রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৯

গল্পঃ তৃতীয় নয়ন (হরর থ্রিলার)


(এক)
ট্রেন লাইনের দু'পাশের সবটা ঘিরে কালো
অন্ধকার। চোখের সবটুকু ক্ষমতা খাটিয়ে বুঝলাম
বেশ গাছপালা আছে এদিকটায়।
ট্রেন লাইনের শেষ মাথা দুটো দূরে গিয়ে
কুঁচকুচে আঁধারে মিলেছে। যতদূর চোখ যায়,
তাতে আধাঁর ছাড়া আর কিছু নজরে আসছে না।
ময়মসিংহের এই রাস্তায় আমার আগে আসা
হয়নি। তবে একদম আসিনি তা নয়, ট্রেনে চড়ে
এই পথে যাওয়াআসা অনেকভাবে। কিন্তু
একটিবার স্টেশনে নামা হয়নি।
তবে ছোটবেলায় এসেছিলাম বাবার হাত
ধরে। তখন সবে ক্লাস ওয়ান! এতটা স্মৃতি এখন আর
মনে নেই।
অনেক বদলে গেছে এখন। হাতের বামে ধরে
গেলে একটা চায়ের দোকান চোখে পড়ছে।
বাইরের সে মাটির চুলো থেকে উড়ে যাওয়া
ধোঁয়া এখনও সাদা আবছা দেখা যাচ্ছে। হয়ত,
বেশী দেরী হয়নি -দোকানী তার দোকান
বন্ধ করে চলে গেছে।
সত্যি বলতে স্টেশন টা একদম খালি। শুনশান
নীরবতা এই মাঝ রাত্তিরে। এটা গেঁয়ো
স্টেশন, তাই লোকজনের ভীর-বাট্টা একদম নেই।
ঝুট ঝাট করে এখানে ট্রেন থামেনা। যদি না-
সিগন্যাল দিয়ে থামানো না হয়।
আজ, আমারো ভুল "কি দরকার ছিল একটু ফ্রেশ
হয়ে পান চিবানোর! " ট্রেন মিস হয়ে গেল।
স্টেশনের আশেপাশে জনবসতি নেই, শুধু স্টেশন
মাস্টারের একটা টিনের একতলা চালা।
যেটার সদর দরজায় মস্ত বড় তালা ঝুলছে।
লাইনের থেকে বেশ দূরেই যাত্রীদের বসার
জন্য কাঠের বেঞ্চ।
ব্যাগটা হাতের পাশে রেখে বেঞ্চে বসলাম।
প্রকৃতি প্রচন্ডরকম শুনশান।
আনমনে বেঞ্চে বসে পা দোলাচ্ছি। একা
একা খুব ভয় লাগছে। সেই সাথে চোর-
ডাকাতের চিন্তা মাথায় চাড়া দিয়েছে-
সাথে অবশ্য মালামাল হালকা-পাতলা। কাপড়
বোঝাই ব্যাগ, সাথে সিগারেট, ম্যাচ আর
শরৎচন্দ্র সমগ্র। ট্রেনে বসে বোরিং ভাব
কাটাতে বইয়ের আয়োজন। এখন সেটাই ভারী
মনে হচ্ছে। কেউ আক্রমণ করলে পালানোর পথে
ভারী কিছু নিয়ে দৌড় দেয়া বোকামী। ধরা
পড়বার চান্স প্রকট!
তবে,
মজার ব্যাপার হলো আমার ম্যাচটার নিচের
দিকে একটা টর্চের মত আছে। সেটাই এদিক-
ওদিক করে দেখছি কেউ আসছে কিনা। খুব কম
হলেও এখন এইটুকু আলো আমার কাছে মহা কিছু!
ডান হাতটা পাঞ্জাবীর পকেটে ঢুকিয়ে
সিগারেট বের করে আগুন জ্বালালাম। একরাশ
ধোঁয়া ছেড়ে বুঝলাম। শীতের প্রকোপ পাওয়া
যাচ্ছে। গায়ে শিরশিরে একটা ভাব। ব্যাগের
থেকে টাওয়েল বের করে গলায় দিলাম।
"নো কম্প্রোমাইজ উইথ কোল্ড"
শীতটা আরো বাড়ছে। আধা ঘন্টা পার করে
ফেলেছি অথচ কেউ একবার এদিকে এলোই না।
নাহ! বিষয়টা সুবিধের লাগছে না। শেষ সম্বল,
সিগারেট দুটো শেষ করেছি এরই মাঝে।
বাকী আছে মাত্র এক!
ভাবলাম বেঞ্চে গা এলিয়ে দেই। গা
এলিয়ে পায়ের কিছুটা বাড়াতেই অর্ধেক
গিয়ে আটকে গেল,
আরে একি! বেঞ্চের বাকি অংশে একটা
বস্তা রাখা। গ্রামের লোকের আর কাজ! বসার
জায়গাও দখল চাই! হু!
অগত্য বস্তায় মাথা রেখে গা এলিয়ে দিলাম।
প্যু ও ও ও ও ও......
ধরমর করে উঠে বসলাম। গা ঝাড়া দিয়ে ব্যাগ
হাতে নিলাম ট্রেন এসে গেছে কি কপাল!
আহা!
থাম!!!! থাম!!! ঐ.... ট্রেন!!!
কিন্তু বিধি বাম! ট্রেন থামল না। আমি তো আর
সুপার ম্যান কিংবা ডাকু নই' দৌড় দিয়েই
ট্রেনে চড়ে যাব।
মেজাজ প্রচন্ড খারাপ।
হাতের ব্যাগ বেঞ্চের কোনায় ছুড়ে দিলাম।
সিগারেট আছে মাত্র একটি। সেটা জ্বালাব
কি জ্বালাব না ভেবে শেষমেষ পকেটে
রেখে দিলাম। জানি না কতক্ষন এখানে
থাকতে হয়!
হাতঘড়িতে রেডিয়াম কাটা দুটা জ্বলছে আর
আমার দিকে ফিরে মুচকি হাসছে। নিজেকে
বিনে পয়সার জোকার মনে হচ্ছে।
চুপচাপ বসে ঘড়ির কাটার মুভমেন্ট দেখতে
লাগলাম। আমার পাশে, কিছুটা গাছপালা
ঝোপের পর খোলা মাঠ। আধাঁরে অপরুপ কিছু দৃশ্য
আমার দৃষ্টি কেড়ে নিল হঠাৎ। থোকা থোকা
জোনাকী। আকাশের তারা যখন মেঘমুক্ত
আকাশের রাতে জ্বলজ্বল করে, ঠিকে তেমনি
জোনাকী গুলোর ঝলকানি।
(দুই)
কখন যে ঘুম এসে গেছে বুঝিনি। তাকিয়ে
দেখলাম নিজের বা হাতে কাত হয়ে ঘুম
দিয়েছিলাম। আড়মোড়া ভেঙে এবার শেষ
সম্বল টা জ্বালিয়ে দিলাম। সিগারেট খোর
দের বড্ড বাজে অভ্যাস। না জ্বালিয়ে থাকা
যায় না। সকাল হলে পাশের দোকান থেকে
কিনে নেয়া যাবে। থাক, কি হবে আর কষ্ট
করে।
হঠাৎ ভয় হলো, আরে আমার ব্যাগ, টাকা!
নাহ, নিশ্চিত হলাম। কিছু খোয়া যায়নি। তার
মানে ঘুমোবার সময় কেউ আসেনি এখানে।
ধ্যাত, চোর হলেও এই রাতে সংগ পাওয়া যেত।
একা একা থাকার কোন মানেই হয় না।
এখনো সেই জোনাকী গুলো জ্বলজ্বল করছে
আগের মত। ফ্রেশ হবার তাগিদে ঝোপের
পাশে গিয়েছি হঠাৎ দেখলাম, উত্তর-পূর্ব কোন
ধরে, ঠিকে যেদিকে ক্ষেতের শুরু ঠিক
সেখান থেকে কেউ একজন স্টেশনের দিকেই
আসছে।
যাক গে, যে আসুক! কথা বলার মত কেউ তো
আসছে। হাতের সিগারেট শেষ। ফিল্টার টা
ছুড়ে দিলাম জংগলে।
লোকটা প্রায় কাছেই এসে গেছে, আমিও
বেঞ্চে ফিরেছি। ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে।
কি বাবু? কে আপনে?
আমি বিভূতিভূষণ।
পাশের গ্রামের পরের গ্রামে আমার কাকার
বাড়ি। সেখানেই আজ যাবার কথা কিন্তু
মাঝপথে ট্রেন মিস করে এই জনমানুষহীন
স্টেশনে বসে আছি।
কার বাড়ি?
কমল জোয়ার্দার!
আরে সে তো আমাগো আপনা লোক! আপনে
কি তার আপন ভাইস্তা?
না। সে দূরসম্পর্কের কাকা।
আইচ্ছা। কোন চিন্তা নাই আমি আছি এই হারু
আছে, আপনে আমার লগে আসেন। আমি
আপনারে পৌঁছায় দিব। আসেন!
না থাক! ধন্যবাদ। আমি একাই একটু পরে চলে
যাব। এখন রাত তিনটা! ভোর হতে বেশী দেরী
নেই।
আহা! এত রাতে স্টেশন এ একা থাকবেন? এইটা
ক্যামনে হয়? আসেন তো! (বলেই আমার হাতের
ব্যাগ নিজে টেনে নিল)
আসেন, আসেন। কাছেই আমার ভ্যান গাড়ি।
তাছাড়া গতরাতে এইখানে একটা
অ্যাক্সিডেন্ট হইছে। তাই আইজ আর ট্রেন থামব
না।
-অ্যাক্সিডেন্ট?
-হ' আজ এর লাইগ্যা ট্রেন নাই। এমনেই আহে না
তার পরে ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট!
অচেনা লোক হলেও কথা ভাল বলেছে। আজজ
রাত অন্তত লোকটার আশ্রয়ে কাটিয়ে কাল
রওনা দেয়া যাবে।
ঘড়িতে রাত তিনটে কুড়ি।
বললাম আচ্ছা চলুন তবে।
ট্রেন লাইন ছেড়ে আমরা ক্ষেতের আইলে এসে
পড়েছি। লোকটা নানা কথা বলে যাচ্ছে। কি
করে? তার দাদা নাকি মস্ত বড় পালোয়ান
ছিল। অথচ সে দেখতে শীর্ণকায়।
তার এক ছেলে, সে ক্লাস ফাইভে পড়ে।
আমিও হাতের ছোট্ট ম্যাচলাইট জ্বালিয়ে
তার পিছুপিছু চলেছি। গ্রামের ছেলে আমিও।
তাই ক্ষেতের আইলে হাটতে আমার অসুবিধা
হচ্ছে না।
লোকটাকে থামিয়ে আমি জানতে চাইলাম,"
ভাই, আপনি কি করেন? "
আমি, বলে এক গাল হাসল। গ্রাম্য সহজ সরল
হাসি।
ভ্যান চালাই।
আপনার ভ্যান?
হ' আমার বিয়াতে বৌয়ের বাড়ি থেইকা
যৌতুক দিসিল। লোকটা এক মুহূর্তে লাজুক হয়ে
গেল। কথার বেগ কমে এল তার।
আমারও ভাল লাগছে লোকটার সাথে কথা
বলে।
আমাকেও পাল্টা প্রশ্ন করল হারু মিয়া।
"দাদা কি বিয়ে করছেন? "
না ভাই, করিনি!
কন কি? বিয়া করবেন না?
(লোকটার এই প্রশ্নের কারন স্বাভাবিক, আমার
কপালের পাশে, জুলফিতে পাঁক ধরেছে। এই
বয়সে বিয়ে করিনি দেখে অবাক না হবার
কিছু নেই)
(লোকটাকে থামিয়ে,) এহেম এহেম, আর কতদূর?
এইত আইস্যা গেছি!
আপনে কি করেন?
লেখালেখি।
শুনছি, যারা লেখে তাগো অনেক ভক্ত?
হুম, তা থাকে।
আপনের ভক্ত কেমন?
আছে, গোনা সম্ভব নাহ।
হেহেহেহেহ, ঐ যে আমগাছের বাগান ঐ
খানেই আমার বাড়ি। আহেন, ভ্যানে উঠেন।
ব্যাগটা সাইডে রেখে ভ্যানে উঠলাম।
হারু মিয়া বলল, শক্ত কইরা বইসেন! বলে এক গাল
হাসি দিল। আধাঁরে দাতগুলো চকচক করছে।
কিছুটা সময় ধীরে চললেও ভ্যানের গতি দ্বিগুণ
হল মিনিট দুই পরে, আস্তে আস্তে ভ্যানের গতি
ট্রেনের গতিকে হার মানাচ্ছে।
আমার দু'হাত তখন ব্যাস্ত ভ্যানের সিট চেপে
ধরতে।
হঠাৎ দেখলাম ভ্যান, একটা ট্রেন লাইন ক্রস
করছে।
আর বিপরীত দিক থেকে একটা ট্রেন হুইসেল
চেপে তীব্র বেগে ছুটে আসছে।
আমি আর্তচিৎকার করে বললাম, "হারু মিয়া!
ভ্যান থামাও!! ভ্যান থামাও!! "
হারু মিয়া শুনছে না। তার ভ্যানের গতি তীব্র
হচ্ছে।
আমি ভেবে পেলাম না যে স্টেশন ছেড়ে
এলাম সেখানে আবার আমি কি করে এই
ভ্যানেই এলাম।
আমাকে অবাক করে ভ্যানগাড়ি চলে গেল
ট্রেনের নিচে, আমি জ্ঞান হারালাম। জ্ঞান
হারানোর আগে দেখলাম হারু মিয়ার মাথা
ট্রেনে কাটা পড়ে আলাদা হয়ে গেল।
এই যে! এই যে ভাই?
কে আপনে?
চোখ মেলে তাকালাম। একি! আমি এখনো
বেঞ্চে শুয়ে! কিন্তু হারু মিয়া?
একি! তাকিয়ে দেখি হারু মিয়া আমাকে
ডাকছে।
আমি গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসলাম।
হারু মিয়া তুমি মর নি?
কে মরবো দাদা? আমি না আপনে?
লোকটা কেলিয়ে হেসে দিল। বলল " আমি তো
মরছি, এইবার তো আপনে মরবেন? "
(পা ফেলে আমার দিকে এক পা করে এগিয়ে
আসতে লাগল, আমি ভয়ে পেছানো শুরু করলাম)
অবশেষে থাকতে না পেরে দৌড় দিলাম।
চিৎকার করে চেঁচাতে লাগলাম, বাঁচাও!
বাঁচাও!!!
পেছনে ফিরে দেখলাম লোকটা বড় বড় পা
ফেলে আমার দিকে ছুটে আসছে
আমি প্রানান্তকর ছুটে চলেছি...
দুরে এসে দেখলাম হারু মিয়া আসছে না। আমি
দৌড়ে কোথায় এসেছি জানি না।
হঠাৎ পেছন থেকে কাঁধে হাত পড়ল!
ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম, কে এ এ এ এ!!!!
আমি স্টেশন মাস্টার রহমান।
আপনি কে? আর এমন করে হাপাচ্ছেন কেন? কি
হয়েছে?
হারু উ উ...
মানে?
ভ্যান চালক হারু মিয়া!
আসেন, আসেন আমার সাথে।
কোথায়?
স্টেশনে। (লোকটার হাতে কেরোসিনের
হারিকেন, মৃদ্যু আলোতে জ্বলছে। সেটা দেখে
ভয় কমল)
আবার তার সাথে স্টেশনে ফিরে এলাম।
বেঞ্চে আমার ব্যাগ জলদি হাতে নিলাম।
আমাকে স্টেশনের কামড়ায় বসিয়ে হাতে এক
গ্লাস পানি দিলেন তিনি। বললেন, "নিন
পানি খান "
এক ঢোকে খেয়ে নিলাম।
এরপর বললেন, "দেখুন তো আপনার পেছনে যে
লোকটি দাঁড়িয়ে, এ সেই হারু কিনা? "
আমি ঘুরে আর জ্ঞান রাখতে পারলাম না। হারু
মিয়া গায়ে রক্ত নিয়ে আমার পেছনে।
তীব্র কোলাহলে ঘুম ভাঙল।
বেশ লোকজনের ভীর। চায়ের কাপে টুংটাং
শুনছি। বামের সেই দোকানে মধ্য বয়সী
দোকানী।
সেই সাথে আরো কয়েকজন মুরুব্বি। তারা চা
খাচ্ছে।
আমি কিছু না বলে সেখানে গেলাম। বালতি
থেকে পানি নিয়ে মুখে ঝাপটা দিলাম।
"চাচা, চা হবে? "
হইব বাবা, বহ।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে শুনলাম। গত রাতে
ট্রেনে কাটা পড়ে দুজন মারা গেছে। একজন
ভ্যান চালক হারু, পাশের গ্রামে যার বাড়ি।
আরেকজন রহমান, যে এখানকার স্টেশনের
মাস্টার!
আমার চায়ে চিনি বেশী হয়েছে। চাচা
আমাকে আর এক কাপ চা দেবেন?
দিতাছি বাবা।
(সমাপ্ত)

টার্ন অন (ইয়োটা সিরিজের ৪র্থ পর্ব)

ইয়োটার মাথায় গণ্ডগোল দেখা দিয়েছে
কয়েকদিন থেকে, যদি বলি চা" আনো সে আনে
কফি, কফি আনতে বললে চা!
ভুল ধরিয়ে দিলে আরো রেগে যায়। ভেন্ডর
কোম্পানী কে বললাম, তারা ওয়ারেন্টওয়ালা
কাগজের টুকরো হাতে ঝুলিয়ে দিল, মনে মনে
বললাম "মর জ্বালা "
সব কাজে বাহানা দেয়ার স্বভাব এখনো কারো
যায়নি।
অর্থি কে বললাম, ব্যাপারটা দেখো। নাহ, তার
সেমিষ্টার এক্সাম।
ইলিনের কাজে ইলিন বিজি। আমারও এক্সাম।
মাঝে মাথাখারাপ করা কাজেকর্মে ব্যাস্ত
ইয়োটা।
মন খারাপ করে বসে আছি এমন সময়, বাড়ির লনে
আওয়াজ!
কড়কড় ধম! মেটাল কিছু পড়েছে হয়ত!
কফির কাপ টেবিলে রেখে ছুটে গেলাম
বারান্দায়।
হ্যালো! সরি! (ল্যান্ড করা ব্যাক্তি আমাকে
দেখেই)
ফিরতি হ্যালো দিয়েই বললাম, "প্রব্লেম কি?"
-সরি, জিপিএস ফেইলিওর।
মেশিনটা কাজ করছিল না। ভাগ্যিস লনে
ইমারজেন্সি ল্যান্ড করা গেল।
-কিন্তু ল্যান্ড করতে গিয়ে তো আমার বাগানের
তেরটা বাজিয়ে দিলেন।
-সরি, ইচ্ছে করে তো আর করিনি!
আমার পেছন থেকে সজোরে চেঁচিয়ে, "হে!  ইউ!
শিট, ইউ জাস্ট রুয়িন্ড দিস প্লেস! "
ব্যাক্তি টিকে দ্বিতীয়বার পরিচিত করার
প্রয়োজন নেই, ইনি স্বয়ং ইয়োটা।
ভীনগ্রহের লোকজন ভয়াবহ হয়, অচেনা কাউকে
ছেড়ে কথা বলে না ইয়োটা। আজো তার
ব্যাতিক্রম হয়নি।
তবে ইয়োটার কথায় তেমন পাত্তা দিল না নাক
লম্বা, চিকন কাঠির মত বাদামী রঙের
প্রাণীটি। গোটা শরীরের মাঝে নাকটা একদম
অসাধারণ। রঙ বদলাচ্ছে একটু পর পর। ঠিক যেন
মরিচ বাতি।
ইয়োটাকে নিয়ে ভেতরে এলাম। আবার কি না
কি বলে বসে, এরপর আমার শান্ত বাসায় এরা
দলবেঁধে আক্রমণ করুক।
মেইল চেক করতে বসলাম,
দু'বার বুঝিয়ে দিলাম ইয়োটাকে, যে আমি কফি
চাই। আগের কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
মাথা নেড়ে বলল, অ্যাই আন্ডারস্ট্যান্ড।
পরে দেখা যাবে কি না কি তৈরি করে আনে!
মেয়রের মেইল পেয়েছি গতকাল, বৃষ্টি থেকে
দূরে থাকতে সতর্ক বাণী। অ্যাসিড রেইন,
স্বাস্থ্যহানিকর।
আজ প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, এখানকার বৃষ্টিজল
একেকরকম। সকালে সবুজ, দুপুরে লালচে, রাতে
নীল বর্নের। অন্ধকারে রাতের রঙ বোঝা যায়না,
আমি কাপে সংগ্রহ করে দেখেছিলাম।
ইয়োটা কাপে কফি দিল, আর হাতে ফোন ধরিয়ে
দিয়ে বলল, অনেক আগে থেকে বাজছিল। বৃষ্টির
শব্দের জন্য ফোনের রিংটোন কানে আসেনি।
হ্যালো,
হ্যালো না!  ছাই!
ও একগাল হেসে বললাম, তুমি?
কেন অন্য কেউ ফোন করবে ভাবছিলে?
না না! বৃষ্টি দেখছিলাম।
বৃষ্টি!! সে কে?
(নেটওয়ার্ক ইরোর, ঝামেলা!!) আরে বৃষ্টি পড়া
দেখছিলাম
ও তাই বলো। জানো আজ কি হয়েছে?
কি?
কড়কড় বম্মম!!! (ফোনের লাইন কেটে গেল)
আকাশে বজ্রপাতের ভয়াবহ শব্দ।
বারান্দার দরজা চাপিয়ে ঘরে চলে এলাম, ফোন
আবার বাজছে,
হ্যালো, শুনতে পাচ্ছো?
হ্যা, আজ না চুড়ি কিনেছি! (রিনিঝিনি করে
শব্দ শোনালো অর্থি।)
হা, ভালো শোনাচ্ছে....
শোনো, আমার একটা কাজ করে দাওতো। (আগেই
জানতাম, আমাকে খুশী করে কোন কাজ
চাপানোর ধান্দা করছে অর্থি)
কি কাজ?
কিছু নোটস এডিট করা লাগবে। আমি মেইল
করছি।
বিকেলে বাইরে একসাথে খেতে যাব, ওকে?
হুম, ওকে।
দাঁড়াও, ইয়োটাকে একবার ডাকি। বাই দ্যা ওয়ে,
ইলিনকে বলে দাও তো কিচেনে দুপুরে কিছু করে
দিতে।
ইয়োটার কি একটা প্রব্লেম হয়েছে, খাবার ভাল
করে করতে পারছে না।
কেন?  সিস্টেমে কিছু একটা হয়েছে।
রিবুট দাও। ফিক্স করে ফেল। আমার এক্সাম তাই
হেল্প করতে পারছি না।
আচ্ছা আমি দেখছি, তুমি মেইল করো জলদি।
শাহরিয়ার কম্পিউটার অন করে প্রাইভেট মুডে
কানেক্ট করল, (মনে মনে ভাবল স্ন্যাকস খেতে
খেতে কাজ করলে খারাপ হয় না)
ইয়োটা!  ইয়োটা!
কোন সাড়াশব্দ নেই, ভাবলাম চার্জ নিচ্ছে।
অর্থির নোটস গুলো চেক করা শেষ করে চেয়ারে
কাঁধ ঝুলিয়ে দিলাম।
ক্ষিদে পেয়েছে, বাইরে বৃষ্টি তাই টেস্ট বদলে
অন্য কিছু খেতে ইচ্ছে হলো। ইয়োটাকে আবার
ডাকলাম, কিন্তু কোন সাড়াশব্দ নেই!
হঠাৎ কি একটা সন্দেহ মনে চাড়া দিল, ঝট করে
উঠে এদিক-সেদিক খুঁজতে লাগলাম, কোথাও
নেই।
অর্থিকে ফোন দিলাম,
হ্যালো আচ্ছা ইয়োটাকে পাচ্ছি না। ও কি
তোমার বাসায়?
ইয়োটা!! কই না তো! কিন্তু পাচ্ছো না মানে?
এ ঘর-ও ঘর, বারান্দা, লন, কোথাও বাদ রাখি নি।
পেলাম না।
ঘড়িতে রাত সাড়ে নয়টা,
আমার পাশে অর্থি বসে আছে, ইলিন পাশে
দাঁড়িয়ে।
দু'হাতে মাথার চুল আঁচড়ে যাচ্ছি কিন্তু কিছুই
মাথায় আসছে না।
রাত দশটা বাজে, ইয়োটা আসছে না।
বাইরে যে সব জায়গায় খোঁজ নেয়া দরকার,
নেয়া কমপ্লিট।
কোথায় গেল? এর মাঝে আবার সিপিইউ তে
গড়বড় অবস্থা। হারিয়ে গেল না তো! অজানা
আতংকে মন ভরে গেল।
অর্থি বলল, টেনশন করো না। হয়ত কোথাও গেছে,
চলে আসবে।
শাহরিয়ার বলল, আমাকে না বলে ইয়োটা
কোথাও যায় না।
সেদিন রাতে আর ফিরল না ইয়োটা।
সকালে ভেন্ডর কোম্পানী অফিস আর পুলিশ
স্টেশন ঘুরে এলো শাহরিয়ার।
দুপক্ষ থেকেই আশ্বাস পাওয়া গেল তবে ভেন্ডর
থেকে মেরামত করে দেবার পাশাপাশি
ভ্যালিডিটি রিনিউ করার প্রস্তাব পেল
শাহরিয়ার।
এরপর, এক সপ্তাহ কেটে গেছে ইয়োটা নেই।
ইলিন এর মাঝে পুরোনো কয়েকটা চেনা জায়গা
নিজে থেকে ঘুরে এসেছে, যেখানে সচরাচর
ওরা দুজনে যেত কিন্তু সেখানেও দেখা গেল না
ইয়োটাকে।
নিখোঁজ সংবাদ দেয়া হল, অর্থের লোভে
অনেকেই নকল ইয়োটা তৈরি করে শাহরিয়ার কে
দেখাল কিন্তু আসল ইয়োটাকে আর পাওয়া গেল
না।
তবে গুম হয়ে যাবার কোন কারন খুঁজে পেল না সে।
ওদিকে ইলিন-অর্থি দুজনে খোঁজ চালিয়ে
যাচ্ছে।
অনলাইনে মেইললিস্ট গুলো দেখছিল শাহরিয়ার,
হঠাৎ ঘড়ঘড় শব্দ শুনতে পেল বাড়ির লনে।
একরকম ছুটে বারান্দায় গেল সে, একি!
সেদিন যে ভিনগ্রহের প্রাণী এখানে জিপিএস
ভুল করে ল্যান্ড করেছিল সেই আজো ল্যান্ড
করেছে।
শাহরিয়ার আজ প্রায় বিরক্ত, হেই! ইউ! বারবার
এখানে ল্যান্ড করছ কেন? এর আগে ল্যান্ড করে
আমার লনের তেরটা বাজিয়েছ, আজ পছন্দের
রেড অর্কিডটার বারটা বাজিয়ে দিলে?
সো সরি, আসলে আমার জিপিএস টা ঠিকি
আছে কিন্তু ঠিক এ বাড়ির পাশ দিয়ে উড়ে
গেলেই এমনটা হয়। এরর আগে মনে করেছিলাম
জিপিএস এ গলদ আছে। এখন দেখতে পাচ্ছি,
সেটা একদমই নয়।
শাহরিয়ারের মাথায় বিদ্যুৎ ঝলক খেল মনে হয়,
তার মানে আমার বাসার আশেপাশে কেউ
"ম্যাগনেটিক রে" ইউজ করছে!
কিন্তু কেন?
আর হয়ত না, এই রে এর জন্য ইয়োটা আবোল-
তাবোল কাজ করছিল। ওর কন্ট্রোলার রিমোটলি
কেউ এংগেজ করে, এক্সেস করছিল।
ব্যাপারটা, চেক করতে যাবার জন্য ঘরের
ভেতরে যাচ্ছিল শাহরিয়ার কিন্তু পেছন থেকে
ডাক দিল, ভিনগ্রহের প্রাণী, হ্যালো! এই যে?
শাহরিয়ার ঘুরে বলল, হোয়াট?
তোমার বোট কোথায়? সেদিন যে হুমকি দিল
আমাকে!
হি ইজ লস্ট!
(ভিনগ্রহের প্রাণী মাথা নিচু করে কি একটা
ভাবল, এরপর মাথা তুলে কি একটা বলতে যাচ্ছিল
কিন্তু সেটা আর না বলে থেমে গেল) নো, ইটস
ওকে।
শাহরিয়ার বলল, বাই দ্যা ওয়ে। প্লিজ আমার
বোট কে দেখতে পেলে আমায় জানাবে।
ডেফিনেটলি! (ইঞ্জিন স্টার্ট করে উড়ে গেল
নাক লম্বা অদ্ভুত প্রাণী)
ঘরে এসেই অর্থিকে ফোন দিল, এরপর অর্থি
বাসায় আসতেই "ম্যাগনেটিক রে" এর কথা খুলে
বলল শাহরিয়ার।
কিছুক্ষন পর দুজনে চেক করে দেখল কথা একদম
হুবহু মিলে যাচ্ছে। ঠিক বাসার সবখানে,
জিপিএস কাজ করছে না।
একটা "ডেড ট্রায়াঙ্গল " হয়ে আছে বাসার
আশপাশ ঘিরে। ফোনের জিপিএস, ডিরেকশন,
কিছু চলছে না।
কিন্তু কেন?
যদি এটাই হয় তবে, ইলিনের কেন ডিরেকশন
প্রব্লেম হচ্ছে না।
মাথায় কিছু আসছে না। তবে কেউ দূর থেকে এ
অন্যায় কাজ করছে বলেই মনে হচ্ছে। তার মানে
সে বাসার সবার মুভমেন্ট ফলো করছে।
ইয়োটার কমান্ড প্রম্পট তাহলে ওকে-ই ছিল। এই
রে এর জন্য কাজ করছিল না।
তাই তো বলি বারবার রিবুট, রিসেট, প্যাক
আপলোড করে কাজ কেন হচ্ছিল না।
কিন্তু এখন এই প্রব্লেম টা সলভ করবে কি করে?
"ম্যাগনেটিক রে " ট্রাক করে কিভাবে সে
অপরাধী কে ধরবে বুঝতে পারছে না শাহরিয়ার।
এরপরের কয়েকদিন কেটে গেছে, কোন
ইম্প্রুভমেন্ট নেই। পুলিশ সহাস্যে শাহরিয়ারের
জিপিএস হ্যাকিং, তাও আবার জাস্ট নিজের
বাসার এরিয়ায় শুনে হো হো করে হেসে উড়িয়ে
দিয়েছে।
অর্থি কিংবা ইলিন, এমনকি শাহরিয়ার নিজে
এই "ম্যাগনেটিক রে" হ্যাকিং সম্পর্কে
আইডিয়া নেই।
এতদিন সমস্যা খুঁজে পাচ্ছিল না, এখন সমস্যা
আছে কিন্তু সলিউশন নেই।
কি করব? কি করব? মাথায় ঘুরছে শাহরিয়ারের।
বারান্দায় বসে কফি খাচ্ছিল। দেখল, আবার
সেই একই যান ল্যান্ড করছে বাড়ির লনে।
আগেই হেই! হেই! বলে চিৎকার করল শাহরিয়ার,
এবার ল্যান্ড করে কি না কি ভাঙে ভিনগ্রহের
প্রাণী। কিন্তু অবাক করে দিয়ে সুন্দর করে
ল্যান্ড করল সে।
যান থেকে নেমে শাহরিয়ার কে
 হাই! হ্যালো! করল
শুকনো চিকনাকার হাত দুটো নেড়ে।
যানে লক করে সোজা শাহরিয়ারের বাসায়
এসে বেল দিল সে।
-হাই
-হ্যালো,বলে ভেতরে আসতে দিল শাহরিয়ার।
প্লিজ, সিট।
-থ্যাংকস। আজ ভুল করে ল্যান্ড করিনি,"অ্যাই
হ্যাভ সলভ দিজ ইস্যু " বলে থামল ভিনগ্রহের
প্রাণী।
হাত বাড়িয়ে বলল,  আমি টুইটন! ক্যাপিটাল
সাস্টেশিয়াস আমার আবাস্থল।
এখানে এক বন্ধুর কাছে বেড়াতে আসি।
-আচ্ছা। বাই দ্যা ওয়ে, কি খাবেন? চা ওর কফি?
-নো থ্যাংকস। আমি নাইট্রাস ট্রেট্টা
আসিটাইল ছাড়া কিছু খাই না। ইউ নো 'হজমে
সমস্যা!
 এনিওয়ে,
মেইন থিং ইজ, সেদিন মনে করেও বলা হয় নি।
আমার বন্ধুর বাসায় তোমার সে বোটের মত একটা
বোট নজরে এল। ভাবলাম এটা সেই বোট। বাট
স্ট্রেইঞ্জ এটাই তোমার বোট হলে আমাকে
চেনার কথা, কিন্তু চিনল না।
শাহরিয়ার যা একটু  আশার কথা ভাবছিল, তাও
সেটা বেলুনের মত চুপসে গেল।
টুইটন বলল, আজ আসি। আমি খবর পেলে জানাবো।
টুইটন দরজা দিয়ে বেড়িয়েছে প্রায়, শাহরিয়ার
হঠাৎ বলল, আচ্ছা জিপিএস ফিক্স করলে কি
করে? সেটা তো জানাবে একটু?..... মুখ ফিরিয়ে
হাসি দিল টুইটন, বিদঘুটে হাসি, এদের ক্লানের
লোকাল হাসি মে বি। দেখা যায় কিন্তু আওয়াজ
নেই।
বলল, সিউর!
শাহরিয়ার ড্রোন নিয়ে সেই সকাল থেকে বসে
আছে। উড়ে গিয়েই পড়ে যাচ্ছে, না হয় দেয়ালে
বারি খাচ্ছে।
এটা দিয়ে ট্রাক করবে শাহরিয়ার।
জিপিএস বাড়ির নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় কাজ
করে, সেখান থেকে আর বাড়ির ভেতর থেকে
ওয়েভ লেন্থ এক্সামিন করবে। দেন, বাকী কাজ।
ইতিমধ্যে, অর্থি "ট্রেবল" নামে একটা ভাইরাস
নিয়ে কাজ করছে। এটা ইনপুট করা হবে বাইরে
থেকে; হ্যাকারের সার্ভারে (যে শাহরিয়ারের
জিপিএস সিস্টেম হ্যাক করেছে তার নেটওয়ার্ক
এ)
বিকেলের দিকে ড্রোন শুন্যে উড়ে
শাহরিয়ারের কষ্টের  অজস্র ঘামের দাম দিল।
লিনাক্স বেইজড ড্রোনের দুটো কাজ, একসাথে
সে ভালনারেবল এবং রেজিস্টিভ।
তার মানে প্রথমে ড্রোন, বোকা সেজে নিজেই
হ্যাক হবে দেন, হ্যাকার যখন বুঝবে সে হ্যাক
হয়েছে। তখনি সে উল্টো নিজের সিস্টেমে
ট্রেবল নামক ভাইরাস নিজে ইনপুট করে দিবে।
এরপর হ্যাকারের সাথে কানেক্ট হবার কারনে
ড্রোনের ভাইরাস ছড়িয়ে যাবে হ্যাকারের
সার্ভারে। যদি না হ্যাকার আগে থেকে নিজ
সার্ভারে প্রটেকশন চালু না করে।
ড্রোন কাজে লেগে গেল কিন্তু প্রথমটা হলেও
বাকি কাজ হলো না, তবে হ্যাকারের
সার্ভারের নাম জানা গেল।
নাম MkHkZ!
শাহরিয়ার কে যতটুকু হেল্প টুইটন করেছে তার
সবটুকু দিয়ে শুধু জিপিএস কে বোকা বানানো
যায় কিন্তু হ্যাক করা যাচ্ছে না। ভাইরাস তো
দূরের কথা।
শেল প্রটেকশন বেশ কঠিন।
কিন্তু এই MkHkZ টা আসলে কে? আর কেনইবা
করছে?
ভাবতে ভাবতে টুইটন কে মেইল করল শাহরিয়ার।
কিছু একটা অবশ্যই করে টুইটন!
পরদিন, সকালে টুইটন এলো। দুজনে মিলে কাজে
লেগে গেল কিন্তু সবই হচ্ছে, শেষে গিয়ে আর
হচ্ছে না। এরোর আসছে।
কারন ওরা যে শেলকে অ্যাটাক করছে সেটা
নির্দিষ্ট মিনিট পর বদলে যাচ্ছে, তাই আক্সেস
হচ্ছে না হলেও প্রটেকশন থাকায় ফেইল্ড করছে।
শেল ভ্যারিয়েবল।
নাহ, হচ্ছে না। একে ফাঁকি দেয়া যাচ্ছে না।
তার মানে আগে থেকে যেসব ডিভাইসে
প্রটেকশন নেই তারা চাইলেও ফ্রি হতে পারবে
না শুধু শেল পয়েন্ট ভ্যারিয়েবল হবার কারনে।
শাহরিয়ার বুঝল, আর হয়ত এ কারনেই ইয়োটা কাজ
করছে না। হ্যাকার ইয়োটার সিপিইউ তে থাকা
জিপিএস কমান্ড প্রম্পট হ্যাক করেছে। যে
কারনে সেটা রিগেইন করছে না!
টুইটন বলল, মে বি! তবে আমার বন্ধুর বাসায় যে
বোট দেখেছি সেটা তো তোমার ইয়োটা নয়!
শাহরিয়ার বলল, তোমার বন্ধুর নাম ই তো জানা
হয়নি!
টুইটন মাথা তুলে বলল, মিখাইল। আগে আমার
ক্লানে ছিল, এখন তোমার পাশের ক্লানে থাকে
আর আমি সেখানেই আসি বেড়াতে। ওর বাসায়
আসতে গিয়েই তো দু'বার জিপিএস ঝামেলায়
পড়লাম।
শাহরিয়ার এবার নিশ্চিত, মিখাইল এই সেই
হ্যাকার। জিপিএস হ্যাক করা এর কাজ। আর টুইটন
যাকে মিখাইলের বাসায় দেখেছে সেটাই
ইয়োটা।
এখন, একথা টুইটন কে বললে যদি টুইটন শাহরিয়ার
কে হেল্প না করে, তাছাড়া নিজের বন্ধুর
বিরুদ্ধে কেন সে যাবে? যার জন্য সেই দূরের
ক্লান থেকে ছুটে আসে দেখা করতে!
অনেক্ষন ভাবল শাহরিয়ার,
শাহরিয়ার কে ভাবতে দেখে টুইটন বলল, কি
ভাবছ?
শাহরিয়ার বলল, ধরো তোমার বন্ধু যদি এ
হ্যাকার হয় তুমি কি করবে?
একটু ভেবে টুইটন বলল, দ্যাখো, যে কাজটা
করেছে সেটাকে প্রশংসা করতেই হয়। কারন তার
মাঝে ট্যালেন্ট লুকিয়ে আছে। তবে কাজটা
মোটেই ঠিক নয় সেটা মানি। তবে যে করেছে
তার শাস্তি হওয়া উচিত কারন, সে শুধু শত্রুতা
করেই স্রেফ তোমার এরিয়াতে এটা করেছে।
শাহরিয়ার শান্ত গলায় বলল, এটা আর কেউ
করেনি তোমার বন্ধু মিখাইলের কাজ।
আর MkHkZ আইডি টা ওর। এবং ওর বাসায় যে
বোটের কথা বললে সেটাও আমার বোট।
(বলে থামল শাহরিয়ার)
চুপ করে কিছুক্ষন ভেবে টুইটন বলল, আমি
তোমাকে হেল্প করব কারন সে যেটা করছে
সেটা কোন পজিটিভ কাজ নয়।
আমি ওর বাসায় গিয়ে সিস্টেম টার্ন অফ করে
দিচ্ছি।
তুমি এসে তোমার বোট নিয়ে যাও।
আমি বা তুমি এটা হ্যাক করা সম্ভব নয়!
আমি যাচ্ছি, বাই দ্যা ওয়ে তুমি একা এসো না
পুলিশ নিয়ে এসো, সাথে তোমার বানানো
হ্যাকড ড্রোন। প্রমাণ লাগবে। ইয়োটা তো
আছেই!
শাহরিয়ার পুলিশ নিয়ে সরাসরি মিখাইলের
বাসায় গেল।
কিন্ত পুলিশ গিয়ে দেখল, সেখানে কেউ নেই।
বাড়ি খালি।
টুইটন ধোঁকা দিল!
টুইটন কোথায় থাকে, সে ঠিকানা আগেই নিয়ে
রেখেছিল শাহরিয়ার। এবার ওর খোঁজে সে
ঠিকানায় গেল কিন্তু সেখানকার সবাই বলল, দিন
তিনেক নাকি সে ফেরেই নি। তবে টুইটনকে কি
বন্দী করে রেখেছে মিখাইল?
এর পাঁচ পাঁচটি দিন কেটে গেছে। বাসায়
জিপিএস এবার সম্পুর্ন অচল।
কাজ করছে না। ইলিনের সেইম সমস্যা দেখা
দিয়েছে। অর্থি তাই ইলিনের ব্যাটারি খুলে অফ
করে রেখেছে। ইয়োটা গেছে, ইলিন গেলে ভীষণ
প্রব্লেম হবে।
শাহরিয়ার ভাবছে, কি করব বুঝতে পারছি না।
অর্থিও ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছেনা।
শাহরিয়ার বুঝেছে যে করেই হোক, মিখাইলের
সিস্টেম ডাউন করতে হবে। ডাউন হলেই ইয়োটার
জিপিএস কাজ করবে, বাকী কাজ আর
শাহরিয়ার কে করতে হবে না। পুলিশ আসার
আগে ইয়োটা সেটা ভাল করেই হ্যান্ডেল করে
নেবে।
হঠাৎ শাহরিয়ার বলল, অন্য কোন নামে ভাইরাস
এন্টার হচ্ছে না। শে'ল্ল ভ্যারিয়েবল। কেমন হয়
যদি হ্যাকারের MkHkZ নামে ভাইরাসের নাম
করে এন্টার করি!
অর্থি বলল, লেট'স ট্রাই দেন!
ভাইরাসের নাম বদলে দিলাম, ইম্পপ্যাক্ট টাইম
দেয়া হল ০.০০১ মাইক্রো সেকেন্ড।
প্রায় পচিঁশবার চেষ্টার পর, আক্সেস হল।
এরপর ভাইরাস ইনফো পাঠাতে শুরু করল।
হ্যাকারের লোকেশন, ফ্রিকোয়েন্সি, সব।
শাহরিয়ার উচ্ছাসে ভেসে গেল।
এবার ওর সিস্টেম শাট করছি। ভাইরাস এন্টার
করে কমান্ড প্রম্পট বদলে দেওয়ায়, মিখাইলের
বাসায় থাকা ইয়োটা একেক সময় একেক কাজ
করতে লাগল। একবার সে উড়ে, একবার ঘোরে,
কিন্তু ভুল করেও অফ করতে চাইছে না। কারন
ইয়োটার দেয়া সে ভোল্টেজের কথা মনে আছে
মিখাইলের। একবার জিপিএস হ্যাক থেকে
ইয়োটা মুক্ত হয়ে গেলে রক্ষে নেই।
শাহরিয়ার ভাইরাসের গন্ডগোল এদিকে
ভালোমত পাঁকিয়ে দিল।
 এবার অর্থিকে বলল, ভাইরাস ইনপুট সচল রাখতে।
আমি ড্রোন নিয়ে লোকেশন ট্রাক করে সেখানে
পুলিশ নিয়ে যাচ্ছি।
মিনিট কুঁড়ি লাগল পুলিশকে বোঝাতে।
বেচারারা বোঝেই না!
গাড়ি নিয়ে বাসায় যেতেই দেখতে পেল,
মিখাইল বাসায় ব্যাপক ব্যাস্ত।
শাহরিয়ার কে দেখে অবাক হল, সেই সাথে
পুলিশ প্লাটুন!
ইয়োটার ব্যাটারি খুলে রেখেছে মিখাইল। তবে
ঘরে ঢুকেই দেখা গেল বিশাল তছনছ দশা।
জিনিসপত্র এলোমেলো।
পুলিশ ঘর তল্লাশি শুরু করল। টুইটন কে পাওয়া গেল
হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় খাটের নীচে। সাথে
একটা বোট আছে, যেটার ব্যাটারি খোলা।
পুলিশ টুইটন এবং বোট (ইয়োটাকে) বাইরে আনল।
শাহরিয়ার ইয়োটার ব্যাটারি কানেক্ট করে
সেটা সুইচ অন করল।
অন হতেই তেড়ে গেল ইয়োটা!! মিখাইল কে
দেখেই তার মেজাজ গরম হয়েছে।
শাহরিয়ার মিখাইল কে বলল, কি মিখাইল?
সিস্টেমে জটিলতা?
আরেকবার "টার্ন অন " করার ইচ্ছে আছে?
পুলিশ হাত কড়া দেবার আগে। ২০০ ভোল্ট ইনপুট
করেছে ইয়োটা।
শাহরিয়ার বলল, আরে না না!! নো পুলিশ উইল
হ্যান্ডেল হিম!
ইয়োটা বলল, উপ্স! জাস্ট ২০০ ভোল্ট! সরি!
(সমাপ্ত)

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...