ভদ্রলোক তার পাশের ভারী ব্যাগ টেনেটুনে সরিয়ে আমাকে
বসবার জায়গা করে দিলেন। বললেন, ' বসুন, এই
ভীড়ের মাঝে এইটুকু জায়গা পাওয়া রীতিমত ভাগ্যের ব্যাপার!'
দেরী না করে তাই বসে পড়লাম। আমার সাথে ব্যাগ বলতে কিছু
নেই। একটা পোর্টফলিও, তাতে দাঁত মাজার সরঞ্জাম আর শেভিং রেজার। একটা বই ও
আছে। ভ্রমণে যাতে বোর না হয়ে পড়ি ঠিক সে জন্য সাথে আনা।
আপনার নাম? (এবারে ভদ্রলোক মুখে আস্ত একটা পান
পুরে আমার দিকে পানের বাটি এগিয়ে প্রশ্নটা করলেন)
-বিভূতিভূষণ।
আরে বামুন?
নাহ, কায়স্থ।
হে হে, আমি বামুন। পঞ্চানন চক্কোত্তি। ভদ্রলোক
হেসে জবাব দিলেন। আমি পানের অফার টা ইশারায় না করে দিলাম। এই অচেনা পথে তারপর
দুপুর দুটো আড়াইটায় পান মুখে তুলে জ্বীভ পোড়াবার দরকার নেই।
আপনি যাচ্ছেন?
কুলাউড়া! (ঝট করেই ভদ্রলোকের জবাব) এতক্ষণ তাল করে উঠতে না পারলেও এবার আপাদমস্তক দেখে নিলাম। সিলেটের পথে
তেমন ভারী শীতের প্রকোপ দেখা না গেলেও পঞ্চানন মশায় বেশ কোমর বেঁধে চলেছেন। গলায়
মেরুন রঙের মাফলার। গায়ে হাতকাটা উলের সোয়েটার, পাঞ্জাবী,
আর ঝ্যালঝ্যালে পায়জামা।
' কি দেখছেন মশায়? হে হে,
মাফলার? আমার একটু ওই ঠান্ডার ব্যাতিক
আছে, সামান্য হোক আর বেশীই হোক নাক টা বন্ধ হতে সময় নেয়
না। তা আপনি কোথায় চলেছেন?'
এইত, একটা চা-বাগান
হয়ে একটা রিসোর্টে দিন দুয়েক কাটাবো।
একি! আপনি লোকাল নন? (ভদ্রলোকের কপালে চামড়ার ভাঁজ)
না, আমি ঢাকা থাকি।
আমাদের ট্রেনের হুইসেল শোনা গেল এর মাঝে। ভৈরব ক্রস করছি
আমরা।
কিছু খেয়েছেন মশায়? মানে দুপুরের আহার?
ও হ্যাঁ, বিস্কুট। আমার অত ক্ষিধে পায় না।
' এ বাবা! এ কেমন কথা মশায়?
বলেই, লোকটি তড়িঘড়ি করে ব্যাগের চেইন
খুলে একটা প্লাস্টিকের কৌটা বের করল। কৌটা থেকে উঁকি দিল মুড়ি-মুড়কি। তারপর আমার হাতে এগিয়ে দিয়ে বলল, ' নিন।
খেয়ে জল খেয়ে নিন। লম্বা পথ, ক্ষিধেয় কষ্ট কেন পাবেন?
হে হে..'
কৌটা হাতে নিয়েই ইতস্তত লাগছিল। অচেনা কারো থেকে খাবার
খাবার অভিজ্ঞতা খুব একটা ভাল হয় না। তবুও ভদ্রতার খাতিরে একটা মুড়কি দাঁতে কাটতে
হলো। এবার দেখলাম ভদ্রলোক বর্ষাকালের ব্যাঙের মত একদিকে হালকা কাত হয়ে শুয়ে পড়লেন।
আমিও খানিকটা সরে এসে লোকটিকে জায়গা করে দিলাম।
কিছু মনে করবেন না বিভূতিবাবু, শরীর
বেশ ম্যাজমেজে। একটু গড়িয়ে নেই বরঞ্চ!
আমি আরো কয়েকটা মুড়কি মুড়ি সমেত সাবাড় করে জানালার বাইরে
ঘরবাড়ি আর গাছপালার ছোটাছুটি দেখতে লাগলাম।
(দুই)
জ্ঞান যখন ফিরল। আমি গলা, পিঠ, পকেট হাতড়ে নড়েচড়ে ধরফড় করে উঠে বসলাম। আমি? আমি!
সে কি মশায়? কি হলো? স্বপ্ন
দেখছিলেন নাকি?
দেখলাম পঞ্চানন আমার দিকে নীচু হয়ে তাকিয়ে। ' কি
হয়েছে? ভয় পাচ্ছেন?'
আ..আমি কোথায়?
কোথায় আবার? ট্রেনে।
ওহ। কপালের জমাট ঘাম পকেটের রুমাল বের করে মুছে নিলাম।
আপনি দাঁড়িয়ে? বসুন!
আরে নাহ, ছাড়ুন মশায়! সারাদিন ই তো বসে থাকি। এই না হয় একটু দাঁড়ালাম। এই কামরার বাইরে যাবার
জো আছে!
ট্রেনের করিডোর ধরে কারো জুতোর শব্দ পেলাম। সম্ভবত টিকিট
চেকার।
আমার মাথার কাছে মুড়ি-মুড়কির কৌটা এখনো পড়ে
আছে, ভদ্রলোক সেটা ব্যাগে তোলেন নি। আমাকে কৌটার দিকে
তাকিয়ে থাকতে দেখে বললেন, ' মশায়, ক্ষিধে পেলে জলদি সেরে নিন। আমার আর ওতে আজকাল ক্ষিধে মেটে না। তবুও ওই
জোর করে দিয়ে দেয় আমার স্ত্রী, হে হে' ভদ্রলোকের হাসি এবার কিছুটা বিদঘুটে শোনাল আমার কাছে।
আমি উল্টে জোর করে বললাম, ' আরে দাদা, আপনি আসুন। আমি মনে হয় অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি। এবার আপনি বসুন। আমি বরঞ্চ
বাইরে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আসি।'
ভদ্রলোক মুখ ভার করে খুব ধীর পায়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে
ঠিক ধপ করে পাশে বসলেন। তারপর বললেন, 'জানেন মশায়, আমি অনেক দেনায় পড়ে আছি। বাড়ির গোয়াল থেকে গরুটা বিক্রি করে দিতে হয়েছে
মেয়ের বিয়ে দেবার সময়। এক কাকাতো ভাই আছে, সেও বেশ
স্বার্থপর! সম্পত্তির কানাকড়ি পেতে দেয় নি। অভাবী পরিবারে
একমাত্র মেয়ের বিয়েটা এসেছিল বেশ বড়ঘর থেকে। মেয়ে বলল, বাবা
এত টাকা দিয়ে বিয়ে দিও না! মেয়েকে ধমকে বললাম, চুপ কর! যা করছি তোর ভালোর জন্য করছি। এখন যে
টাকা যৌতুক দিচ্ছি। বাকী টাকা না হয় বিয়ের পর দেবো।
বলতে বলতে ভদ্রলোক ডান হাতে চোখের চশমা খুলে আলতো করে
চোখ রগড়ে মুছে নিলেন। তারপর বললেন, 'জানেন ভালোই চলছিল মেয়ের সংসার। কুলাউড়া
তে ছেলের পরিবার থাকে। তাদেরকে দেখতে যেতাম মাসে একবার। জামাই ছেলেটা বড্ড ভালো। বাড়ি
গেলে কখনো যত্নআত্তি কম করেনি। কিন্তু হঠাৎ কিছুদিন পর জানতে পারলাম...
ভদ্রলোক এবার সজোরে কেঁদে উঠলেন। আমি সান্ত্বনা দিতে
ভদ্রলোকের পিঠে হাত রাখতে গিয়েও কিছুটা এগিয়ে সরে এলাম। ভাবছি, ভদ্রলোক
কে অনুরোধ করে কিছু টাকা সাহায্য করা যায় কিনা।
আচমকা বললেন, না.. না..
ভাববেন না আমি সাহায্য চাইছি! মাফলার
দিয়ে চোখ মুছে তড়িঘড়ি করে আমার দিকে ফিরে বললেন। আমার হাতে কিছু টাকা আছে। এই টাকা
যদি আমার মেয়ের বাড়ি আপনি দয়া করে পৌঁছে দেন তাহলে..
দাঁড়ান..দাঁড়ান..
ভদ্রলোকের কথা মাঝখানেই থামিয়ে বললাম, ' আপনি যাচ্ছেন না? '
তাছাড়া, এ কেমন কথা!
আমাকে আপনার মেয়ে না চিনে আমার থেকে টাকা নেবেই বা কেন? তাছাড়া,
আপনিই তো মেয়ের বাড়ি যাচ্ছেন!
ভদ্রলোক এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, আপনি
আমাকে চেনেন না। আমিও না। কিন্তু আপনি লোক ভাল। আমার ব্যাগে নীচের পকেটে একটা
পলিব্যাগে হাজার পঞ্চাশেক টাকা আছে। আমার মেয়ের বাড়ি নেব বলে বছর দুই আগে এই
ট্রেনে যাচ্ছিলাম কিন্তু ট্রেন টা ভৈরবের পর এসে আরেকটা ট্রেনের সাথে মুখোমুখি
সংঘর্ষে ভেঙে মুচড়ে যায়। আমিও সে ট্রেনেই ছিলাম মশায়।
মজা করছেন আমার সাথে? ভয় দেখাচ্ছেন আমাকে?
দিব্যি আপনাকে মানুষ দেখাচ্ছে! তারপর?
তারপর আর কি! মারা পড়লাম কিন্তু ব্যাগ টা এখানেই
ছিল। আশ্চর্য ব্যাপার! কেউ পাটাতনের নীচে এই ব্যাগে হাত ই
দিল না। অবশ্য একজন দিয়েছিল তারপর সে ভূত.. ভূত.. করে অক্কা পায়।
আমি কিঞ্চিৎ হেসে ভদ্রলোক কে বললাম, আপনি
বুঝি লেখেন টেখেন?
সে তো আপনার কাজ মশায়। আপনার লেখা আমি পড়েছি। ঐ যে " বিস্তৃত বিবর" আপনার ই তো লেখা! উনি বিদ্রপের হাসি দিয়ে বললেন। যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।
ভদ্রলোককে আমার সন্দেহ হচ্ছে। ইমোশনাল করে বিপদে ফেলবার
মত ঘটনা আজকাল পত্রিকার পাতায় কম আসে না। বেশ কাটতি হয় সেসব নিউজের। খুন-খারাপি, ধর্ষণ,
চাঁদাবাজি, গুম পত্রিকা বিক্রি হবার
প্রধান উপকরণ।
আমি আমার পোর্টফলিও বগলে চাপিয়ে কামরার দরজা বাইরে থেকে
লাগিয়ে এলাম। এ যদি মন্দ কেউ হয় তাহলে এখনি টিকিটচেকার কে বলতে হবে।
বাথরুমে ঢুকে আয়নায় নিজেকে কয়েকবার দেখে চোখে-মুখে জলের
ঝাপটা দিলাম। এরপর বেড়িয়ে চেকারের খোঁজ করলাম করিডোর ঘুরে। ঘড়িতে রাত প্রায় পৌঁনে
ন'টা। ট্রেন চলছে একই গতিতে। ঝকঝক শব্দে। এখন কি করবো? কাউকে না পেয়ে আবার নিজের কামরায় যাচ্ছিলাম।
(তিন)
আমার পিঠের দিকে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম, তারপর
গলার আওয়াজ। আরে ভাই! কই যাচ্ছেন আপনি?
পিছন ঘুরে দেখি টিকিট চেকার। গায়ে কালো ময়লা পুরোনো
ট্রেন কোম্পানির দেয়া ব্লেজার। হাতে চেকিং খাতা আর কলম। চেকার মাঝারি গড়নের যুবক।
' কই যাচ্ছেন ' বলে আবার হাঁক
দিল জোরে।
কেন কামরায়!
মাথা ঠিকাছে তো আপনার?
চ্যাংড়া ছেলের কথা শুনে মাথায় দরজার হুড়কো টা খুলে গেল। মাথা
ঠিকাছে মানে? কি বলতে চাইছো হে ছোকরা!
দ্যাখেন আগে কাকু, কামরার দরজায় তালা!
আবার কাকু? আমাকে কাকু লাগে!
সরি স্যার!... ভালো করে দেখুন কামরার দরজায়
তালা। আপনার টিকিট টা দেখান তো!
বুক পকেট থেকে টিকিট টা দিতে দিতে দেখলাম, সত্যিই
তো! কামরায় তালা।
যুবক টিকিট চেক করে বলল। টিকিট তো ঠিকাছে কিন্তু এই
কামরা কেন দিল বুঝলাম না। আচ্ছা আপনি পাশের কামরা নিন। ওটা খালি আছে।
চেকার যুবক আমাকে পাশের কামরা পর্যন্ত এগিয়ে দিল। আমি
কামরায় ঢুকে দ্রুত চোখ বুলিয়ে নিলাম। কামরায় একটা টিমটিমে হলদে আলো জ্বলছে। একটা
গোল সেলিঙ ফ্যান ও আছে কিন্তু আর কোন মানুষ নেই।
পোর্টফলিও ব্যাগ টা মাথার কাছে ফেলে একটু শুয়ে পড়লাম
বসার লম্বা বেঞ্চটায়।
ঘুমভাব এসেছে কি আসেনি, কামরার দরজায় ঠকঠক
আঙুলের টোকা পড়ল।
শুয়ে থেকেই জোর গলায় জানতে চাইলাম, কে?
উত্তর এল, আমি পাশের কামরা থেকে মশায়।
ভয়ে রক্ত হিম হয়ে এল আমার। কাঁপা গলায় বললাম, না..না.. আমি পারবো না। আপনি যান এখান থেকে। ভদ্রলোক
বাইরে থেকে কেঁদে উঠল। দাদা মশায়, ' আমি পারলে আপনাকে
বলতাম না '।
সাহস করে এবার উঠে গিয়ে কামরার দরজা খুলে সেই লোকটিকে
ভেতরে আসতে দিলাম। লোকটির কোলে সেই ভারী ব্যাগ। আমার সামনে ব্যাগটা নামিয়ে। পকেট
থেকে কুলাউড়ার ঠিকানাটা আমার হাতে দিয়ে বলল, 'আপনি লোক ভাল মশায়, মেয়েকে বলবেন। ওর বাবা আজ থেকে শান্তিতে থাকবে'।
আমাকে আর কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে ঝটপট কামরার
দরজা লাগিয়ে করিডোরে বেরিয়ে গেলেন ভদ্রলোক। আমি দ্রুত বেড়িয়েও আর তাকে পেলাম না। সে
কামরাতেও তালা।
(চার)
ট্রেন কুলাউড়া স্টেশনে থামল। চেকার যুবক আমার হাতে এত
ভারী ব্যাগ দেখে চোখ কুঁচকে বলল, ' আপনার ব্যাগ?'
চোখ পাঁকিয়ে বললাম, ' হ্যারে ছোঁকরা! '
যুবক মুখচুন করে চলে গেল অন্যদিকে।
আমি ব্যাগের ভার কোনরকমে নিজেই টেনে নিলাম। ভদ্রলোককে
কথা না দিলেও আমি আমার কাজ নিজ থেকে শতভাগ করবো।
রিক্সা ডেকে বিশ্বাস বাড়ির কথা বলতে ই রিক্সাওয়ালা বলল, ' উঠেন, আধা মাইল ও নাহ'
রিক্সা মফস্বলের কাঁচাপাকা পথ ধরে চলল। রিক্সার
ক্যাঁড়ক্যাঁড়ে যান্ত্রিক আওয়াজ তুলে।
মিনিট পনেরো পর একটা টিনের চালা দেয়া বাড়ির বাইরে এসে রিক্সাওয়ালা
রিক্সা থামিয়ে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল। ' এইটাই বিশ্বাস বাড়ি'।
বাইরে কতগুলো ছেলেমেয়ে মার্বেল খেলছিল। আমি বাড়ির ফটকে
ঢুকছি দেখে ওর মাঝে একজন চেঁচিয়ে বলল, বাবু! বাবু!
তোগের বাড়ি অতিথি আইসচে'
দেখলাম মার্বেল খেলা ফেলে বছর দশের এক ছেলে আমার দিকে
এগিয়ে এসে বলল। দাদু! ওমা দাদুর ব্যাগ!
আমি একটু শুকনো হাসি হাসলাম। ছেলেটি ওদের দিকে ফিরে বলল, ' আইজ আর খেলব না, আমার দাদু আইসচে '
আমার চোখের কোণা নড়ে উঠল। নিজে বিয়েথা করিনি। তাই
মেয়ে-ছেলে কেউ নেই। এভাবে হুট করে দাদু হয়ে যাওয়া টা আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগলেও
মিশ্র অনুভূতি তৈরি করল মনে।
আমাকে টেনে বাড়ির উঠোনে টেনে আনতে আনতে ছেলেটি হাঁক দিল, 'মা
দেখে যা! কে আইসচে! দাদু আইসচে,
দাদু! '
একজন যুবতী কে দেখলাম তড়িঘড়ি করে পিঁড়ি হাতে বাইরে আসতে।
আমাকে দেখে উনি হাসিমুখে থাকলেও তাদের দুইজন কে দেখে
একটু অবাক ই হচ্ছি বলা চলে। ছেলেটি বলল, ' দাদু আমি গাছের বেল পেড়ে আনচি তুমি
বসো '
ছেলেটি এক দৌড়ে উধাও হয়ে গেল বাড়ির গেট দিয়ে।
আমি দু'হাতে নমস্কার জানিয়ে বললাম, ' আপনার বাবা এটা পাঠিয়েছে '।
যুবতী মুখে কাপড় চাপিয়ে কেঁদে উঠল। ক্ষুধার্ত চোখে হামলে
পড়ল আমার এগিয়ে দেয়া ব্যাগে। একের পর এক জিনিসপত্র বের করতে লাগল আমার সামনে। দেখলাম, কথা
সত্য। ট্রেনের ভদ্রলোক মিথ্যে বলেন নি। পঞ্চাশ হাজারের মত টাকা পাওয়া গেল ব্যাগে। কিছু
জামা-কাপড়, একটা পানের কৌটা,
মুড়ি-মুড়কির কোটা আরো ছোটখাটো জিনিস। তবে
শেষে যেটা দেখে আমি অবাক হলাম সেটি অদ্ভুত ই বলা চলে। একটা সোনার গোপাল মূর্তি।
যুবতী এবার সেটা কপালে ঠেকিয়ে প্রণাম করে আমার দিকে ফিরে
বললেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। যেবার বাবা ফোন করল আসবে বলে। সেবার তার জামাই বড় করে
খরচা করে এটা সেটা কিনে আনল। আমিও বাবার জন্য এটা ওটা বানিয়ে রাখলাম কিন্তু শুনলাম
আমার বাবা ট্রেনে কাটা পড়ে মরে গেছেন। সাথের ব্যাগ টাও নেই! অনেক
খোঁজ নিলাম আর পাওয়া গেল না। আশা ছেড়ে দিলাম। মাঝে আমার ছেলের বাইপাস সার্জারি হলো
তাতে টাকা গেল। আমরা ধারদেনা করে চলতে চলতে বিপদে পড়লাম। বাবা শুনে বললেন তার কাছে
কিছু টাকা আর সোনার গোপাল টা নিয়ে আসছেন। তারপর... (যুবতী
কেঁদে উঠলেন)
আমাদের কথার মাঝে এক ভদ্রলোক এলেন। কে?
যুবতী আমার পরিচয় দিল। ভদ্রলোক এসে হাতজোড় করে আমাকে
বললেন,
'আমি জীবন বিশ্বাস, আমার স্ত্রী হিমিকা
চক্রবর্তী বিশ্বাস আজ থেকে আপনার কাছে ঋণী হয়ে রইলাম।
আমি উপকার করেছি কিনা জানি না। আমার চোখে অশ্রু আর বাধা
মানল না।
আমার পেছন থেকে দু'হাতে জড়িয়ে ধরল ছেলেটি। জীবন বাবু
বললেন, 'আমার ছেলে প্রীয়ন্ত'
প্রীয়ন্ত, বলল দাদু।
আমি হেসে ওকে কোলে তুলে নিলাম।
(সমাপ্ত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন