বুধবার, ৬ জুলাই, ২০১৬

ইয়োটা (১ম পর্ব) " বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটির ম্যাগাজিন, " বিজ্ঞান আনন্দ " এর দ্বিতীয় সংখ্যায় প্রকাশিত "



টেবিলে ঝুকে নোট লিখছিল শাহরিয়ার।
মাথায় বেশ ঝিমঝিমে একটা ভাব হয়ে আছে অনেকক্ষন আগে থেকেই, তবুও সামনে পরীক্ষা তাই ছাড় দেবার কোন কারন নেই।
হাতের স্মার্ট ঘড়িতে একবার তাকাল সে, বিকেল ৪টা বেজে ২৫ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড!
এক কাপ কফি হলে খুব মন্দ হয় না।
তোতা!  তো…. তা!  হাঁক দিল শাহরিয়ার,
কিছুক্ষন পর ঘড়ঘড় শব্দে শাহরিয়ারের রুমে এল ধাতব তোতা!
আর উ কলিং মি?
হ্যা, এক কাপ কফি দরকার! ভীষন মাথা ধরেছে!
আই আম সরি! আই কান্ট!
মানে?  হোয়াট হ্যাপেন্ড বাডি?
মাই নেম ইজ ইয়োটা, নট দ্যাট বুলশিট!
ওহ, সরি ম্যান।  আই আম রিয়ালি ভেরি সরি? কুড ইউ প্লিজ মেইক এ কাপ অফ কফি ফর মি মিস্টার ইয়োটা?
ইয়াপ, আই আম অন মাই ওয়ে!
ঘড়ঘড় করে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল ইয়োটা। ইয়োটা,  আসলে শাহরিয়ারের বাড়িতে কাজ করে, যন্ত্রমানব। তবে শাহরিয়ারের কাছে সে কিন্তু যন্ত্র দানব! কোন কিছু ভুল করে বললে, ভুল কাজে ডাকলে, খবরদারি করতে গেলে ভীষন মাইন্ড করে ইয়োটা।
২২৬২ সালে এসে যখন পাশের বাসার মেয়েটি তার নিজের বানানো ড্রোনে দিয়ে তার ক্লানের আশেপাশে খেয়াল রাখে, সেখানে সামান্য একটি ধাতব মানব থাকা খুব একটা বেশি কিছু নয় আজ ওর জন্য। নিজের বাসায় বলার মত একমাত্র গৌরব।
কথাবার্তা শুনে বেশ বদমেজাজি মনে হলেও ইয়োটা খুব কাজের। ইয়োটা এমনিতেও বেশ ভালো, যা বলে তাই করে। কোন কাজে ভুল নেই। সব সময় খুব আন্তরিক। নানা ব্যাপারে আগ্রহ আছে ওর। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে এই ২২৬২ তে এসেও সে বাংলাদেশের সবগুলো জেলার লোকাল ডায়ালেক্ট গুলো, ল্যাংগুয়েজ সার্ভার থেকে ডাউনলোড করে নিয়েছে; যেখানে শুদ্ধ বাংলা আর ইংরেজী ছাড়া অন্য ভাষা কেউ মনেই রাখছে না।
২২৬২ সালেও বাংলা ভাষা ধরে রাখার সুস্পষ্ট কারন রয়েছে, বাংলা পৃথিবীর একমাত্র ভাষা যার জন্য ১৯৫২ সালে সালাম, বরকত, রফিক সহ অনেকে শহীদ হয়েছে। তাই সম্পুর্ন সম্মান এখনো বলবৎ রয়েছে বাংলা ভাষার প্রতি। ২১ শে ফেব্রুয়ারি তে পৃথিবীর সবাই শহীদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
আমি আমার ক্লানে আমি একা, বাবা-মা দূরের ক্লানে থাকেন। মাঝেমাঝে আসেন আবার চলেও যান। অবশ্য আমার বাসার সব কাজ করে দেয় ইয়োটা। সামান্য কফি থেকে শুরু করে ঘর সাফাই পর্যন্ত! ও ছাড়া আমার এক মুহুর্ত চলে না।
তবে আমার বাসায় যে যেখান থেকেই আসুক না কেন সবগুলো ভাষা বুঝে নেবার ক্ষমতা আছে ওর। শুধু রেগে গেলেই একমাত্র ইংরেজী চিবোয় সে!
-হেয়ার ইজ ইউর কফি! (ভারি গলায়)
-থ্যাংকু! ইয়োটা! ক্যান আই আস্ক ইউ আ ক্যুশ্চেন প্লিজ?
-ইউ অলরেডি ডিড ইট!
-নো, আই হ্যাভ এনাদার!
-ওকে দেন গো ফর ইট।
তোমাকে গতরাতে দেখলাম ছাদে বসে, একজনের সাথে খুব আলাপ করছ, হো ইজ শি?
-শি ইজ মাই গালফ্রেন্ড!
-আগে তো জানতাম না!
-ইট ওয়াজন'ট নেসেসারী!
-ডু ইউ মাইন্ড?
শাহরিয়ারের প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে শুধু বলল 'ইটস মাই চার্জিং টাইম, বাই’ বলে চাকার ঘড়ঘড় ধাতব শব্দ করে ভেতরে চলে গেল সে।
শাহরিয়ার কফিতে চুমুক দিল, বাহ ভাল হয়েছে খেতে! কিন্তু উত্তর না দেয়াতে মনে মনে ইয়োটা কে গালি দিল সে "ইমোশোনলেস "।
আধাঘণ্টা যাবত ইয়োটার খবর নেই, কয়েকবার ডেকেও কুল পাচ্ছে না শাহরিয়ার। জানালা দিয়ে বাইরে দেখতে পেল পাশের বাসার মেয়েটির ড্রোন ওকে ফলো করছে। ড্রয়ার খুলে লেজার বের করে সোজা তাক করল ড্রোনের পিঠ বরাবর! তারপর দরাম!!!!
ইদানীং যা বিরক্ত করছে মেয়েটি, সকাল,বিকাল, রাত কোন সময়ই বাদ দিচ্ছে না।
এবার ঝেড়ে তোতা বলেই ডাক দিল শাহরিয়ার,
মূহুর্তে ঘড়ঘড় শব্দে হাজির ইয়োটা!
যন্ত্র যে বিস্মিত হতে পারে, না দেখলে কেউই বুঝতে পারবে না।
-হোয়াট হ্যাপেন্ড! ওয়াই ইউ ডুয়িং সেইম মিস্টেইক?
-আমি তোমাকে অনেকবার ডেকেছি, কিন্তু তুমি শোননি তাই ভুলভাল নামে ডেকেছি!
-“নাউ হোয়াট? ইটস আননেসেসারী!”
-আমার পিসির প্লাগ কাজ করছে না!
-ইয়াপ, আই আম অন মাই ওয়ে’
মিনিট পাঁচেকের মামলা! ওকে, ডান বলে প্লাগ ঠিক করে দিল ইয়োটা! এরপর বলল, 'মাই ব্যাটারি গ্রাজুয়াললি গোয়িং ডাউন প্লিজ ডু সামথিং!
শাহরিয়ার মাথা নেড়ে 'হ্যা 'সূচক উক্তি করল। অথচ শাহরিয়ার জানে, আর মাত্র দুটি মাস এরপর আর রাখতে পারবে না সে ইয়োটাকে, অনেক কস্ট করে জমানো ডলার খরচ করে তিন বছরের কিস্তিতে বাসায় এনেছিল ইয়োটাকে, এখন আর সে কিস্তি রিনিউ করা সম্ভব নয়। হাতে টাকা নেই সামান্য ব্যাটারি কেনার, সেখানে কিভাবে আরো তিন বছরের চুক্তি করে ধরে রাখবে ইয়োটাকে!
টেবিলের ড্রয়ার টেনে ইয়োটার কাগজগুলো নেড়েচেড়ে দেখল কয়েকবার,
নেইম : ইয়োটা
হেইট : ৫,৭'
কালার : হোয়াইট
স্ট্যান্ডবাই টাইম : ২৪৪ ডে ৬২ আওয়ার
রিচার্জয়েবল ব্যাটারি। ২২২২২২৬৪ লিথিয়াম আয়ন
ওয়াটারপ্রুফ।
ল্যাংগুয়েজ আক্সেস : ভারিয়েবল
ওউনার : শাহরিয়ার আহমেদ।
সাবক্লান : রেড
ক্লান : বাংলাদেশে
নীচে লাল কালিতে লিখা ভ্যালিডিটি ১২ জুন ২২৬২।
শেষ লাইন পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল শাহরিয়ারের। আর মাত্র দু'মাস এরপর আর পাচ্ছিনা ইয়োটাকে!
মন খারাপ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সে, জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল, অনেক ছোটবেলায় যখন মা বাংলাদেশের গল্প বলত তখন খুব আগ্রহ নিয়ে মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকত শাহরিয়ার। একটিবারের জন্য পলক ফেলত না।
১৯৭১, ১৯৫২ সেই সাহসিকতা! একটি দেশের জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করে দেয়া।
সবগুলো গল্পের রেকর্ড আছে শাহরিয়ারের কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভে।
ঘড়ঘড় শব্দে পেছন থেকে ইয়োটা আসে ধীরে ধীরে, মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শাহরিয়ার কে!
আজ মাস চা'রেক হয়ে গেছে, ইয়োটা নেই। নিজের কাজ নিজেকেই করতে হচ্ছে শাহরিয়ারের।
ভুলভাল করে চুলো জ্বালাতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলেছে সে।
জানালা দিয়ে কিছুক্ষন পর পর মেয়েটির বানানো ২য় ড্রোনটি চক্কর মেরে যাচ্ছে, যেন আজব কোন চিড়িয়া দেখে মজা পাচ্ছে ভীষন।
ড্রয়ার থেকে লেজার বের করতে গিয়ে পোড়া স্থানে ঘা লেগে গেল শাহরিয়ারের। দাঁতে দাঁত চেপে হাতের বইটা ছুড়ে দিল জানালা বরাবর, চিৎকার করে বলল, গেট আউট, ইউ শিট!”
বইয়ের আঘাতে উড়ে সরে যায় ড্রোনটা। ঝিম একটা ভাব আসে শাহরিয়ারের।
ব্যাথায় কাতর হয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল মনে পড়ছে না। একটা ধাতব শব্দে ঘুম ভেঙে গেল শাহরিয়ারের!
পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি মতন গোল মাথার কিছু একটা ঘরে দাঁড়িয়ে।
ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠে শাহরিয়ার! "হো আর ইউ "
ধীরে ধীরে কাছে এগিয়ে এসে যায় সেটা, আলোতে এবার স্পষ্ট দেখতে পায় শাহরিয়ার, একটা যন্ত্র বোট।
কথা বলে উঠে যন্ত্র। হ্যালো, শাহরিয়ার!
শাহরিয়ার জিজ্ঞেস করে, ডু ইউ নো মি?
“ইয়েস, অ্যাই ডু। অ্যাই আম ইলিন, ইয়োটা'স গালফ্রেন্ড! ইউ ওয়ার হিস মাস্টার?
শুকনো গলায় (শাহরিয়ারের জবাব আসে) ইয়েস আই আম”
(সমাপ্ত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...