা নিজেকে অনেক বড় মনে করে। মালিক তার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। এমন মালিক হয় না। বেতন দেন টাইম মত, খাবার দেন রেগুলার, পোষাক-আষাক সব ই ঈদের আগেভাগে দিয়ে দেন।
মালিক চলে যেতে না যেতে হোটেলের রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আসে স্বপন। গায়ে স্যান্ডো গেঞ্জি সেটা ভিজে সপসপে হয়ে, কোমরে রঙচটা গামছা বাঁধা, সাথে থ্রি কোয়াটার। স্বপনের বড়ির প্রশংসা করতে ই হয়। প্রত্যেকটা মাসল দেখা যাচ্ছে গেঞ্জির ভেতর আর বাইরে।
সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে স্বপন নীচু গলায় বলে, " কি রে হালা? বইয়া পড়ছস ক্যাশে?" একটা খ্যাশখ্যাশে হাসি হাসে স্বপন। ডান হাতে সিগারেট ধরে বাম ডান টা সেন্টুর দিকে এগিয়ে দেয় সে। "টাকা দে তো দুইশ! দে তাড়াতাড়ি "
সেন্টু হালকা ভয় করে স্বপন করে, বলে " স্বপন ভাই, মজা কইরেন না। যান তো কামে যান!"
স্বপন রেগে যায়, খুব জোরে একটা চড় বসিয়ে দেয় সেন্টুর গালে। ভরা দোকান কাস্টমারের সবাই প্রায় অবাক হয়ে তাকায় ওদের দুজনের দিকে। সেন্টু গালে হাত দিয়ে চুপ হয়ে যায়। স্বপন তাড়াতাড়ি ঢুঁকে যায় রান্নাঘরে।
সেন্টু ক্যাশে বসলে ওর ছোটভাই বয়ের কাজ করে। সে স্কুলে যায়। সকালে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস থ্রি তে পড়ে সে।
স্বপনের একটা বাজে অভ্যাসের কথা এই হোটেলে সবাই জানে। সে উঁকি দিয়ে কাস্টমারদের দেখে। রান্নাঘর থেকে উড বোর্ডের দেয়ালের ফুটো দিয়ে সে তাকিয়ে থাকে মাঝেমাঝে। বলতে গেলে প্রায়শই দেখতে থাকে।
মালিক ব্যাপার টা জানেন, তবুও এতে কাস্টমার কেউ জানেন না কিংবা লক্ষ্য করেন না এসব ভেবে আর তিনিও বাড়াবাড়ি করেন না। যদিও এটা নৈতিকতার মারপ্যাঁচে আটকে।
সেন্টুর কাছেও এসব ছ্যাঁচড়ামি পছন্দ না। সেন্টুর ইচ্ছে সে একদিন মালিকের ডান হাত হবে। শোনা যাচ্ছে মালিক সামনে নাকি আরো দু একটা দোকান দেবে। মালিকের খুশীমত চললে হয়ত সেই দোকানের কোন একটায় সে সেলস ম্যান হতে পারে। তার ইচ্ছে একদিন সে একটা বাইক কিনবে। কিন্তু এই হোটেলের ক্যাশে পার্মানেন্ট করলে সে প্রথমে ওই স্বপন কে তাড়াবে। মনেমনে রাগে গজগজ করে সেন্টু।
সেন্টুর একজন পছন্দের মানুষ আছে। সে তার ছোট ভাইয়ের প্রাইমারি স্কুলে ই পড়ত কিন্তু এবার ক্লাস ফাইভ থেকে সে সিক্সে পড়ছে। বিকেলবেলা মেয়েটি যখন ঠিক প্রাইভেট থেকে ফেরে ঠিক তখনি সেন্টুও মেয়েটিকে তার বাড়ির গলি পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। দুজন ঠিক দুদিকে থাকে সেন্টু রাস্তার এপাশে আর মেয়েটি অন্যপাশে। যাতে কেউ ঠিক করে বুঝতে না পারে। মেয়েটির বাবা কে, মা কে কিংবা পরিবারে আর কে আছে সেসব কিন্তু সেন্টু জানে না। ও বলে, " জাইনা আর কি করমু! যেদিন বড় হমু যেদিন দুইজনে বিয়া করমু সেদিন জাইনা নিমু "
হোটেলের ভীড় আজ কমে না। মালিক ও আজ আসেনি। তাই সেন্টুও মেয়েটির সাথে দেখা করতে যেতে পারে না। হোটেলে ক্যাশে কাটাতে হয় সেন্টুকে।
স্বপন আবার আসে।
হোটেল এই রাতে একটু ফাঁকা।
স্বপনের হাতে টুথপিক, সেটা দিয়ে সে খিলাল করতে ব্যস্ত আরো ব্যস্ত আড়চোখে একজন নারী কাস্টমারের দিকে। নারী কাস্টমারের সাথে লাগেজ। সম্ভবত কোথাও যাবেন বা কোথাও থেকে এসেছেন। স্বপন তার চোখ দিয়ে গিলতে থাকে বাজে ভাবে।
সেন্টুর এবার রাগ উঠে যায়। স্বপন কে বলে, " স্বপন ভাই! পানি ভরো ড্রামে। কাইল্কা পানি থাকবো না সকালে"
স্বপন বিরক্ত হয়। একটা হাত উঁচিয়ে ধরে চড় মারবে বলে কিন্তু থেমে যায় কারণ নারী কাস্টমার এখন ক্যাশের কাছে। তার গায়ের পারফিউমের গন্ধ স্বপনের ইন্দ্রিয় নাড়িয়ে দেয়।
সেন্টু রাগে গজগজ করতে থাকে, কিন্তু এবার একটা বাজে ইঙ্গিত করায় সেন্টু আর থামাতে না মেজাজ।
" ভাল হইয়া যাও স্বপন ভাই!"
স্বপন রেগে যায় ভয়াবহ। নারী কাস্টমার একা, তিনিও এই ঝামেলায় না গিয়ে লাগেজ নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলেন হোটেল থেকে।
এরপর লাগল মারামারি, সেন্টুর নাকে ঘুষি বসিয়ে দিল স্বপন। পরিস্থিতি সামলাতে হোটেলের বাকী সবাই ছুটে এলো। মালিক এলেন রাত ১১ টায়। শাসালেন দুজন কে। তার হোটেলে এইসব চলবে না। এমনিতে ই হোটেলে লস চলছে।
এরপর সব ঠিকঠাক চলে, সেন্টু বাচ্চাছেলে কিন্তু প্রচন্ড রাগ। কয়েকদিন ক্যাশে বসেনি সে। মালিক নিজে ই ছিলেন।
সব ঠিকঠাক ই চলছিল কিন্তু একদিন সেন্টুকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। সবাই সন্দেহ করল এতে স্বপন কিছু করেছে। সেন্টুর ছোটভাই ও জানাল আগেরদিন বাইরে যাইতাছি বলে ওর ভাই রাতে বাইরে যায় এরপর আর ফেরে নাই। পুলিশ আসে।  সবাইকে জেরা করে।
কিন্তু ঘটনাটা যেদিন ঘটল সেদিন, ড্রাম থেকে পানি ভরছিল হোটেলের বুয়া। সে সকালবেলা থালাবাসন ধুঁয়ে দিয়ে যায়। প্রথমে ট্যাপ খুলে সে গন্ধটা পায়। পরে ড্রামের ঢাকনা খুলে " বাবাগো.. মাগো.." বলে বেড়িয়ে আসে।
লোকজন সকালে দাঁত ব্রাশ করছিল, তারা ছুটে যায়। গিয়ে দেখতে পায় সেন্টুর লাশ ড্রামের ভেতর।
নিঃসন্দেহে গ্রেফতার হয় স্বপন। মালিক ব্যাপার টা ধামাচাপা দিতে টাকা খরচ করেন পুলিশে। স্বপন কে কোর্টে চালান দেয়া হয় তার চৌদ্দ বছরের জেল হয়। হোটেলে নতুন লোক আসে। সেন্টুর ভাই কে নতুন বয় করা হয়। সে ক্যাশেও কাজ করছে বিশ্বস্ততার সাথে। সব ই মিটমাট।
রাতে ব্যবসায়ী সমিতির মিটিং শেষে বাড়ি ফিরছিলেন হোটেলের মালিক। রাতের ব্রেকিং নিউজ টা তিনি হয়ত টিভি তে দ্যাখেন নি। বাইকে তেল না থাকায় আজকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তায় কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু থমকে গেলেন তিনি।
আঁতকে বললেন, " স্বপন! তুই?"
স্বপন বিল্ডিং এর ছায়াতে দাঁড়িয়ে ছিল। এবার এগিয়ে একটু আলোতে এল তার চোখ দুটো দেখতে পেল মালিক। ভয়ার্ত গলায় বলল, " তুই এখানে?  তোর না.. "
জেলে থাকনের কথা? তাই না..বলেই একটা গালি দিল স্বপন।
" তুই জানস আমি খুন করি নাই, হ আমার বদস্বভাব আছে ঠিকি কিন্তু কাউরে খুন আমি করতে পারি না। " বলে থামল স্বপন।
ওহ! এইসব কি বলছিস স্বপন? খুন তো?
আমি করি নাই। তুই করছিস বলে আবারো গালি দিল স্বপন। এরপর বলল, আমি সেইদিন ওরে মারার পর বুঝছিলাম আমার ভুল হইসে। এই কাজগুলা খারাপ। আমিও তওবা করছিলাম আর এইসবে যামু না। তাই হোটেল বন্ধ হওনের পর আমি সেন্টুর বাড়ির কাছাকাছি সেন্টুর জন্য অপেক্ষা করতাছিলাম। ও আইলে ওর কাছে মাফ চামু। ওরে দেখলাম ও গলিতে আইতে। পরে দেখি চার পাঁচজন ওরে আচমকা ঘিরা ধরসে। প্রথমে ভাবছি ওর পরিচিত কিন্তু যখন কোপ টা দিল আমি দৌড় দিলাম। ধরতে পারলাম না কাউরে সেন্টুরে জড়ায়া ধরলাম তাড়াতাড়ি। গলার একদিক টা ঝুলে পড়সে। সেন্টু খালি কইল সেই মেয়েটা স্বপন ভাই!
আমিও আর কিছু করতে পারি নাই। ওরে হাসপাতালে নিতে পারি নাই। লোকজন আসতে দেইখা আমি পলাইয়া যাই। যেইটা আমার ভুল। কিন্তু সেন্টু কোন মাইয়ার কথা কইছে আমি বুঝি নাই।
পরে ওর ছোটভাই যখন কইল। এইটা সেই মাইয়া, যে মাইয়া কে সেন্টু পছন্দ করতো। আপনি জানতেন আমি এই খুন করি নাই। আপনারে কত ভাল ভাবসিলাম আর আপনে?
হোটেল মালিক এতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি এবার বললেন " আগে তো রান্না করতি, এখন কি নাটক ও করবি ফকিন্নি? তুই তো.. " কথা আর শেষ করতে পারেন না মালিক। তার পায়ে  দৃঢ় হাতের কোপ পড়ে, তিনি হাটুগেড়ে বসে পড়তে না পড়তে এবার ঘাড়ে কোপ পড়ে "
পেছন থেকে সামনে আসে সেন্টুর ছোটভাই। হাতের চাইনিজ কুড়ালে তখন গরম রক্ত।
" মেয়েটা আপনার বোন মালিক, আপনি না করতে পারতেন আমার ভাইরে না মাইরা তো বুঝাইতে পারতেন! "
হোটেল মালিক হাত উঁচিয়ে কিছু বলতে চাইছিলেন।
ধপ করে মুষড়ে পড়লেন পিচের রাস্তায়।




(গল্পের ঘটনা ও চরিত্র সম্পূর্ন কাল্পনিক, এর সাথে জীবিত, মৃত ও অর্ধমৃত কারো কোন মিল নেই। মিলে গেলে তা একান্ত কাকতালীয়) 

শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

পছন্দের লেখক এবং বইঃ তারানাথ তান্ত্রিক (তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়)

আমাদের বাংলা সাহিত্যে হাতেগোণা যে কয়েকজন আদিভৌতিক লেখক আছেন তাদের মাঝে বিভূতিভূষণের পুত্র তারাদাস অন্যতম। তার জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৫ ই অক্টোবর পশ্চিম বাংলার ব্যারাকপুরে, মৃত্যু ২০১০ সালের ১৮ ই জুলাই।
লেখালেখিতে হাত যেমন দূর্দান্ত তেমনি চালিয়ে গেছেন পিতা বিভূতিভূষণের সৃৃৃষ্টি অলৌকিক " তারানাথ তান্ত্রিক "। এসব গল্প কতটা সত্যি কিংবা মিথ্যে তা আমার কেন অনেক পাঠক ই দ্বিধান্বিত। উল্লেখ্য এই যে, তারানাথ নিয়ে লেখকের স্বীকার্য এখানে তুলে ধরা যায়, -
"এই গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত কাহিনী আমার চিন্তাপ্রসূত নয়, বেশিরভাগই অভিজ্ঞতাপ্রসূত। অলৌকিক এবং অতিলৌকিক ঘটনার দিক শেষ হয়ে যায়নি, কেবল অনেক সময় আমরা তাদের অলৌকিক বলে চিনে নিতে পারি না—এই যা।" জে. বি. এস. হ্যালডেন বলেছিলেন—সত্য যে কল্পনার চেয়েও বিচিত্র শুধু তাই নয়, আমাদের কল্পনা যতদূর পৌঁছয় সত্য তার চেয়েও অদ্ভুত। পাঠকেরা বিশ্বাস বা অবিশ্বাস যা নিয়েই পড়তে শুরু করুন না কেন, এ কাহিনীগুলি সত্য।" - তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
 তবে এটি সত্য যে, লেখকের সাহিত্যরস অসাধারণ। পাঠক কে বিনা পলকে বইয়ের পাতায় আটকে রাখতে পুরোপুরি সক্ষম এই গল্প।
গল্পের চরিত্র তারানাথ একেবারে নির্লোভ সাধক চরিত্র। তার কথায় '' দেখ, আমি একজন সাধারণ মানুষ। যাকে সাধক বলে আমি তা নই। কারণ সত্যিকারের সাধনা করবার সুযোগও আমি কোনোদিন পাইনি, পেলেও করতাম কিনা সন্দেহ। আসল ব্যাপারের চেয়ে এই পথে পথে বেড়িয়ে বেড়ানো, নানা বিচিত্র চরিত্রের মানুষের সঙ্গে আলাপ হওয়া জীবনের এই দিকটাই আমাকে বেশি মুগ্ধ করত। নইলে সত্যিকারের সাধনা করলে আমি অনেকদূর উঠতে পারতাম। তোমাদের এতদিন বলিনি, আমার একবার প্রকৃত তান্ত্রিক দীক্ষাও হয়েছিল! গুরুর নাম বলব না, তার বারণ আছে। এবং আমার দীক্ষাও হয়েছিল শুভলগ্নে। তান্ত্রিক দীক্ষা অনেক বিচার করে লগ্ন দেখে দিতে হয়। শুক্লপক্ষে দীক্ষা হয় না। কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চমী, সপ্তমী—এসব তিথি খুব ভাল। অক্ষয় তৃতীয়া বা দশহরার দিন হতে পারে। কিন্তু তন্ত্রমতে এসবের চেয়েও প্রশস্ত দিনে আমার দীক্ষা হয়। ''
তারানাথ তান্ত্রিকের এই গল্পটি অবশ্য শেষের দিক, বিভূতিভূষণের গল্পের ধারা ধরে চালিয়ে গেছেন তারাদাস।
বইটি অনলাইনে কিনতে পাওয়া যায় তবে অনেকে পিডিএফ পড়েন বলে কাজটা আজ একটু সহজ করে নিজের কাছে থাকা বইটি শেয়ার করে দিলাম ব্লগে।
Wikipedia-(তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়)

Download link: Taranath Tantrik PDF/EPUB

তারানাথ তান্ত্রিক-তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (PDF)

Taranath Tantrik- Taradas bannerje (EPUB)

Download Link: Alatchakra PDF/EPUB
অলাতচক্র (PDF)
Alatchakra-Taradas bannerje (EPUB)


হ্যাপি রিডিং :)

সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

গল্পঃ একজন কাজী মামুন

বিছানা থেকে উন্মত্ত পাগলের মত উঠে পড়লেন কাজী মামুন। পাশের টেবিলে রাখা স্বছ্ব কাঁচের গ্লাস কোনমতে হাতে নিয়ে ঘড়ঘড় করে পানি খেয়ে ফেললেন তিনি। অসম্ভব দ্রুততার দরুন পানি তালুতে এসে ঠেকল। ভীষন কাশি পাচ্ছে এখন! ঘুম ভাঙাতেই বুঝলেন কে যেন দেয়ালে হাতুড়ি দিয়ে পেরেক গাঁথছে, ধুম-ধাম সেই শব্দে ঘুম ভেঙেছে তার। মেজাজ তিরিক্ষে করে বিড়বিড় করলেন কয়েকবার।

কাজী মামুন, পেশায় বড় ব্যাবসায়ী। আজকাল ঢাকা শহরে এক নামে সবাই তাকে চেনে। নিজেকে সবার সেরা ভাবতে পিছপা হন না কখনও। কোটি কোটি টাকার সম্পদ, ছেলে একজন দেশের বাইরে পড়ছে, মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন মাস ছ'য়েক। এখন বাসায় একাই থাকেন। নিজেকে সুখী মানুষদের একজন ভাবেন সবসময়। এখন ব্যাবসার পাশাপাশি জনসেবা করেন। সামনের নির্বাচনে এম পি পদে ভোটও চাইবার আশা রয়েছে।

বর্তমানে অনেক বড় কাজে ব্যাস্ত! স্বাধীনতার ৪৩ বছর উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা দের পুরস্কার বিতরনী নিয়ে। পুরস্কার দিচ্ছেন তার প্রতিষ্ঠান থেকে। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর তার প্রতিষ্ঠান এবারই সুযোগ পেয়েছে দেশের সোনালী সুর্যোসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের পুরস্কৃত করতে। এজন্য কম তদবির করেন নি তিনি, বিশেষ শ্রেণীর সরকারী লোকজন, মন্ত্রনালয় কাউকে বাদ দেননি তিনি! একরোখা সেই ভাব এখনো জেগে আছে কাজী মামুন সাহেবের মনে। সবকিছুই চাই তার!

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল সময়ের মত এখনো পাঞ্জাবি গায়ে চড়ান কাজী মামুন। গায়ে সুগন্ধি আতর মাখেন। তবে সময়টা শুধু বদলে গেছে, দশতলা উচুঁ ভবনে অফিস। দামী গাড়ি, ঢাকায় সরকারী খাস জমিতে জবর দখল করে বাড়ি! কি নেই এখন তার। মুক্তিযুদ্ধের সময় আজকের কোটি টাকার কানাকড়ি ছিলনা মামুন সাহেবের হাতে। তিন সন্তানের মাঝে সবচেয়ে ছোট মামুন। কারও সাথে মন খুলে কোন কথা বলেনি কখনও, দারিদ্র্যের মাঝে কিভাবে হঠাৎ এত বড়লোক হলেন তিনি সেটা তার ফেলে আসা গ্রামের কেউ ভেবে পান না। এখন গ্রামে খুব একটা যান না তিনি। মাঝে একবার গ্রামে গিয়েছিলেন। সেও আবার গত ঈদুল আযাহার সময়। গ্রামের এতিমখানার জন্য একটি ঊট কুরবানি দেবার জন্য। নিজের নামে একটা মাদ্রাসা দিচ্ছেন খুব তাড়াতাড়ি।
কাজী মামুন সাহেবের ফোন বাজছে! ক্রিং ক্রিং....
-হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম
-স্যার, আমি রতন।
-কোন রতন?
-ভুলে গেলেন, গতকাল আপনি অনেক গুলো ক্রেস্টের অর্ডার দিলেন। ওগুলা রেডি!
-তুমি আমার স্মৃতি শক্তি নিয়ে মশকরা কর!
-সরি স্যার, আমি তেমনটা বলিনি।
-তোমার বিল রেডি কর, আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
রাগলে চোখের সাদা অংশ লালচে হয়ে যায় কাজী মামুন সাহেবের!
ড্রাইভার কে গাড়ি বের করতে বলে, গায়ে সুতির পাঞ্জাবি জড়ালেন। তার পছন্দের আতর গায়ে মাখতেও ভুললেন না তিনি।
গাড়ি চাপিয়ে এবার গন্তব্য সোজা মন্ত্রনালয়। পুরস্কার বিতরনী কোথায় হবে সেটা তো ঠিক করতে হবে।
মন্ত্রী সাহেবের কক্ষ, অনেকটা সাজানো, ব্যাস্ত মন্ত্রী!
ভেতরে এলেন কাজী মামুন, উচ্চস্বরে সালাম দিলেন
-আসসালামু আলাইকুম!!!
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
আরে মামুন সাহেব যে? বসুন। আপনার কথাই হচ্ছিল! আপনি তো অনেকদিন বাঁচবেন!
-কি সৌভাগ্য আমার!
-কি খাবেন ঠান্ডা না গরম!
-না স্যার এত ব্যাস্ত হবেন না, আমি কিছুই খাব না। এতদিন পর জাতির কিছু সুর্যোসন্তান দের পুরস্কৃত করতে পারছি, এর চেয়ে বড় আর কি হতে পারে!
-হ্যা। আপনার জন্য আগামি সপ্তাহে একটা দিন ঠিক করেছি। বিজয় দিবসের আগের দিন। স্থান ইঞ্জিনিয়ারিং মিলনায়তন। ইতিমধ্যে আমাদের মন্ত্রনালয় থেকে এনলিস্টেড মুক্তিযোদ্ধা দের চিঠি দিয়েছি। তারা সবাই আসবেন। তবে যারা অসুস্থ বা মারা গেছেন তাদের ক্ষেত্রে তাদের পরিবার থেকে আত্বীসজন আসবেন।
-অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাস্ট্রপতি পেলে আরও ভাল হত স্যার!
-আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি, আর আমি তো আছিই!
আপনাকে স্যার কি বলে যে ধন্যবাদ দেব।
-হাহা সেকি? জাতীয় বীর সম্মাননা পাচ্ছে এতে ধন্যবাদ দেবার কি আছে? আমরা হতভাগা জাতি, এখনো সব করতে পারছি কই!
-আজ আমি তাহলে আসি।
-হ্যা আসুন। (মন্ত্রীর সাথে করমর্দন করলেন কাজী মামুন)

কাজী মামুনের বুকের ছাতি অনেক বড়! না হলে কি করে এত বড় আয়োজন করতে পারেন! বলুন?
অফিস থেকে নেমে, ধীর পায়ে নিজ গাড়ির দিকে পা চালালেন মামুন সাহেব,
গাড়িতে বসে ড্রাইভার এফ এম রেডিওতে গান শুনছিল, গাড়িতে বসেই বিধর্মী গান শুনতে পেলেন কাজী মামুন। গাড়িতে গান শুনে মাথায় রক্ত চড়ে গেল তার। হাতের পাঁচ আঙুল মুঠো করে শক্ত করলেন তিনি!
এবার লাল চোখে সতর্ক করলেন ড্রাইভারকে, 'আবার যদি আমি এই কাজ করতে দেখি, তোমার চাকরী খতম! নাজায়েজ গানা বাজনা! '
ভয়ে চুপসে যায় ড্রাইভার। হতদরিদ্র লোক চাকরী হারাবার চেয়ে বড় কিছু ভয় আর পায় না।

আজ ১৫ই ডিসেম্বর, সেই কাঙ্খিত দিন, স্টেজ সাজানো হয়েছে নানা বর্নিল রঙে! পুরস্কৃত করা হবে জাতির সুর্যোসন্তান দের!
অতিথি হিসেবে আসছেন স্বয়ং রাস্ট্রপতি! আরও গন্যমান্য ব্যাক্তিত্ব। মন্ত্রী সাহেব তো আছেনই।
ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠের পর একে একে বক্তব্য দিতে থাকলেন তারা।
রাস্ট্রপতি দেশের সবাইকে প্রকৃত দেশপ্রেমী হবার মন্ত্রনা দিলেন। দেশের জন্য একত্রে কাজ করার পরামর্শ দিলেন। "নিজেদেরকে দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত হতে হবে "
এবার শুরু হল পুরস্কার বিতরনী,,,,
একে একে নাম ডেকে দেয়া হচ্ছিল পুরস্কার
কিন্তু হঠাৎ কোথা থেকে একজন বৃদ্ধ ছুটে এলেন স্টেজে, তাকে ধরে রাখতে হিমশিম খেয়ে গেছে যুবক বয়সের এস এস এফ সহ নিরাপত্তারক্ষীরা।
স্টেজে উঠে তার প্রথম কথা "রাজাকারের বাচ্চা "
হাত উচিয়ে লোকটি মারতে গেল কাজী মামুন কে!
উপস্থিত সবাই অবাক বনে গেলেন এ ঘটনায়।
এস এস এফ সদস্য রা তাকে ধরে না ফেললে হাতের জুতো প্রায় ছুড়ে দিয়ে ফেলেছিলেন বৃদ্ধ!
উপস্থাপক মাইকে সবাইকে শান্ত হতে বললেন। এলোমেলো হয়ে গেল কিছু মুহুর্ত! কেউ কথা বলছে না।
রাস্ট্রপতি কি বলবেন? তিনি সাময়িক এ ঘটনায় বাকরুদ্ধ।
অনুষ্ঠান শেষ! সবাই চলে যাচ্ছে, বৃদ্ধ কি বলল, কেউ তা একবার ভেবেছেন?
কাজী মামুন সাহেবের মত রাজাকার এখনো বেচেঁ! উর্দি বদল করে কোটি টাকার মালিক।
সব একসময় বদলে যাবে, দুদিন পর সংবাদের পাতাও ভুলে যাবে এ ঘটনা।
শুধু দেশ ক্ষমা করবে না। দেশের বিবেক জাগ্রত। আমরা শুধু মৃত লাশ। জেগেও মৃত আমরা।

(গল্পের সমস্ত ঘটনা এবং চরিত্র কাল্পনিক। জীবিত, মৃত, অর্ধমৃত কারো সাথে কোন মিল নেই, মিলে গেলে তা একান্ত কাকতালীয়) 

চারটে কবিতা

অন্তরালে তোমায়



শুধু ভালোবাসি বলে তো ইস্তাফা দেইনি আমি,
এক বুক আকাশ ভালবাসি বলে থামিনি,
বলিনি তোমায় এনে দেব, সাত রাজ্যের ধন।
মনের ঘরে অঘোরে ডেকেছি তোমায়।
মায়া রাজ্যের পুকুর থেকে মুঠোমুঠো নীল পদ্ম
এনেছি শুধু তোমায় ভালোবেসে,
কি বা না করেছি আমি তোমায় ভালোবাসা পেতে,
আমার বৃহৎ থেকে ক্ষুদ্রতিক্ষুদ্র শ্রম,
অজস্র ভালোবাসা আর বিনিদ্র আঁখির লালচে মায়ায়,
ভুল কথায় বাঁধিনি রঙিন স্বপ্নজাল
বেঁধেছি তোমায় হৃদয় বাঁধনে,
অনেক গোপনে, সবার আড়ালে
লুকিয়ে একান্ত সংগোপনে।
ভালোবাসি তোমায় সবকিছুর অন্তরালে।।

বৈরিতা

দ্বিমুখীতার কোন সুত্র নেই আমার মাঝে
কূলমান কিংবা জাতের ধার ধারিনী কখনো
তবুও নানা প্রতিবন্ধকতা,
আলোর মিছিল যেখানে আঁধারের সমাপ্তি টানে
ঠিক সেখান থেকেই আমার আঁধারের পদযাত্রা
আমার সম্ভাবনার দুয়ার সেখানে বন্ধ,
রক্তিম চোখে, শক্ত দু’হাতে শ্বাসনালী টিপে ধরার
এক প্রবল আক্রোশের ভয়ার্ত তীব্র শব্দ!
পৃথিবীতে সব ভয়ের শেষ আছে, আছে সব দ্বন্দের অবকাশ,
তবুও এ দ্বিমুখীতার শেষ নেই, নেই সমাধান।
প্রকৃতির সব চেষ্টা এখানে বিফলে,
হিসেবের খেরোখাতার আড়ালে, তোমার-আমার ব্যবধানে
লুকিয়ে আছে আকাশ ছোঁয়া,
সীমাহীন এক বুক বৈরিতা।


তুমি-আমি


বিনিদ্র আঁখি আর কত দেখে রাখি!
শুনশান নীরবতায় ইশারায়
চলছে ডাকাডাকি,
পলকে পলকে মৃদু আলোকে
ইশারায় দৃষ্টি বিনিময়;
আধারে আলোর বন্যায়
ডুবে যাওয়া জেগে থাকা
বহুভুজ আবেগের উজ্জ্বল
নিশানা হাত মেলে জাগিয়ে রাখে আমাকে,
জেগে থাকে আমার বিনিদ্র দুটি আঁখি,
জেগে থাকি আমি!
জেগে আছো তুমি,
আমার আলো-ছায়ার রাতে,
তোমার হাতের পরশ আমার হাতে।


এক টুকরো ভয়


 রক্ত হিম করা শব্দের কিছু অনুরন শুনি প্রতিনিয়ত,
ভয়ার্ত কিছু আবেগের দোলাচলে, ভিন্ন কিছু আবেগের উত্তর-পশ্চিমে আমি
শতভাগের মাঝে কিছু ক্ষুদ্র, কিছু বৃহৎ প্রশ্নের
প্রতিটি কারনের সিকিভাগ আমি জানি।
আমার চকচকে মুখের মলিন হাসি থামিয়ে,
স্মিত কতে তাতে মলিন রেখা- টেনে আনার কারন আমি জানি,
তুমিই তো সেই;
যে আমার ঘড়ির কাটার সেকেন্ড শলাকা কেড়ে নিয়েছো,
এখন শুধু ঘন্টার কাটা ঠক ঠক করে চক্কর খাচ্ছে আমায় নিঃসঙ্গ সময়ে।
অনুভবগুলো জ্বলন্ত কাগজের মত একটুপর শেষ হয়ে যায়,
কিন্তু আবেগের মুহুর্তগুলো বাজতে থাকে, কোন হদিস ছাড়া।
কেন চুরি করলে আমায়?
টেনে আনা মৃত লাশের মত আমি আজ প্রাণহীন-অসহায়,
শুন্য আবগের ফাঁসি চাই, চাই নৃশংশ্য পরিনয়!
ভুলে যেতে চাই, পুড়িয়ে ফেলতে চাই!
তোমার দেয়া সেই এক টুকরো ভয়!

 



উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...