পাণ্ডুলিপি টা প্রায় শেষ, এডিটিং করাটা বাকী। আগের রাতেও কথা হলো প্রকাশকের সাথে। ভদ্রলোক আমাকে দেখে মারাত্মক ভয় পেলেন! আমার এতে পেট ফাটানো হাসি পেলো। হাতের ইলিশ মাছ জোড়ার মায়া ছেড়ে উল্টোদিক লক্ষ্য করে তিনি প্রায় পড়িমরি করে ছুটে গেলেন। ভেবেছেন আমি হয়ত- পাওনা টাকা টা আগে ই চেয়ে বসবো। বিশ্বাস করুন, আমি তেমন মহাজন ঘরানার মানুষ নই।
বাবা! তোমার চা!
মেয়েটা ক্লাস টেনে উঠলো। অসাধারণ মেধাবী, তবুও লোকে কুৎসা রটায়! বলছে মেয়েটা নাকি পাগলি। বাবা হিসেবে এ কথা শুনতে কতটা খারাপ লাগে সেটা বোধহয় পৃথিবীর তাবৎ বাবা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। জানি মেয়েটা আংশিকভাবে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তবে লোকের কথায় সে তো আর পুরোপুরিভাবে পাগলি নয়।
অংশুক বাসায় এসে ব্যাগ ছুড়ে দিলো সোফায়, মার্চের আগুনে গরমে ওর মুখ লাল। আজ স্কুলের রেস ছিল, স্পোর্টসে রীতিমত ভাল। আজো জিতে এসেছে সে। পায়ের ধুলোবালি, টি টেবিলে রাখা কবজি সাইজের ক্রেস্ট টা তার ই প্রমাণ।
নিবেদিতা ঘরে এলো, আমার ঘরে সে এখন কম আসে। সারাদিন ছুটোছুটি চলছে ওর। শুনলাম পেনশনের টাকাটা এখনো আসেনি আমার। ফাইলের মারপ্যাঁচ খেলতে খেলতে হয়ত কোন এক টেবিলে আটকে পড়েছে। টাকা চুরি করতে শিখিনি বলে এখানেও তেমন উৎকোচ দেয়ার সামর্থ নিবেদিতার নেই। তাই উপরওয়ালা বরাবর নালিশ রেখে তার দুয়ারে মাথা ঠেকাচ্ছে আমার উনি। সে ঠেকাক! কিন্তু যারা পেনশনের ফাইল টা ঠেকিয়ে রেখেছে তাদের কে ঠেকাবে কে? পত্রিকার পড়লাম, নচ্ছার বলে একদল আরেক দলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। উভয় নচ্ছার ই একে অন্যের পরিপূরক। মাঝখানে পড়ে আম ছালা চলে যায় আম পাব্লিকের। সৎ মানুষের অভাব। এদের অভাব নেই, মানুষ কেন জানি সৎ থাকতে পারে না। এই অধিকার টা একটা সময় এরা হারায়। খুব রাগ হচ্ছে, উঠে গিয়ে টেবিলে গুছিয়ে রাখা আমার লেখা পাণ্ডুলিপি টা ছাইপাঁশ বলে ছুঁড়ে দিলাম। কাগজগুলো উড়ে ছড়িয়ে পড়ল ঘরে। আমার মেয়েটা কোথা থেকে উড়ে এসে সেগুলো গুছিয়ে বাকা কাঁপাকাঁপা গলায় বলল, " বাবার! বাবার লেখাগুলো বাতাসে উড়ে..উড়ে গেলো "
দেয়ালে সাদাকালো ছবিটায় ফুল শুকিয়ে এসেছে। সময়ের মারপ্যাঁচে আমিও শুকিয়ে হারিয়ে গেছি দু-বছর আগে।
(সমাপ্ত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন