মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০

ছোট গল্পঃ ডেটিং

 

           ট্যাক্সি থেকে যে লোকটি নামল তাকে রেস্তোরা'র জানালা দিয়ে ভালো করে দেখতে পেল সুতপা। একদম বিকেল ৪টা। কথার দাম আছে বলতে হয় ভদ্রলোকের। কালো শার্ট, বাদামী রঙের প্যান্ট আর কাঁধে ব্যাক প্যাক। আপাদমস্তক দেখে নিল সুতপা। ভদ্রলোক,  একেবারে হাতে ধরে টাইম মত হাজির। খুশী ই হয়েছে সুতপা।

রেস্তোরা'র দরজা ঠেলে ভেতরে এসে ই আগে দেয়া বর্ণনামত, কচুপাতা আর লাল টিপ দেয়া মেয়েটাকে ঠিকি চিনে ফেলল ভদ্রলোক।
আপনি ই সুতপা! ( টেবিলের দিকে এগিয়ে এসে হাসিমুখে বলল)
সুতপাও মিষ্টি করে একটু হাসল। উত্তরে বলল, " হ্যাঁ আমি ই! প্লিজ বসুন। আসলে অন্য রেস্তোরা তে খুব বেশী ভীড় তাই আপনাকে এখানে ডেকে আনলাম। "
ইটস ওকে। আমারো ট্যাক্সি ভাড়া কমে পড়ল! (হাসিমুখে বললেন ভদ্রলোক)
চেয়ার টা টেনে বসতে না বসতে ভদ্রলোকের কল এল। সেটা রিসিভ করে কথোপকথন যা হলো তার সার সংক্ষেপ,
-জ্বী, কেউ ছিল না বাসায়!
-না সমস্যা হয়নি।
-আচ্ছা, কবে পাবো?
-আজকেই?
-হ্যাঁ হ্যাঁ ব্যাংক কালও বিকেল পর্যন্ত খোলা।
কথা শেষ করে সেটা আবার ফোন পকেটে রাখতে গিয়ে ভদ্রলোকের পকেট থেকে নাইলনের একটা দড়ি ঝট করে বেড়িয়ে পড়ল। সেটা সুতপার চোখ এড়াল না। চাপা হাসি দিয়ে তাই অবাক চোখে তাই প্রশ্নটা করে ই ফেলল ও, " দড়ি কেন? "
আসলে, কাজেকর্মের ফাঁকে ভুল করে পকেটে চলে এসেছে। ( একটু লজ্জা পেয়ে গেলেন ভদ্রলোক)
সুতপা মুচকি হাসল। আপনি তো দেখছি, কাজে তো খুব মনোযোগী নন!
(কথোপকথন চলতে থাকে)
দেখা হবার আগেরদিন,
ডেটিং সাইটে দুজনের আলাপ। ভদ্রলোকের নাম খালেক। যে ছবিটা সাইটে দেয়া সেটাও খুব ভাল বোঝা যায় না। দেখে মনে হয় লোকটার মাথার সামনে চুল কিছুটা কম, তবে একেবারে টাক নয়। মুখে হালকা চাপ দাঁড়ি। তবে বেশ কথা জানে লোকটি। সাইটে সেই প্রথম এসে সুতপা কে নক দেয়। সুতপার নিজের ছবিও দেয়া ছিল না। রুপাঞ্জেলের এনিমে ছবিটা দেয়া। তা দেখে ই নাকি খালেকের প্রশংসা।
সুতপার স্বামী ডাক্তার। কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে একটি কারণে ওরা দূরে দূরে আছে। প্রথমে সবাই ভেবেছিল এটা সাময়িক মান-অভিমান। পরে জানা গেল, নিজেদের রাগারাগি টা একটু বেশী ই। কিন্তু দুজন দুজন কে প্রচন্ড ভালোবাসে। সেই ছোটবেলা থেকে দুজনের জানাশোনা। একই স্কুল, কলেজ। পরে এসে পড়াশোনার পাঠ আলাদা হয়ে পড়ে কিন্তু দুজনের মাঝে ভালোবাসা একটুও কমেনি। বিয়েও করেছে প্রায় বছর দুই। কিন্তু এখন দুজন দুজন কে দূরে রেখে কষ্ট পাচ্ছে শুধু শুধু! তাই জেলাস করতে সুতপার এই চাল। ডেটিং করে জেলাসী করে দেয়া।
ওরা রেস্তোরা তে এখন খুব ই ব্যস্ত। বেশ হাসাহাসি চলছে। সেখানে একটা টিভিও চলছিল। তাতে বিকেলের নিউজে দেখানো হলো একজন সদ্য বিবাহিত মহিলা খুন হয়েছেন। সম্ভবত দুপুরে ঘটনাটি ঘটে। তাই সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়ির আশেপাশে কাউকে দেখা যায় নি। মহিলাকে রেইপ করাও হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। পোষাক পরিচ্ছদের উপর রাফ চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। তার থেকে বড় কথা গলায় নাইলনের দড়ি টেনে মহিলাকে খুন করা হয়েছে।
সুতপার চোখে গেল টিভিস্ক্রিণে।
নীচু গলায় বলল, " আপনার কাজ? "
ভদ্রলোক বা দিকে ঠোঁট বাঁকিয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে বলল, "হ্যাঁ, আর সেটা করে ই দ্বিতীয় ক্লায়েন্টের কাছে এলাম "।
রেইপ?
নাহ, অতো নীচু আমি নই! এটা সুপারির এক্সট্রা আবদার ছিল।
সুতপা একটু হাসল, ক্রুর হাসি। এরপর বলল, আমার কাজটা কি হবে?
নিশ্চই হবে কিন্তু ছবিটা?
আমার পেছনে সাদা শার্ট আর নেভী ব্লু প্যান্ট পড়ে যে লোকটি হাসছে সে। সাথের মেয়েটিকেও...
না না, ডবল করলেন এখন? খালেক আক্ষেপের সুরে বলল।
পেমেন্ট টাও ডবল হবে।
সুতপা উঠে চলে যাচ্ছিল। খালেক প্রশ্ন করল, "কিন্তু কেন করাচ্ছেন সেটা যদি?.."
আমাকে ফেলে ও এখন অন্য মৌচাকে উড়ে বেড়াচ্ছে তাই!
খালেক, নিঃশব্দে হাসল এরপর বলল,  " ইট ওয়াজ এ নাইস মিটিং বাই দ্যা ওয়ে "
অনেকটা এগিয়ে গিয়েও সুতপা আবার কয়েক পা পিছিয়ে এলো,
জিজ্ঞেস করল, "খালেক! এটা তো আপনার আসল নাম নয়! তাই কি?"
উত্তর এলো, " নো "।

গল্পঃ ডেটিং (একটি বিদেশী গল্প অবলম্বনে)

(গল্পের ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক, এর সাথে বাস্তবের কোন জীবিত, মৃত, অর্ধমৃত কারো কোন মিল নেই। মিলে গেলে তা একান্ত কাকতালীয়)


উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...