সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০১৬

ড্রোনের গল্প





ড্রোন জিনিসটার ব্যাপারে আমার মত অনেকেই ব্যাপক উৎসাহী। মোটের উপর ছোট করে এক থেকে দেড় হাতের একটা যন্ত্র কিভাবে মৌমাছির মত আকাশে উড়ে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে সেটা এখন প্রায় অনেকের চোখ কে অবাক করে দেয়। তাই অন্য সবার মত আমিও অনেক উৎসাহী। শুরু করা যাক,
ড্রোনঃ  ড্রোন শব্দটার মানে গুণগুণ করা; অর্থাৎ এটা কোনো সায়েন্টিফিক নাম না। ড্রোনের অনেকগুলো
নাম আছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নামটার যদি বাঙলা অর্থ করি তাহলে এটা দাঁড়াবে
মনুষ্যবিহীন উড়ন্ত যান” বা Unmanned Aerial Vehicleএর আরেকটা নাম মাল্টিরোটর। ড্রোণের জন্মটাই হয়েছে মূলত সামরিক কাজে যেখানে এটার নাম unmanned combat aerial vehicleড্রোন নামটা সাধারণ মানুষের দেয়া, কারণ প্রথম দিককার মনুষ্যবিহীন সামরিক উড়ন্ত যানগুলোর আওয়াজ নাকি অনেকটাই ছিল পুরুষ মৌমাছির (ড্রোন) ডানা ঝাপটানোর আওয়াজের মতোই। সমষ্টিগতভাবে দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত যে কোনো মনুষ্যবিহীন যানই ড্রোনের আওতায় পড়ে। সে হিসাবে কিন্তু বাজারে খেলনা হিসেবে হেলিকপ্টারগুলোও কিন্তু এক ধরনের ড্রোন। হাজার টাকায় এখনো এমন কিছু যন্ত্র ইচ্ছা করলেই আপনি কিনতে পারেন কোন ইলেক্ট্রনিক্স শপ থেকে। আসলে, ড্রোনের মূল আইডিয়াটাই এসেছে ক্ষেপণাস্ত্র থেকে । ১৮৫০ সালে অস্ট্রিয়ানরা যুদ্ধের সময় অনেকগুলো বেলুনে বিষ্ফোরক দ্রব্য বোঝাই করে সেটাকে উড়িয়ে ভেনিসে ফেলার চেষ্টা করেছিলো। কয়েকটা ঠিকমতো কাজও করেছিলো বটে তবে কিছু বেলুন আবার বাতাসে ঘুরে গিয়ে অস্ট্রিয়ানদের উপরেই পড়েছিলো।
নিকোলা টেসলা সর্বপ্রথম ১৯১৫ সালে দূরনিয়ন্ত্রিত মনুষ্যবিহীন সামরিক বিমানের ধারণা দিয়েছিলেন। ১৯৩৫ সালে প্রথম রিমোট কন্ট্রোলড উড়ন্ত যান নির্মাণে সফল হন হলিউড তারকা ও সৌখিন নির্মাতা রেজিন্যান্ড ড্যানি। বেতার তরঙ্গ ব্যবহারকারী এই যন্ত্রের নাম ছিল রেডিওপ্লেন বা আরো ভালোভাবে বুঝতে চাইলে বলা যেতে পারে “Remote piloted Aerial vehicles” এই রেডিওপ্লেনই মূলত ড্রোন তৈরি করার প্রথম পদক্ষেপ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই বিভিন্ন যুদ্ধে ড্রোনের বিভিন্ন সংস্করণ ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে বিভিন্ন দেশ। এবং তারা এটা এখনো করছে।
আসলে ড্রোন ঠিক কি ধরণের হবে, সেটা নির্ধারিত হয় কতটুকু প্রয়োজন তার উপর; অথবা বলা যায়, নির্মাতার ডিজাইনের উপর যতটুকু করা যায় তার উপর। এই পৃথিবীতে কত বিচিত্র রকমের যে ড্রোন তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে সেটা হিসাব রাখাটাও দুষ্কর হয়ে পড়ছে। কয়েকদিন আগে মাত্র এক গ্রাম ওজন আর হাতের মুঠোয় রাখা যাবে এমন ড্রোন তৈরির দাবিও করা হয়েছে।
এখন উন্নত বিশ্বে ড্রোনের বাজার বেশ রমরমা। ২০১৫ সালে প্রায় চল্লিশ লাখ ড্রোন বিশ্বব্যাপী বিক্রি হয়েছে। বলা হচ্ছে ২০২০ নাগাদ সংখ্যাটা এক কোটি ষাট লাখে গিয়ে দাঁড়াবে। আমি যদি ব্যবহারের দৃষ্টিকোণ থেকে বলি তাহলে একে ছয় ভাগে ভাগ করতে পারি। এগুলো হলো –
১। লক্ষ্য ও ফাঁদ, ২। পরিদর্শন, ৩। যুদ্ধকালীন, ৪। লজিস্টিক, ৫। গবেষণা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, এবং ৬। বাণিজ্যিক।
বাণিজ্যিকের মধ্যে বিনোদন বাণিজ্যও হতে পারে। যেমন, আগে যেসব দৃশ্যধারণ করার জন্য হেলিকপ্টার লাগতো, এখন ড্রোনের সাথে ক্যামেরা লাগিয়ে সহজেই সেটা করা যাচ্ছে। যাই হোক, ব্যবহার বাদ দিয়ে যদি উচ্চতা ও দূরত্বকে মানদণ্ড ধরি – তাহলে বর্তমানে কয়েক ফুট উচ্চতা ও কয়েক মিটার রেঞ্জের ড্রোন থেকে পঞ্চাশ হাজার ফুট উচ্চতা ও দুইশো কিলোমিটার রেঞ্জের হাইপারসনিক (ম্যাক নাম্বার-৫) ড্রোনও আছে। তবে যত ভাবেই ভাগ করা হোক না কেন ড্রোনের সবচেয়ে বেশী ব্যবহার করে বিভিন্ন সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। ড্রোন এখন মার্কিন সেনাবাহিনীর অন্যতম ভরসার নাম। তবে গবেষণার কাজেও ড্রোনের ব্যবহার বেড়েছে। এখন ড্রোন দিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ছবি তোলার কাজটাও করা যাচ্ছে। কিছুদিন আগেই অনলাইন শপ অ্যামাজন তাদের মালপত্র পৌঁছানোর জন্য পরীক্ষামূলকভাবে
ড্রোনের ব্যবহার শুরু করেছে। যুদ্ধবিদ্ধস্ত সিরিয়াতে ড্রোন দিয়ে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানোর কাজও করা হচ্ছে। এমনকি মাছেদের জীবন যাপন ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য মাছসদৃশ আন্ডারওয়াটার ড্রোনও আছে।
আরো আছে ফায়ারফাইটার ড্রোন। বহুতল ভবনে হঠাৎ লেগে যাওয়া আগুন তাৎক্ষণিকভাবে নেভানো বেশ কষ্টসাধ্য একটা ব্যাপার। সমস্যাটা অবশ্যই উচ্চতার । অধিকাংশ দেশে খুব বেশী উচুঁতে পানি ওঠানোর প্রযুক্তিটা এখনো ভালোভাবে বিকশিত হতে পারেনি। তবে আমার বিশ্বাস আমরা ড্রোন দিয়ে বেশ কিছু সমস্যাকে কাটিয়ে উঠতে পারি। আগুনের উপর নজরদারি বা কোথায় আগুন লেগেছে এইসব ব্যাপারে ড্রোনের ব্যবহার ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। আমি চাচ্ছি আর ভালো কিছু তৈরি করা যায় কি না, যাতে আমরা আরো ভালো ফল পেতে পারি। আমি যতটুকু পড়েছি নাসা ফায়ারফাইটার ড্রোন নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে ২০১৪ সালের শেষদিকে, তবে এটার ফলাফল এখনো জানায়নি।
সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার স্পাইডার ড্রোন নামের একধরনের ড্রোনের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়েছে যেটা আগুন কোথায় লেগেছে সেটা জানার জন্য কেবলমাত্র উড়ে নয় , প্রয়োজনে দেয়ালের গা বেয়েও আগুনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের অবহিত করবে। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে এই থার্মাল ক্যামেরাসমৃদ্ধ এই ড্রোন প্রায় দশ হাজার ডিগ্রী সেলসিয়াসেও বেশ কিছুক্ষণ টিকে থাকতে সক্ষম।
ফায়ার ড্রোন বা মাঝারি মানের ফায়ারফাইটার ড্রোন আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়াররাই বানাতে
পারবে। অগ্নি নির্বাপকের মধ্যে যে অগ্নিনির্বাপনকারী পদার্থ (তরল কার্বন-ডাই অক্সাইড বা নাইট্রোজেন মিশ্রিত ড্রাই পাউডার জাতীয় পদার্থ) থাকে সেটা যদি আমরা কোনোভাবে একটা পাত্রে বা বাক্সে নিয়ে ড্রোনের শরীরের সাথে সমন্বয় করতে পারি তাহলে এটার থেকে দুই তিনটা কাজ আদায় করে নিতে পারি। প্রথমটা হলো, এটাকে আমরা ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। অর্থাৎ প্রথমে যে ড্রোনটার শরীরে আমরা তরল কার্বন-ডাই-অক্সাইড রাখলাম, সেটার সাথে একটা ক্যামেরা লাগিয়ে প্রথমে যে জায়গায় আগুন নেভাতে চাই সে জায়গায় লক্ষ্য কেন্দ্রীভূত করে এটাকে দ্রুতগতিতে সেই জায়গা বরাবর আঘাত করতে পারি। আমরা যদি যথেষ্ট পরিমাণ লিকুইড কার্বন পাঠাতে পারি তাহলে আগুনকে হয়তো কমানো সম্ভব হবে। তবে এটা আমাদের ড্রোনটাকে ধ্বংস করে ফেলবে নিশ্চিতভাবেই। আরেকটা পদ্ধতি হলো – আমরা যদি ড্রোনে তরল কার্বন ডাই অক্সাইড নিয়ে ড্রোনের মধ্যেই ট্রিগারের ব্যাবস্থা করতে পারি তাহলে একটা জায়গাকে লক্ষ্য করে হয়তো ছুঁড়ে ফেলা সম্ভব হতে পারে।
সবশেষে বলতে হয়,আমার জানা নেই এই ধরনের ড্রোন প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা কতটা কঠিন হবে! তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই ধরণের ড্রোন বানানোর চেষ্টা করা বলতে গেলে অসম্ভবের কাছাকাছি, আমি এমনটা মানতে রাজি নই। তবে হ্যাঁ, এসব নিয়ে কাজ করার জন্য যে আর্থিক সহযোগিতা দরকার সেটা পাওয়াটা বেশ কঠিন। তবে আমি বিশ্বাস করিএই ধরনের প্রযুক্ত একদিন না একদিন আসবেই। তবে আনন্দের কথা হলো আপনার ক্রেডিট কার্ড থাকলেই দেশের বাইরে থেকে আনিয়ে নিতে পারেন সাধারণ ব্যাবহার্য কোন ড্রোন
হুবহু না হোক, কিছুটা তো বটেই।

উত্তপ্ত পৃথিবী এবং চল্লিশ ডিগ্রি

  সাম্প্রতিক সময়ে হিট ওয়েভ এর প্রভাব (ছবিঃ Google) পৃথিবী কেন গরমঃ                       ধরা যাক, একটি কাপে বেশ গরম চা এবং অন্য একটি কাপে ফ...