আমার
সাথে গ্রীক প্রেমের দেবতা ক্লিউপিডের কোন পুর্বপরিচয় নেই, তাছাড়া আমার এবং তার আধ্যাত্মিক কোন সম্পর্ক আছে বলে জানি না-
তবুও নিশ্চিত ভাবে এখন তার খুব খুব প্রয়োজন বুকের বা'পাশে বোধ করছি।
কমলাপুর
ট্রেন স্টেশনে পা রাখবার পরেই এমন অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে- সোজা কথা আমার থেকে ২০০
গজ দূরে, ঠিক নাক বরাবর উত্তর দিকের প্লাটফর্মটায় বসে থাকা মেয়েটির সাথে বাঁকা
চোখের ইশারা বিনিময়ের পর। সেও বড্ড চালাকি করছে বলতে হচ্ছে।
আমার
এহেন উঁকিঝুঁকি বুঝেই মেয়েটি এবার তার চোখে পুরোদস্তুর সানগ্লাস টা বসিয়ে নিল,
অদ্ভুত ব্যাপার বলতে হয়। মেয়েরা যখন বুঝে যায়, তাকে কোন এক ছেলে ইশারায় তার দৃষ্টি
আকর্ষনের চেষ্টা করছে, ঠিক তখনি না চেনার ভান খানা করে বসে।
এ
যুক্তি খানা বড় অদ্ভুত, বন্ধুবর বড় ভাই আশিকের থেকে শোনা। তিনি এককালে ইউনিভার্সিটির
ডাক সাইটে প্রেমিক ছিলেন। রিউমার আছে তিনি ঢাকা শহরের প্রত্যেকটি এলাকায় প্রেমের
অভিজ্ঞতা কুঁড়িয়েছেন। শুধু জেলাশহর গুলো-ই যা বাকী ছিল। অবশ্য এখন তিনি লন্ডনে
পাড়ি জমিয়েছেন, শুনেছি সেখানেও এক লন্ডনী সুকেশিনীরর প্রেমেজর্জর। যাক তার কথা,
হুইসেল
বেজেছে, মহান ক্লিউপিডের নামে এক গাদা শাপশাপান্ত করে রাজশাহীগামী ট্রেনে পা
দিলাম, জানালার পাশে সিট ফাঁকা দেখেছি, সেখানেই বসে গেলাম টুপ করে। নিয়মনীতির এহেন
তোয়াক্কা কে আর করে? সিট পেয়েছি, সো বসে গেছি।
কিন্তু
খুব দ্রুতপায়ে আমার কামরায় আরো দুজন এলেন। দুজন-ই বেশ বয়স্ক। আমরা তিনজন এখন
কামরায় যদিও এখানে আরো একজনের বসবার জায়গা আছে।
কিছুক্ষণ
আগে স্টেশনে দেখা অচেনা মেয়েটিকে বোনা দশ মিনিটের স্বপ্নঘোর টা কবর চাপা দেব ভাবছি
যখনি, ঠিক তখনি ঝাঁঝালো নারী কন্ঠে "এই যে ভাইয়া, সরুন তো! বসব "
চোখের
আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখে হৃদয় গহীনে ধক করে ঠিক যখনি ভালোবাসার দাবানল জ্বলে যাবে
হয়ত কিন্তু উল্টো তার মুখে 'ভাইয়া ' ডাক
শুনে পদ্মার ঢেউ আছড়ে গেল হৃদয় কূলে। সোজা নদী ভাঙনে বাস্তুহারা মনে হলো নিজেকে।
আমি
আয়েশে টাইপের, আরাম পেতে সর্বস্ব করি। তাছাড়া পায়ের স্যান্ডেল খুলে বসা আমার
জন্মগত স্বভাবের একটি, ওটাই করে বসেছিলাম।
এখন
দেখছি সিটখানা ঐ মেয়েটির!
উঠে এসে
মুখ কাঁচুমাচু করে সরে এলাম একদম কর্ণারে। বয়স্ক দুজন আমার দিকে ফিরে চাইলেন,
বললেন, একে অপর কে, দেখছেন? অনিয়ম!
লজ্জিত
হয়ে আমিও শান্ত মনে পত্রিকার প্রথম পাতায় চোখ রেখেছি কি রাখিনি - হঠাৎ মেয়েটি উচ্চস্বরে
ছিঃ ছিঃ করে উঠল।
আমার
পাশের দুজনেও চোখ বড় বড় করে এবারো সেদিকেই তাকালেন। তিন জোড়া উৎসুক চোখ এখন
ওদিকেই!
ছিঃ ছিঃ শুনে ভাবলাম কি না কি! কিন্তু এবারে ছিঃ
ছিঃ শব্দটির কেন্দ্রবিন্দু অবশ্য আমি ওটা
বুঝিনি!
আঙুল
দিয়ে আমাকে দেখিয়ে মেয়েটি বলল,
"কি
করেছেন এটা? কাদামাটি দিয়ে? কে বসবে এখন এখানে? "
রেগে
গেলে ড্রাগন আগুনের গোলা ছুঁড়ে দিত শুনেছি, ফর্সা মতন মেয়েটি তার লাল মেশানো কালো
চুলে এরকম জলজ্যান্ত ড্রাগন হবে, ধারণা করিনি!
দেখলাম
আমার পদযুগলে লেগে থাকা জবরদস্ত কাদামাটির একদলা আটকে আছে মেয়েটির বসে থাকার সিটে!
স্যান্ডেল তুলে পা ভাজ করে কিছুক্ষণ আগেই বসেছিলাম ওখানে।
মেয়েটি
বলেই চলেছে...
"ই
ই... কি করেছেন এটা? " -ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে প্রশ্নটা ছুড়ে দিল সে।
যে কাজ
করেছি তাতে আপোলাইজ করার দ্বিতীয় কোন অপশন আর পেলাম না। পকেটে থাকা রুমাল দিয়েই
ওটা মুছে দিতে হলো। মেয়েটি আবার চোখে সানগ্লাস চাপিয়ে চুপচাপ বসে গেল।
ঠিক এ
মুহূর্তে মেয়েটির ছোট বর্ণনা না দিলে চলে না, ছিপছিপে গড়ন, মাঝারি উচ্চতা তবে
মারাত্বক ফর্সা। জানালায় চোখ রেখে বাইরে দেখে যাচ্ছে ওর দৃষ্টি, চুল উড়ছে সীমাহীন
বাধাহীনতায়।
চুলোয়
যাক, প্রথম দেখায় প্রেম! তবুও, শুরুতে যা বাকী ছিল সেটা একেবারে সামনাসামনি দেখারর
পর মেয়েটির প্রেমে সুইসাইড খাবার সুস্পষ্ট ইন্সিডেন্ট কিন্তু ট্রেনে-ই হয়ে গেছে।
যদিও সেটা কিঞ্চিৎ 'ভাইয়া' ডাক শুনে আপসেট হবার সুতীব্র কষ্ট এই প্রেমিক হৃদয়ের
রক্তক্ষরণ এবং তার মাত্রা নিয়ে কাব্যগ্রন্থ "এই দশ টাকা "বলে চেঁচান
হকারের বুক সেলে হট লিস্টে এনলিস্টেড হয়েছে সেই প্লাটফর্ম থেকে।
পত্রিকা
তুলে রেখেছি অনেক আগেই, সেটা পড়া হচ্ছে না। সামনে তুলে রেখেছি, সেই ফাঁকেফাঁকে
ড্রাগন সুন্দরী কে দেখছি চুপিসারে। মাঝে মাঝে সে চুলে হাত বুলোচ্ছে, কানে হেডফোন
গুঁজে আছে এখন।
ঢাকায়
আজ বৃষ্টির ছোঁয়া টা খুব বেশী ছিল, এই কদিন
উত্তপ্ত ঢাকায় নিঃশ্বাস ফেলতেও দম বন্ধ হয়ে আসছিল। ছোটবেলায় যে ছুটির
অপেক্ষায় খুব বেশী থাকতাম, সে ঈদের ছুটিতেই আজ বাড়ি যাচ্ছি। নিজের বাড়ি রাজশাহী
শুনে অফিসে আম খাবার জন্য হাহাকার পড়ে গেছে। পত্রিকা অফিসে এই হয়! কথা কম শোরগোল
বেশী।
অফিসের
বস আমাকে গতকালই ডেকে বললেন, "বাড়ি যাচ্ছেন ভালো কথা, এবার আম পাচ্ছি
তো?" অফিসের বস বলে কথা! তাকে না করবো সেটা ভাবাই ভুল।
শুধু
মাথার কৌণিকতা বদলে বসকে বুঝিয়ে দিলাম, নো প্রবলেম।
-এই যে!
-হ্যালো!
( এরই মাঝে শান্ত গলায় দু'বার আমাকে ডেকে গেছে মেয়েটা)
মোটা
চশমায় চোখ দুটো কাজ করলেও ভারী চিন্তায় ডুবেছিলাম তাই ডাক শুনতে পাই নি!
এবার
খুব সম্ভব বেশ জোরে ডাক দিয়েছিল হয়ত, দেখলাম ঝিম ধরে বসে থাকা আমাদের সহযাত্রী
দুজন চোখ লাল করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন, ভীষন বিরক্তি চোখেমুখে। কাঁচা ঘুমে
ব্যাঘাত!
আমারো
প্রায় ভূত দেখার মত করে হুশ ফিরল, দেখলাম মেয়েটিও বেশ বিরক্ত! "এই যে, ভাইয়া! আপনি? হ্যাঁ ট্রেনে আছেন
তো?"
বললাম,
"এহেম এহেম! কেন বলুন তো?"
বলল,
"আমি একটু ওয়াশরুমে যাচ্ছি, ব্যাগ দুটো প্লিজ দেখবেন?"
বললাম,
আচ্ছা, ঠিকাছে। নো প্রবলেম!
মেয়েটি
চলে গেল তার বিপুল সাম্রাজ্য এক অচেনা চোখের সীমানায় জিম্মি করে।
আমি
জানালা দিয়ে একের পর এক সবুজ, লাল, সারি-সারি বাড়ির পিছুটান দেখতে লাগলাম আপন মনে।
সিগারেটের নেশা চেপেছিল, দেখলাম বয়স্ক দুজন ঘুমাচ্ছেন সাথে মেয়েটিও নেই। তাই আপন
মনে টানতে লাগলাম এক শলাকা। ইচ্ছে করছিল ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টা খাই।
বাতাসে সিগারেট টানায় আলাদা অনুভূতি আছে।
সিগারেট
প্রায় শেষের পথে, আচমকা কামরায় এসেই, "একি! আপনি সিগারেট টানছেন? কামরায় একজন
নারী আছেন জানেন না? "
সিগারেট
খানা শেষ হলোনা। মুখের জ্যামিতিক পরিবর্তন এনে ছুঁড়ে দিলাম ট্রেনের জানালা দিয়ে।
মনে মনে
বললাম, কি কপাল! একজন পুরুষ যাত্রী পেলে কি হত! শুরু থেকেই অচেনা নারীর চেহারায়
কুপোকাত হয়ে দিব্যি ঝামরি গিলে যাচ্ছি। ব্যাগ দেখে দিলাম পাঁচ মিনিট অথচ সেই
কৃতজ্ঞতা টুকু চোখমুখে বিন্দুমাত্র নেই!
মুখ ভার
করে হাতের পত্রিকায় চোখ দিলাম, হেলেদুলে পত্রিকা পড়তে পড়তে আড়চোখে দেখলাম মেয়েটি
তার মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অবাক হলাম এই ভেবে, সাম্রাজ্য পাহারা দিয়ে ধন্যবাদ তো
পেলাম না বরঞ্চ মিলল অপমান। আর কোন কথা নয় তার সাথে!
কিছুক্ষণ
পরে এবার আগ বাড়িয়েই জিজ্ঞেস করল,
-কি
করেন?
-আমাকে
বলছেন? (উত্তর না দেয়া ভদ্রতা নয়, তাই মত পাল্টে নিতে হলো তবে আর পাহারা দিচ্ছি
না)
-হ্যাঁ!
(মেয়েটি বলল)
এইত
আছি। পেশায় সাংবাদিক, দৈনিক আজকাজ। স্পোর্টস এডিটর, সাথে মাঝে মাঝে লিখি। আমার
লেখা পড়েছেন বোধহয়? আমি শেখর আহম্মেদ। ঐ নামেই কলাম লিখি।
বলল,
"ও, তাই! সেদিন তো আপনাদের কাগজে আমাদের ন্যাশনাল টিমের ক্যাপ্টেন কে নিয়ে
একটা রিপোর্ট দেখলাম।
বললাম,
"তাই নাকি?" (আমার কলাম পড়েছে শুনে হাতের পত্রিকা ভাঁজ করে তার কথায়
মনোযোগী হলাম)
মেয়েটি
বলল, হ্যাঁ। কিন্তু ক্যাপ্টেন ছোট একটা ভুল করতেই পারে, তাই বলে তাকে খেলা থেকে
সরে যেতে বলবেন আপনারা? "
যতটা
উৎসাহ নিয়েছিলাম, ঠিক ততটা চুপসে যেতে হলো। ঐ রিপোর্ট অবশ্য বসের হুকুমে করেছিলাম,
সে সপ্তাহে বেস্ট সেল হয়েছিল আমাদের পত্রিকা। এটা পত্রিকা পলিসি, কিছু বিতর্ক না
হলে পত্রিকা চলে না।
সেটাই
আমি বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু আমার কথা,
মেয়েটা এবারো পাত্তা দিল বলে মনে হয় না। ছোট হাই তুলে বলল, প্লিজ আমার
ব্যাগপত্র একটু দেখবেন, খুব ঘুম পাচ্ছে। এরপর আমাকে কিচ্ছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঘুম
দিল।
বা'হাতে
কপাল চাপড়ানোর ভীষন ইচ্ছে হয়েছে। আমি তৃতীয় বার অপমানিত হলাম।
ধাতব
জোড়ালো ক্যাঁচ.... চ...চ...
ট্রেন
থামার শব্দে ঘুম ভেঙেছে আমার, তাকিয়ে দেখি আমি ভালো রকম ঘুম দিয়েছিলাম। জলদি করে
চোখ গেল পাশের সিটে, মেয়েটা এখন বই পড়ছে।
আমার
দিকে না ফেরা দৃষ্টি দিয়ে বলল,
"আপনি
কি এভাবেই কি পাহারা দেন? আমি ঘুমিয়ে নিশ্চিত ছিলাম আপনি হয়ত পাহারা দিচ্ছেন।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর জেগে দেখি আপনি গভীর ঘুমে মগ্ন!"
অপমানের
চতুর্থাংশ!
ভদ্রতা
করে বললাম,
দেখুন।
ইয়ে, না মানে- রাতে পত্রিকার অফিসে কাজ ছিল ঘুমোবার সময় পাইনি। তাই হয়ত!
আমাকে
জিজ্ঞেস করল, কফি খাবেন?
বললাম,
"না থাক।" (ভাবলাম, এবার কি না কি বলে)
-আরে এই
নিন। (মেয়েটি ফ্লাক্স টা এগিয়ে দিল আমার দিকে)
শুকনো
করে একটা ধন্যবাদ দিলাম।
বললাম,
আসলে আপনার নাম তো জানা.... (কথাটা শেষ করতে পারলাম না, কারন এবার মোবাইল কানে
দিয়ে কামরার বাইরে চলে গেল সে)
এবার
কফি খেতে খেতে মেয়েটির সাথে আনা ব্যাগে চোখ গেল, কালো রঙের মাঝারি ভ্যানিটিব্যাগ
আর একটা ট্রাভেল ব্যাগ।
আমার
বেশ ঘুম পাচ্ছিল, রাতে না ঘুমালে সে ঘুমের ক্লান্তি সহজে কমে না। কফির কাপ এবং
ফ্লাক্স নিচে রেখে চেয়ারে হেলান দিলাম। মাথা ভার ভার লাগছে, একটু ঘুমানোর চেষ্টা
করলাম।
আমাদের
আরো তিন ঘন্টা লাগবে রাজশাহী যেতে। মেয়েটি
এখনো কামরায় আসেনি।
-ঘুমিয়ে
গেছো?
-হুম,
মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে।
-মাথায়
হাত রাখবো?
-হুম।
জানো,
কাল অফিস থেকে আমাকে বদলী করে দেবে বলেছে, অনেক চিন্তা ঘুরছে। ভাবছি, চাকরী টা
এবার ছেড়ে দেব। অনেক তো হলো পত্রিকায় সাংবাদিকতা, এবার ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া তে দেখি
চেষ্টা করে। এই তো আমাদের সাথেই বসে রিপোর্ট লিখত সাব্বির। কিছুদিন আগে পেয়ে গেল
এক চ্যানেলে।
-তাহলে
যাচ্ছো না কেন? তুমিও তো কম ক্রিয়েটিভ নও!
শোন
আসলে ক্রিয়েশন আর ক্রিয়েটিভ দুটোর জন্য পরিশ্রম লাগে, কেউ লাক পেয়ে উপরে উঠে আবার
কেউ পড়ে থাকে অতলে।
-সিগারেট
খাবে?
-হ্যাঁ!
-দরকার
নেই। সিগারেট খেলে ক্যান্সার হয়।
-তাই?
-কি
তাই? (চোখেমুখে বিষ্ময় টেনে মেয়েটির গলা কানে গেল শেখরের)
আপনি
আবার ঘুমাচ্ছেন? স্বপ্ন দেখছিলেন?
শেখর
এবার উঠে বসল। বলল, "আমি একটু আসছি।"
ট্রেনের ওয়াশরুমে এসে মুখে বার চারেক পানির
ঝাপটা দিয়ে রুমাল দিয়ে মুখটা মুছে নিল।
মনে মনে
বিড়বিড় করতে লাগল, "কি সব যে দেখছি! তবে মেয়েটিকে আমার চেনা মনে হচ্ছে, কোথায়
যেন দেখেছি কিন্তু মনে পড়ছে না।"
দরজায়
এসে সিগারেট টানল পরপর দুটো।
ট্রেন
প্রায় এসে গেছে রাজশাহী স্টেশনে।
কামরায়
ফিরে এসে নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিল শেখর। মেয়েটিও কুলি ডেকে ব্যাগ নিয়ে নেমে যাচ্ছে।
কি একটা
মনে করে পেছন থেকে ডাক দিতে গিয়ে হাত বাড়িয়েও আর এগুলো না শেখর। মেয়েটি চলে গেল।
শেখরের
স্মৃতিতে থেকে গেল ড্রাগন কন্যে।
প্লাটফর্মে
নেমে কুলির খোঁজ করছিল শেখর, হঠাৎ পেছনে কেউ ডাক দিল।
এই যে
শুনছেন ভাইয়া!
আমি?
চায়ের
গ্লাস হাতে, বছর দশের একটা ছেলে শেখর কে ডাকছে। ওর এক হাতে চায়ের কাপ, অন্য হাতে
মাঝারি লম্বা ফ্লাক্স।
শেখর
বলল, " কি চাই? "
ভাইজান,
এই কাগজ টা ঐ লাল ড্রেস পরা আপুটা দিসে আপনারে।
শেখর
ব্যাগ মাটিতে রেখে হাত বাড়িয়ে কাগজটা নিল, হাতের গোটা অক্ষরে নীল কালিতে কয়েক লাইন
লেখা।
বুদ্ধু
শেখর,
তুই
আমাকে আজো চিনলি না। হা হা... আমি ভেবেছিলাম তুই চিনে যাবি। যাক, তোকে আবার আমি
বোকা বানাতে পেরেছি। বাকী কথা টা শোনার অপেক্ষায় রইলাম। যেটা তোকে বলা হয়নি
চ্যানেলে চাকরিতে ট্রাই কর আর নতুন চাকরী পেলে মিষ্টি নিয়ে বাসায় আসবি। অল্প টাকায়
দুজন চলা যাবে না। ঠিকানা টা তোর ব্যাগের পকেটে লিখে দিয়েছি। তোর তৃষা।
শেখর
ব্যাগ হাতরে প্রথম চেইন খুলে একটা কাগজ পেল। সেখানে ঠিকানা লিখা, আরো লিখা
বিঃ
দ্রঃ ঘুম কমা, আর এত্তো সিগারেট খাস না। ক্যান্সার হয়।
শেখরের
মুখে সলজ্জ হাসি। মনে মনে বলল, পাগলি একটা!
(সমাপ্ত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন