বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০১৯

থ্রিলারঃ স্টেপ ওয়ান



(এক)
শুরুতে একটু ধারনা দেয়া ভাল, কারণ যাদের ভূতে বিশ্বাস নেই তারা অধিক বিজ্ঞানমনস্ক। নয়তো, তারা একে রীতিমত অগোছালো পাগলাটে প্রলাপ বলে চালিয়ে দিতে পারেন। তবে আজকের থ্রিলার এবং ভূত, পরস্পরজড়িত। আমার স্যার আতিক, আপাতত অবসরে চলে এসেছেন। গোয়েন্দা দপ্তরে কাজ করতে লাগে ক্ষুরধার মস্তিস্ক, তাতে বোধকরি কোন অভাব নেই। তবে তিনি স্বেচ্ছায় কেন অবসরে এসেছেন। তা আমি জিজ্ঞেস করিনি। করলে কোন না কোন ভাবে স্যার আমাকে সাত পাঁচ বুঝিয়ে দেবেন। হয়তো, বলবেন, ' শোনো আনিস, নিজের কথা কি ভেবেছো?- কোথায় গেলে বাকী জীবন টা আয়েশে কাটাবে? আমার তো সমুদ্র ব্যাপক ভালো লাগে। কই? সমুদ্রে তো পা ভেজাতে পারিনি গোটা দশ বছরে। -এই চোর ছ্যাচ্চর, দাগী আসামী, খুনী, রেপিস্ট, সুইসাইড -এসবের ভীড়ে সময় পেয়েছি বলে তোমার মনে হচ্ছে?'
স্যার আর যাই বলুক, মনে মনে কিন্তু গোয়েন্দা দপ্তরের প্রতি তার একটা টান আছে, সে আমি ভালো করে জানি। এখনো কোন খুনের খবর পেলে ই সেটা নিয়ে আমাকে ব্রিফ করতে ভালোবাসেন তিনি। ফোন করে ই বাসায় ডাকেন, ' আনিস! মজার স্টোরি আছে, চলে আয়!'
আমার কাজ এখন বেড়েছে, হয়েছে প্রমোশন। বড়কর্তা হবার ঠেলা সামলাতে এখন হিমশিম খাই, একদিন তো স্যার কে বলে ই দিলাম অবসর নেবো। স্যার চোখমুখ কুঁকড়ে বললেন, ' এই কাজটি করিস না, এখন উঠতি সময়, আমার মতো বুড়ো হলে টের পাবি অবসরে থাকার কষ্ট টা আসলে কি!'
গল্পের ছলে, সেদিন ই এই কেসের ব্যাপারে কথা হলো। আমারো অফিসে ছুটি। বিকেলবেলা তাই একসময়কার গুরু-শিষ্য বসেছিলাম চা চক্রে। অনেকক্ষণ চুপচাপ ই ছিলাম, ব্যস্ত ছিলাম ফোনের স্ক্রিনে, স্যার পত্রিকায়। ম্যাডামের চা অসাধারণ। সে চায়ে সল্টেড বিস্কুট ডুবিয়ে আয়েশে খাচ্ছিলাম। হঠাৎ স্যার বললেন, 'ভূতে বিশ্বাস আছে আনিস?'
হেহে করে নিঃশব্দে হাসি দিয়ে বললাম, -কি যে বলেন স্যার! ভূত! সারাদিন আসল খুনীকে ধরে সময় পাইনা। এসবে মন দেবো কখন?
আমার কথা শুনে স্যার ও পত্রিকা ভাঁজ করতে করতে মাথানিচু করে হাসলেন, তারপর বললেন, -এটা অনেক আগের দিকের কথা। আমি সবে জয়েন করেছি। অনেক বড়বড় অফিসারের পেছনে পেছনে ঘুরঘুর করি। তারা আমাকে এসিসট্যান্ট করে রেখেছেন তখন। এই সময়ে আমি শুধু তাদের কাজ ফলো করি। নিজের করে বলার মতো মতামত তখনো হয়নি। যেমন, কোন খুন হলো সেখানে স্যারের সাথে আমিও যাই। স্পট দেখে নিজের ধারণা করি। স্যারের ধারণা আমার সাথে মেলাই। তারপর স্যার আমার কাজের একটা রিপোর্ট উপরমহলে জমা দেন। শিক্ষানবিশ আর কি!
তো ঠিক ভালো ই যাচ্ছিল গোয়েন্দা দপ্তরে। একদিন একটা কেইস এলো। কোন এক এসাইলামে সুইসাইড কেস। এসাইলাম টা শহরের কাছে। খুব বড় নয়, জেলাশহরে এসাইলাম আছে কিংবা আদৌ থাকতে পারে বলে আমার মোটেই ধারণা ছিল না। তবে, যেহেতু সুইসাইড তাই পুলিশ কেইস হলো। আমার স্যার আমাকেও সাথে নিলেন স্পটে। একতলা একটা বাড়ি। তার চারপাশে বিঘাতক ফাঁকা মাঠ। উঁচু দেয়াল ঘেরা, সেটা আনুমানিকভাবে ১১ থেকে ১২ ফিট উঁচু। পরে মেপে দেখেছিলাম ঠিক আছে। সেখানে এক মহিলা সুইসাইড করে। তাকে ফ্যানের সাথে সকালবেলা ঝুলতে দেখে এসাইলামের ওয়ার্ডবয়। সে ঝাড়ু দিতে এসে প্রথমে বেডে পেশেন্ট কে না পেয়ে আতঙ্কিত হয়, তারপর ই পা ঝুলতে দেখে সিলিঙ ফ্যানের সাথে। চিৎকার চেঁচামেচি করে এসাইলামে ছোটাছুটি শুরু করে। তারপর ডিরেক্টর মানে এসাইলামের পরিচালক ফোন পেয়ে আসেন, পুলিশে ততক্ষণে কেউ খবর দিয়েছিল। সম্ভবত কোন নার্স, এতে তিনি অনেকটা ক্ষিপ্ত হন। গালাগালি করেন এরপর দ্রুত পুলিশ এসে পড়াতে লাশ সৎকার্য করতে পারেন না। আমরা গিয়ে দেখলাম, পেশেন্টের পরিবারে তেমন কেউ নেই। তবে তার নামে তার বাবার ফেলে যাওয়া সম্পত্তি ছিল, আর ছিল সৎ ভাই। নিহত মহিলার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে টা টেকে নি কারণ, দ্বিতীয় স্ত্রী কোন এক প্রবাসী লোকের সাথে পরে পালিয়ে যায়। নিহত মহিলার বয়েস সতেরো থেকে কুঁড়ি। ছোটবেলা থেকে ই মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোন বিষয় বুঝিয়ে বললে সে নাকি বুঝতো এবং হেসে জবাব দিত। জোর করলে কিংবা গায়ে হাত তুললে সে পাগলামি শুরু করতো যা ঘুমের ইনজেকশন না দেয়া পর্যন্ত থামানো যেতো না।
সুইসাইডের আগের রাতেও নাকি এমন কিছু একটা হয়েছিল বলে একজন নার্স আমাদের জানায়। ডাক্তার নিজে ই তাকে সে ইনজেকশন টা পুশ করেন। মজার ব্যাপার হলো, সে নার্সের ই কথায়। সন্দেহ টা সেখানে বাড়ে আমাদের। নার্সের রাতের ডিউটি ছিল। সে জানায় রাত ১ টা থেকে রাত ৩ টা সে পাঁচবারের বেশী টহল দিয়ে গেছে। মেয়েটি/মহিলাটি ঘুমাচ্ছিল অঘোরে। কোনরকম মুভমেন্ট সে দেখতে পায় নি। তাছাড়া এসাইলামের ভেতর মৃদু আলোর ব্যবস্থা আছে তাতেও কোনপ্রকার অস্বাভাবিকতা নাকি তার নজরে আসেনি।
রাত ৩ টার পর নার্স দুই ঘন্টার ন্যাপ নিতে যায় এরপর ই আরেক বয়ের টহল দেয়ার কথা। সে টহল না নিয়ে এসাইলামের বারান্দায় বসে শিবের প্রসাদ মানে গঞ্জিকা টানছিল। সুতরাং আর তার হুশ ছিল না। তখন সিসি ক্যামেরার চল ছিল না। কেইস একবার চুনের পানির মতো উপরে স্বচ্ছ আর তলানী সমাধানের বাইরে। রুমের বাইরে তালা সুতরাং কারো আসা অসম্ভব, ছাদ কংক্রিটের ঢালাই। টিনের নয় যে কেউ কেটে খুন করে আসবে। নার্সের মতে মেয়েটির পায়ে একটু সমস্যা ছিল, তার মানে দাঁড়ায় সে দাঁড়িয়ে সিলিঙে দড়ি বাঁধতে পারে না। সেটা অসম্ভব। রুমের চাবি কেবল ডাক্তার, নার্স,বয় এবং এসালাইমের পরিচালকের কাছে থাকে। এসাইলামের ডাক্তার রাতে ছিলেন না কারণ মেয়ের জন্মদিন থাকায় রাত বারোটার আগে তিনি হাসপাতাল ছেড়ে যান নিজের নিসান গাড়িতে। বাইরের সদর দরোজায় তালা। এসাইলামের করিডোরে কলাস্পিবল গেইট এবং সেটাও তালা।

(দুই)
ঘড়িতে বিকেল ৫টা, ম্যাডাম চিপস ভেজে দু'বাটি আমাদের দুজন কে দিয়ে গেলেন। আমি মুখে পুড়ে এবার কথা বললাম। অনেকগুলো প্রশ্ন জমেছে। প্রথমত, মহিলার খুনের মটিভ কোথায়? দ্বিতীয়ত, কে করলো খুন?
আতিক স্যার কে এবার প্রশ্ন করলাম।
স্যার তার চায়ে চুমুক দিয়ে, চিপস খেতে খেতে বললেন। তোমার কি ধারণা হলো এসব শুনে? আগে শুনি, সুইসাইড না খুন?
আমি আমতা আমতা করে বললাম, সুইসাইড!
স্যার এমনভাবে হাসলেন যে তার চা পারলে উড়ে আমার গায়ে ই পড়তো। হাসি থামিয়ে বললেন, এই তোমার অবজারভেশন!
আমিও এবারো আমতা আমতা করে বললাম, খুঁত তো পেলাম না স্যার। কোন মোটিভ নেই। যদি ধরি সম্পত্তির জন্য কেউ খুন করেছে সে তো তার সৎ ভাই। আর এসাইলামের যা সিকিউরিটি ফিরিস্তি পেলাম তাতে তো মাছি ঢোকাও পসিবল না।
স্যার চিপস তুলে বললেন, পৃথিবীতে যত কড়াকড়ি যেখানে, সেখানে সবচেয়ে বড় গুমোড় থাকে আনিস। মানে হলো এই কেইস টা ক্রাক আমি ই করি প্রথমে। আর তারপর ই অফিসিয়ালি আমার নিয়োগ হয় গোয়েন্দা দপ্তরে। বলে ই স্যার মুচকি হাসলেন।
আমি এবারে আশাবাদী। যেহেতু স্যার বলেছে খুন, তাহলে আমার উচিত এবার ক্লু বের করা।
-যদি দেয়াল টপকে? দড়ি ছুঁড়ে কেউ এসে থাকে?
-হ্যাঁ, সেটা পারে কিন্তু বাইরে দারোয়ান থাকে। যদি সেটাও টপকে আসে তাহলে কলাপ্সিবল গেইট তাকে ক্রস করতে হবে। যেটা জার্মান তালা। দু একজনের বাইরে আর কেউ সেটা জানে না। মানে দারোয়ান এসে অসাদচরন করার কথা ভাবতেও পারবে না। খুন তো বাদ!
আমি ভাবছি সারেন্ডার করে দিব এবার, যেটা ই ভাবছি স্যার ক্যান্সেল করে দিচ্ছে। শেষমেশ বললাম, যদি আগের থেকে ঘরে কিংবা বাথরুমে কেউ বসে থাকে?
স্যার বললেন, তাহলেও তার ধরা পড়ার কথা কারণ, কলাপ্সিবল গেইটে তালা থাকে সবসময়। খোলা হয়ে কেবল ডাক্তার এবং পরিচালক এলে। এবং তারা এসে চেক করে ই নার্স অথবা বয় কে অনুমতি দেন হাসপাতালে ঢোকার।
কিন্তু স্যার খুন হবার পর তো তার ই সৎ ভাই সব সম্পত্তি পাবে।
হ্যাঁ, সাধারণভাবে ভাবলে এটাই আসল মোটিভ হয়। কিন্তু ঘটনা আরো জটিল ছিল। আমার সিনিয়নের হাতে আরেকটা কেস ছিল তাই তিনি এই কেস টা আমাকে হ্যান্ডওভার করলেন। তার ধারণা ছিল এই চুনোপুঁটি কেসে উনার কোন ফায়দা নেই। উনি প্রমোশনের লোভে এটা ছেড়ে দিলেন আমার উপর। আমিও তরুণ, কেস একেবারে ইনচার্জ হয়ে সমাধানে নেমে গেলাম।
তখন সবে বিয়েও করেছি, এরেঞ্জ ম্যারেজ আমাদের। কেউ কাউকে বিয়ের আগে চিনতাম না। আর এই কেসে পড়ে গিয়ে কথা বলার সুযোগ ও কম। সারাদিন কেস ফাইল, মর্গ, ইভিডেন্স খুঁজে ফিরছি। রিমান্ড চলছে। বাসায় ফিরে রাতেও ঘুমে অনেক দেরী। তোমার ম্যাডাম রাত জেগে বই পড়তো, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র চলছে..
একরাতে বলল " গৃহদাহ " পড়েছি কিনা, জোর গলাতে ই একটু মেজাজ ভারী করে উত্তর দিলাম, নাহ! সাথে সাথে দেখলাম তোমার ম্যাডাম টেবিল ল্যাম্প ঠাস করে নিভিয়ে হাতের বইটা সশব্দে টেবিলে ফেলে শুয়ে পড়লো বিছানায়। আমার হাতে কেস ফাইল রেখে, আলো নিভিয়ে দিলাম। বুঝলাম গৃহদাহ টা আসলে কি!
আনিস হো হো করে খানিকটা হাসল। তারপর বলল, স্যার কোন ক্লু পেলেন?
নাহ। আমিও তখন খুব হতাশ। মনে হচ্ছিল এভাবে রেগুলার কিছুদিন থানা-এসাইলাম-দপ্তর-বাড়ি-বৌ করে করে আমিও এসাইলামের একজন হয়ে যাবো।
ঠিক তখনি ক্লু টা মাথায় আসে। মানসিক চাপ, এর থেকে মুক্তি!

(তিন)
তাহলে তো স্যার, এটা সুইসাইড ই। খুন হয় না!
স্যার বললেন, খুন কখন হয়? এর আসল সংঙ্গা কি জানো?
Murder is the unlawful killing of another human without justification or valid excuse, especially the unlawful killing of another human being with malice aforethought. This state of mind may, depending upon the jurisdiction, distinguish murder from other forms of unlawful homicide, such as manslaughter.
তার মানে জাস্টিফিকেশন করে নয়, সেন্সের মাঝে থেকে নয়, যেটা নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না।
আনিস মাথা নাড়ল সায় দিয়ে।
আতিক সাহেব এবার শুরু করলেন, শোন আনিস! যদি কেউ জেনেশুনে খুন করে দিত তাহলেও কি সেটা খুন নয়? আসলে সেটাও খুন। তবে এই সংঙ্গা তে সেটি আসে কিনা আমার দ্বিমত আছে।
তুমি যদি ভিক্টিমের কাছের কেউ হও তাকে যদি তুমি ভুল পথে পরিচালিত করো সেটা কি এই বিশ্লেষণে পড়ে!
পাজল্ড লাগছে, তার মানে স্যার কেউ তাকে প্ররোচিত করেছে?
ইয়েস!
আমি যতদিন কেসে ছিলাম নার্স আমাদের কে অনেক হেল্প করেছে। তার নাম সিস্টার মেরী। আগে সে কোন এক চার্চে যাজিকা ছিল। সেখানে আমি খোঁজ নেই। আমার ছোট্ট অভিজ্ঞতা থেকে জানতে পারি। সি ওয়াজ এবিউজড, চার্চের ফাদার তাকে সেখানে আশ্রয় দেয়। পড়ালেখা শেখায় কিন্তু কোন না কোন ভাবে সে তার অতীত স্মৃতি থেকে বের হতে পারেনি।
কিন্তু স্যার?
বলছি, (স্যার চায়ে চুমুক দিলেন)
এরপর বললেন, এর সাথে কেসের কি সম্পর্ক? ভিক্টিম মানে খুন হওয়া মেয়েটি বয়েসে তরুণী। আগেও বলেছি, কলাপ্সিবল গেইটের কারণে দারোয়ান কেউ বাইরে থেকে ভেতরে আসতে পারতো না। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এসাইলামের ভেতরে ফাঁকা মাঠে রোগীদের ছেড়ে দেয়া হতো। ওরা ইচ্ছেমত ঘুরতো সেখানে।
এমনি এক সময়ে কোন এক দারোয়ান মেয়েটিকে এবিউজ করার চেষ্টা করে, নার্স মেরী সেটা দেখে ফেলে এবং দারোয়ান কে শাসায়। হিতে বিপরীত বলে একটা কথা কথা আছে। সেটা ই হলো।
নার্স মেরীর ছোটবেলা তাকে মানসিকভাবে দূর্বল করে রেখেছিল, এত সময় পার হবার পরেও তার সে অতীতের ভয় কাটেনি। একে একে দুই মেলায় সে। ভিক্টিম নার্স মেরীর ভক্ত ছিল। আগেই বলেছি, বুঝিয়ে বললে মেয়েটির মতন ভালো আর কেউ হয় না।
এবার আমি চেঁচিয়ে বললাম, তাহলে নার্স ই খুনী?
নাহ!
আমার আবারো হতাশা। বললাম,
-দারোয়ান, ডাক্তার, এরা বাদ বাকী থাকে বয় আর পরিচালক!
ডাক্তার, দারোয়ান বাদ? কে বলল তোমাকে?
আমি বললাম স্যার একটা সিগারেট খেতে চাই বড্ড মাথা ধরেছে।

(চার)
সিগারেট ফুঁকে আসতে আসতে দেখলাম ঘড়িতে প্রায় ছ'টার কাঁটা ছুঁইছুঁই। আজ অফিস ছুটি তাই হয়তো আমারো এই কেস নিয়ে মাথা ঘামাতে মন্দ লাগছে না।
ফিরে এসে ই ফাঁকা চেয়ারে বসে বললাম, স্যার প্লিজ বলুন এবার ফাইনালি ক্রাক করলেন কিভাবে?
স্যার ফোনে কি একটা করছিলেন, তিনি তার চোখ নামিয়ে বললেন- আজকাল দ্রুত সন্ধ্যা হয়ে যায়। হ্যাঁ, যা বলছিলাম! তো এমনি এক অবস্থায়। গৃহদাহ টা তুমুলঝগড়া তে পরিণত হলো। তোমার ম্যাডাম ঘরে না থেকে চলে গেলো বাবার বাড়ি আমি একা একা ডিমভাজি আর ভাত করে তাবৎ মুরগীর ভবিষ্যৎ যখন আঁধারের কাজে ব্যস্ত তখনি খুব সিম্পল ক্লু এর কথা আমার মনে পড়ল।
ফাঁসির দড়ি! সেটায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট তো থাকার কথা। কিন্তু কাকতালীয় ভাবে সেখানে কারো হাতের ছাপ নেই! স্ট্রেইঞ্জ! আমি রিপোর্ট টা আবার পড়লাম। আনুষঙ্গিক আরো যা যা দেখার দেখলাম। তাহলে? এক্সপার্ট কেউ? তাকে ঝুলিয়ে কেস টা সুইসাইড বলে চালিয়ে দিচ্ছে?
 সকালে ফরেনসিকে ফোন করে রিপোর্ট নিয়ে আরো ভালো করে কথা বলার কথা ভেবে শুয়ে পড়ি। কিন্তু ঘড়িতে কটা বাজে ঠিক মনে পড়ছে না। আমার হঠাৎ ই ঘুম ভেঙে যায়। ঘরে মৃদু আলো আসছিল। কারণ বাইরের রাস্তার কাছে একটা আলো সারারাত জ্বলে। আমি দেখলাম আমার সেলিঙ ধরে কেউ ঝুলছে। তার চুল এলোমেলো, হাত দিয়ে দূরে কিছু দেখাচ্ছে। আমি সেদিকে তাকালাম কেবল পাশের ঘরের বন্ধ দরজা ছাড়া কিন্তু দেখলাম না। সাহসী মানুষ আমি, কিন্তু ঘুম ভেঙে এসব অদ্ভুতুড়ে ব্যাপার দেখার পর শক্ত থাকতে নার্ভের জোর লাগে। আমার ছিল। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ভাবলাম যা দেখছি সব অবাস্তব, হ্যালুসিনেশন!
চোখ খুলে দেখি কারেন্ট নেই, ঘেমে নেয়ে গেছি। বাইরের আলোর লাইন টা অন্য লাইন তাই সেটা কেবল জ্বলছে। উঠে সিগারেট হাতে বারান্দায় গেলাম। এমন স্বপ্ন দেখার কারণ কি আমি কেস নিয়ে বেশী ভাবছি! জলদি, আবার ঘরে এলাম বন্ধ দরজার দিকে ছুটে গিয়ে হেচকা টানে সেটা খুলে ফেললাম। ঘর টা ফাঁকা, তোমার ম্যাডামের আনা কিছু জিনিসপত্র তখনো প্যাকিং করা ছিলো। আমি ম্যাচ জ্বালিয়ে ভেতর টা দেখতে থাকলাম। বইয়ের পোকা সে, সবধরনের বইয়ে ঠাসা মেঝে। দুটো লাগেজে জামাকাপড়।
ফিরে আসছি, চোখে পড়ল একটা বই "Disinfection, Sterilization, and Preservation " বইটা থেকে ধূলো ঝেড়ে হাতে নিয়ে ফিরলাম। কারেন্ট এসে গেছে দিব্যি ফ্যানের বাতাসে শরীরে ঘাম শুকিয়ে কেমন একটা শীত শীত লাগছে। বইটার কয়েক পাতা পড়ে মাথায় যেটা এলো সেটি এতদিন কেন আসেনি বুঝলাম না। বলেছিলাম না, সবচেয়ে কঠোর জায়গাতে খুঁতের পরিমান অনেক বেশী থাকে!
ফরেনসিক ল্যাবে গেলাম পরদিন সকালে। তার আগে তোমার ম্যাডাম কে ফোন করে অনুরোধ করলাম যাতে সে ফিরে আসে আমরা সমুদ্র দেখতে যাচ্ছি একসাথে।
ল্যাবে গিয়ে আমি নিজেও দেখলাম, ব্যবহৃত দড়ি টি ছিল ডিসইনফিকটেন্ট, মানে স্টেরিলাইজড করা। দড়ি কখনো এমন হয়? কেউ জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করছে? এসাইলামের ডাক্তার? তার কাছেও তো চাবি থাকে। ফোর্স নিয়ে যাবো কিন্তু ডাক্তার ই করেছে তার প্রমাণ কই?
মনে আছে গৃহদাহ?
আমি বললাম হ্যাঁ, আসলে এসাইলাম টা আর চলছিল না। আগেও বলেছি ঐরকম একটা জেলাশহরে এসাইলাম আছে কে জানে? ডাক্তারের আরো ভাল বেতনের অফার ছিল। তাই সে চাপ দিচ্ছিল পরিচালক কে যাতে তাকে অধিক টাকা দেয়া হয় এবং সেও চাকরী ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছিলো।
সবার টাকা বাকী, নার্স, বয়, দারোয়ান তাই যথেচ্ছাচার ছিল তাদের সবার চালচলনে কিন্তু নার্স মেরী ছিল অন্যরকম মনের। কথায় আছে, আহত মানুষ ই অন্য আহত লোকের দরদ বোঝে। তাই সে নিজের মতোন সেবা করে যেতো পয়সা ছাড়া। কিন্তু বাকীরা হয়ে উঠে বেপরোয়া। ডাক্তার ও পরিচালক কে ফাঁসিয়ে দেবার প্ল্যান করে। তাই যাবার আগে তার নিজের কাছে থাকা চাবি দারোয়ান কে দিয়ে যায় এবং সব সতর্কতা নেয়া আছে জানিয়ে কি করতে হবে বলে যায়। দারোয়ান জানতো টাকা পেলে সে সব পারে, নার্স মেরীর প্রতি তার কুনজর ছিল কিন্তু সে ভেতরে গিয়ে খুন করে বেড়িয়ে এলেও কেউ টের পায়নি। মেয়েটি ঘুমিয়ে ছিল, ঘুমের মাঝে ই খুন হয়ে যায়। শুরুতে বলেছিলাম, ডাক্তার রাতে ই মেয়েটিকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছে।
তাই এমন ঘটনা ঘটেছে জেনে ধামাচাপা দিতে চায় এসাইলামের পরিচালক কিন্তু নার্স মেরীর কারণে সেটি আর হয় না। সে আগেই ফোনে পুলিশ কে জানিয়ে দেয়। পরে ডাক্তার কে আমরা গ্রেফতার করি, সেই সাথে খুনী দারোয়ান কেও ধরা হয়।
আমি বললাম, তাহলে মেয়েটি যে স্বপ্নে না তার আত্মা..
আতিক স্যার, ডান হাত উঁচু করে থামিয়ে বললেন, ব্যস এটা কে আধিভৌতিক ভেবে বসা টা ঠিক নয়। তবে তুমি যেহেতু একটা কারণ দর্শাতে দেখাও সেটা দেখাতে আপত্তি নেই তবে, প্রমাণ ছাড়া বাকীসব কিন্তু সার। এখানে আরো
মজার ব্যাপার হলো, কেউ পালায় নি এমন একটা ঘটনার পর। পুলিশ আসবে কেউ ভাবেনি হয়ত। তবে পুলিশ তদন্তের পরেও এরা এতটাই আশ্বস্ত ছিল যে, পুলিশ এই কেস সলভ করতে পারবে ই না। বার কয়েক জেরা করার সময়েও ডাক্তার কে ততটা অস্থির মনে হয়নি অথচ তিনি ছিলেন ঘটনায় মাস্টার মাইন্ড! আর  দারোয়ান ও কিভাবে নেশা করে ঠান্ডা মাথায় খুন করে। নেশা বড় মারাত্মক আনিস, বুঝলে! চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে আতিক স্যার তার হাতে থাকা সিগারেট প্যাকেটের দিকে একবার এবং আরেকবার আমার দিকে ফিরলেন। তারপর সেটা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন সন্ধ্যার অন্ধকারে।

(সমাপ্ত)

(গল্পের ঘটনা, স্থান, কাল, চরিত্র সব কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে কিংবা জীবিত অথবা মৃত কারো সাথে কোন মিল থেকে থাকলে তা একান্ত অনভিপ্রেত এবং কাকতালীয়) 

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...