বুধবার, ৩ জুলাই, ২০১৯

গল্পঃ তোমার কে?

(১)

তিথিদের পাশের বাসায় নতুন যে ভাড়াটিয়া টা এলো সে একটা ব্যাংকে জব করে। দেখতে ভয়াবহ স্মার্ট এবং সুন্দর।
তিথির কাছে স্মার্ট মানে আলাদা কিছু, ঐ তো চুলে জেল ছেঁড়াখোঁড়া জিন্স পড়া, সানগ্লান পড়া এমন কেউ না। যার চেহারায় মার্জিত ভাব আছে, আচরণে যথেষ্ট ভদ্র, বিনয়ী সেই মানুষ টি হচ্ছে আসল স্মার্ট।
সেই তালিকানীতির কড়াকড়ি তে সেই লোকটি স্মার্ট তো নয় আরো অনেক বেশী কিছু। একে কোন মেয়ে ই না অন্তত করতে পারবে না যদি না সে খুব বেশী ফ্যাশন ওরিয়েন্টেড না হয়ে থাকে। তাই বলে ভদ্রলোক কে রবীন্দ্রনাথ সালের কেউ বলে ধরে নেয়া উচিত হবে ই না। ভদ্রলোক কে দেখে ই একটা নান্দনিকতা টের পাওয়া যায়। তিথি তাই পড়ার টেবিলে বসে, বইয়ের তাকের আড়ালে মাঝেমাঝে উঁকিঝুঁকি দিয়ে লোকটা কে দেখে।
ভদ্রলোক ফেরেন ঠিক টাইম করে। ঘড়ি ধরে না হলেও একেবারে সময়মত। সন্ধ্যে ৮ টা থেকে রাত ৯ টা। এসেই রান্না করেন, মনে হয় ডিমভাজি তার খুব ই প্রিয়। এটা তিনি রেগুলার করেন। ভাজতে ভাজতে দুই থেকে তিনবার ঘড়ি দেখেন এরপর ই ছুটে যান টিভিসেটের সামনে। বেশ জোরে নিউজ দেখেন।
তিথির জানালা টা ভদ্রলোকের জানালার ঠিক পাশাপাশি, যাকে বলে লাগোয়া দেয়াল তবে অনেক ফাঁকা।
জানালা দিয়ে পড়ার টেবিল ধরে পাশের ঘর টা আলগোছে দেখা যায়। এজন্য খুব একটা কষ্ট করতে হয় না। তিথির জানালার পর্দা টা একপাশে সরিয়ে নিলে ই থাই গ্লাসের ওপারে বেশ ভালো দেখা যায়।
এই প্রথম লোকটা কে দেখে তিথির বুক দুরুদুরু করে উঠল। এমনটা এর আগে কখনো হয় নি। হবে ই বা কেন?
ক্লাসমেট আতিক, ইরতিজা, আনিস রেগুলার পেছনে পড়ে ছিল। ফোন, মেসেজ এমনকি নিজের ক্লোজ বান্ধবী আনিয়া কে ও ওদের একজন প্রায় হাত করে ফেলেছিল। ভাগ্যিস ভাই বলে ছাড়া পেয়েছে তিথি।
সে যাই হোক, তিথি এখন এটা নিয়ে নিশ্চিত যে ক্লাসমেট কেউ আর তাকে প্রেম নিবেদন করবে না।
তিথি!! আমার চা টা দিয়া যা তো মা!
তিথির মা নুসরাত বেগম, এই বাড়ির কড়া বাড়িওয়ালী। রেগুলার চা খান সেটা অবশ্য কাজের লোকের হাতে নয় বরং তার মেয়ে তিথির হাতে। এককালে ডাক সাইটে সুন্দরী ছিলেন বেগম নুসরাত। এলাকার অনেক ছেলেপেলে তার প্রেমে দিওয়ানা ছিল। বাড়ি ছিল পুরান ঢাকায়। বাবা ব্যবসায়ী এখন ও আছেন দিব্যি। রোজ সকালে ফোন করে মেয়ের খবর নেন। নাতনী তিথির বফ তিনি। নানুজানু বলেই তিথি ভুলিয়ে ভালিয়ে নানার অর্থসম্পদে হ্রাস ঘটিয়ে ফেলেছে এতদিনে।
একমাত্র নাতনী বলে কথা! তবে তিথির মামা কে কোন ছাড়া দেন না নানুজানু জলিল সাহেব।
তিথি!!
কয়েকবার ডাকার পর কপালের ঘাম মুছতে মুছতে তিথি চায়ের কাপ হাতে ঘরে এলো। কি রে মা? এত্ত দেরী করছস কেলা? জানস ই তো তর হাতে চা না খাইলে ভালা লাগে না।
তিথি হাসল আবার একটু অভিমান করে বলল, আমি না থাকলে কে চা করে দেবে শুনি?
তিথির মা চায়ে চুমুক দিয়ে তৃপ্তির হাসি হেসে বললেন, তর লাইগা ঘরজামাই আনমু দরকার হইলে, একমাত্র হীরামানিক আমার!
আম্মুকে জড়িয়ে ধরে তিথি বলল, যদি কেউ ঘরজামাই না হয়!
আরে হইব না ক্যালা? হইতে ই হইবো। অখন যা আমি সিরিয়াল টা দেখি। তিথির মা পুরান ঢাকার মেয়ে, তার বাবা ছিলেন জাদরেল ব্যবসায়ী। ব্যবসায় লস খেয়ে সেটা এক সপ্তাহে আবার তুলে আনেন নি এমন কখনো হয় নি। চার-চারটা ছেলেমেয়ে কে সেই শিক্ষা দিয়ে গেছেন। কখনো মাথা নত করবি না। জিতে আসবি। তাই সহজে হার না মানার পাত্রী তিনি নন।
তিথি রুমে চলে এলো। এখন সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা পাশের লাগোয়া বিল্ডিং থেকে নিউজের আওয়াজ আসছে, সেই সাথে ডিম ভাজার পোড়া গন্ধ!
তিথির ভীষণ হাসি পাচ্ছে এই দেখে সেই ভদ্রলোক পা নাচিয়ে নিউজ দেখছেন, এদিকে চুলোয় তার ডিম পুড়ছে।


(২)

আজ ইউনিভার্সিটি থেকে আসার পথে লোকটির সাথে তিথির দেখাদেখি হলো, লোকটি লজ্জা পাচ্ছে তিথি কে দেখে। মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে সে মেয়ের চোখে ধরা পড়বার পর চোখ নীচু হয়ে আনত হয়ে যাওয়া হয়ত ভুল কিংবা অসম্ভব কিছু নয় যদিও এই ব্যাপার টি এখন একেবারে দেখাই যায় না কোন পুরুষের চোখে। ভদ্রলোক তিথিকে যখন দেখছিলেন, আড়চোখে তিথিও তাকে দেখছিল। ব্যস, চোখাচোখি!
তিথির হাসি পেলো। তিথি অন্তত যেভাবে তাকাল তাতে আজকালকার ছেলেরা এগিয়ে এসে আগ বাড়িয়ে কথা বলতো।
ভদ্রলোক তেমন কথা বলার মত বলে মনে হলো না। তার হাতে বাজারের থলি। আজ শনিবারের ছুটি টা কাজে লাগাচ্ছেন। তিনি অবশ্য লজ্জিত, মনে হচ্ছে চোখের কাছে তার এই ধরা পড়ে যাওয়া অনেকটা আত্মসম্মান হারানোর মতন যদিও সেই ধরা পড়া চোখে বাজে কোন দৃষ্টি ছিল না।
কোন কথা হলো নানা দুজনের, তিথি চলে এলো। ভদ্রলোক নিজেও দ্রুত চলে গেলেন।
কাল প্রেজেন্টেশন। এটা একটা ঝক্কি আবার একটা এক্সসাইটমেন্ট ও বটে।
ডিপার্টমেন্ট এর স্যার সবাইকে টাইম মত যেতে বলেছেন। কোন ভুল করা যাবে না।
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে তাই পড়ে থাকা প্রেজেন্টেশন নিয়ে বসতে হলো ওকে। তবে নাকে এসে গন্ধটা লাগল সেটায় মুগ্ধ না হয়ে পারা গেল না। চিকেন টা যা হচ্ছে নিশ্চই সেই ভদ্রলোক!
ঠিক তাই।
রান্নাঘরে ধোঁয়া দেখা গেল। সেখানে ই রান্নাচড়ানো।
এসব বাদ নিয়ে তিথি ভাবল, লোকটা সত্যিই ভাল রান্না পারে।
আগে এখানে যারা থাকতো ওরাও ব্যাচেলর ই ছিল। প্রতিদিন দাঁত মাজার ভান করে হ্যাংলা ষাঁড়ের মত দাঁত কেলিয়ে এদিকে তাকিয়ে থাকতো। মাঝেমাঝে তিথিকে দেখেই গান ধরতো, " সুন রাহা হ্যায় না তু... " রাগে তিথির গা রিরি করতো।
নালিশ না করলে আজকেও তাদের দেখা যেতো দাঁত কেলাতে।
উফ, অসহ্য!
দুপুরবেলা কারেন্ট টা গেল। ভাল গরম। জানালার পর্দা যতটা ভেজানো ছিল সেটা একটু সরিয়ে দিতে ই হলো তিথিকে। কিন্তু জানালায় গিয়ে ই গরমের মাঝে তিথির মেজাজ আরো গরম হয়ে উঠল।
মেয়ে? ঐ বাসায়?
মেয়েটি বেশ সুশ্রী। লাল রঙের একটা সেলোয়ার কামিজ পড়া। হাসিহাসি মুখে রান্নাঘরে এসে ই মাংস টা নাড়া দিল। ভদ্রলোক কে দেখা গেল গোসল সেরে বাইরে আসতে মাথা মুছতে মুছতে। ব্যাচেলর বাসায় মেয়ে?
তিথির মনে আগুন ধরে গেল এই তোমার ভালোমানুষি! কলির কেষ্ট... আরো কিছু মনে মনে বলে গেলো তিথি সেসব ভাষা দূর্বদ্ধ। লেখায় আনা ক্রমশ জটিলতর। সব ছেলেরা ই এমন, তিথির প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। এজন্য দূর থেকে কাউকে ভালো লাগতে নেই। তাতে কষ্ট বাড়ে কিন্তু আসলে ই কি মাঝেমাঝে আমরা লজিকে পড়ে ভাবতে চাই। হয়তো চাই কিন্তু হয়ে উঠে না। আমরা তখনি হেরে যায়, তিথিও সম্ভবত হেরে গেলো মনের কাছে, লজিকের মারপ্যাঁচে।


(৩)
প্রেজেন্টেশন ভাল হলো না। অথচ তিথি বরাবরি অনেক ভাল ছাত্রী। স্যার অনেকটা আফসোস করলেন। সামনে ভাল করতে হবে বলেও উপদেশ দিলেন।
বাড়ি ফিরতে দেরী হলো না আজ কে। প্রেজেন্টেশন শেষে সবাই বসে আড্ডা দিলো, আইস্ক্রিম খেলো।  তিথির কিছু খেতে ইচ্ছে করলো না, কথাও কারো সাথে বলল না ভালো করে।
আরিন কেও কিছু বলল না। তিথি চাপা স্বভাবের। তাই বন্ধু-বান্ধব খুব কম। যা হয় আরিন নয়ত মা। আব্বু বেঁচে থাকলে কারো সাহস হতো না ওকে জোর গলায় দুটো কথা বলার।
তিথির আব্বু আর্মি কর্নেল ছিলেন। একটা সেনা কনভয়ে থাকাকালীন মারাত্মক ভাবে আহত হন পরে মারা যান। তিথি তখন ক্লাস সেভেনে।
আব্বুকে সে খুব মিস করে। আব্বুর কথা বলে পড়লে নিজের ঘরে ঢুকে জানালা দরজা বন্ধ করে অন্ধকার ঘরে চুপিচুপি কাঁদে।
আজ ঘরে ফিরে ই তিথি সব কিছু বন্ধ করে দিলো।
নুসরাত বেগম দেখলেন তার মেয়ে হনহন করে তার সামনে দিয়ে এসেই রুমে ঢুকে গিয়ে সব বন্ধ করে দিল।
তিনি এগিয়ে এসে দরজার কাছে নক করতে গিয়েও করলেন না। তিথির কষ্ট টা অনেকটা বরষার কালো মেঘের মতো। মুষলধারার মত চলে থেমে যায়।

বিকেলবেলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে তিথি। মেঘ কেটে গেছে। রোদ এখনো মনের উঠোনে আসেনি তবে ভারী আকাশের মত থমথমে এখনো।
এই যে!  শুনছেন?
তিথি প্রথমে খেয়াল করেনি। পরে আচমকা সে ভদ্রলোকের দিকে নজর পড়ল।
এই যে! কাইন্ডলি একটা ম্যাচ পাওয়া যাবে?
তিথির আবার রাগ উঠে গেল কিছু না বলেই জানালায় পর্দা টেনে দিল।
ভদ্রলোক অনেকটা আঁতকে উঠলেন হয়তো।

(৪)

এক সপ্তাহ পর, বাসায় নীচে তিথির সাথে ভদ্রলোকের দেখা। ভদ্রলোক সেদিনের ব্যবহারে হয়ত অবাক এবং মাইন্ড ও করেছেন। তাই তিথি অনেকটা নিজে ই এগিয়ে এসে বলল, সরি! সেদিন আসলে..
আরে না না, ঠিকাছে। আমার ঠিক সেভাবে জিজ্ঞাসা করাটাও উচিত হয় নি।
তিথি নিজের বাসা আঙুলে দেখিয়ে বলল, এই দেখছেন নুসরাত ভিলা। এটা আমাদের বাড়ি একদিন আসুন আম্মু খুশী হবেন।
ভদ্রলোক যেতে ইচ্ছে প্রকাশ করে ই নিজের বাসায় চলে গেলেন।
মেয়েটিকে সেদিন দেখার পর আর খুব একটা দেখা যায় নি। মেয়েটি কি তাহলে ভদ্রলোকের আত্বীয়? না.. ধুরছাঁই কি সব ভাবছি।
তিথি!! আয় তো মা..
তিথি চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবে তখনি জানালার বাইরে চোখ পড়ল। আবার সেই মেয়েটি!
দুজনে বসে টিভি দেখছে আর চা বা কফি কিছু একটা খাচ্ছে।
তিথির এবার মনখারাপ হলো না, ওর মনে হলো ভাল মানুষগুলো পৃথিবীতে একেবারে নগণ্য, নয়ত এঙ্গেজড!
মায়ের চা করতে হবে। তিথির আর ভাবার সময় নেই এখন সামনে সেমিষ্টার ফাইনাল।
তিথি জানলা বন্ধ করে, পর্দা টেনে দিলো। নাহ, আর না। এমন একজন লোক কে বারবার দেখে যাওয়ার কোন মানে হয়না। তিনি বিবাহিত।
বৌ দূরে থাকে তাই মাঝেমাঝে এসে দেখা করেন।
তিথির পরীক্ষা ছিল।
পড়াশোনা তে ব্যস্ত ছিল খুব, ইচ্ছে করে ই আর জানালা খোলে নি তার পরদিন থেকে। লজিকে বেঁধে রেখেছে নিজেকে।
পরীক্ষা যেদিন শেষ হলো সেদিন ভারী গানের আওয়াজে ঘুম ভাঙল তিথির। এক্সাম শেষ করে সবে ঘরের ভেতর শুয়েছিল ও। তিনি তীব্র আওয়াজে আর থাকা গেলো না। উঠে সেই বন্ধ জানালা খুলে দেখলো, সে বাসার বারান্দায় একটা ছেলে টেনিস বল দড়ি তে ঝুলিয়ে ক্রিকেট ব্যাটে খেলছে।
এই! এই ছেলে! কি নাম তোমার? তিথি উঁচু গলায় ডাকল।
আরিয়ান!
এখানে কবে এলে?
ছেলেটি বলল, এক সপ্তাহ। আমরা নতুন এসেছি। তোমার নাম কি?
আমি তিথি। এটা আমাদের বাসা। এসো একদিন।
কথোপকথনের মাঝে একটু স্বাস্থ্যবান নাদুসনুদুস মহিলা এলেন, কে আপনি?
আমি তিথি, আসলে আপনাদের ঘরে খুব জোরে গান বাজছে। ঘুমোতে পারছিলাম না।
ওহ আচ্ছা! না না, আমার ছেলের কাজ। মহিলা হেসে দ্রুত ঘরে দিয়ে গান একাবারে বন্ধ করে আবার ফিরে এলেন। বললেন, এবার ঠিকাছে?
তিথি একটু হেসে বলল, হ্যাঁ! অনেক ধন্যবাদ। আসবেন আমাদের বাসায়। এটাই আমাদের বাসা। আসলে আমার মা খুশী হবেন।
ভদ্রমহিলা বললেন, আমরা এক সপ্তাহ আগে এসেছি। অঙ্কুরের আব্বুর বদলীর চাকরী তাই এক জেলা থেকে আরেক জেলা রাতারাতি চলে যেতে হয়।
আরো কিছুক্ষণ নানা বিষয়ে কথা হলো দুজনের। তাতে তিথি জানলো আগের ভদ্রলোক চলে গেছেন। তিনি একা থাকতেন। তার নতুন কোথাও চাকরী হয়েছে ব্যস এতটুকু ই জানা গেলো।

(৫)

গ্রাজুয়েশনের দিন তিথি খুব খুশী। আরো তিন বছর কেটে গেছে খুব দ্রুত। ট্রিপল ই পাস করা তিথি ভাবছে চাকরী করবে।
তিথির মা নুসরাত বেগম চাইছেন মেয়ের বিয়ে হোক, দেখভাল করতে কোন হাতে তুলে দিতে চান মেয়েকে। তিথি রাজী নয়। সে স্বাধীনচেতা স্বভাবের। কেন শুধু শুধু পোষা প্রাণীর মতন কারো হাতে বেঁচে থাকতে হবে তিথিকে। তারপর তার ছেলেমেয়ে হলে তাকে মানুষ করা, রান্না করা এসবে ই দিন কাটাতে হবে?
নুসরাত বেগম বলেন, এমতে ই জীবন যাইবো রে মা, দেইখা ল!
তিথি তাতে রাজী হয় না।
নুসরাত বেগমের মাথায় হাত। মেয়েকে বিয়ের পিড়িতে বসাতে তাকে হবে ই। এটাই আপাতত তার মিশন।
এর মাঝে তিথির একটা চাকরী হয় ছোট একটা আই টি ফার্মে। বেতন কুঁড়ির কাছাকাছি। নুসরাত বেগম হতাশ। বাপের জমিজমা, ট্যাকাপয়সা এগুলা দেখবো ক্যাডা।
তিথির উত্তর, এতিখানায় দিয়ে দাও!
নুসরাত বেগমের চোখ কপালে, মাইয়া আমার কয় কি!
সব ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু তিথির অফিস থেকে বদলীর আদেশ এলো। তিথির মতন দক্ষ হাতের দরকার তাদের। তাই প্রমোশন দিয়ে এই বদলী। তিথির মা এতে রাজী নন। মেয়েকে তিনি ছাড়বেন না।
'আমার পোলা নাই, আরো কেউ নাই কেবল একটা খালি মাইয়া! আমি পারমু না' নুসরাত বেগম বেঁকে বসলেন। তাকে রাজী করানো মুশকিল। তিথিও হতাশ তবে একটা দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেলো মা কে ম্যানেজ করার। বলল, বিয়ে করতে তিথি রাজী কিন্তু নতুন জায়গায় তাকে যেতে দিতে হবে।
নুসরাত বেগম চোখ মুছে রাজী না হলেও এবার হয়ে গেলেন।
তিথি চলে গেলো তার নতুন অফিস। যেখানে থাকার জন্য বাসা অফিস থেকে ই করে দিয়েছে। দু রুমের ঘর, একটা ছোট বারান্দা, রান্নাঘর, টয়লেট। মোটামুটি সিঙ্গেল জনের জন্য যথেষ্ট।
অফিসে ছুটতে হলো পরের দিন।
মেইন ব্রাঞ্চের মতন অত বড় না তবে কাজের চাপ প্রচুর। গভর্নমেন্ট একটা প্রজেক্টে কাজ করছে এরা। তাই চাপ আছে।
ওয়েটিংরুমে অপেক্ষা করে ছিল তিথি। এবার ম্যানেজারের রুমে ডাক পড়ল। ঢুকতে ই দুইজোড়া চোখ একে অন্যের উপর কয়েক মুহুর্তের জন্য স্থির হয়ে গেলো।
ম্যানেজার ভদ্রলোক মৃদ্যু গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন প্লিজ বসুন!
তিথি সামলে নিয়ে যখন ম্যানেজারের সামনে বসল, তার স্মৃতি ততক্ষণে অনেক পেছনে ঘুরতে চলে গেছে।
ভদ্রলোকের চেহারা কিছুটা বদলে গেছে, হালকা ফ্রেমের চশমা বসেছে চোখে। নাকের নীচে সরু গোঁফ। শার্টের চেক বদলে গেছে এখন সেটা একরঙা। হাতের ঘড়িটা দেখে বোঝা যাচ্ছে ঘড়ির প্রতি সৌখিন। আঙুলে কোন আঙটি নেই। ফোনেএ রিসিভার কানে তুলে, তিথির দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, চা না কফি?
কফি! মৃদ্য স্বরে বলল তিথি।
তিথি শাড়ি পড়েছে আজ, কচুপাতা রঙের। কপালে ছোট সবুজ টিপ। চোখে রিমলেস চশমা। তার উপর কপাল থেকে কয়েকটি চুল এসে আছড়ে পড়ছে বাতাসের তোড়ে।
কেমন আছেন? একটু মৃদ্যু স্বরে প্রশ্ন করলেন ভদ্রলোক।
জ্বী ভাল, আপনি?
এইতো চলছে, অনেকদিন পর!
হ্যাঁ, একটু ঘুরেফিরে অফিস টা একবার দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিল তিথি।
আপনাদের বাসায় আর যাওয়া হলো না।
নাহ, আসলে... কিছু বলতে গেছিল তিথি কফি হাতে একজন আসায় তাতে বাধা পড়ল।
নিন! কফি নিন। ভদ্রলোক নিজেও কফি নিলেন।
আমার নাম তো এখনো জানেন না, আমি সীমান্ত। আপনাদের ওখানে যখন ছিলাম তখন আমার সবে জয়েন।
কফিতে ছোট ছোট চুমুক আর কথা শুনছিল তিথি।
পরে, ব্যস্ততা বাড়ল। আর সময় হলো না।
তিথি কি একটা বলতে গিয়ে আবার থামল, সীমান্ত বললেন, সরি! কিছু বলছিলেন?
তিথি কেবল না সূচক মাথাটা নাড়ল। কফিটা কড়া। চিনি কম।
আচ্ছা, আসলে আমি চিনি কম খাই, তাই হয়ত। আপনার চিনি লাগবে বলে বেল বাজাতে গেছিলেন তখনি হাত উঁচু করে, ইটস ওকে বলল তিথি।
-আপনার আম্মু কেমন আছেন?
-এখন ভাল।
-এখানে আসতে দিলেন?
-হ্যাঁ, ঐরকম জোর তো একটু করতে ই হলো।
-আপনার ফ্যামিলি? -তিথি প্রশ্ন টা করলো
-মা আছেন, বাবা নেই। বোন আছে, একটা ভাগ্নে আছে। দারুণ দুরন্ত!
তিথি সম্ভবত অন্যকিছু জানতে চাইছিল, ফ্ল্যাটের সেই মেয়েটির কথা এখনো মনে আছে ওর। তাহলে সে কি!
-কি ভাবছেন? সীমান্তর পাল্টা প্রশ্ন
-না মানে? তিথি আমতাআমতা করছিল।
বিয়ে তো! বলে ই মাথা নীচু করে কফির মগে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন, ব্যস্ত মানুষ কে মেয়েরা বিয়ে করে না।
তিথি একটু হাসল।
সীমান্ত বলল, এক মিনিট! কথার মাঝে আসল ব্যাপার ভুলে ই গেছি।
তারপর ড্রয়ার খুলে জয়েনিং লেটার টা এগিয়ে দিয়ে বলল। ওয়েলকাম, মিস তিথি।
থ্যাংকিউ।
ম্যানেজারের রুমের বাইরে আসতে ই মায়ের ফোন, তিথি! ভালা আছোস মা, কোন কষ্ট হয়নাইক্কা?
নাহ মা আমি ঠিকাছি, কি বলবে?
তোর লাইজ্ঞা পোলা দেখছি, ঘটক ওখনো আমার সামনে ই আচে। নাম সীমান্ত, মায়ের এক পোলা, আবার ইঞ্জিনিয়ার। তো পছন্দ হইবো?
তিথি বললো, ঘটক কে বলো ছবি আর বায়োডাটা পাঠাতে। পরে ভেবে দেখছি।
হাসতে হাসতে ফোন রেখে দিল তিথি।

(সমাপ্ত)

(গল্পের চরিত্র এবং ঘটনা সম্পূর্ন কাল্পনিক, এর সাথে জীবিত, মৃত, অর্ধমৃত কারো সাথে কোন মিল নেই, মিলে গেলে তা একান্ত কাকতালীয়) 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...