বুধবার, ১৯ জুন, ২০১৯

গল্পঃ অবিনীতা

অঞ্জন! -'নীল পাঞ্জাবি টা তোমায় ভালোলাগে, কেন পড়োনি? আমার যেকোন অনুরোধ ই তুমি রাখো না!'
-'পাঞ্জাবি টা গতকাল পড়েছিলাম, ঘামে দূগন্ধ করছিল তাই কেচে দিয়েছি, তোমার পছন্দের টি-শার্ট টা তো ঠিকি পড়েছি আজ।'
বিনীতা রাগ করলো না খুশী হলো মুখ দেখে অনুমান করা বড্ড মুশকিল।
তবে বারবার পলক ফেলছে বিনীতা, কোন বিষয়ে আংশিক এক্সাইটেড হলে বিনীতা এমন করে। সেই স্কুল থেকে দেখে আসছি! যেবার ক্লাসে দ্বিতীয় হলো সেদিন ই বুঝেছিল অঞ্জন। তবে মেয়েদের মন আকাশের মেঘের মতন, কখন কি হয় পূর্বাভাস দেয়া মুশকিল।
টেবিলে বিনীর হাত পড়ে ছিল, অঞ্জন সে হাতের উপর নিজের হাত লাগল। শীতের দিনের জমাট ঠান্ডার মতন হাতটা ঠান্ডা বিনীর। অঞ্জনের হাত বিনীর হাত ছোঁয়াতে ই হাত টা সরিয়ে নিল বিনী। রাগ কমেনি এখনো।
বিনীতা শাড়ি পড়েছে, শাড়ির রঙ নীলাভ কালো, আলোছায়ার খেলায় একবার শাড়ির রঙ কালো দেখাচ্ছে।
ওরা যে রেস্টুরেন্ট বসে আছে, আজ সেটা অনেকটা ফাঁকা। ওয়েটার এসে খাবারের অর্ডার চাইল। হ্যাংলা মতন এক যুবক, বয়েস আন্দাজ কুঁড়ি হবে। একটু হেসে অঞ্জন কে বলল,
স্যার? কি খাবেন?
অঞ্জন একবার বিনীতার দিকে তাকালো, বিনীতা বাইরে তাকিয়ে বাঁকা হয়ে বসে আছে অভিমানে। মেয়েটা রেগে গেলে সত্যি সামলে নেয়া মুশকিল! ওকে এখন জিজ্ঞেস করা ঠিক হবেনা।
তাই অঞ্জন নিজে ইই অর্ডার দিল।
আচ্ছা, দুটো পপ চিকেন আর দুটো বেভারেজ।
-কোলা?
-হ্যাঁ!
-থ্যাংকইউ স্যার! বলে আড়চোখে দুজনের মান অভিমান দেখে একটু মুচকি হেসে চলে গেলো ওয়েটার।
অঞ্জন ডাকল, বিনী! এই! বিনী..ই..ই শোন!
বিনীতা নাছোড়বান্দা, মুখ যে বাইরে ঘুরিয়ে রেখেছে কখন থেকে আর ফেরানোর নাম ই নেই। বড্ড জেদী আর অভিমানী মেয়ে বিনী।
একবার অঞ্জন কে ঘটনাটা বলেছিল বিনীতা। ক্লাস নাইনের কথা, ক্লাস টিচার বিনীর ম্যাথের খাতা কেটেকুটে একটা জিরো দিয়েছিলেন একটা অংকের জন্য। অথচ সেটা ঠিকি ছিলো যদিও ঠিকভাবে ই বিনীতা সেটা করেছিল তবে ম্যাথ টিচারের সে নিয়ম টা পছন্দ হয়নি তাই খাতায় জিরো দিয়েছে।
বিনীর সে কি জেদ! ম্যাথ টিচার কে বলে বোঝালো, তিনি কনভিন্স না হওয়াতে  নম্বর পেতে গেছে সোজা প্রিন্সিপ্যালের কাছে। টিচারের থেকে নম্বর নিয়ে তারপর ই সেদিন স্কুল ছেড়ে বাড়ি ফিরেছে।
স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল সেদিন বিনীর মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, বিনীতা! এত্ত রাগ করে না। আমাদের সবার ই একটুআধটু ভুল হয়, ভুল শুধরে ই চলতে হয় জীবনে।
রাগ, জেদ না অভিমান? অঞ্জন জানে না। অঞ্জনের ধারণা অনেকটা সাধাসিধে। অঞ্জন শান্ত স্বভাবের। খুব একটা প্রতিবাদী চরিত্র নয়। বিনীতা বরং তার উল্টো পিঠে।
তবে বিনীর রাগ কতটা অঞ্জন তার সীমারেখা মেপেও কোনদিন যে দিকভ্রান্ত হবে না সে কথা কেউ ই দিতে পারে না।
রেস্টুরেন্টের নাম সেট আপ লাউঞ্জ, বাইরে সেই নামের সাইনবোর্ড। তাতে আলো জ্বলতে শুরু করেছে।
বিকেলের আলো হাত পা গুটিয়ে এবার ফিরে যাবে পৃথিবীর উল্টো পিঠে বসবাস করা সাদা মানুষদের জাগিয়ে তুলতে।
আধাআধি দুজনে বসে, রেস্টুরেন্টের ভেতরকার ফ্যাকাশে লাল-সবুজ আলোর খেলা চলছে দুজনের মান-অভিমানে।
রেস্টুরেন্ট এ গান বাজছে নীচু আওয়াজে।
 বাপ্পা মজুমদারের, " আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে" আর অঞ্জনের মনে তখন বাজছে " আজ তোমার অনেক রাগ মেয়ে " ভেবে নিজে নিজে ই একটু হেসে ফেলল অঞ্জন। ঝাপসা চোখে বিনীর চোখ গেলো অঞ্জনের দিকে।
-হাসছো ক্যানো? আমার কষ্টে তোমার হাসি পায়?
অঞ্জন দেখল, বিনী পলক ফেলছে দ্রুত, রেগে লালচে দেখাচ্ছে ওকে।
অতি সুন্দর মেয়ের এই একটা বাড়তি সৌন্দর্য, যখন খুব রেগে যায় গালদুটো তে একটা লালচে আভা দেখা যায়। বিনীর ক্ষেত্রেও এখন তাই দেখাচ্ছে।
অঞ্জন সামলে নিয়ে বলল, আরে না না! রাস্তায়, ওই তো রাস্তায় দেখছিলাম জানো। একজন লোক জুতো ফেলে ই দৌড়ে রোড ক্রস করছিল।
-মিথ্যে বলছো? -বিনীতা বলল
-না না! হ্যাঁ। বলে দিল অঞ্জন।
-আমার সাথে সবসময় তুমি এমন করো, আমাকে অসহায় ভাবো। আমি একদম অসহায় নই অঞ্জন এটা তোমাকে বুঝতে হবে।
 বিনীতা কেঁদে ফেলল।
অঞ্জন এমন একটা পরিস্থিতি তে পড়ে আচমকা বিনীর হাতে হাত রেখে বলল, আচ্ছা!! আচ্ছা! সরি! আর মিথ্যে বলবো না। চলো আমরা অন্যকোন কথা বলি, তোমার ড্রয়িং? তোমার বাসায় বারান্দায় তোমার ঐ টিয়ে?
কথার মাঝে ই সেই ওয়েটার ছেলেটি এসে খাবার দিন তারপর মাথা নিচু করে অঞ্জনের কাছে এসে বলল,
- স্যার! এনি প্রব্লেম?
অঞ্জন বলল, নো থ্যাংকস!
-এঞ্জয় আওয়ার ফুড স্যার!
-ওকে।
ওয়েটার ছেলেটি যেতে যেতে পিছু ফিরে বার দুয়েক অঞ্জন আর বিনীতার দিকে ফিরে চাইল।
বিনীতা বলল, অঞ্জন কেন বোঝাও বারবার আমি তোমার কাছে অসহায়? আমার এসব একদম ভালো লাগে না! কেন মিথ্যে কথা বলো? আমি জানি, তোমার গলার স্বরে কোনটি সত্যি, আর কোনটি মিথ্যে।
অঞ্জন বিনীতার হাত ধরে অনেকটা গম্ভীর গলায় বলল, জানি বিনী। তুমি অসহায় একদম নও।
বিনীতা বলল, আমি চোখে দেখতে পাই না বলে তুমি মিথ্যে বোঝাবে?
অঞ্জন মাথা নিচু করে বলল, সরি বিনী, এমন আর হবে না। তুমি আমার কাছে একটা সাহস, অসহায়ত্ব নও।
বিনীতা চোখ মুছে নিল। সত্যি তো? না?
না না! একদম একদম সত্যি!
আবার না!
না মানে হ্যাঁ, মানে সত্যি দেবো না।  আমি তোমাকে একটা গান শোনাতে চাই। তুমি কি শুনবে?
বিনীতা একটু হেসে বা দিকে মাথাটা হেলিয়ে দিল। মানে ও রাজী।
অঞ্জন চেয়ারের সাথে দাঁড়া করিয়ে রাখা গীটার টা হাতে তুলে সুর তুলল,
স্টিং এর গাওয়া সেই fields of gold
" You'll remember me when the west wind moves upon the
fields of barley
You'll forget the sun in his jealous sky as we walk in
fields of gold "
বিনীতা অঞ্জনের হাতে হাত রাখল, বিনীর মনের ভেতর কষ্ট নেই। ও জানে অঞ্জন বিনীকে বড্ড ভালোবাসে। তা না হলে বিনী চোখের দৃষ্টিশক্তি সম্পর্কের মাঝপথে হঠাৎ হারিয়ে ফেলার পরেও অঞ্জন বিনীর হাতটা ধরে ই ছিল, ছেড়ে যায় নি।
অঞ্জন বলল, বিনী তোমার ঐ চোখ দুটোকে আমি ভালোবাসি, তুমি আবার দেখবে আমি চেষ্টা করছি।
বিনীতা বলল, তোমার চোখে ই আমি আপাতত দেখতে চাই অঞ্জন!
অঞ্জন চশমার নীচ থেকে চোখের কোণা মুছে নিল।
-তুমি কাঁদছো অঞ্জন?
-না না! বিনী।
-আবার মিথ্যে!
(ওদের দুজনের কথার মাঝে চলে এলেন একজন)
হ্যালো স্যার, আমি ইমতিয়াজ! এই রেস্টুরেন্টের ওউনার কাম ম্যানেজার। আপনাদের জন্য একটা স্পেশাল গিফট আছে।
অঞ্জন অনেকটা আমতা আমতা করে বলল, কিন্তু? কেন? আমরা তো কিছু চাইনি এক্সট্রা!
ইমতিয়াজ বললেন, স্যার! আসলে আমাদের রেস্টুরেন্ট এ একটা বদনাম আছে। যারা ই কাপল হয়ে আসে অদ্ভুত কারণে তাদের ই ব্রেক আপ হয় এখানে এসে। এটা কাপলদের কাছে কুফা রেস্টুরেন্ট বলতে পারেন। লোকাল অনেক এর নাম দিয়েছে মজা করে, " ব্রেক আপ লাউঞ্জ "।
 তাই কাপল কেউ আজকাল এখানে আসে না, মানে যারা জানে এই ব্যাপারে। কিন্তু ওয়েটার এসে যখন আপনাদের কথা বলল তখন আমি ডেস্কে এসে আড়ি না পেতে পারলাম না। এজন্য আমি এক্সট্রেইমলি সরি।
কিন্তু এই কেক টা আপনাদের জন্য করে এনেছি, উড ইউ প্লিজ?
অঞ্জন উঠে দাঁড়াল কেক কাটার ছুরি হাতে। সিউর, হোয়াই নট!
বিনীতা চেয়ার ছেড়ে উঠে যাচ্ছিল তখনি। অঞ্জন দ্রুত সামলে নিল। সাবধানে বিনী।
দুজনের হাত একসাথে, তাতে ধরা কেক কাটার ছুরি, সমবেত সবাই উল্লাসিত। কেক টা কাটা হলো আর সেখানে উপস্থিত সবাই হাততালি তে রেস্টুরেন্ট হল মাতালেন।
ওই আর ভ্যারি হ্যাপি স্যার এন্ড ম্যাম, বললেন ইমতিয়াজ।
বিনীতা হেসে বলল, থ্যাংক ইউ সো মাচ।
 অঞ্জন একবার বিনীতার দিকে ফিরল, গুমোট বাতাসে যেমন দমকা মেঘ তার ঠিকানা হারিয়ে ফেলে, তেমনি বিনীর অভিমানী মুখ আনন্দে হারিয়ে ফেলেছে সাময়িক অস্তিত্ব।

(সমাপ্ত)

(গল্পের চরিত্র এবং ঘটনা সম্পূর্ণ কাল্পনিক বাস্তবের সাথে কোন মিল থাকলে তা একান্ত কাকতালীয়)

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...