মোয়াজ্জেম মিয়া বিড়ি
ফুঁকছেন,
তাও আবার বেশ আয়েস করে, বিড়ির পেছন দিকটা ডান হাতের মুঠোতে পুরে ক্রমাগত ধোয়া ছাড়ছেন তিনি। ধোয়া মুখে নিচ্ছেন বেশ টেনে টেনে। ধোয়া ছাড়াতেও এক্সপার্ট! গোল করে ধোয়া ছাড়ছেন আবার ট্রেনের ধোয়ার মত ফুঁকছেন তিনি।
পেছন থেকে সঙ্গী আবুলের ফিসিফিসানি
"ওই মনা? ওই!"
মোয়াজ্জেম মিয়া এখন নেশায় বুদ, কিছুই কানে আসছে না তার।
বাধ্য হয়ে আবুল ছুটে এল, হাতে মোটা স্টিল কালারের টর্চ।
ক্যারে হালা! আমি কি একলাই ট্যাহা নেই নাকি?
তুই নেস না? যেমনে টানতাছস তাতে দেইখা মনে হয় গঞ্জি যারা খায় হ্যাতেগো হুশ তর চেয়ে ভালা।
মোয়াজ্জেম বলল "ক্যারে মাম্মা, চ্যাতস ক্যাঁ?
এট্টু জোশ কইরা টানতাছিলাম, রাগস ক্যারে?
আস্তে কতা ক, চুপ কর!
পাশের সারি থেকে আওয়াজ পেয়ে বেশ সতর্ক হয়ে উঠে আবুল। ডান হাতে মোয়াজ্জমের মুখও চেপে ধরে সে।..... চুপ! কত কইস না।
ওদের কে অবাক করে একটা কালো বিড়াল বেড়িয়ে আসে সেখান থেকে।
গ্রামের শেষ প্রান্তে কবর স্থানে ওরা দুজন। কি করছে সেখানে এত রাতে?
মোয়াজ্জেম গলা খাঁকড়ি দিয়ে কর্কশ শব্দে হাসি দিল খ্যাক,, খ্যাক। শ্যাষ ম্যাষ বিলাই দেইখা ডরাইলি মাম্মা!
ধুর চুপ কর! এত কতা কস ক্যারে ধরা খাইলে কি হইব জানস নি?
কি হইব? তুই ক?
মাইরা মাটিত পুতি ফালাইব!
হোন মাম্মা, এহনো আমরা ধরা খাই নাই আর খামুও না!
চুপ থাক! কাইল্কা গেছিলি কই? হ্যা! আমি যে একলা একলাই মাল ডেলিভারি দেলাম। তহন কই আছিলি?
মাম্মা তুমি তো জান, একটু ফুর্তি-ফার্তি না করলে আমার চলে না তাই গেছিলাম.....
চুপ কর বুঝছি এলা কাম কর মাল ভানে উঠা তাড়াতাড়ি, উত্তর পাশে রাখসি। আমি মাটি দিয়া আইতাসি।
মোয়াজ্জেম ঘড়ি দেখল, ভোর ৩টা ২৩ মিনিট। সূরা পড়ে বুকে একবার ফুঁ দিয়ে নিল সে। লাশ বেশ ভারি। এই গ্রামের তবারক আলীর লাশ। একমাস হইছে মারা গেছে। বেচেঁ থাকতে মোয়াজ্জেম মিয়াঁ তার বাড়ি বহুবার গেছে। লোকটার দানের হাত ভাল ছিল বিঘা বিঘা জমি! কিন্তু পোলার বিয়া দিয়া পড়ছিল বিপদে ভাল দুওটা পোলা জমি-জিরত নিয়া মারামারি কইরা মরে আরকি!
শেষতক জমি-জিরত ভাগ করে দিলেন। পোলারা ভিন্ন হয়ে গেল যে যার ব্যাবসা বুঝে গেল। এক পোলা সবকিছু বেচে দিয়ে চলে গেল শহরে, আরেক পোলা বাপের খবর ই নেয় নাই। হায় কপাল! এতো টাকা পয়সা থাকতে বেচারা অবহেলায় মইরা গেল! এমন দশ যে কবর দেওনের মানুষ পাওয়া যায়না। সবাই দোষ দিল পোলার বউ গুলারে!
পোলার বউ গুলাই নাকি পোলাগোর মাথা খাইছে!
আহারে!
ভ্যানে লাশ উঠিয়ে কাপড় দিয়ে ঢাকতে যাবে তখন কেন জানি মোয়াজ্জমের মনে হল লোকটির মুখ একবার দেখি! কি হবে দেখলে? তাকে তো আর চিনে ফেলার কিছু নেই! মৃত মানুষ সাক্ষী দেবে ক্যামনে?
মুখ থেকে কাফনের কাপড়টা সরাল আস্তে করে, মুখটা মলিন, চামড়া শুকিয়ে হাড়ে লেগে গেছে। দাঁতের উপরের পাটি দেখা যাচ্ছে।
ভয়, মায়া দুই কাজ করছে মোয়াজ্জমের মনে। একমনে দেখছিল লাশ!
হই! কি দেখস রে!
আচমকা ভয়ে ঘাবড়ে গেল মোয়াজ্জেম।
পেছন থেকে আবুল কেলিয়ে হাসছে, মাম্মা! এই নেকি? তোমারে দিয়া হইব না! লও তারাতারি।
ভ্যান চালিয়ে বাজারের দিকে চলে আসে ওরা দুজন। বাজার এখন ফাঁকা।
ব্যাকলাইট জ্বালিয়ে এক লোক মাফলার গলায় গাড়িতে বসে আছে। হাতে বেশ দামি সিগারেট যেটা এই গ্রামে পাওয়া যায় না। গত বছর আবুলের সাথে তার চুক্তি হয়ছে লাশ কেনা বেচার।
আজ তার দশ নাম্বার ডিল। গ্রামের লোকজন বোকা তাই হাজার সাত আট টাকায় লাশ তুলে বিক্রি করতে রাজী হয়। আবুল তাদের একজন!
ভ্যান চালিয়ে নিয়ে আসে মোয়াজ্জেম। পেছনে লাশের সাথে বসে থাকা আবুল চাপাস্বরে মোয়াজ্জেম কে ইশারা করে দেখায় ওই দেখ! স্যার আইছে।
চলুন দেখি কে এই স্যার।
শহরের একটি নামি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ফরেন্সিক বিভাগের শিক্ষক। নিজের পেশার পাশাপাশি লাশের ব্যাবসা করেন। যখনই ছাত্র ভর্তির সময় আসে তখনি তার ব্যাবসা জমজমাট হয়ে উঠে। ৩০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকার মত হাড় বিক্রি করার রেকর্ড আছে তার। মাঝে চার-পাঁচ জন মিলে করতেন তবে এখন একাই করেন। যেটা কেউ জানে না। এমনকি তার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী কেউ না।
লাশ কথামত দ্রুত গাড়ীতে তুলে দিল আবুল। মেডিক্যাল কলেজের আম্বুলেন্স। নামটা দেখল মোয়াজ্জেম। গাড়ির ভেতর বসে থাকা লোকটা বাইরে এল না। আবুল গাড়ির পাশে গিয়ে স্যার স্যার করে মুখে ফেনা তুলে ফেলল!
লোকটা গাড়ির জানালা দিয়ে টাকা গুলো আবুলের হাতে দিয়ে গাড়ী হাঁকিয়ে চলে গেল। এবার মোয়াজ্জমের হুশ ফিরল, লোকটা কাকে নিয়ে গেল? তবারক আলী! যে কিনা মোয়াজ্জেম মিঁয়ার বাপের বন্ধু ছিল। ছোট বেলায় কাক্কু কাক্কু করে এক টাকার লজেন্স খাওয়ার জন্য পেছনে ঘুরত মোয়াজ্জেম!
চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, চোয়াল শক্ত হয়ে আসে মোয়াজ্জমের ........
তাও আবার বেশ আয়েস করে, বিড়ির পেছন দিকটা ডান হাতের মুঠোতে পুরে ক্রমাগত ধোয়া ছাড়ছেন তিনি। ধোয়া মুখে নিচ্ছেন বেশ টেনে টেনে। ধোয়া ছাড়াতেও এক্সপার্ট! গোল করে ধোয়া ছাড়ছেন আবার ট্রেনের ধোয়ার মত ফুঁকছেন তিনি।
পেছন থেকে সঙ্গী আবুলের ফিসিফিসানি
"ওই মনা? ওই!"
মোয়াজ্জেম মিয়া এখন নেশায় বুদ, কিছুই কানে আসছে না তার।
বাধ্য হয়ে আবুল ছুটে এল, হাতে মোটা স্টিল কালারের টর্চ।
ক্যারে হালা! আমি কি একলাই ট্যাহা নেই নাকি?
তুই নেস না? যেমনে টানতাছস তাতে দেইখা মনে হয় গঞ্জি যারা খায় হ্যাতেগো হুশ তর চেয়ে ভালা।
মোয়াজ্জেম বলল "ক্যারে মাম্মা, চ্যাতস ক্যাঁ?
এট্টু জোশ কইরা টানতাছিলাম, রাগস ক্যারে?
আস্তে কতা ক, চুপ কর!
পাশের সারি থেকে আওয়াজ পেয়ে বেশ সতর্ক হয়ে উঠে আবুল। ডান হাতে মোয়াজ্জমের মুখও চেপে ধরে সে।..... চুপ! কত কইস না।
ওদের কে অবাক করে একটা কালো বিড়াল বেড়িয়ে আসে সেখান থেকে।
গ্রামের শেষ প্রান্তে কবর স্থানে ওরা দুজন। কি করছে সেখানে এত রাতে?
মোয়াজ্জেম গলা খাঁকড়ি দিয়ে কর্কশ শব্দে হাসি দিল খ্যাক,, খ্যাক। শ্যাষ ম্যাষ বিলাই দেইখা ডরাইলি মাম্মা!
ধুর চুপ কর! এত কতা কস ক্যারে ধরা খাইলে কি হইব জানস নি?
কি হইব? তুই ক?
মাইরা মাটিত পুতি ফালাইব!
হোন মাম্মা, এহনো আমরা ধরা খাই নাই আর খামুও না!
চুপ থাক! কাইল্কা গেছিলি কই? হ্যা! আমি যে একলা একলাই মাল ডেলিভারি দেলাম। তহন কই আছিলি?
মাম্মা তুমি তো জান, একটু ফুর্তি-ফার্তি না করলে আমার চলে না তাই গেছিলাম.....
চুপ কর বুঝছি এলা কাম কর মাল ভানে উঠা তাড়াতাড়ি, উত্তর পাশে রাখসি। আমি মাটি দিয়া আইতাসি।
মোয়াজ্জেম ঘড়ি দেখল, ভোর ৩টা ২৩ মিনিট। সূরা পড়ে বুকে একবার ফুঁ দিয়ে নিল সে। লাশ বেশ ভারি। এই গ্রামের তবারক আলীর লাশ। একমাস হইছে মারা গেছে। বেচেঁ থাকতে মোয়াজ্জেম মিয়াঁ তার বাড়ি বহুবার গেছে। লোকটার দানের হাত ভাল ছিল বিঘা বিঘা জমি! কিন্তু পোলার বিয়া দিয়া পড়ছিল বিপদে ভাল দুওটা পোলা জমি-জিরত নিয়া মারামারি কইরা মরে আরকি!
শেষতক জমি-জিরত ভাগ করে দিলেন। পোলারা ভিন্ন হয়ে গেল যে যার ব্যাবসা বুঝে গেল। এক পোলা সবকিছু বেচে দিয়ে চলে গেল শহরে, আরেক পোলা বাপের খবর ই নেয় নাই। হায় কপাল! এতো টাকা পয়সা থাকতে বেচারা অবহেলায় মইরা গেল! এমন দশ যে কবর দেওনের মানুষ পাওয়া যায়না। সবাই দোষ দিল পোলার বউ গুলারে!
পোলার বউ গুলাই নাকি পোলাগোর মাথা খাইছে!
আহারে!
ভ্যানে লাশ উঠিয়ে কাপড় দিয়ে ঢাকতে যাবে তখন কেন জানি মোয়াজ্জমের মনে হল লোকটির মুখ একবার দেখি! কি হবে দেখলে? তাকে তো আর চিনে ফেলার কিছু নেই! মৃত মানুষ সাক্ষী দেবে ক্যামনে?
মুখ থেকে কাফনের কাপড়টা সরাল আস্তে করে, মুখটা মলিন, চামড়া শুকিয়ে হাড়ে লেগে গেছে। দাঁতের উপরের পাটি দেখা যাচ্ছে।
ভয়, মায়া দুই কাজ করছে মোয়াজ্জমের মনে। একমনে দেখছিল লাশ!
হই! কি দেখস রে!
আচমকা ভয়ে ঘাবড়ে গেল মোয়াজ্জেম।
পেছন থেকে আবুল কেলিয়ে হাসছে, মাম্মা! এই নেকি? তোমারে দিয়া হইব না! লও তারাতারি।
ভ্যান চালিয়ে বাজারের দিকে চলে আসে ওরা দুজন। বাজার এখন ফাঁকা।
ব্যাকলাইট জ্বালিয়ে এক লোক মাফলার গলায় গাড়িতে বসে আছে। হাতে বেশ দামি সিগারেট যেটা এই গ্রামে পাওয়া যায় না। গত বছর আবুলের সাথে তার চুক্তি হয়ছে লাশ কেনা বেচার।
আজ তার দশ নাম্বার ডিল। গ্রামের লোকজন বোকা তাই হাজার সাত আট টাকায় লাশ তুলে বিক্রি করতে রাজী হয়। আবুল তাদের একজন!
ভ্যান চালিয়ে নিয়ে আসে মোয়াজ্জেম। পেছনে লাশের সাথে বসে থাকা আবুল চাপাস্বরে মোয়াজ্জেম কে ইশারা করে দেখায় ওই দেখ! স্যার আইছে।
চলুন দেখি কে এই স্যার।
শহরের একটি নামি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ফরেন্সিক বিভাগের শিক্ষক। নিজের পেশার পাশাপাশি লাশের ব্যাবসা করেন। যখনই ছাত্র ভর্তির সময় আসে তখনি তার ব্যাবসা জমজমাট হয়ে উঠে। ৩০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকার মত হাড় বিক্রি করার রেকর্ড আছে তার। মাঝে চার-পাঁচ জন মিলে করতেন তবে এখন একাই করেন। যেটা কেউ জানে না। এমনকি তার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী কেউ না।
লাশ কথামত দ্রুত গাড়ীতে তুলে দিল আবুল। মেডিক্যাল কলেজের আম্বুলেন্স। নামটা দেখল মোয়াজ্জেম। গাড়ির ভেতর বসে থাকা লোকটা বাইরে এল না। আবুল গাড়ির পাশে গিয়ে স্যার স্যার করে মুখে ফেনা তুলে ফেলল!
লোকটা গাড়ির জানালা দিয়ে টাকা গুলো আবুলের হাতে দিয়ে গাড়ী হাঁকিয়ে চলে গেল। এবার মোয়াজ্জমের হুশ ফিরল, লোকটা কাকে নিয়ে গেল? তবারক আলী! যে কিনা মোয়াজ্জেম মিঁয়ার বাপের বন্ধু ছিল। ছোট বেলায় কাক্কু কাক্কু করে এক টাকার লজেন্স খাওয়ার জন্য পেছনে ঘুরত মোয়াজ্জেম!
চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, চোয়াল শক্ত হয়ে আসে মোয়াজ্জমের ........