সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬

চতুষ্কোণ





মোয়াজ্জেম মিয়া বিড়ি ফুঁকছেন,
তাও আবার বেশ আয়েস করে, বিড়ির পেছন দিকটা ডান হাতের মুঠোতে পুরে ক্রমাগত ধোয়া ছাড়ছেন তিনি। ধোয়া মুখে নিচ্ছেন বেশ টেনে টেনে। ধোয়া ছাড়াতেও এক্সপার্ট! গোল করে ধোয়া ছাড়ছেন আবার ট্রেনের ধোয়ার মত ফুঁকছেন তিনি।
পেছন থেকে সঙ্গী আবুলের ফিসিফিসানি
"ওই মনা? ওই!"
মোয়াজ্জেম মিয়া এখন নেশায় বুদ, কিছুই কানে আসছে না তার।
বাধ্য হয়ে আবুল ছুটে এল, হাতে মোটা স্টিল কালারের টর্চ।
ক্যারে হালা! আমি কি একলাই ট্যাহা নেই নাকি?
তুই নেস না? যেমনে টানতাছস তাতে দেইখা মনে হয় গঞ্জি যারা খায় হ্যাতেগো হুশ তর চেয়ে ভালা।
মোয়াজ্জেম বলল "ক্যারে মাম্মা, চ্যাতস ক্যাঁ?
এট্টু জোশ কইরা টানতাছিলাম, রাগস ক্যারে?
আস্তে কতা ক, চুপ কর!
পাশের সারি থেকে আওয়াজ পেয়ে বেশ সতর্ক হয়ে উঠে আবুল। ডান হাতে মোয়াজ্জমের মুখও চেপে ধরে সে।..... চুপ! কত কইস না।
ওদের কে অবাক করে একটা কালো বিড়াল বেড়িয়ে আসে সেখান থেকে।
গ্রামের শেষ প্রান্তে কবর স্থানে ওরা দুজন। কি করছে সেখানে এত রাতে?
মোয়াজ্জেম গলা খাঁকড়ি দিয়ে কর্কশ শব্দে হাসি দিল খ্যাক,, খ্যাক। শ্যাষ ম্যাষ বিলাই দেইখা ডরাইলি মাম্মা!
ধুর চুপ কর! এত কতা কস ক্যারে ধরা খাইলে কি হইব জানস নি?
কি হইব? তুই ক?
মাইরা মাটিত পুতি ফালাইব!
হোন মাম্মা, এহনো আমরা ধরা খাই নাই আর খামুও না!
চুপ থাক! কাইল্কা গেছিলি কই? হ্যা! আমি যে একলা একলাই মাল ডেলিভারি দেলাম। তহন কই আছিলি?
মাম্মা তুমি তো জান, একটু ফুর্তি-ফার্তি না করলে আমার চলে না তাই গেছিলাম.....
চুপ কর বুঝছি এলা কাম কর মাল ভানে উঠা তাড়াতাড়ি, উত্তর পাশে রাখসি। আমি মাটি দিয়া আইতাসি।
মোয়াজ্জেম ঘড়ি দেখল, ভোর ৩টা ২৩ মিনিট। সূরা পড়ে বুকে একবার ফুঁ দিয়ে নিল সে। লাশ বেশ ভারি। এই গ্রামের তবারক আলীর লাশ। একমাস হইছে মারা গেছে। বেচেঁ থাকতে মোয়াজ্জেম মিয়াঁ তার বাড়ি বহুবার গেছে। লোকটার দানের হাত ভাল ছিল বিঘা বিঘা জমি! কিন্তু পোলার বিয়া দিয়া পড়ছিল বিপদে ভাল দুওটা পোলা জমি-জিরত নিয়া মারামারি কইরা মরে আরকি!
শেষতক জমি-জিরত ভাগ করে দিলেন। পোলারা ভিন্ন হয়ে গেল যে যার ব্যাবসা বুঝে গেল। এক পোলা সবকিছু বেচে দিয়ে চলে গেল শহরে, আরেক পোলা বাপের খবর ই নেয় নাই। হায় কপাল! এতো টাকা পয়সা থাকতে বেচারা অবহেলায় মইরা গেল! এমন দশ যে কবর দেওনের মানুষ পাওয়া যায়না। সবাই দোষ দিল পোলার বউ গুলারে!
পোলার বউ গুলাই নাকি পোলাগোর মাথা খাইছে!
আহারে!
ভ্যানে লাশ উঠিয়ে কাপড় দিয়ে ঢাকতে যাবে তখন কেন জানি মোয়াজ্জমের মনে হল লোকটির মুখ একবার দেখি! কি হবে দেখলে? তাকে তো আর চিনে ফেলার কিছু নেই! মৃত মানুষ সাক্ষী দেবে ক্যামনে?
মুখ থেকে কাফনের কাপড়টা সরাল আস্তে করে, মুখটা মলিন, চামড়া শুকিয়ে হাড়ে লেগে গেছে। দাঁতের উপরের পাটি দেখা যাচ্ছে।
ভয়, মায়া দুই কাজ করছে মোয়াজ্জমের মনে। একমনে দেখছিল লাশ!
হই! কি দেখস রে!
আচমকা ভয়ে ঘাবড়ে গেল মোয়াজ্জেম।
পেছন থেকে আবুল কেলিয়ে হাসছে, মাম্মা! এই নেকি? তোমারে দিয়া হইব না! লও তারাতারি।
ভ্যান চালিয়ে বাজারের দিকে চলে আসে ওরা দুজন। বাজার এখন ফাঁকা।
ব্যাকলাইট জ্বালিয়ে এক লোক মাফলার গলায় গাড়িতে বসে আছে। হাতে বেশ দামি সিগারেট যেটা এই গ্রামে পাওয়া যায় না। গত বছর আবুলের সাথে তার চুক্তি হয়ছে লাশ কেনা বেচার।
আজ তার দশ নাম্বার ডিল। গ্রামের লোকজন বোকা তাই হাজার সাত আট টাকায় লাশ তুলে বিক্রি করতে রাজী হয়। আবুল তাদের একজন!
ভ্যান চালিয়ে নিয়ে আসে মোয়াজ্জেম। পেছনে লাশের সাথে বসে থাকা আবুল চাপাস্বরে মোয়াজ্জেম কে ইশারা করে দেখায় ওই দেখ! স্যার আইছে।
চলুন দেখি কে এই স্যার।
শহরের একটি নামি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ফরেন্সিক বিভাগের শিক্ষক। নিজের পেশার পাশাপাশি লাশের ব্যাবসা করেন। যখনই ছাত্র ভর্তির সময় আসে তখনি তার ব্যাবসা জমজমাট হয়ে উঠে। ৩০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকার মত হাড় বিক্রি করার রেকর্ড আছে তার। মাঝে চার-পাঁচ জন মিলে করতেন তবে এখন একাই করেন। যেটা কেউ জানে না। এমনকি তার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী কেউ না।
লাশ কথামত দ্রুত গাড়ীতে তুলে দিল আবুল। মেডিক্যাল কলেজের আম্বুলেন্স। নামটা দেখল মোয়াজ্জেম। গাড়ির ভেতর বসে থাকা লোকটা বাইরে এল না। আবুল গাড়ির পাশে গিয়ে স্যার স্যার করে মুখে ফেনা তুলে ফেলল!
লোকটা গাড়ির জানালা দিয়ে টাকা গুলো আবুলের হাতে দিয়ে গাড়ী হাঁকিয়ে চলে গেল। এবার মোয়াজ্জমের হুশ ফিরল, লোকটা কাকে নিয়ে গেল? তবারক আলী! যে কিনা মোয়াজ্জেম মিঁয়ার বাপের বন্ধু ছিল। ছোট বেলায় কাক্কু কাক্কু করে এক টাকার লজেন্স খাওয়ার জন্য পেছনে ঘুরত মোয়াজ্জেম!
চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, চোয়াল শক্ত হয়ে আসে মোয়াজ্জমের ........

মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৬

ছোট গল্পঃ তবুও ভুল



ভাই, লাল গোলাপ টা! (হাতের তর্জনী দিয়ে নির্দেশ করে অর্ক)
কোনটা ভাই? (ফুলের দোকানীর বিরক্তিপ্রকাশ)
যে ডানপাশে, আমি দেখছি -আপনি দেখেন
না?
ভাই, সকাল বেলা ট্রাক ভইরা ফুল আনি, এত ফুলের মাঝে সব ফুলই তো একরকম লাগে!
আচ্ছা, রাখেন তো আমাকে তিনটা ফুল জলদি দেন
(খপ করে তিনটা লাল গোলাপ তুলে দিল বিক্রেতা)
ম্যানিব্যাগের তিন নম্বর পকেটে অপেক্ষা করছিল বিনিময় মূল্য সেটা হাত এগিয়ে গেল
ফুলের বিক্রেতার কাছে
পাঁচশ!! ছোট হইব না ভাই?
মুখ বাঁকা করে দোকানীর জবাব, ভাই ভাংতি নাই যে!
অর্ক এবার ভালরকম বিরক্ত, "ভাই, জোগাড় করেন
"
মুখের মাফলার শক্ত করে জড়িয়ে ফুল দোকানী সাথের
ছেলেটাকে সে বলল, "সামসু দেখ তো দোকান, আমি আইতাছি এহনি "!
অর্কের হাত থেকে ৫০০ টাকার নোটখানা
নিয়ে অর্ককে হাতের ইশারা দিল বিক্রেতা,
 "আসেন ভাই, এত সকালে মাগনা ভাংতি পাইবেন
না- তাই আসেন, চা খাই চা খাইলে ভাংতি আর শীত দুইটাই হইব "
অর্কের তাড়াহুড়ো নেই, তাই ঘাড় কাত করে
'হ্যাঁ-সূচক সম্মতি দেয়

শাহবাগের মোড় অফিস টাইম হলো বলে, ভীর শুরু হয়নি এখনো যানবাহনের প্যাঁ প্যোঁ
সিগনাল পার হয়ে রাস্তার এপারে এল দুজন,
ফুলের দোকানী টঙে এসেই অর্ডার করল "দুই কাপ চা দেন তো মকবুল ভাই "
অর্ক বুঝল, টঙের দোকানী ফুল ব্যাবসায়ী পূর্ব পরিচিত
স্যুটেট বুটেড অর্ক ভারী পোষাক পড়ে আছে
রোদের উত্তাপে এখন গরম লেগে যাচ্ছে ওর
গলার টাইয়ের নট টা টেনে খানিক টা আলগা
করল অর্ক "উফ! "
শাহবাগের সিগনাল, তারপর ঢাকা ইউনিভার্সিটি কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়

অর্কেরও স্বপ্ন ছিল, সে কত হবে এগারো? না না, বারো বছর আগে স্বপ্ন বলেই মনে মনে শুকনো হাসি অর্কের

এদিক-ওদিক ফিরে বসার জায়গা পেল অর্ক, ফুটপাতের রাস্তা প্যান্টের লেগে থাকা শুকনো ধূলো ঝেড়েই
ফুটপাতের আইল্যান্ডে বসে গেল চুপচাপ
চা বিক্রেতা গলা খাঁকারি দিয়ে ফুল
দোকানীর সাথে কথায় ব্যাস্ত, "দেখছেন নি ব্যাপার
খান? কাইল্কা রাইতে ফোনেবৌ কয় শাড়ি পাডান,বহুত দিন হই গেছে আপনে ঢাকায়? ভুলি গেছেন?
হ্যাতিরে ফোন কিনি দেওনই ভুল হই গেছে, মিনিটে মিনিটে ফোন করি "কোনায় আছি,
কি কইরতেছি খালি এইসব প্রশ্ন করি চান্দির ভোল্টেজ বাড়াই দেয় তারপর ট্যাকা শেষ হই গেলে, রিচার্জ করি
দেওনের লাই ফোন দেয় কি যে করি? জ্বালায় ফড়ি গেছি এক্কানে!"

চায়ের কাপে চামচের টুংটাং শব্দে গাড়ির হর্ণ বাগড়া দেয় ভীর হয়নি এখনো তবে রাস্তায় পথচারী অনেক

দোকানী চায়ের কাপ দুটো হাতে নিয়ে তার একটি অর্কের দিকে এগিয়ে দেয়
"ভাই, এই নেন চা খুব ভালো বানায় চায়ের
বিল আমিই দিমু সমস্যা নাই হে হে "

অর্ক চায়ে চুমুক দেয়, চা ভালো হয়েছে কিন্তু চায়ের চেয়ে চা বিক্রেতার কথা অর্কের বেশী ভালো লাগছে
যদিও তাদের পারিবারিক খুনসুটি, শোনা মোটেই উচিত নয় তবুও সে মাইকের গলায় বলে মনে হয় নিজেকেই মনের থেকে হালকা করছে
একে বলা যায় কথার বন্ধুত্বওরা দুজনে গালগপ্প করতেই থাকে

চা খাবার ফাঁকে অর্কের ফোন বাজে এদের কথার ফাঁকে
ফোন হাতে কার সাথে যেন কথা বলে অর্ক
"হ্যাঁ শাহবাগের মোড়ে সিগনাল টার জাস্ট অপোজিট " ফোনে কাকে যেন পথের নির্দেশ
দিল অর্ক
কথা শেষ করেই কাপ নিয়ে ফের ফুটপাতে বসল অর্ক
এদিকে চা বিক্রেতা এবং ফুলের দোকানী একে অপরের পরিবারের ব্যাপারে আলাপ জম্পেশ করে টেনে নিচ্ছে

প্রায় দশ মিনিট, হঠাৎ হর্ণ তুলে কালো অডি এসে থামল
দোকান ঘেঁষে
গ্লাস নামিয়ে সেটার ড্রাইভিং সিটে থাকা লোকটি অর্ককে ডাকল
"স্যার, আপনি এখানে? এই চা খাচ্ছেন?"
অর্ক হেসে বলল, "নো প্রব আশিক"
আসো, "তুমিও এক কাপ খাও, ভালোই বানায় "
আশিক ইতস্ততভাবে এগিয়ে আসে "স্যার,দেরী করবেন না ঢাকার রাস্তায় যে কি জ্যাম, আজকে বুঝবেন"

এদিকে দুজন অর্কের অডি দেখে মুখ "হা " করে তাকিয়ে আছে
অতি উৎসুকভাবে ফুল দোকানী জিজ্ঞেস করল, "ভাই, আপনে কি কোন এম পি আত্বীয়? এত দামী গাড়ি?"
না (হালকা হেসে জবাব অর্কের)
ফুলের দোকানী, এবার জোর গলায় চা
দোকানী কে বলে "ভাই, স্যার রে আরেক কাপ চা দাও "ট্যাকা আমিই দিমু "
অর্ক না করে ওর দেরী হয়ে যাবে কাজ আছে ওর, অন্যদিন হবে আরেক কাপ
ফুল দোকানী অতিউৎসাহী হয়ে,
"স্যার, আপনে আবার আসলে সোজা আমার ফুলের দোকানে আসবেন যে ফুল লাগব বলবেন ফুলের দাম আজ লাগব না স্যার" আমার নাম
কাশেম
 এই যে স্যার, এইটা আমার কার্ড (হাত বাড়িয়ে
অর্কের হাতে দিল ফুল দোকানী কাশেম)
অর্ক হাসিমুখে বলে, "থাক, আমাকে আর টাকা ফেরত দিতে হবে না"
-ক্যান স্যার, মাইন্ড করছেন?
-আরে না না! ইচ্ছে করেই তোমার সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটালাম
-আপনি কি করেন স্যার?
আরেক দিন দেখা হলে বলব কাশেম আজ আসি

কাশেম অর্কের সাথে আগ বাড়িয়ে হাত মেলায় ঊচ্ছল দৃষ্টিতে
প্রভুভক্ত দৃষ্টি তে যাবার পথে হাসিমুখে বিদায় জানায় কাশেম

অর্ক গাড়িতে গিয়ে বসে এখন সে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য যাবে ড্রাইভার আশিক এসির হাওয়া বাড়িয়ে দেয়
অর্কের হাতের ফুল তিনটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এক মনে দেখতে থাকে তিনটে ফুলের দিকে তাকিয়ে এক গাল হাসির পর আবার মুহুর্তে অশ্রুকণা দেখা যায় দু'চোখে

এসির বাতাসে নেশা লাগে অর্কের তন্দ্রা আসে, ওর ঘুম পাচ্ছে
কেন ঘুম পাচ্ছে?
ক্লান্তিতে? না.......

গাড়ি তুমুল গতিতে ছুটছে,
অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছে মনে হয় ঘুম ভেঙে চোখ মেলল অর্ক  "আমরা কোথায় এখন আশিক? "
"কাছাকাছি স্যার "
আড়মোড়া ভেঙে অর্ক বলল, আশিক, এসি অফ করে জানালা খুলে দাও
আর কতক্ষণ লাগবে?
মে বি মিনিট দশ!
গাড়িটা এসে থামল নারিন্দার সিমেট্রিতে

আশিক বলল, "স্যার এসে গেছি আমি কি.. ?"
(হাতের ইশারায় না-সূচক দেখালো অর্ক)
এরপর গাড়ি থেকে নেমে ধীর পায়ে সিমেট্রির দিকে গেল অর্ক
ঠিক বাম সাড়ি ধরে ঠিক আঠারো নম্বর
হাটু ভাজ করে সমাধিতে এক এক করে তিনটে ফুল দিল অর্ক
ফুল দিয়েই অঝোরে কেঁদে দিল সে ঝর ঝর করে অশ্রুকণা বৃষ্টির মত আছড়ে পড়ল সিমেট্রি তে অর্ক কে কাঁদতে দেখে এগিয়ে এলেন ফাদার
বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলেন, অর্ককে কাঁদতে দেখে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলেন বললেন,
"হ্যালো চাইল্ড! কেঁদো না প্রে ফর হার মে হার সোওল রেস্ট ইন পিস"
অর্ক কেঁদে চলেছে (কেউ সহানুভূতি দেখালে মনের শিশুসুলভ মন জেগে উঠে, কান্নার আকার বেড়ে যায়)
ফাদার অর্কের মাথায় হাত রাখলেন
অর্ক ফাদারের কাঁধে মাথা রেখে সশব্দে কেঁদে দিল
দূর থেকে আশিকও দাঁড়িয়ে চোখ মুছছে

ফাদার অর্ককে জিজ্ঞেস করলেন, "তোমার দূঃখ্য খুলে বল চাইল্ড "
অর্ক বলতে থাকে....
'অর্ক ছিল ঢাবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং
এর স্টুডেন্ট এটা অবশ্য বারো বছর আগের কথা
'অর্ক গঞ্জালেস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন প্রেম বাংলা ডিপার্টমেন্ট এর মীরা গোমেজের সাথে ছোট করে গোলগাল মেয়েটা প্রথমে প্রেম লুকোচুরি আর ভার্সিটির বন্ধুমহলে সীমাবদ্ধ ছিল পরে পরিবারে জানাজানি আর ঝামেলার শুরু '
অর্ক স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে বাবা বিশাল ব্যাবসায়ী ছিলেন অর্ক তার একমাত্র ছেলে কিন্তু সব মেনে নিলেও ছেলের প্রেম মানেন নি তারা অর্ক একরকম বাড়ি ছাড়া
নিজেরা বিয়ে করে দুই পরিবারের থেকে আলাদা থাকতে শুরু করে পড়াশোনার পাশাপাশি একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরী পায় অর্ক মীরা পায় স্কুলের শিক্ষিকার চাকরী
বেশ ভালোই যাচ্ছিল ওদের

অর্ক এর মাঝে পেয়ে যায় স্কলারশিপ দেশের বাইরে যেতে হবে, মীরা কে দেখবে এখন?
দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে অর্ক মীরা, অর্ককে বিদেশে যেতে বলে, নিয়ে ওর কোন সমস্যা হবে না বরং এত বড় সুযোগ অর্কের মিস করা উচিত হবে না

অর্ক একদিন বাসায় মীরা এবং ওর স্কলারশিপ নিয়ে কথা বলে এত দিনে পরিবারের মাঝে বরফ গলে, মীরাকে তারা পুত্রবধূ করে ঘরে তোলে অর্ক নিশ্চিন্তে লন্ডনের জন্য ফ্লাই করে
রোজ কথা হয় দুজনের পরিবারেও সবাই মীরাকে পেয়ে খুব খুশী ভাল চলতে থাকে
অর্ক তখন লন্ডনে পি এইচ ডি তে ব্যাস্ত কিন্তু একদিন হঠাৎ শুনতে পায়
মীরা রোড আক্সিডেন্টে আহত
অর্ক দেশে ফেরার আগে, মীরা অর্ককে ফাঁকি দিয়ে
চলে যায় না ফেরার দেশে
অর্ক ফেরে কিন্তু মীরা নেই অর্ক এখন লন্ডনেই থাকে
ফেরে বছরে শুধু একবার নভেম্বরের একুশ তারিখ
চেষ্টা করে এদিনই বাংলাদেশে আসতে
ফাদার জানতে চান, "কিন্তু চাইল্ড, তুমি শুধুগোলাপ ফুল গ্রেভইয়ার্ডে কেন দিচ্ছ?"
অর্ক বলতে থাকে,
"ফাদার, আমি শুধু তিনটি গোলাপ, তিনটি দিনকে মনে করে দিই
প্রথমটি, মীরাকে প্রপোজের জন্য প্রতিবছর দেয়া হত
দ্বিতীয়টি, আমাদের ম্যারিজ এনিভার্সারির জন্য
তৃতীয়টি, একটু ভিন্ন, মীরা গোলাপ খুব ভালোবাসত
প্রায় বাইরে কিছু আনতে হলেই সাথে গোলাপ আনতে বলত অর্ককে
নিয়ে অর্ককে বললে, পড়াশোনার অজুহাতে কানে তুলত না
মীরা অর্কের কাছে একটা গোলাপ চেয়েছিল সেটা আর দেয়া হয়নি এটা সে ভুলের জন্য
অর্ক আবার কাঁদতে থাকে, এবার অবিরত....

ফাদার গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন অর্ককে
ফাদার বললেন, "গড ব্লেস ইউ চাইল্ড " গুডবাই
কান্নারত অর্ক কে এগিয়ে নেয় আশিক
স্যার, আসেন আবার দেরী হয়ে যাবে
আজ রাতের ১১:৩০ এর ফ্লাইটে লন্ডন ফিরে
যাবে অর্ক
আগামী বছর হয়ত আবার আসবে আবার তিনটি গোলাপ নিয়ে

(সমাপ্ত)

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...