মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

গল্পঃ ছয়





(এক)
তাড়াহুড়ো করে আসবার সময় সি এন জি তে ফাইল টা ফেলে এসেছি। তাতে এক্সাম দেবার ইরেজার, পেন্সিল, কলম সব ই ছিল।
দ্রুত পায়ে যখন আমি ঠিক এক্সাম হলের সামনে ঠিক তখনি সামনের সারিতে বসে থাকা  পরীক্ষার্থীর কাছে স্বচ্ছ ফাইল টা দেখে নিরাশা দানা বাঁধল খুব সহজে।
আপনি পরীক্ষার্থী?
(ডিউটিতে আসা ম্যাডাম বেশ ভারী গলায় আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন)
নিচু গলায় কিন্তু স্পষ্টত পরিষ্কার করে উত্তর দিলাম,
জ্বী!
আসুন বলে আমার দিকে টেবিল থেকে খাতাটা তুলে এক পা এগিয়ে আসলেন তিনি।
নাহ! আমার একটা পেন্সিল কিনতে হবে।
ভদ্রমহিলা, তার হাতের ঘড়ি দেখলেন এক পলক। এরপর বললেন, "তাড়াতাড়ি নিয়ে আসুন, সময় কম "।
আমি আবার ছুটলাম সিঁড়ি ধরে নীচতলায়।
ছুটে এসেই দোকানে একটা পেন্সিল, ইরেজার, কলম তিনটে জিনিস চাইলাম।
দোকানী ব্যাপক ব্যস্ত!
স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে দিব্যি কাস্টমারের সাথে কথা বলতে বলতে চা বানিয়ে চলেছে। আমার কথায় পাত্তা দেয়ার সময় নেই!
আমি আবারো বললাম, ভাই! একটু তাড়াতাড়ি করেন না!
প্রতিত্তরে বলল, " আমি মেশিন নাকি? খারান এট্টু, চা পাত্তি ঢাইলা লই। হোনেন, রবার নাই। পেন্সিল, কলম বাইন্ডিং খাতা, নিউজপ্রিন্ট কাগজ, সাদা কাগজ এডি আছে।  এহন দিমু কোনডা?"
একটা সিগারেট দেন।
বেনসন লাইট?
না, মালব্রো।
ওইডা নাই, নেভি খান?
নাহ।
আপনি পেন্সিল আর কলম দেন, আরেকটা বেনসন দেন।
একশ টাকার নোট টা দিয়ে পড়লাম আরেক বিপত্তিতে। ভাংতি নাই! এই শহরে বড় নোটের ভাংতি কারো কাছে থাকে না। থাকলেও না দেয়া সবার একটা বদভ্যাস।
টাকা ভাংতি না নিয়ে ই একশ টাকা দোকানীর হাতে তুলে দিয়ে চোখজোড়া  ঘড়িতে ফেললাম, গেছি! এক্সাম শুরু হতে আর দুই মিনিট।
সিগারেট এ বড় করে তিনটে টান দিলাম। এরপর আধা খাওয়া সিগারেট ছুড়ে আমি ছুটলাম এক্সাম হলের দিকে।
রুমে ঢুকতে না ঢুকতে ঘন্টা বেজে উঠল।
মানে, এক্সাম শুরু।
আমার চাকরীর এক্সাম। একটা বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেইনী পদে নিয়োগ। আজকাল চাকরীর বাজার বেজায় চড়া।
কাকা, মামাদের জোর এখনো ৯০% চাকরীর বাজার দখল করে আছে। এটা অবশ্য আমার প্রথম নিয়োগী পরীক্ষা নয়। আগে পরে এটা সহ আট টি দিলাম।
হলে গার্ড দিতে আসা ম্যাডাম আমাকে পরীক্ষার খাতা দিয়ে দিতে এলেন, বললেন, " এক্সামে দেরী করতে হয় না! "
সরি ম্যাডাম!
উনি মাথা একটু দুলিয়ে ডিউটি দিতে শুরু করলেন।
(দুই)
এখনো এক্সাম হলে ই আছি। হঠাৎ ইরেজারের খুব প্রয়োজন পড়ল। সাবধানে ই লিখছিলাম যাতে ইরেজার টা না লাগে কিন্তু ওই যে ভুল লিখে ফেলেছি। এখন ইরেজার লাগবেই।  আমার পাশে, সামনে সবাই পরীক্ষার্থিনী।
পাশে একজন চশমাপরা পরিক্ষার্থিনী।
এহেম, এক্সকিউজ মি!
আপনার ইরেজার টা একটু দেবেন প্লিজ?
মেয়েটি ভ্রু নাচিয়ে আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন তার কাছে আমি অনেক দামী কিছু চেয়েছি।
সরি বলে আবার হাতের আঙুল ঘষে পুনরায় যখন লিখতে যাচ্ছি। উনি ই এবার হাত বাড়িয়ে ইরেজার দিয়ে বললেন, " এক্সাম দিতে এসেছেন, কি কি লাগে জানেন না! "
জানি তো! কিন্তু ইরেজার যে ফাইলে ছিল সেটা সি এন জি তে ফেলে চলে এসেছি।
উনি হতাশা মিশ্রিত ব্যাঙ্গ করে আমার লেখায় মনোযোগী হলেন।
আমিও আমার খাতায় মনোযোগ দিলাম।
এক্সাম শেষ হলো। সবাই সবার মত বেড়িয়ে এলাম। তবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে সে মেয়েটির সাথে কথা বলতে গেলাম।
মেয়েটি আমার আগেই চলে গেছে একটা সি এন জি ধরে। খানিক দৌড়েও ধরা গেল না তাকে।
(তিন)
সেদিনের চাকরীর রেজাল্ট বেড়িয়েছে আজ।
অনলাইনে দেখলাম। নাহ, আমার এবারো হয়নি।
বড়ভাই আছেন সেনাবাহিনী তে। ফোন করেই এক হাজার জ্ঞান দিলেন। আসলে, বড় ভাই থাকার ঝামেলা আছে।
বেকার জীবন, ছাত্র জীবন দুটো জীবনে একটা বড় মিল যেমন আছে তেমনি দুটো জীবনে আছে হতাশা। তবে বেকার জীবনে হতাশা হয়ত পরিমানে বেশী। যদি পরিমাপের মাপকাঠিতে মাপা যেত আমার ধারণা তেমন টা হতো।
ফোনে রিচার্জ, একটা এনভেলাপ আর কিছু খুঁটিনাটি কিনতে বেড়িয়ে গেলাম মেস থেকে।
বিকেল চারটা।
এসময় মেসের স্যাতঁস্যাতে দেয়াল টা কে কবুতরের খোপের মত লাগে। একদিকে খোলা, জানালা, বাতাস কিচ্ছু নেই!
গলির মোড়ে বসে এক কাপ চায়ের অর্ডার দিলাম, সেইসাথে একটা মালব্রো।
পছন্দের জিনিস সবার আগে।
এই যেমন মালব্রো সিগারেট!  ভেবে রেখেছি চাকরী পেলে নিজে একটা ফ্ল্যাট কিনবো। সে ফ্ল্যাটের একটা রুম জুড়ে ভরা থাকবে মালব্রো সিগারেট।
কাকা চা নেন!
চা দেয়া ছেলেটির বয়েস পনেরোষোলো। এর বেশী মোটেই না। আমি এখানে প্রায়শই চা খাই।
টি ব্যাগ নাড়িয়ে আদা চায়ে চুমুক দিলাম। চা গলা দিয়ে গলে গেল একদম পাকস্থলীতে।
দোকানী আমার মুখ চেনে। তাই ক'চামচ চিনি খাই সেটা বারবার বলা লাগে না।
(চার)
 এনভেলাপ কিনছি।
হঠাৎ চোখ পড়ল আমার সামনে দাঁড়ানো এক মেয়ের দিকে। অল্প চুলে কতটা সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে এই মেয়েটিকে না দেখলে বিশ্বাস ই হতো না। যদি ইউনিভার্সিটি লাইফে আমার বান্ধবীগণ সাজুগুজু তে যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখিয়েছে।
মেয়েটি সম্ভবত একটা খবরের কাগজ দেখছিল। হঠাৎ পেছনে ঘুরতেই দেখলাম,
আরে ইনি তো সেই!
সেদিন চাকরীর পরীক্ষায় ইরেজার দিয়ে হেল্প করা মেয়েটি।
ইতস্তত না করে এগিয়ে গেলাম, হ্যালো! কেমন আছেন? আমাকে চিনেছেন?
মেয়েটি আমতা আমতা করে বলল, আপনি?
আমি ঐ যে সেদিন এক্সাম হলে ইরেজার!  ভুলে গেছেন?
মেয়েটি হালকা করে হাসি দিল।
আচ্ছা.. আচ্ছা.. হ্যাঁ, এবার মনে পড়েছে। কেমন আছেন?
এই তো বেকার লাইফ, সেভাবে ই আছে ঠিক দিন সাতেক আগেও যেমন ছিল সেরকম!
সে কি! আপনার চাকরী টা হয় নি?
নাহ! আপনার?
হ্যাঁ হয়েছে। আপাতত ঢাকায় পোস্টিং, পরে বলেছে ঢাকার বাইরেও যেতে হতে পারে।
নিজে থেকে বললাম, আপত্তি না থাকলে এক কাপ চা অন্তত খেতে পারি কি!
মেয়েটি হাসি দিল।
আচ্ছা।
আমরা বসলাম মাঝারি ধরনের এক রেস্টুরেন্ট এ।
মেয়েটি বলল, " সরি, আপনার নামটা জানা হলো না!"
মামা কি খাইবেন? লুচি আছে, মোগলাই আছে, নান আছে! কোনটা দিমু?
( রেস্টুরেন্ট বয় বসতে না বসতে তাগাদা দিল)
আমি দুটো মোগলাই আর চায়ের অর্ডার দিলাম।
আমাদের কথায় ফিরলাম এবার। বললাম, আমি তুষার আহম্মদ। একটা বেসরকারি ইউনিভারসিটি থেকে বিবিএ করেছি। এম বি এ করার প্ল্যান আছে তবে সেটা জব পাবার পর।
আপনি?
আমি আদৃতা হোসেন।  ঢাবি থেকে অনার্স করেছি।
ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট বলতে হচ্ছে।
আমাকে থামিয়ে আদৃতা বলল, আরে না না! কি যে বলেন!  এটা বাড়াবাড়ি বলছেন।
( রেস্টুরেন্ট বয় মোগলাই আর চা টেবিলে রেখে গেল)
বললাম, " নিন, খেতে খেতে কথা হোক"।
সেদিন আপনার ইরেজার টার না পেলে বড্ড বিপদে পড়তাম।
তাই নাকি?
হ্যাঁ..
আরে আপনার চাকরী টা যদি আমার ইরেজারের দোয়ায় হতো তাহলে তো নিজেকে ধন্য মনে করতাম।
একচোট হাসাহাসি হয়ে গেল দুজনের।
চা পর্ব শেষ করে দুজনে ই বের হলাম রেস্টুরেন্ট থেকে। মেয়েটি বিল দিতে চাইছিল আমি জোর করে দিতে দেইনি।
বিদায় নেবার আগে বললাম, " যদি কিছু মনে না করেন আপনার ফোন নম্বর টা পেতে পারি? আমার কন্টাক্ট লিস্ট একদম ফাঁকা! ফোন দেবার মত বন্ধু নেই "
মেয়েটি একটু ভেবে ওর নম্বর টা দিল।
আমি বাংলায় নম্বরটা কন্টাক্ট লিস্টে তুললাম " আদৃতা " নামে।
(পাঁচ)
এরপর মাস ছয়েক কেটে গেছে। তুষার শীতে হারিয়েছে আর আদৃতা আমার কন্টাক্ট লিস্টে পড়ে আছে।
নিজেও অনেক ব্যাস্ত।
বড় ভাই কানপড়া দিয়েই যাচ্ছে, সেনাবাহিনী তে আয়। পরীক্ষা দে, তোর হবে। দেশের জন্য কাজ করবি।
ওদিকে আমার মা!
ফোন করেই বলে, তোর বড় ভাইয়ের কথা শুনিস না ক্যান? তাই এত্ত চাপাচাপি তে সেনাবাহিনী তে পরীক্ষা দিয়েছি।
আজকে তার ফলাফল দেবে।
মেসে এক বালতি কাপড় ভিজিয়েছি সকালে। সেসব ধুয়ে-টুয়ে ঝটপট বেড়িয়ে গেলাম পত্রিকার দোকানে পত্রিকায় ফলাফল দেখতে।
হেঁটে কতটা গেছি, আন্দাজে অর্ধেক পথ।
ফোন পেলাম বড় ভাইয়ের।
ফোনের ওপাশে, " খুশীতে আমার ভাই!  তোর তো চাকরী হয়ে গেছে। সামনে মেডিকেল, তুই জলদি আয় "
সেনাবাহিনীর পরিশ্রমী জীবন আমার কাছে ভালো লাগে না। তবে ভাইয়ের খুশী আমার চোখের কোণা কাঁপিয়ে দিল।
আচ্ছা ভাইজান।  মা কে ফোনে জানাইছেন?
ভাইজানের গলা ধরে আসছে, হ্যাঁ বলে একটু থেমে বললেন। হুম, আম্মাকে জানাইছি তোকে ফোন করার আগে।
আচ্ছা ভাইজান। আমি আবার পরে ফোন দিবো।
পত্রিকা আর কেনা হলো না। রেজাল্ট পেয়ে গেছি, কথা হলো মায়ের সাথে। আমার মা সাত রাজ্যের খুশী গলায় ধরে আছেন।
মেসে ফিরে এই খুশীর খবর আর কাকে জানাবো জানাবো করে হঠাৎ কন্টাক্ট লিস্ট ঘাটতে গিয়ে অনেকে বন্ধু-বান্ধবীর নামের পাশে আদৃতার নাম টা চোখে পড়ল।
নম্বর নেয়ার পর আর ফোন দেয়া হয় নি মেয়েটিকে।
সাহস করে আজ ডায়াল করলাম।
ডায়াল রিং বার দুয়েক বাজার পর মেয়েটি ফোন ধরল,
-হ্যালো কে?
-আমি তুষার, চিনতে পেরেছেন? ঐ যে ইরেজার!
-হ্যাঁ, চিনেছি। আপনি আজ ফোন দিলেন? সেই কবে না নম্বর নিয়েছিলেন!
-না মানে, সময় করে উঠা হয় নি। আপনি কেমন আছেন?
-হা, দিব্যি ভালো আছি। আপনি?
-আজ খুব ভালো আছি..
-আজ? কেন বলুন তো?
-সেনাবাহিনী তে আমার চাকরী হয়েছে, আজ ই খবর পেয়েছি!
-ওয়াও! কংগ্রাচুলেশনস! তাহলে তো ট্রিট পাওনা।
বললাম, আজ ফ্রি আছেন? বিকেলে?
আদৃতা রাজী হলো।
আমাদের দেখা হলো বিকেলবেলা। টি এস সি তে বকুল তলায়। আদৃতা আজ শাড়ি পরে এসেছে। শাড়িপরিহিতা মেয়েরা একটু বেশী ভালোলাগা কাজ করায় মনে।
বুঝতে পারছি, স্বল্পভাষী মেয়েটি আমার মস্তিষ্কের নিউরনে ঠাঁই নিয়ে ফেলেছে। নিজের সাম্রাজ্য তে এখন সে আমার সর্বেসর্বা।
আমরা রিক্সা করে ঘুরলাম বিকেল টা। তারপর, চাইনিজ।
আদৃতা আমাকে হয়ত পছন্দ করে। মেয়েরা খুব সহজে মনের কথা বোঝায় না। কিন্তু আদৃতা কে আমার তেমন মনে হলো না। ও প্রচন্ড স্পষ্টভাষী।
(ছয়)
ইদানীং আমাদের ফোন কল বেড়ে গেছে। আগে যেখানে একটা কল বাজত ফোনে সেও সপ্তাহে। এখন সেটা দিনে পাঁচ ছ'বারের বেশী পার করে যায়। তবে আমরা কিন্তু ফরমাল কথা ই বলি। যদিও বাইরে থেকে যে কেউ ভুলে ভাববে আমরা প্রেম করি।
মোটেই তা নয়। কিন্তু আমার থেকে মেয়েটির প্রতি ভালোলাগা জমে গেছে।
এখনো আদৃতা কে চেনা হয়ে উঠে নি তবুও কিছু কিছু মানুষ আমাদের জীবনে একজন চলে আসে একটা সময়ে, যে অচেনার মাঝে ও অনেক চেনা।
তবুও সংশয় রাখবো না ভেবে আজ সকালে প্রতিজ্ঞা করেছি। আদৃতা কে বলেছি পরশু আমার ট্রেনিং আমি এক দু'মাসে একেবারে কথা বলতে পারবো না।কারো সাথে। ফোন বন্ধ থাকবে। যাবার আগে কিছু কথা বলার আছে তোমাকে।
আদৃতা আজ আসছে।
আমরা অনেকক্ষণ বসে আছি, এমনিতে আমাদের দেখা হলে কেউ এতটা সময় চুপ করে থাকি না।
আদৃতা এবার নিজে থেকেই বলল, " কি ব্যাপার! তুমি না কি বলবে? "
-হ্যাঁ, ইয়ে মানে। একটা কথা!
-কি কথা বলো?
-আদৃতা?
-হ্যাঁ, কি?
-আমার তোমাকে অনেক ভালো, মানে ভালোলাগে।
-মানে?
-মানে তোমাকে আমার প্রচন্ড ভালোলাগে। আমি অনেকবার বলতে চেয়েছি জানো বলতে পারি নি!
-কেন?
-সাহস, ঐ সাহস হয় না।
- জানো, আমারো একজন কে অনেক ভালোলাগে!
(আমি মনে মনে খুশী হয়ে উঠেছি) বললাম, কাকে?
-আমার অফিসের বস। উনাকে আমার খুব ভালোলাগে। আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। মা-বাবা ভাবছেন এ নিয়ে।
আমি চুপ করে গেলাম।
মন আমার দমে গেছে, নিজেকে মানাতে পারছি না। ছেলে মানুষ কান্না চেপে ফেলেছি।
আদৃতাকে তাড়া দিলাম,
-আমার আজ তাড়া আছে আদৃতা, চল উঠি। কেনাকাটা আছে, ট্রেনিং এ যাচ্ছি প্রস্তুতি নেয়া বাকী।
-আরে কেন? আরেকটু বসি আমরা! পরশু তো চলে যাচ্ছো। আবার সে ই কবে দেখা হবে। আর শোন তোমাকে এগিয়ে দিতে কিন্তু আসবো আমি, ঠিকাছে?
মেয়েরা নিষ্ঠুর, আদৃতা আমাকে আজ সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখালো। মেয়েটিকে বললাম আমার ভালোলাগার কথা আর সে এত স্বাভাবিক!
সামান্য সমবেদনা টুকু দেখালো না।
আমি উঠে দাঁড়ালাম, বললাম, " আমি চলি "
আরে কোথায় যাচ্ছো আমাকে রেখে? আরে দাঁড়াও!
 ঘড়িতে বিকেল চারটা, সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়া একজন কমলাপুর রেলস্টেশনে একাকী এক বেঞ্চে বসে আছে। তার মাথার চুলে আর্মি ছাঁট, উচ্চতা পাঁচ ফুট দশ। সে হচ্ছি আমি, মানে তুষার। আদৃতা ফোন করবে জানতাম তাই ফোন আসবার আগেই সুইচ অফ করে রেখেছি।
আমার খারাপ লাগা টা কমানো চাই। ট্রেন আসবে ঠিক পাঁচটায়।
এখন চারটে কুঁড়ি।
সময় কে এখন খুব ধীর মনে হচ্ছে। কাজের সময়, জরুরী মুহুর্তে ওর চাপ বেড়ে যায়। এখন নড়ার কোন লক্ষণ ই নেই!
আদৃতা আসবে না, কারণ আদৃতা জানে না আমি কোন পথে যাচ্ছি চট্টগ্রাম। ওকে, ইচ্ছে করে কিছু বলিনি।
ঘড়িতে যখন চারটে চল্লিশ, ঠিক তখন প্লাটফর্ম এ একজন মেয়েকে দেখা গেল। তার হাতে একটা গোলাপ। পায়ের গতি ধীর, লক্ষ্য স্টেশনে বসে থাকা সদ্য আর্মিতে ট্রেনিং এ যাওয়া যুবকের দিকে।
মেয়েটি নিঃশব্দে বেঞ্চের ফাঁকা পাশটায় বসে গেল।
ফোন অফ কেন?
চার্জ ছিল না। তাই আর খেয়াল করি নি।
আদৃতা হাত বাড়িয়ে গোলাপ টা দিল তুষার কে, এই নাও।
বাহ! গোলাপ, থ্যাংকইউ। (মুখ না ঘুরিয়ে ই জবাব)
আজকে একটা কথা বলবো ভাবছিলাম..(আদৃতা বলল)
কি কথা?
আমি একজন কে ভালোবাসি।
কাকে? তোমার বস?
নাহ! বুদ্ধু তোমাকে?
তাহলে, বস?
বসকে ভালোলাগে, কিন্তু ভালোবাসি সেটা তো বলিনি।
আমি তো ভালোবাসি তোমাকে!
কই! সেদিন না বললে " ভালোলাগে "! ভালোবাসো কই? যে ভরসা করে বলবো ভালোবাসি!
তুষারের ট্রেন এসে পড়েছে, হুইসেল বাজছে প্লাটফর্মে।
তুষারের চোখের কোণা ভিজে এসেছে।
আদৃতা হেসে বলল, ব্যাগে ইরেজার আছে চোখ মুছবে?
তুষার,  বলল ভালোবাসাযুক্ত ইরেজার টা কাছে রেখো, ভালোবাসি তোমাকে।

(সমাপ্ত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...