মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০১৭

গল্পঃ ছয়





(এক)
তাড়াহুড়ো করে আসবার সময় সি এন জি তে ফাইল টা ফেলে এসেছি। তাতে এক্সাম দেবার ইরেজার, পেন্সিল, কলম সব ই ছিল।
দ্রুত পায়ে যখন আমি ঠিক এক্সাম হলের সামনে ঠিক তখনি সামনের সারিতে বসে থাকা  পরীক্ষার্থীর কাছে স্বচ্ছ ফাইল টা দেখে নিরাশা দানা বাঁধল খুব সহজে।
আপনি পরীক্ষার্থী?
(ডিউটিতে আসা ম্যাডাম বেশ ভারী গলায় আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন)
নিচু গলায় কিন্তু স্পষ্টত পরিষ্কার করে উত্তর দিলাম,
জ্বী!
আসুন বলে আমার দিকে টেবিল থেকে খাতাটা তুলে এক পা এগিয়ে আসলেন তিনি।
নাহ! আমার একটা পেন্সিল কিনতে হবে।
ভদ্রমহিলা, তার হাতের ঘড়ি দেখলেন এক পলক। এরপর বললেন, "তাড়াতাড়ি নিয়ে আসুন, সময় কম "।
আমি আবার ছুটলাম সিঁড়ি ধরে নীচতলায়।
ছুটে এসেই দোকানে একটা পেন্সিল, ইরেজার, কলম তিনটে জিনিস চাইলাম।
দোকানী ব্যাপক ব্যস্ত!
স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে দিব্যি কাস্টমারের সাথে কথা বলতে বলতে চা বানিয়ে চলেছে। আমার কথায় পাত্তা দেয়ার সময় নেই!
আমি আবারো বললাম, ভাই! একটু তাড়াতাড়ি করেন না!
প্রতিত্তরে বলল, " আমি মেশিন নাকি? খারান এট্টু, চা পাত্তি ঢাইলা লই। হোনেন, রবার নাই। পেন্সিল, কলম বাইন্ডিং খাতা, নিউজপ্রিন্ট কাগজ, সাদা কাগজ এডি আছে।  এহন দিমু কোনডা?"
একটা সিগারেট দেন।
বেনসন লাইট?
না, মালব্রো।
ওইডা নাই, নেভি খান?
নাহ।
আপনি পেন্সিল আর কলম দেন, আরেকটা বেনসন দেন।
একশ টাকার নোট টা দিয়ে পড়লাম আরেক বিপত্তিতে। ভাংতি নাই! এই শহরে বড় নোটের ভাংতি কারো কাছে থাকে না। থাকলেও না দেয়া সবার একটা বদভ্যাস।
টাকা ভাংতি না নিয়ে ই একশ টাকা দোকানীর হাতে তুলে দিয়ে চোখজোড়া  ঘড়িতে ফেললাম, গেছি! এক্সাম শুরু হতে আর দুই মিনিট।
সিগারেট এ বড় করে তিনটে টান দিলাম। এরপর আধা খাওয়া সিগারেট ছুড়ে আমি ছুটলাম এক্সাম হলের দিকে।
রুমে ঢুকতে না ঢুকতে ঘন্টা বেজে উঠল।
মানে, এক্সাম শুরু।
আমার চাকরীর এক্সাম। একটা বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেইনী পদে নিয়োগ। আজকাল চাকরীর বাজার বেজায় চড়া।
কাকা, মামাদের জোর এখনো ৯০% চাকরীর বাজার দখল করে আছে। এটা অবশ্য আমার প্রথম নিয়োগী পরীক্ষা নয়। আগে পরে এটা সহ আট টি দিলাম।
হলে গার্ড দিতে আসা ম্যাডাম আমাকে পরীক্ষার খাতা দিয়ে দিতে এলেন, বললেন, " এক্সামে দেরী করতে হয় না! "
সরি ম্যাডাম!
উনি মাথা একটু দুলিয়ে ডিউটি দিতে শুরু করলেন।
(দুই)
এখনো এক্সাম হলে ই আছি। হঠাৎ ইরেজারের খুব প্রয়োজন পড়ল। সাবধানে ই লিখছিলাম যাতে ইরেজার টা না লাগে কিন্তু ওই যে ভুল লিখে ফেলেছি। এখন ইরেজার লাগবেই।  আমার পাশে, সামনে সবাই পরীক্ষার্থিনী।
পাশে একজন চশমাপরা পরিক্ষার্থিনী।
এহেম, এক্সকিউজ মি!
আপনার ইরেজার টা একটু দেবেন প্লিজ?
মেয়েটি ভ্রু নাচিয়ে আমার দিকে এমনভাবে তাকাল যেন তার কাছে আমি অনেক দামী কিছু চেয়েছি।
সরি বলে আবার হাতের আঙুল ঘষে পুনরায় যখন লিখতে যাচ্ছি। উনি ই এবার হাত বাড়িয়ে ইরেজার দিয়ে বললেন, " এক্সাম দিতে এসেছেন, কি কি লাগে জানেন না! "
জানি তো! কিন্তু ইরেজার যে ফাইলে ছিল সেটা সি এন জি তে ফেলে চলে এসেছি।
উনি হতাশা মিশ্রিত ব্যাঙ্গ করে আমার লেখায় মনোযোগী হলেন।
আমিও আমার খাতায় মনোযোগ দিলাম।
এক্সাম শেষ হলো। সবাই সবার মত বেড়িয়ে এলাম। তবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে সে মেয়েটির সাথে কথা বলতে গেলাম।
মেয়েটি আমার আগেই চলে গেছে একটা সি এন জি ধরে। খানিক দৌড়েও ধরা গেল না তাকে।
(তিন)
সেদিনের চাকরীর রেজাল্ট বেড়িয়েছে আজ।
অনলাইনে দেখলাম। নাহ, আমার এবারো হয়নি।
বড়ভাই আছেন সেনাবাহিনী তে। ফোন করেই এক হাজার জ্ঞান দিলেন। আসলে, বড় ভাই থাকার ঝামেলা আছে।
বেকার জীবন, ছাত্র জীবন দুটো জীবনে একটা বড় মিল যেমন আছে তেমনি দুটো জীবনে আছে হতাশা। তবে বেকার জীবনে হতাশা হয়ত পরিমানে বেশী। যদি পরিমাপের মাপকাঠিতে মাপা যেত আমার ধারণা তেমন টা হতো।
ফোনে রিচার্জ, একটা এনভেলাপ আর কিছু খুঁটিনাটি কিনতে বেড়িয়ে গেলাম মেস থেকে।
বিকেল চারটা।
এসময় মেসের স্যাতঁস্যাতে দেয়াল টা কে কবুতরের খোপের মত লাগে। একদিকে খোলা, জানালা, বাতাস কিচ্ছু নেই!
গলির মোড়ে বসে এক কাপ চায়ের অর্ডার দিলাম, সেইসাথে একটা মালব্রো।
পছন্দের জিনিস সবার আগে।
এই যেমন মালব্রো সিগারেট!  ভেবে রেখেছি চাকরী পেলে নিজে একটা ফ্ল্যাট কিনবো। সে ফ্ল্যাটের একটা রুম জুড়ে ভরা থাকবে মালব্রো সিগারেট।
কাকা চা নেন!
চা দেয়া ছেলেটির বয়েস পনেরোষোলো। এর বেশী মোটেই না। আমি এখানে প্রায়শই চা খাই।
টি ব্যাগ নাড়িয়ে আদা চায়ে চুমুক দিলাম। চা গলা দিয়ে গলে গেল একদম পাকস্থলীতে।
দোকানী আমার মুখ চেনে। তাই ক'চামচ চিনি খাই সেটা বারবার বলা লাগে না।
(চার)
 এনভেলাপ কিনছি।
হঠাৎ চোখ পড়ল আমার সামনে দাঁড়ানো এক মেয়ের দিকে। অল্প চুলে কতটা সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে এই মেয়েটিকে না দেখলে বিশ্বাস ই হতো না। যদি ইউনিভার্সিটি লাইফে আমার বান্ধবীগণ সাজুগুজু তে যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখিয়েছে।
মেয়েটি সম্ভবত একটা খবরের কাগজ দেখছিল। হঠাৎ পেছনে ঘুরতেই দেখলাম,
আরে ইনি তো সেই!
সেদিন চাকরীর পরীক্ষায় ইরেজার দিয়ে হেল্প করা মেয়েটি।
ইতস্তত না করে এগিয়ে গেলাম, হ্যালো! কেমন আছেন? আমাকে চিনেছেন?
মেয়েটি আমতা আমতা করে বলল, আপনি?
আমি ঐ যে সেদিন এক্সাম হলে ইরেজার!  ভুলে গেছেন?
মেয়েটি হালকা করে হাসি দিল।
আচ্ছা.. আচ্ছা.. হ্যাঁ, এবার মনে পড়েছে। কেমন আছেন?
এই তো বেকার লাইফ, সেভাবে ই আছে ঠিক দিন সাতেক আগেও যেমন ছিল সেরকম!
সে কি! আপনার চাকরী টা হয় নি?
নাহ! আপনার?
হ্যাঁ হয়েছে। আপাতত ঢাকায় পোস্টিং, পরে বলেছে ঢাকার বাইরেও যেতে হতে পারে।
নিজে থেকে বললাম, আপত্তি না থাকলে এক কাপ চা অন্তত খেতে পারি কি!
মেয়েটি হাসি দিল।
আচ্ছা।
আমরা বসলাম মাঝারি ধরনের এক রেস্টুরেন্ট এ।
মেয়েটি বলল, " সরি, আপনার নামটা জানা হলো না!"
মামা কি খাইবেন? লুচি আছে, মোগলাই আছে, নান আছে! কোনটা দিমু?
( রেস্টুরেন্ট বয় বসতে না বসতে তাগাদা দিল)
আমি দুটো মোগলাই আর চায়ের অর্ডার দিলাম।
আমাদের কথায় ফিরলাম এবার। বললাম, আমি তুষার আহম্মদ। একটা বেসরকারি ইউনিভারসিটি থেকে বিবিএ করেছি। এম বি এ করার প্ল্যান আছে তবে সেটা জব পাবার পর।
আপনি?
আমি আদৃতা হোসেন।  ঢাবি থেকে অনার্স করেছি।
ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট বলতে হচ্ছে।
আমাকে থামিয়ে আদৃতা বলল, আরে না না! কি যে বলেন!  এটা বাড়াবাড়ি বলছেন।
( রেস্টুরেন্ট বয় মোগলাই আর চা টেবিলে রেখে গেল)
বললাম, " নিন, খেতে খেতে কথা হোক"।
সেদিন আপনার ইরেজার টার না পেলে বড্ড বিপদে পড়তাম।
তাই নাকি?
হ্যাঁ..
আরে আপনার চাকরী টা যদি আমার ইরেজারের দোয়ায় হতো তাহলে তো নিজেকে ধন্য মনে করতাম।
একচোট হাসাহাসি হয়ে গেল দুজনের।
চা পর্ব শেষ করে দুজনে ই বের হলাম রেস্টুরেন্ট থেকে। মেয়েটি বিল দিতে চাইছিল আমি জোর করে দিতে দেইনি।
বিদায় নেবার আগে বললাম, " যদি কিছু মনে না করেন আপনার ফোন নম্বর টা পেতে পারি? আমার কন্টাক্ট লিস্ট একদম ফাঁকা! ফোন দেবার মত বন্ধু নেই "
মেয়েটি একটু ভেবে ওর নম্বর টা দিল।
আমি বাংলায় নম্বরটা কন্টাক্ট লিস্টে তুললাম " আদৃতা " নামে।
(পাঁচ)
এরপর মাস ছয়েক কেটে গেছে। তুষার শীতে হারিয়েছে আর আদৃতা আমার কন্টাক্ট লিস্টে পড়ে আছে।
নিজেও অনেক ব্যাস্ত।
বড় ভাই কানপড়া দিয়েই যাচ্ছে, সেনাবাহিনী তে আয়। পরীক্ষা দে, তোর হবে। দেশের জন্য কাজ করবি।
ওদিকে আমার মা!
ফোন করেই বলে, তোর বড় ভাইয়ের কথা শুনিস না ক্যান? তাই এত্ত চাপাচাপি তে সেনাবাহিনী তে পরীক্ষা দিয়েছি।
আজকে তার ফলাফল দেবে।
মেসে এক বালতি কাপড় ভিজিয়েছি সকালে। সেসব ধুয়ে-টুয়ে ঝটপট বেড়িয়ে গেলাম পত্রিকার দোকানে পত্রিকায় ফলাফল দেখতে।
হেঁটে কতটা গেছি, আন্দাজে অর্ধেক পথ।
ফোন পেলাম বড় ভাইয়ের।
ফোনের ওপাশে, " খুশীতে আমার ভাই!  তোর তো চাকরী হয়ে গেছে। সামনে মেডিকেল, তুই জলদি আয় "
সেনাবাহিনীর পরিশ্রমী জীবন আমার কাছে ভালো লাগে না। তবে ভাইয়ের খুশী আমার চোখের কোণা কাঁপিয়ে দিল।
আচ্ছা ভাইজান।  মা কে ফোনে জানাইছেন?
ভাইজানের গলা ধরে আসছে, হ্যাঁ বলে একটু থেমে বললেন। হুম, আম্মাকে জানাইছি তোকে ফোন করার আগে।
আচ্ছা ভাইজান। আমি আবার পরে ফোন দিবো।
পত্রিকা আর কেনা হলো না। রেজাল্ট পেয়ে গেছি, কথা হলো মায়ের সাথে। আমার মা সাত রাজ্যের খুশী গলায় ধরে আছেন।
মেসে ফিরে এই খুশীর খবর আর কাকে জানাবো জানাবো করে হঠাৎ কন্টাক্ট লিস্ট ঘাটতে গিয়ে অনেকে বন্ধু-বান্ধবীর নামের পাশে আদৃতার নাম টা চোখে পড়ল।
নম্বর নেয়ার পর আর ফোন দেয়া হয় নি মেয়েটিকে।
সাহস করে আজ ডায়াল করলাম।
ডায়াল রিং বার দুয়েক বাজার পর মেয়েটি ফোন ধরল,
-হ্যালো কে?
-আমি তুষার, চিনতে পেরেছেন? ঐ যে ইরেজার!
-হ্যাঁ, চিনেছি। আপনি আজ ফোন দিলেন? সেই কবে না নম্বর নিয়েছিলেন!
-না মানে, সময় করে উঠা হয় নি। আপনি কেমন আছেন?
-হা, দিব্যি ভালো আছি। আপনি?
-আজ খুব ভালো আছি..
-আজ? কেন বলুন তো?
-সেনাবাহিনী তে আমার চাকরী হয়েছে, আজ ই খবর পেয়েছি!
-ওয়াও! কংগ্রাচুলেশনস! তাহলে তো ট্রিট পাওনা।
বললাম, আজ ফ্রি আছেন? বিকেলে?
আদৃতা রাজী হলো।
আমাদের দেখা হলো বিকেলবেলা। টি এস সি তে বকুল তলায়। আদৃতা আজ শাড়ি পরে এসেছে। শাড়িপরিহিতা মেয়েরা একটু বেশী ভালোলাগা কাজ করায় মনে।
বুঝতে পারছি, স্বল্পভাষী মেয়েটি আমার মস্তিষ্কের নিউরনে ঠাঁই নিয়ে ফেলেছে। নিজের সাম্রাজ্য তে এখন সে আমার সর্বেসর্বা।
আমরা রিক্সা করে ঘুরলাম বিকেল টা। তারপর, চাইনিজ।
আদৃতা আমাকে হয়ত পছন্দ করে। মেয়েরা খুব সহজে মনের কথা বোঝায় না। কিন্তু আদৃতা কে আমার তেমন মনে হলো না। ও প্রচন্ড স্পষ্টভাষী।
(ছয়)
ইদানীং আমাদের ফোন কল বেড়ে গেছে। আগে যেখানে একটা কল বাজত ফোনে সেও সপ্তাহে। এখন সেটা দিনে পাঁচ ছ'বারের বেশী পার করে যায়। তবে আমরা কিন্তু ফরমাল কথা ই বলি। যদিও বাইরে থেকে যে কেউ ভুলে ভাববে আমরা প্রেম করি।
মোটেই তা নয়। কিন্তু আমার থেকে মেয়েটির প্রতি ভালোলাগা জমে গেছে।
এখনো আদৃতা কে চেনা হয়ে উঠে নি তবুও কিছু কিছু মানুষ আমাদের জীবনে একজন চলে আসে একটা সময়ে, যে অচেনার মাঝে ও অনেক চেনা।
তবুও সংশয় রাখবো না ভেবে আজ সকালে প্রতিজ্ঞা করেছি। আদৃতা কে বলেছি পরশু আমার ট্রেনিং আমি এক দু'মাসে একেবারে কথা বলতে পারবো না।কারো সাথে। ফোন বন্ধ থাকবে। যাবার আগে কিছু কথা বলার আছে তোমাকে।
আদৃতা আজ আসছে।
আমরা অনেকক্ষণ বসে আছি, এমনিতে আমাদের দেখা হলে কেউ এতটা সময় চুপ করে থাকি না।
আদৃতা এবার নিজে থেকেই বলল, " কি ব্যাপার! তুমি না কি বলবে? "
-হ্যাঁ, ইয়ে মানে। একটা কথা!
-কি কথা বলো?
-আদৃতা?
-হ্যাঁ, কি?
-আমার তোমাকে অনেক ভালো, মানে ভালোলাগে।
-মানে?
-মানে তোমাকে আমার প্রচন্ড ভালোলাগে। আমি অনেকবার বলতে চেয়েছি জানো বলতে পারি নি!
-কেন?
-সাহস, ঐ সাহস হয় না।
- জানো, আমারো একজন কে অনেক ভালোলাগে!
(আমি মনে মনে খুশী হয়ে উঠেছি) বললাম, কাকে?
-আমার অফিসের বস। উনাকে আমার খুব ভালোলাগে। আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। মা-বাবা ভাবছেন এ নিয়ে।
আমি চুপ করে গেলাম।
মন আমার দমে গেছে, নিজেকে মানাতে পারছি না। ছেলে মানুষ কান্না চেপে ফেলেছি।
আদৃতাকে তাড়া দিলাম,
-আমার আজ তাড়া আছে আদৃতা, চল উঠি। কেনাকাটা আছে, ট্রেনিং এ যাচ্ছি প্রস্তুতি নেয়া বাকী।
-আরে কেন? আরেকটু বসি আমরা! পরশু তো চলে যাচ্ছো। আবার সে ই কবে দেখা হবে। আর শোন তোমাকে এগিয়ে দিতে কিন্তু আসবো আমি, ঠিকাছে?
মেয়েরা নিষ্ঠুর, আদৃতা আমাকে আজ সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখালো। মেয়েটিকে বললাম আমার ভালোলাগার কথা আর সে এত স্বাভাবিক!
সামান্য সমবেদনা টুকু দেখালো না।
আমি উঠে দাঁড়ালাম, বললাম, " আমি চলি "
আরে কোথায় যাচ্ছো আমাকে রেখে? আরে দাঁড়াও!
 ঘড়িতে বিকেল চারটা, সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়া একজন কমলাপুর রেলস্টেশনে একাকী এক বেঞ্চে বসে আছে। তার মাথার চুলে আর্মি ছাঁট, উচ্চতা পাঁচ ফুট দশ। সে হচ্ছি আমি, মানে তুষার। আদৃতা ফোন করবে জানতাম তাই ফোন আসবার আগেই সুইচ অফ করে রেখেছি।
আমার খারাপ লাগা টা কমানো চাই। ট্রেন আসবে ঠিক পাঁচটায়।
এখন চারটে কুঁড়ি।
সময় কে এখন খুব ধীর মনে হচ্ছে। কাজের সময়, জরুরী মুহুর্তে ওর চাপ বেড়ে যায়। এখন নড়ার কোন লক্ষণ ই নেই!
আদৃতা আসবে না, কারণ আদৃতা জানে না আমি কোন পথে যাচ্ছি চট্টগ্রাম। ওকে, ইচ্ছে করে কিছু বলিনি।
ঘড়িতে যখন চারটে চল্লিশ, ঠিক তখন প্লাটফর্ম এ একজন মেয়েকে দেখা গেল। তার হাতে একটা গোলাপ। পায়ের গতি ধীর, লক্ষ্য স্টেশনে বসে থাকা সদ্য আর্মিতে ট্রেনিং এ যাওয়া যুবকের দিকে।
মেয়েটি নিঃশব্দে বেঞ্চের ফাঁকা পাশটায় বসে গেল।
ফোন অফ কেন?
চার্জ ছিল না। তাই আর খেয়াল করি নি।
আদৃতা হাত বাড়িয়ে গোলাপ টা দিল তুষার কে, এই নাও।
বাহ! গোলাপ, থ্যাংকইউ। (মুখ না ঘুরিয়ে ই জবাব)
আজকে একটা কথা বলবো ভাবছিলাম..(আদৃতা বলল)
কি কথা?
আমি একজন কে ভালোবাসি।
কাকে? তোমার বস?
নাহ! বুদ্ধু তোমাকে?
তাহলে, বস?
বসকে ভালোলাগে, কিন্তু ভালোবাসি সেটা তো বলিনি।
আমি তো ভালোবাসি তোমাকে!
কই! সেদিন না বললে " ভালোলাগে "! ভালোবাসো কই? যে ভরসা করে বলবো ভালোবাসি!
তুষারের ট্রেন এসে পড়েছে, হুইসেল বাজছে প্লাটফর্মে।
তুষারের চোখের কোণা ভিজে এসেছে।
আদৃতা হেসে বলল, ব্যাগে ইরেজার আছে চোখ মুছবে?
তুষার,  বলল ভালোবাসাযুক্ত ইরেজার টা কাছে রেখো, ভালোবাসি তোমাকে।

(সমাপ্ত)

শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭

গল্পঃ মুক্তি




(এক)
 ঘটনাটা যেদিন ঘটে গেল সেদিন আমি মেসে ফিরতে দেরী করেছিলাম। ইচ্ছে করে দেরী করিনি, ছিলাম প্রগতি স্বরণী তে। জ্যামে পিষ্ট হচ্ছিলাম!
মুঠোফোনের ভয়াবহ ভাইব্রেশন একদিকে, অন্যদিকে গরমে, জ্যামে, ভীরে ঘামের গন্ধে আমার প্রাণ উষ্ঠাগত!
ফোন ধরার কিঞ্চিৎ সময় আর সুযোগ কোনটিই ছিল না।
মেসে রিক্সার পথে ফোনে বাকীটা শুনে থ' বনে গেলাম।
এবার শুরু করি আসল ঘটনা,
আমাদের মেস বেশ ছিমছাম, থাকি তিনজন। আমি, শান্তনু দা' আর প্রবাল ভাই। প্রবাল ভাই বিয়ে করেছেন। আমরা আনম্যারিড। আমি ভার্সিটি শেষ করে সবে একটা আই টি ফার্মে ইন্টার্ন। কুত্তার মত পরিশ্রম করায়, তাই মেসে ফিরে যা এনার্জি অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে ই ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে ঘুমে টলিয়ে যাই। আমাদের মেসের রুমটা আয়তন বেশ কম। তিনজনে প্রায় ঠাসাঠাসি!
আসবাবপত্র খুব কম, যা আছে একটা কাপড়চোপড় ঝোলানোর আলনা, তিনটে পাতলা সাইজের চৌকি আর আমার একটা টেবিল। এর মাঝে স্পেশাল সম্পত্তি বলতে এই মেসে এসে তিনজনের একটা সরকারি সম্পত্তি ভাঙা আয়না।
আয়নাতে অসংখ্য স্ক্রাচ আছে, সাইজে একজন মানুষের অর্ধেক। আমার চৌকির ঠিক মাথায় দেয়ালে ঝোলানো আছে ওটা।
সকালে বের হবার আগে একবারের জন্য নিজেদের চুল আঁচড়ানো, দাঁত ব্রাশ এবং ঝটপট সেইভ। ভালোই চলে।
কিন্তু বিপত্তি ঘটল, প্রথম দিন।
শান্তনু দা' যেদিন রাতে একা মেসে ছিলেন। আমি গেছিলাম আমার ভার্সিটির এক বন্ধুর বাসায় এসাইনমেন্টের কাজে। রাতে ফিরবো না বলে গেছি, এদিকে প্রবাল ভাই গেছেন নিজের গ্রামের বাড়ি পরিবারের সাথে দেখা করতে।
তাই শান্তনু দা' ছিলেন, মেসে একদম একা।
রাতে খাওয়া বাইরে মাটন দিয়ে খেয়ে এসে দিব্যি ঘুমোবার প্লান করে, বিছানা ঝেড়ে ঠিক শোবেন। হঠাৎ দাঁতের কোণে এক টুকরো মাটন মুখে খচখচানি তুলল। তাই মোবাইলে ফ্ল্যাশ জ্বেলে টুথপিক নিয়ে আয়নার সামনে যেতে দেখলেন। আয়নার ওপাশে কেউ একজন মাথা নিচু করে বসে।
আঁতকে উঠে পেছনে ফ্ল্যাশের আলো ফেললেন শান্তনু দা'। কে? (কাঁপা গলায়)
মেসের রুম এমনিতে অনেক ছোট, তাই তৃতীয় কেউ রুমে এলে তিনি রুমে ঢুকেই সেটা বুঝতেন।
তাড়াতাড়ি ফিরতি আলো ফেলে আয়নায় দেখলেন সেখানে কেউ নেই!
নিজেকে নিজেই বোঝালেন, ইদানীং আজগুবি গল্প আর মুভি দেখার ফলাফল এটা।
যত্ন করে টুথপিকের কাজ সেরে এবার শুয়ে গেলেন।
ঘুম এলো কি আসে নি, কাঁচ ভাঙার এক আচমকা শব্দে এবার ধড়ফড় করে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলেন তিনি। মোবাইল জ্বালিয়ে আলো প্রথমে ফেললেন জানালায়, পরে আয়নায়।
আরে! কিছুই তো ভাঙে নি! তাহলে শব্দ এই কোথা থেকে? গোটা রাত আলো না জ্বালিয়ে ঘুম এলো না তার।
(দুই)
 পরদিন আমরা দুজন ই মেসে ফিরলাম। শান্তনু দা' এমন সুপারন্যাচারাল গল্প বলতে প্রবাল ভাই যে ভাবগম্ভীর ভাব নিলেন তাতে ঠিক আমার মুখে আসে হাসিটা চাপতে বেশ বেগ দিতে হচ্ছিল।
তারপর তার মুখের হাসির শব্দ শুনে আমার হাসি একেবারে সুনামি তুলে দিল।
শান্তনু দা' লজ্জায় আর কথা না বলে সরাসরি চুপ করে গেলেন।
আমরাও ব্যাপারটা ভুলে গেলাম।
এইসব ছাইপাশ!  মুখরোচক গল্প বই, মুভি কিংবা গল্পে শুনতে মানায়। নয়ত আমাদের অবসর কাটঁতো কি করে!
শান্তনু দা' এসব ব্যাপারে যে সিরিয়াস। তা বুঝলাম ঠিক তার পরের দিন। যখন নিজের জন্য আলাদা করে একটা হাতল দেয়া আয়না কিনে মেসে আনলেন।
প্রবাল ভাই আর আমি চোখাচোখি করলাম।
প্রবাল ভাই নিঃশব্দে খানিক হেসে আমার দিকে ফিরে নিজের মাথার উপর এক চক্কর আঙুল ঘুড়িয়ে বোঝালেন শান্তনু দা' পাগলামি করছেন।
আমি ও একটু হেসে থেমে গেলাম।
এরপর আরো মাস দুই কেটে গেছে আমরা তিনজনে পুরোনো কোন কিছু আর মনে রাখিনি। প্রবাল ভাই প্রমোশন পেয়ে অফিসার। আমি ইন্টার্ন আর শান্তনু দা'র বিয়ের কথা এই ছিল সে সপ্তাহে আমাদের আপডেট।
আমার হাতে নতুন টাকা, খরচের হাত। মেসে যা ইচ্ছে খাবার নিয়ে আসি। তিনজনে ভাগ করে খাই। আমাদের ভ্রাতৃত্ব!
আমাদের তিন মা হলেও, আমরা এক।
যাই হোক, এবার আবারো আমাদের দুজনের অনুপস্থিতিতে সেদিন ঘটলো ঝামেলা। আমি রাতে গেছিলাম আমার অফিসে নাইট ছিল বলে। প্রবাল ভাই, নিজের বাড়ি।
শান্তনু দা' রাতে ঘুমিয়েছেন, হঠাৎ কাঁচ ভাঙার শব্দ পেলেন। চোখ কোনমতে ডলে উঠে বসে আলো জ্বালিয়ে দেখলেন তার কেনা আয়নাটা ভেঙে চুরমার!
রুমে কি কেউ? মানে চোর? তিন তিনিটা চৌকির তলা চেক করলেন তিনি। নাহ! কেউ তো নেই!
তবে আয়না ভাঙল কে!
আর আয়না ছিল টেবিলে শোয়ানো, দেয়ালে ঝোলা থাকলেও তো বুঝতাম সেটা পড়ে ভেঙেছে।
তাহলে!
ঘুম আর এলো না শান্তনু দা'র, ঘড়িতে দেখলেন রাত দুটো কুড়ি। ঘুমে চোখ ভাঙছে।
 (তিন)
 ফোন পেয়ে আমি রীতিমত রিক্সাওয়ালাকে বলেছি দ্রুত চালাও। শান্তনু দা মারাত্মকভাবে ইঞ্জুরিতে পড়েছেন। নিজেই নিজের হাত আয়না দিয়ে কেটে ফালাফালা করেছেন।
রুমে কেউ ছিল না। প্রবাল ভাই রুমে ফিরে ই এইসব দেখে নিজেও ভয়াবহতা দেখে ঘাবড়ে গেছেন।
আমাকে ফোন করে যাচ্ছিলেন অনবরত। অ্যাম্বুলেন্স এ ফোন করে শান্তনু দা' কে নিয়ে আছেন এখন হসপিটালে।
দ্রুত ব্লাড জোগাড় করতে হবে। ব্লিডিং থামেনি। জ্ঞান ও ফেরেনি।
আমি পা চালিয়ে ইনকোয়ারি থেকে জানলাম, ইমারজেন্সি থেক এখন ওটি তে আছেন শান্তনু দা'। অপারেশন চলছে তার।
প্রবাল ভাইকে পেলাম। কোণায় দেয়ালে কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে।
ডাক দিলাম, "প্রবাল ভাই!"
আমাকে দেখে কাঁদোকাঁদো চেহারায় ছুটে এলেন তিনি। বোবা শব্দে হাতের ইশারায় কি একটা বলে কেঁদে দিলেন এবার।
ব্লাড জোগাড় হয়েছে?
মাথা নাড়লেন ' হ্যাঁ '।
আর কথা হলো না। ২৪ ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরল দাদার। পরিবার থেকে তার ভাই-বোনেরা এসেছেন। তার মা খুবই বৃদ্ধা। নিজেই চলতে পারেন কম। তাই তাকে জানানো হয়নি ব্যাপারটা।
ছোট ভাই অতনু মাস্টার্স করছে একটা পাব্লিক ভার্সিটি থেকে। আমাদের দু চারটা ব্যাপারে কথা হলো। আমার দু বছরের ছোট সে।
উৎসাহ নিয়ে যা জানলাম। তাতে আমি নিজে অবাক না হয়ে পারলাম না।
শান্তনু দা' ভার্সিটি পড়বার সময় তার ডিপার্টমেন্ট এক জুনিয়রের প্রেমে পড়েন। মেয়েটিও তাকে পছন্দ করতো।
এক দুই করে দুজনে দেখা করেন। মন দেয়া নেয়া। ভালোই চলছিল।
কিন্তু সমস্যা দাঁড়াল একদিন।
মেয়েটা নাকি রাত জেগে থাকতো আর অদ্ভুত অদ্ভুত আচরণ করতো। তার এসব আচরণে রুমমেট ডীনের কাছে রুম চেঞ্জের আবেদন করে।
পরে মেয়েটিকে একা একটা রুমে দেয়া দেয়। একা একা থাকত, রুমে নিজের গান শুনত। বিশেষ করে একটা গান ফুল ভলিউমে জোরে পরপর বাজাতো। রবীন্দ্রসংগীত টা ঠিক এই গানটা
" এসো আমার ঘরে এসো, আমার ঘরে... "
আর বুঝতেই পারছেন!
এক গান প্রতিদিন বাজায় অবশ্য কেউ বিরক্ত, কেউ পছন্দ একাধারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। মেয়েটি পাগলাটে!  তাই জোর করে যেচে কথা বলতো না। রাতে এই গান বাজা প্রায় নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেল বলতে গেলে। কিন্তু
একদিন রাতে একই রবীন্দ্রসংগীত বাজতে লাগল। সকাল, দুপুর, গড়িয়ে বিকেল অবশেষে রাত। আগে যেটা সকাল হলে থেমে যেত।
হলের এক সিনিয়রের এক্সাম ছিল পরেরদিন। তাই কেউ কিছু না বললেও বিরক্ত হয়ে তিনি গেলেন মেয়েটির রুমে নক করতে।
বার কয়েক নক করার পর যখন মেয়েটি খুলল না, তখন তিনি গেলেন প্রক্টর বরাবর নালিশ জানাতে।
তারা এসেও নাম ধরে মেয়েটিকে ডাকল। অথচ সাড়া নেই!
প্রক্টর দরজা ভাঙার আদেশ দিতে ই দরজা ভাঙা হলো।
রুমে ঢুকেই বীভৎস চিত্র। মেয়েটি দেয়ালে ঝোলানো একটা আয়না মাটিতে নামিয়ে মেঝের সাথে কাত করে রেখেছে। হয়ত সেখানেই বসে ছিল, এলিয়ে এলোচুলে কাত হয়ে পড়ে আছে। মেঝে রক্তাক্ত!
দৌড়ে একজন ছুটে গেলেন। না মেয়েটির শরীর শক্ত হয়ে নীল হয়ে গেছে, বা'হাতের কবজি কাটা। রক্ত জমাট বেঁধে কালো হয়ে গেছে।
দু-একজন মেয়ে দেখেই সেখানে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যায়।
পরে পুলিশ আসে, ইনভেস্টিগেশন হয়। মেয়ে ছিল পরিবারে একমাত্র আবার চার ভাইয়ের ছোট বোন। তারা নিজে থেকেও এটাকে আত্মহত্যা বলে মেনে নেন।
কেইস ক্লোজ করা হয়।
রুদ্ধশ্বাস ব্যাপার!
অতনু জিজ্ঞেস করল, " কিছু বললেন?"
-না না। মেয়েটির একটা ছবি পাওয়া যাবে? (অতনুর কাছে জানতে চাইলাম)
-না ভাই!
আমার জানামতে মেয়েটির ফ্যামিলি একজন আর তাদের পৈত্রিক নিবাসে থাকেন না। তবে তার বন্ধুরা বলতো সে নাকি প্রেতাত্মা নিয়ে চর্চা করতো!
- ও আচ্ছা। (প্রেতাত্মা, শব্দটা ভার্সিটি পড়া তরুণের মুখে শুনে আমার ভালো লাগলো না, তাই নিজে আর কথা বাড়ালাম না)
আমি মেসে ফিরলাম একা। মেস বদলাবো কাল। আজ খুব ক্লান্ত। গিয়ে ঘুমাতে হবে।
প্রবাল ভাই নিজের বাড়ি গেলেন। আমাকে বলে গেলেন সাবধানে থাকতে।
(চার)
মেসে এসে রক্তের ছোপ এক মেথর ডেকে পরিস্কার করালাম। দুদিনের নাইটে শেইভ করা হয় নি। গালে নলখাগড়া চাড়া দিয়েছে।
ড্রয়ার খুলে ব্লেড খুঁজে সেটা রেজারে সেট করে ফোম টা খুজঁছিলাম।
হঠাৎ কাঁচ ভাঙার শব্দে ঘুরে তাকাতেই হলো। দেখলাম, দেয়ালের আয়টানা একা একা পড়ে ভেঙে গেল।
অদ্ভুত ব্যাপার তো!
সাবধানে পা ফেলে টুকরো আয়নায় নিজের মুখ দেখতে গিয়ে ভয়ে আমার হৃদকম্পন শুরু হলো, বুকের ভেতর কে যেন হাতুড়ি দিয়ে দড়াম দড়াম শব্দে পেটাচ্ছে।
একটা মেয়ে, ঠিক মহিলার মত। চেহারা বোঝা যাচ্ছে না। ভাঙা টুকরোর প্রতি প্রতি কোণায় সে মেয়েটি।
এলোচুলে মুখের সামনে ঢাকা।
আমি ভয়ে পালাবো না দাঁড়াবো বুঝতে পারছি না। কোন শব্দ নেই মেসের এই রুমে হঠাৎ মেয়েটি একটা হাত তুলে চুল সরিয়ে তার মুখের বীভৎস আধেক দেখিয়ে বলল, " আমাকে দেখতে চাইছিলি তো? এই দেখ!"  বলে অট্টহাসি দিয়ে আয়নার মধ্যে অন্যদিকে দৌড়ে কই যেন চলে গেল। যেন সেখানে অনেক গলি, যেমনটা ভার্সিটি পিকনিক করতে লখনৌতে গিয়ে ঠিক ভুলভুলাইয়াতে দেখেছিলাম।
এখানে বলা রাখা ভাল, এটাই সেই আয়না। শান্তনু দা' শক পেয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা মেয়েটির সে আয়না টা এখানে এনেছিলেন। তিনি নিজেও তার প্রেমিকার মৃত্যুতে ভেঙে যান।
যদিও মেয়েটি শান্তনু দা' কে প্রায়শই বলল, "আমি খুব খারাপ নেশায় জড়িয়ে গেছি"
কি নেশা?  -জিজ্ঞেস করলে বলতো না।
আসলে সে কালো জাদু তে জড়িয়ে গেছিল, যাকে বলে " ব্ল্যাক ম্যাজিক "। আর সেজন্য মেয়েটি মুক্তির উপায় হিসেবে নিজেকেই উৎসর্গ করে আত্মহত্যা করে।
তার প্রেতাত্মা যে আয়নাতে থেকে যাবে এটা শান্তনু দা' জানতো না। অথচ, শান্তনু দা'র আত্মহত্যা করার আগ পর্যন্ত আমি জানতাম এই আয়না আগে থেকে মেসে ছিল।
আমরা কেউ একা শান্তনু দা'কে রাখিনি। কেউ না কেউ ছিলাম, ব্যস দুটো দিন ছিলাম না। এই ঘটনা এই দুটো দিনের ই।
ভালো কথা, আয়না টা ভেঙে গেছে। শুনেছি ভাঙা আয়নাতে মুখ দেখা বারণ।
ওটা ফেলে দিয়েছি গতকাল।
(সমাপ্ত)

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...