বুধবার, ২৭ মে, ২০২০

অনুগল্পঃ শোধ

মে মাসের সকালবেলা।
একটি ফ্ল্যাটে ঢুকছিল একজন আগন্তুক। সিঁড়িটা ধরে উঠে গেলো বিল্ডিং এর তিন তলায়। বেল বাজালো একটানা কয়েকবার।
-তুমি! (বিস্ময়ান্বিত গলা, যেন আশা করেনি এমন)
দরজা খুলে ই মেয়েটি চোখ বড়বড় করে চাইল। বাইরে আপাদমস্তক কালো পোষাকে ঢাকা একজন পুরুষ। চেহারা দেখে আঁতকে উঠতে হয়। গালে আড়াআড়ি কাটা দাগ, চোখে মুখে রুক্ষতা।
কেমন আছো ইভা? (গলার স্বর যথেষ্ট নরম)
দরজা আগলে এখনো মেয়েটি দাঁড়িয়ে।
- কি চাও তুমি? প্রশ্ন করল সে।
- ভেতরে আসতে দেবে না?
কথোপকথনরত সময়ে সিঁড়িটা ধরে উপড়ে উঠছিলেন পাশের ফ্লাটের ভদ্রমহিলা। এদের দুজন কে ক্রস করতে করতে সন্দেহের চোখে তাকালেন তিনি। অবাক দৃষ্টি ফেললেন আগন্তুক আর ইভার দিকে।
ভদ্রমহিলা কে দেখে কিছুটা সম্ভিত ফিরে পেলো ইভা। ইভার স্বামী রোকন, হরহামেশা ই বাড়ি ফেরে। কিন্তু এভাবে ওদের দুজন কে দেখে যদি রোকন কে বলে দেয়। রোকন সেটা ভাল ভাববে না। অশান্তি হবে। তাই সামলে নিয়ে বলল,
-এসো! ভেতরে এসো! বাইরে দাঁড়িয়ে কথা কেন?
আগন্তুক মৃদ্যু হাসল, পেছনে ঘুরে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রমহিলার দিকে শুকনো হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে অভিবাদন জানালো। ভদ্রমহিলাও একটু হেসে চলে গেলেন।
আগন্তুক ঘরে ঢুকল। অন্য সময় হলে ইভা ওকে সদর দরজার বাইরে থেকে ই তাড়িয়ে দিতো। আগন্তুক এদিকওদিক ঘুরে দেখতে লাগল।
ড্রয়িংরুম টা সাজানো উদ্যানের মতন। একদিন রঙিন ঝাড়বাতি, দেয়ালে পেইন্টিং, খাবার টেবিলে সাজানো খাবার। একেবারে যেমনটা দুজনে আগে ভাবতো। আগন্তুক বলল,
-কি সুন্দর সাজানো!
-কি চাও? (ইভার গলা পাল্টে গেল) রুদ্র, তুমি জানো আমি বিবাহিত তাই এমন সময়ে হুটহাট আমার বাসায় চলে আসা মোটেই পছন্দ নয় আমার। জানি আমাদের আগে সম্পর্ক ছিল এখন.. (কথা শেষ হলো না)
আগন্তুক ইভাকে মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। কথার মাঝে ই আগন্তুক দ্রুত পায়ে ইভার বেডরুমে চলে এলো, বাহারি রঙিন পর্দা টানানো। দেয়ালে এসি টা হাওয়া দিচ্ছে। একটা টিভি চলছে। এই ঘরটা বেশ ঠান্ডা লাগলো।
ইভা দ্রুত এসেছে পিছুপিছু। চেঁচিয়ে বলল,
- থামো! কি চাও?
আগন্তুক হেসে নিলো সজোরে, রুমে ওর হাসি ফাটা কাঠের মতন প্রতিধ্বনিত হলো। এখানে তো আমাদের থাকার কথা ছিল ইভা! তাইনা!
আগন্তুক ইভার কাছাকাছি এগিয়ে এলো। ইভা ভয়ে পিছু হটল! ভয়ার্ত গলায় ইভা বলল,
-কি চাও তুমি?
আগন্তুক শান্ত গলায় উত্তর দিলো
-আমার আংটি!
ইভার কপাল ঘামছে,
-ওহ! সেটা আমি কোথায় রেখেছি মনে নেই!
-কিন্তু সেটা আমার প্রয়োজন। খুব দরকার!
-তাই নাকি? (ইভার গলায় বিদ্রুপের সুর) তো এবার কাকে দেবে শুনি?
-সেটা নিশ্চই তোমার জানার দরকার নেই!
-বলতে হবে না আর, আমি বুঝেছি কে সে!
-হ্যাঁ, ইরা আমাকে ভালোবাসে আর ও চায় আমার সে আংটিটা যেন আমি নিজের ওর হাতে পড়িয়ে দেই।
-আংটি নেই! চলে যাও।
প্লিজ! ইভা! আমার কথা শোনো। আমার খুব দরকার। এটা আমার পরিবারের শেষ চিহ্ন।
ইভা কপালের ঘাম মুছে নিলো। এসির বাটল চেপে অনেকটা বাড়িয়ে দিলো। শোন! তুমি এসো। আমার অনেক কাজ। যেকোন সময়ে রোকন কাজ থেকে ফিরে আসবে। আর সে জানে তোমার সাথে আমার আর দেখা হয় না। তুমিও নিশ্চই চাওনা যে আমাদের কোন সমস্যা হোক!
রুদ্র আক্রোশ চেপে ইভা কে ঠেলে দেয়ালে চেপে ধরলো! গলায় চাপ দিয়ে বলল, আংটি টা দাও! ভালোয় ভালোয়!
ইভা বিচলিত নয়, সে বলল, যদি চাও তাহলে আমাকে দশ হাজার টাকা দিতে হবে তবে ই কেবলমাত্র আংটি টা ফেরত পাবে।
রুদ্র রাগে ক্ষোভে ইভার গলায় আঙুলের চাপ বাড়িয়ে দিলো, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল ইভার। কিন্তু কি মনে করে ই দ্রুত গলা ছেড়ে হনহন করে জুতার আওয়াজ তুলে স্বশব্দে দরজা বন্ধ করে বেড়িয়ে গেলো রুদ্র। ইভা হাফ ছেড়ে বাঁচল!
বিকেলের আগে আরেকবার ইভার ফ্ল্যাটে ফিরে এলো রুদ্র। খবরের কাগজের মোড়কে দশহাজার টাকা নিয়ে। আংটিটা ফেরত দিলো ইভা। মুখে বিদ্রুপ। শুধু জিজ্ঞেস করলো, " নতুন মেয়েটি ভবিষ্যৎ এ তোমাকে সুখী করতে পারবে তো?"
রুদ্র দরজা পর্যন্ত গিয়ে সামান্য থামল তারপর, পিছু ফিরে ঈর্ষান্বিত ইভার দিকে ফিরে তাকিয়ে মৃদ্যু হাসল তারপর বলল, " স্টে ওয়েল ইভা! "

সন্ধ্যেবেলায় ইভার স্বামী রোকন ফিরল। বেল বাজতে ই লুকিং গ্লাসে দেখে এবার দরজা খুলল ইভা। হ্যাঁ রোকন ই সাথে আর কেউ নেই।
হ্যালো বিউটিফুল! রোকন হাসিমুখে অভিবাদন জানালো ইভাকে।
হাতে ফুলের বাকেট, সেটা ইভা কে দিয়ে জুতোর ফিতে ফিতে খুলতে খুলতে বলল, " রুদ্র এসেছিলো নাকি?"
ইভার গলা ভয়ে ধরে এলো। ও! অ্যাঁ! হ্যাঁ! তুমি জানলে কি করে? (ধরা পড়ে যাওয়া ইতস্তত ভাব ইভার, যেন অন্যায় ধরতে পেরেছে রোকন)
নাহ! ও কি টাকা দিয়ে গেছে?
ইভার শঙ্কা বাড়ছে। ইতস্ততভাবে জানতে চাইল,  টাকা? কিসের টাকা?
হ্যাঁ, রুদ্র আজ আমার অফিসে এসেছিলো। বলল জরুরি একটা কাজ, না হলেই নয়। তো, আমি জানতে চাইলাম কাজটা কি? সে নিয়ে কিছু বলল না তবে, দশ হাজার টাকা চাইল। আর বলল  কাজ হয়ে গেলে ই বিকেলের আগে আমার বাসায় এসে তোমার হাতে তুলে দিয়ে যাবে পুরো টাকাটা।
আচ্ছা, দিয়েছে কি?
রুদ্র এত্ত বড় চালাকি করে গেলো! মনে মনে ভেবে ই - ইভা স্তম্ভিত হয়ে সোফায় বসে পড়ল।


(একটি বিদেশি গল্পের আদলে) 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...