শনিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২১

ছোটগল্পঃ চুড়ি

 রিমঝিম কে বললাম কফি করো তো! 

আড়মোড়া আর চুড়ির সিম্ফনি তুলে বিছানায় শুয়ে ই আওয়াজ করল সে। বলল, আনছি!

এমন যদি হতো শহুরের সব থেকে উঁচু বিল্ডিং এর বারান্দায় দাঁড়িয়ে একনজরের শহরের বুকে আকাঁ কোন এক পিকাসোর ছবি এক নিমেষে শুধু একবার চোখ বুলিয়ে দেখে ফেলা যেতো! 

আমার এখন ঠিক তেমনি লাগছে। ভোরের কুয়াশা এসে একটি চাদরের মতন জড়িয়ে ফেলেছে গোটা শহর টা। কাল সারারাত ঘুম হয়নি। আমি ছিলাম কাজে, রিমঝিম পড়েছে বই। ভোরবেলা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে নিজেদের কে নানান নামে ডেকেছি। আজ প্রতিযোগিতা ছিল নিজেদের জানা খাবারের নামে একে অন্যকে ডাকতে। এই যেমন আমি চিনি, ও আমাকে বলছে গুড়!

আমি মুড়ি, ও চানাচুর!

তারপর হঠাৎ কখন ঘুম এসে আলগোছে দুজন কে তুলে নিয়ে গেছে দুজনের কেউ জানিনা।

বিয়ের আগের দিন ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছিল। সাদা পাঞ্জাবির নীচে গেঞ্জি না পড়ায় ভিজে অদ্ভুত দেখাচ্ছিল আমাকে। তবুও আমার হাতের ছাতাটা রিমঝিমের মাথায় ধরেছিলাম। বিয়ের শুরুটা হয়ত এমনি। একটি মেয়েকে নিজের আশ্রয়ে নেয়া। তাকে সমস্ত ভরসা দিয়ে বলা, " আমার কাঁধে এসে ঘুমাতে পারো, আমি জেগে আছি "। আকাশের চাঁদকে ও হয়ত তারা একই কথা বলে। 

রিমঝিমের পা ভিজেছিল সেদিন, পায়ে লাগানো লাল আলতা দেখে আঁতকে উঠতে হবে! রক্ত! কেটেছে!

রিমঝিম একটা বিরক্তি মুখে বলেছিল! হয়েছে! এত আদিখ্যেতা ভাল নয়। এসব দেখালে নাকি একসময় ভীষণ আফসোস করতে হবে। মানুষের নজর লাগবে। নজর নাকি খুব খারাপ। ওর ছোট ভাই টা খুব সুন্দর হয়েছিল, তবে বেশিদিন বাঁচেনি। অতি সুন্দর মানুষের চোখে সহ্য হয়না।

যাক সে কথা!

রিমঝিম হয়ত এখনো উঠেনি। দমকা বাতাস এসে ঘরের উইন্ড চাইম টাকে কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। এই শীতেও আমি দরজা খুলে রেখেছি। বন্ধ ভাব টা আমার ভালো লাগে না, রিমঝিমের তো নয় ই।

কলিং বেল বাজল!

-কে?

-স্যার! পেপার নিবেন না আইজ?

-হ্যাঁ! দাঁড়াও আসছি।

গেট খুলে দাঁড়ানোর পর ছেলেটা আমার দিকে একবার আর তারপর অদ্ভুত চোখে ঘরের ভেতর টা দেখল। শ্যামলা মতন ছেলেটা রোজ ই এই পত্রিকা দেবার বাহানায় এমনটা করে। রাগে মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলাম। 

এখন কফি খাবো! রিমঝিম!  রিমঝিম!  তুমি এখনো ঘুম থেকে ই উঠোনি, কফিটা কি আমি ই করবো?...

পত্রিকার ছেলেটা নীচে নেমে ই আকঁড়ে দারোয়ানের হাত ধরল। তারপর বলল, পাগলা আজ খেপছিল! আমারে দেইক্ষা দরজা লাগাই দিসে! বাসায় ভিত্রে চাইছিলাম -দেখি রুম অপরিষ্কার! ঘরের সিলিং এ চুড়ি ঝুলতেছে। শুনলে মনে হয় বাড়িতে মহিলা মানুষ আছে।

দারোয়ান গলা নামিয়ে বলল, যাও গা! ক্যান্সারে বউ টা মরার পর ভদ্রলোকের মাথা ঠিক নাই।



(গল্পের ঘটনা ও চরিত্র সমস্ত কাল্পনিক) 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...